পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
মানুষ একা বাঁচতে পারে না। বেঁচে থাকা এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজেই আমাদের কারো না কারো সহায়তা প্রয়োজন। Networking skill হচ্ছে সেই দক্ষতা যা আমাদেরকে বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এর ফলে আমরা যেমন আমাদের কথা শেয়ার করার জন্য মানুষ খুঁজে পাই, তেমনি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে সাহায্য করার মত মানুষও খুঁজে পাই। এজন্যই Networking skill আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও Networking skill সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে, পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতা খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে, চাকরিক্ষেত্রে সহকর্মীদের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য অথবা সকলের সামনে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য Networking skill খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাটি কীভাবে নিজের মধ্যে আয়ত্ত করা যায় কিংবা আরেকটু বাড়ানো যায় তা নিয়েই আজকের লেখাটি।
Network তৈরি করো যে কারো সাথে:
সবার প্রথমেই তোমাকে মাথায় রাখতে হবে যত বেশি মানুষের সাথে সম্ভব তত মানুষের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। এতে করে তোমার Networking skill খুব দ্রুত বাড়বে। তাছাড়া কে কোন কাজে তোমাকে সাহায্য করতে পারে তা তুমি নিজেও জানো না। যত বেশি মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবে, তত বেশি সহায়তা পাওয়ার রাস্তা থাকবে তোমার। আর এছাড়াও একজনের মাধ্যমে তুমি আরো নতুন কারো সাথে পরিচিত হতে পারো।
নিজেকে উপস্থাপন করো:
Networking skill গড়ে তোলার জন্য তোমার নিজেকে উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিভিন্ন জায়গায় সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা। আমাদের মধ্যে একটা বড় অংশই Introvert হয়ে থাকি এবং মানুষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই না। এমন হলে কেউ আমাদের চিনবে না। কিন্তু যদি তুমি মানুষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারো তাহলেই মানুষ তোমাকে চিনতে পারবে। এতে করে তোমার Network গড়ে তোলার উদ্দেশ্য সফল হবে।
কথোপকথনকে আনন্দদায়ক করে তোলো:
কেউ তোমার সাথে তখনই যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী হবে যখন সে এতে আনন্দ পাবে। আর মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য আনন্দদায়ক কথোপকথনের বিকল্প কিছুই নেই। তাই যদি তুমি কারো সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাও তাহলে অবশ্যই তার সাথে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তোমাদের কথাবার্তার মাঝে এমন কিছু থাকে যা তোমাদের দুইজনকেই আগ্রহী করে রাখে।
কথা-বার্তাকে আনন্দদায়ক করে তোলার একটা সহজ উপায় হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে প্রয়োজনীয় কথাটাকেই প্রাসঙ্গিক কিছু কৌতুক ব্যবহার করে বলা। এতে করে তার আগ্রহ তোমার দিকেই থাকবে। অপ্রাসঙ্গিক কথা মানুষের কথা শোনার আগ্রহকে দূর করে দেয়।
বলো এবং শোনো:
কারো সাথে যদি যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাও তাহলে অবশ্যই একা একা কথা বললেই হবে না। কথা বলার পাশাপাশি তাকেও বলার সুযোগ দিতে হবে। না হলে সে তোমার সাথে কথা বলে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাবে না।
যদি তুমি কারো সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করো তাহলে তার সাথে দীর্ঘ যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী হবে? মোটেই না। এজন্যই কাউকে নিজের Network এ আনতে চাইলে কথোপকথনের সময় বলা এবং শোনার একটা ভারসাম্য বজায় রেখো।
সময় নিয়ে কথোপকথন চালিয়ে যাও:
হুটহাট কথা বলে চলে গেলে কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠবে না। তাকে সময় দিতে হবে। এজন্যই যখন কারো সাথে কথা বলবে, চেষ্টা করবে যেন খুব দ্রুত কথোপকথনটা শেষ না হয়ে যায়। বড় কথোপকথন দিয়ে সে বুঝতে পারবে তুমি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছো। এতে করে সেও তোমাকে গুরুত্ব দেবে।
তবে বড় কথোপকথনের একটা অসুবিধা হচ্ছে এত সময় নিয়ে কথা বললে আলোচনাটা আনন্দদায়ক রাখাটা একটু কঠিন। আর তাছাড়া তোমার বা তার কোন কাজের অসুবিধাও হতে পারে। তাই আলোচনা আবার অনেক বড় না করে তোমাদের হাতে কতটুকু সময় আছে আর কতটুকু সময় ধরে তুমি আলোচনাটা দুজনের জন্যই প্রাণবন্ত করে রাখতে পারবে তার উপর ভিত্তি করে সময় নিয়ে কথা-বার্তা চালিয়ে যাও।
যোগাযোগ রাখা বেশি কাজে দেয়:
নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করি তা হলো যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া। কারো সাথে কোনখানে আমাদের পরিচয় হওয়ার পর সেখানে তার সাথে একটা মোটামুটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলেও সেই স্থান ত্যাগ করার পর তার সাথে আর যোগাযোগও করি না। সর্বোচ্চ ফেইসবুক বা লিংকড ইন আইডি অথবা মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করি কিন্তু সেই আইডি বা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখতে ভুলে যাই।
নিয়মিত যোগাযোগ সম্পর্ককে ভালো রাখে। যদি আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি তাহলে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এতে করে তাদের কাছ থেকে কোন সাহায্য চাওয়া এবং পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। তাই চেষ্টা করবে সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার।
শুধু নিজের লাভটাকেই বড় করে দেখো না:
মূলত আমরা Network গড়ে তুলি কারো কাছ থেকে প্রয়োজনের সময় কোন সহায়তা পাওয়ার জন্য। সুসম্পর্ক বজায় রাখলে সহায়তা পাওয়াটা সহজ হয়। সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অবশ্যই তার প্রয়োজনে তার পাশে থাকতে হবে। শুধু নিজের লাভটাকে বড় করে দেখলেই হবে না।
চেষ্টা করবে শুধু প্রয়োজনের মাঝেই কথা-বার্তা যেন সীমাবদ্ধ না থাকে
তুমি যদি কাউকে সাহায্য করো তাহলে ভবিষ্যতে তার কাছে থেকে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই কারো সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে চেষ্টা করবে তাকেও যতটা সম্ভব সাহায্য করতে। শুধু নিজের লাভটুকুকে বড় করে দেখবে না।
সম্পর্কটাকে শুধু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখো না:
আমাদের জীবনের একটা বড় অংশই এখন কাজের মাঝে সীমাবদ্ধ। কাজের বাইরে দম ফেলার সামান্য ফুসরত পেলে আমরা খুশি হই। এটা কারো সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার একটা ভালো উপায়।
যদি তুমি কারো সাথে সম্পর্কটাকে শুধু কাজের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখো তাহলে সম্পর্কটা একটু পানসে লাগবে। কিন্তু তোমাদের আলোচনাগুলো যদি প্রয়োজনের বাইরের অন্যান্য কথা নিয়েও হয় তাহলে দেখবে ধীরে ধীরে অনেক ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তাই চেষ্টা করবে শুধু প্রয়োজনের মাঝেই কথাবার্তা যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।
Network যে শুধু কারো কাছে থেকে সহায়তা পাওয়ার জন্যই গড়তে হয় তা না, যদিও এখন concept টা অনেকটাই এমন হয়ে গিয়েছে। তবে বর্তমানের প্রতিযোগিতার সময়ে টিকে থাকার জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় দক্ষতা।
কখনো শুধু কিছু কথা বলার জন্য অথবা কখনো কোন প্রয়োজনে আমাদের যে সকল মানুষকে পাশে প্রয়োজন তাদের অনেককেই আমরা পাই আমাদের Networking নামক এই দক্ষতাটির জন্যই। তাই উপরে বলা ধাপগুলো চর্চা করতে থাকো আর বাড়াতে থাকো তোমার পরিচিত মানুষজনের সংখ্যা।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন