২০১৮ সালের মার্চের ১৪ তারিখ। আইনস্টাইনের জন্মদিন। পরপারে স্টিভ জবস আর আইনস্টাইন কথা বলছিলেন। জবস বললেন, “আইনস্টাইন, আজ তোমার জন্মদিনে এমন একটা সারপ্রাইজ দেবো যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না!”
আইনস্টাইন একটু বাঁকা স্বরে বললেন, “এই বয়সেও আর কোন সারপ্রাইজ বাকি থাকে নাকি?”
সারপ্রাইজের কথা না হয় পরেই বলি, এখন একটা গল্প বলা যাক। বিশ্ব কাঁপানো এক অনন্য মানুষের গল্প।
জানুয়ারির ৮ তারিখ, ১৯৪২ সাল। গ্যালিলিও মারা যাবার ঠিক তিনশ বছর পরে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ছেলেটার জন্ম। বুদ্ধিমত্তা ভাল থাকলেও স্কুলের পড়ালেখায় কখনও ভাল করতে পারতো না ছেলেটা।
নিজের ছেলেবেলায় ফিরে গেলে আমি দেখি যে ক্লাসে লাস্ট হওয়া ছেলেগুলোর দিকে সবাই আসলেই একটু বাঁকা নজরে তাকায়। যে ছেলেটার কথা বলছি তার ছোটবেলার বন্ধুরাও হয়তো তাকে এজন্য পাত্তা দিতো না। কিন্তু বড় হয়ে যাবার পর হঠাৎ একদিন তারা অবাক হয়ে খেয়াল করলো, ক্লাসে লাস্ট হতো বলে যেই ছেলেটাকে তারা অবজ্ঞা করে এসেছে সেই ছেলেটার নাম এখন সারা দুনিয়া জুড়ে!
ছেলেটার হাত পায়ে নড়ার শক্তি নেই, নেই কথা বলার ক্ষমতাও। তবুও একের পর এক নতুন নতুন তত্ত্ব দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে সে বিশ্বকে। তার জীবনী নিয়ে হলিউডে মুভি বের হয়েছে, সেই মুভির নাম চরিত্রে অভিনয়কারী শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে অস্কারও পেয়ে গিয়েছেন।
যতদিনে ছেলেবেলায় পাত্তা দিতো না বলে এই ছেলেটির ছোটবেলার বন্ধুরা ঘরে বসে অনুশোচনায় ভুগছে, ততদিনে সারাবিশ্ব জেনে গিয়েছে যে ওই ছেলেটির নাম স্টিফেন হকিং!
কাহিনীগুলো এভাবে গড়ালে শুনতে কিন্তু বেশ ভালই লাগে। তবে স্টিফেন হকিং এর ক্ষেত্রে বাস্তবতা ছিল একটু ভিন্ন। ছেলেবেলায় পড়াশোনায় ভাল করতে না পারলেও তাঁর বুদ্ধিমত্তার জন্য তাঁর শিক্ষক থেকে শুরু করে তাঁর বন্ধুরা, সবাই অনেক সমীহ করতেন স্টিফেন হকিংকে। তিনি নিজেই বলেছেন,
“I was never top of the class at school, but my classmates must have seen potential in me, because my nickname was ‘Einstein’.”
জীববিজ্ঞান গবেষক বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে মেডিসিন নিয়ে পড়াবেন। কিন্তু হকিন্সের ঝোঁক সবসময়ের ছিল গণিতের দিকে। নিজের ইচ্ছাকে পুঁজি করেছিলেন বলেই জীবনে এতদূর আসতে পেরেছিলেন তিনি
১৯৬৩ সালে তাঁর শরীরে মটর নিউরন ডিজিজ ধরা পড়ার পর ডাক্তাররা তাঁর জীবনসীমা বেঁধে দেন দুই বছরের মত। কিন্তু ডাক্তারদের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে স্টিফেন হকিং বেঁচে রইলেন আরো বহু বছর। অবদান রেখে গেলেন সারা পৃথিবীর স্বার্থে। পৃথিবীতে যে কোন কিছুই অসম্ভব না সে কথা প্রমাণ করে যেতেই হয়তো তিনি জন্মেছিলেন আমাদের এই পৃথিবীতে।
স্টিফেন হকিং তাঁর সারাটি জীবন জুড়েই মানুষকে প্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছেন নানাভাবে। দেখে নিই তাঁর বলে যাওয়া কিছু অমূল্য বাণী।
আরো পড়ুন: স্টিফেন হকিং- অনন্য এক অনুপ্রেরণার নাম
স্টিফেন হকিংসের জীবনবোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর। জীবন নিয়ে বলে যাওয়া তাঁর কিছু উক্তি:
1. “Remember to look up at the stars and not down at your feet. Try to make sense of what you see, and wonder about what makes the universe exist.”
2.“Work gives you meaning and purpose and life is empty without it.”
3. “If you are lucky enough to find love, remember it is there and don’t throw it away.”
4. “Life would be tragic if it weren’t funny.”
5. “However bad life may seem, there is always something you can do, and succeed at. While there’s life, there is hope.”
নিজের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ তিনি কাটিয়েছেন হুইলচেয়ারে বসে। কিন্তু তাঁর ইচ্ছাশক্তি কখনোই তাঁকে থেমে থাকতে দেয়নি। শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে বলা উক্তিগুলো:
1. “My advice to other disabled people would be, concentrate on things your disability doesn’t prevent you doing well and don’t regret the things it interferes with. Don’t be disabled in spirit, as well as physically.”
2. “Although I cannot move and I have to speak through a computer, in my mind I am free.”
স্টিফেন হকিংকে চেনে না এমন মানুষ সারা পৃথিবীতে হাতে গোনা। নিজের এই পরিচিতিকে তিনি কীভাবে নেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি নিচের উত্তরগুলো দিয়েছিলেন:
1. “The downside of my celebrity is that I cannot go anywhere in the world without being recognized.”
2. “It is not enough for me to wear dark sunglasses and a wig. The wheelchair gives me away.”
মানুষের ক্ষমতা নিয়ে অনেক উঁচু ধারণা রাখতেন স্টিফেন হকিং। তাঁর বিশ্বাস সবসময়েই বেশ মজবুত ছিল মানুষের উপরে যার প্রমাণ তিনি দিয়ে গিয়েছেন নিচের বাণীগুলোর মাধ্যমে:
1. “We are just an advanced breed of monkeys on a minor planet of a very average star. But we can understand the Universe. That makes us something very special.”
2. “In my opinion, there is no aspect of reality beyond the reach of the human mind.”
3. “I have noticed even people who claim everything is predestined, and that we can do nothing to change it, look before they cross the road.”
আজীবন ভালবেসে গিয়েছেন যেই বিজ্ঞানকে সেই বিজ্ঞানকে নিয়ে বলে যাওয়া উক্তি:
1. “Science will win, because it works.”
2. “Science is not only a disciple of reason but, also, one of romance and passion.”
3. “I believe there are no questions that science can’t answer about a physical universe.”
4. “Science can lift people out of poverty and cure disease. That, in turn, will reduce civil unrest.”
স্টিফেন হকিং বিশ্বাস করতেন যে এই মহাজগতে সত্যিই এলিয়েনদের অস্তিত্ব রয়েছে। জীবনে বহুবার তিনি তাঁর কথা দিয়ে এ বিশ্বাসকে মজবুত করেছেন। পৃথিবীর জীব ছাড়া মহাজগতে বর্তমান অন্যান্য জীব নিয়ে তাঁর বলে যাওয়া কিছু কথা:
1. “If aliens visit us, the outcome would be much as when Columbus landed in America, which didn’t turn out well for the Native Americans.”
2. “I believe alien life is quite common in the universe, although intelligent life is less so. Some say it has yet to appear on planet Earth.”
3. “To my mathematical brain, the numbers alone make thinking about aliens perfectly rational. The real challenge is to work out what aliens might actually be like.”
মৃত্যুকে কখনোই ভয় পাননি তিনি। মৃত্যু নিয়ে ২০১১ সালে বলে যাওয়া তাঁর উক্তি:
“I have lived with the prospect of an early death for the last 49 years. I’m not afraid of death, but I’m in no hurry to die. I have so much I want to do first”.
সারপ্রাইজের কথা বলছিলাম। স্টিফেন হকিং এর এত শত উক্তির ভীড়ে সেই সারপ্রাইজটা কী হারিয়েই গেল? মোটেও না।
জীবদ্দশায় বিশ্ববাসীকে হাজারো সারপ্রাইজ উপহার দেয়া জবস পরপারেও সে সুযোগ ছাড়েন নি। আইনস্টাইনের ভ্রুকূটির জবাবে তিনি বললেন,
“পেছনে একবার তাকিয়েই দেখো!”
আইনস্টাইন পিছনে ফিরে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন, সেখানে হুইলচেয়ারে বসে আছেন আর কেউ নন, স্বয়ং স্টিফেন হকিং!
একজন মানুষ নড়তে পারেন না, কথা বলার সামর্থ্যটুকুও নেই, তবুও শুধু নিজ চিন্তাধারা দিয়ে ব্যাপক অবদান রেখে গেলেন আমাদের মাঝে।
দিন পার হবে, আবারো কোন একদিন আসবে ১৪ই মার্চ। আইনস্টাইনের জন্মদিনের সাথে সারা দুনিয়া পালন করবে হকিংসের মৃত্যুদিন। কিন্তু আসলেই কি তিনি বিদায় নিলেন আমাদের মাঝ থেকে?
বিশাল এই পৃথিবী আর আরো বিশাল মহাজগৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা নিয়ে ছিল যার ধ্যানজ্ঞান, এত সহজেই কি তাঁকে হারিয়ে ফেললাম আমরা? হয়তো সময়ই হবে এই প্রশ্নগুলোর একমাত্র উত্তরদাতা।
“A few years ago, the city council of Monza, Italy, barred pet owners from keeping goldfish in curved bowls…saying that it is cruel to keep a fish in a bowl with curved sides because gazing out, the fish would have a distorted view of reality. But how do we know we have the true, undistorted picture of reality?”
– Stephen Hawking
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন