পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
আমরা খুব চমৎকার একটা সময়ে বাস করছি। এমন এক সময়, যেখানে সবাই কিছু না কিছু করতে চায়। উদ্যোগী এই মানুষগুলোকে দেখতে খুব ভালো লাগে, ইচ্ছা করে তাদেরকে নিজে থেকে আরেকটু সাহায্য করি।
সঙ্গত কারণেই সেটি সম্ভব হয় না, তাই আমি যা করতে পারি সেটাই করি, এই চমৎকার তরুণ প্রজন্মকে গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করি, কীভাবে তারা শুরু করতে পারে তাদের উদ্যোগটি। আমার আজকের লেখাটিও কোন উদ্যোগ শুরু করার সহজ ও সাধারণ একটা গাইডলাইন নিয়েই! ছোট ছোট কিছু ধাপে কাজ করে আমরা পারি এই সমস্যার সমাধান করতে।
ধাপ ১: শুরুটা হোক TIN দিয়েই!
TIN এর পুরো অর্থ হচ্ছে Tax Identification Number। শুনতে খুব জটিল আর দুর্বোধ্য লাগছে, তাই না? বাস্তবে কিন্তু এটা মোটেও সেরকম কিছু না। TIN এর Registration করতে হলে প্রথমে গুগলে TIN Online Registration লিখে সার্চ দিতে হবে। দেখবে চমৎকার একটা ফর্ম তোমার সামনে চলে এসেছে। এই ফর্মটা ফিল আপ করে ফেলো, মিনিট পাঁচেকের বেশি লাগার কথা নয় এবং এর সাথে সাথে তুমি পেয়ে গেলে তোমার TIN!
ধাপ ২: নিয়ে নাও একটা Trade License!
ট্রেড লাইসেন্স জিনিসটা খুব কার্যকর। ধরো তুমি নিজের কোন একটা কোম্পানি তৈরি করতে চাচ্ছো। তাহলে তোমার প্রথমেই যেটা দরকার হবে সেটা হলো ট্রেড লাইসেন্স। এই লাইসেন্স তুমি পাবে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে।
ধরো তুমি ঢাকায় থাকো। তাহলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে এক সপ্তাহ একটু ঘোরাফেরা করে কাজ করে ফেললেই হয়ে গেলো! তুমি পেয়ে গেলে তোমার নিজের একটা কোম্পানি! ভাবতে বড্ড ভালো লাগছে না?
ধাপ ৩: NBR থেকে Vat Certificate এর কাজগুলো করে ফেলো!
তোমার নিজের একটা কোম্পানি হচ্ছে, তার মানে তোমাকে তার জন্যে ভ্যাট দিতেই হবে! আর এই ভ্যাটের পরিমাণ আর অন্যান্য সবকিছু ঠিকঠাক করতে তোমাকে যেতে হবে NBR এ, সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই তুমি করিয়ে নিতে পারবে ভ্যাট বিষয়ক সমস্ত কাজ!
ধাপ ৪: শুরু করে দাও নেটওয়ার্কিং!
কোম্পানি তো আছে, এখন তোমার দরকার কাজ করার জন্যে টিম মেম্বার। এদের দেখা কোথায় মেলে? এই প্রশ্নের উত্তর পাবে তুমি, তার আগে ঝটপট নিজের জন্যে কোম্পানির একটা বিজনেস কার্ড করে ফেলো। না, এটা মোটেও অনেক দামি কিছু না, নীলক্ষেতে ৫০০ টাকার মধ্যেই বানিয়ে নেয়া যায় বিজনেস কার্ড!
এবার তুমি যেখানেই যাবে, সবাইকে নিজের কোম্পানির একটা কার্ড দেবে। দেখবে সবাই আগ্রহ করে জিজ্ঞেস করছে, কোত্থেকে পেলে, কীভাবে পেলে। মজার ব্যাপার হলো, ১০ জনের মধ্যে একজনকে দেখবে তোমার কোম্পানিতে জয়েন করতে অতি আগ্রহী! এভাবে নেটওয়ার্কিং বাড়তে থাকবে।
আরো পড়ুন: সফল উদ্যোক্তা হতে করতেই হবে এই ১০টি কাজ
ধাপ ৫: কাজ করার জায়গা হতে পারে তোমার বাসাই!
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারো, যে কাজ করার জায়গা কোথায়? তোমাদের তো কোন অফিস নেই! তাহলে উপায়? আমি বলি কী, উপায় তোমাদের বাসাতেই। বাসায় বসে আরামসে কাজ করতে থাকো, খাওয়া-দাওয়া নিয়েও চিন্তা নেই এখানে!
শুরুটা হোক প্রতি শুক্রবারে তোমার বাসায় তোমার টিমমেটদের নিয়ে বসে। প্রতি শুক্রবার ধীরে ধীরে হয়ে যাক প্রতি শুক্র-শনিবার, সময়টা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকো যতদিন না নিজের একটা অফিস পাচ্ছো তুমি।
তোমার নতুন কী কাজ আসছে, সবকিছুর আপডেট দাও ফেসবুকে একটা পেজ খুলে
এখনকার বেশিরভাগ কাজই কিন্তু সবাই মিলে একই সময়ে করা যায়, এটা জানো তো? একই এক্সেল শিট পাচজন মিলে এডিট করছো, গুগল ডকসের কাজ করতে পারছো সবাই মিলেই! কারো বাসায় না বসতে পারলেও অনলাইনেই কিন্তু কাজ করতে পারছো সবাই!
ধাপ ৬: অনলাইন মার্কেটিংয়ের কথকতা
মাত্র একটা কোম্পানি খুলেছো তুমি, এখনই তো আর ওয়েবসাইট খুলতে পারছো না, পৃথিবীর সবাইকে দেখাতে পারছো না কী দারুণ একটা কোম্পানি তোমার আছে! এখানে তোমার সহায়ক হবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ফেসবুক আর ইউটিউব।
তোমার কীরকম কোম্পানি, তুমি কী কাজ করো, তোমার নতুন কী কাজ আসছে, সবকিছুর আপডেট দাও ফেসবুকে একটা পেজ খুলে। আর তোমার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পোস্ট করো, কীভাবে এগোচ্ছো তুমি কাজগুলো নিয়ে- সেসবের ভিডিও করে ইউটিউবে দিতে থাকো।
আবার, ফেসবুকের দারুণ একটা ফিচার হয়তো তুমি জানো না। ধরো তুমি একটা শার্ট বিক্রি করবে। এটা ফেসবুক স্টোরে যদি সবরকম তথ্যসহ দিয়ে দিতে পারো, তাহলে হয়তো দেখা যাবে শার্টটা সহজেই বিক্রি হয়ে গেছে! তোমার কোম্পানি যদি কোনরকম সার্ভিস দিতে পারে, তবে সেই সার্ভিসের পরিচিতি করে দিতে পারবে ফেসবুক স্টোর।
ধাপ ৭: হিসাব করো এবার সহজেই!
তোমার এখন মনে হচ্ছে, সবই হলো, কিন্তু একাউন্টিংয়ের হিসাব রাখবো কীভাবে? নতুন কোম্পানি, তোমার তো কিছুই জানা নেই এসব নিয়ে! এর সমাধান হলো ইউটিউব আর গুগল।
গুগলে সার্চ করেই দেখো না, তোমার জন্যে শয়ে শয়ে একাউন্টিং টেম্পলেটের পসরা সাজিয়ে রেখেছে গুগল, যেটা ভালো লাগে সেটাই কাজে লাগিয়ে শুরু করে দাও হিসাব রাখা! ধীরে ধীরে বিষয়টা আরো জটিল হবে, তখন তুমি আরো জটিল টেম্পলেট পাবে, আর সেগুলো ব্যবহারের উপায় পাবে ইউটিউবে! একটু শিখে নিলে ক্ষতি কি?
সবগুলো ধাপ শেষ করলেই বলা যায় তোমার কোম্পানির বেসিক দাঁড়িয়ে গেলো! এবার তোমার ইচ্ছেমতো কোম্পানির উন্নতি করো, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে থাকো। মানুষকে জানাতে শেখো তোমার উদ্যোগের মাহাত্ম্য। তবেই তোমার কোম্পানি দেখবে সাফল্যের মুখ!
এই লেখাটা যারা পড়ছো, আর যাদের উদ্যোগী হবার স্বপ্ন চোখেমুখে, তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আর দেরি করো না। ঝটপট লেগে পড়ো নতুন কিছু শুরু করতে। তোমার বন্ধুদেরও জানাও, তাদের আগ্রহী করে তোলো লেখাটা দিয়ে। তারপর শুরু করে দাও কাজ! ভাগ্য তোমাদের সহায় হোক!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Finance Course
এই লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং’ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন