পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
“সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না“
আমাদের সবার জীবনে অনেক পরিচিত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই উক্তিটি।
একটা সময় ছিলো যখন ভাবা হত ছাত্রজীবন শুধু নাক মুখ গুঁজে পড়ালেখা করে কাটিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু সেই বৃত্ত থেকে নিজেকে বের করে আনার সময় হয়েছে আমাদের, প্রতিষ্ঠিত করতে হবে নিজের স্বকীয়তাকে। পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয় করতে হবে ছাত্রজীবন থেকেই। স্কুল, কলেজে পড়াকালীন অবস্থায় আমাদের অনেকের মাথায় অনেক আইডিয়া গিজ গিজ করে। এই সব আইডিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে আইডিয়াটি আমাদের মনে বেশ নড়ে চড়ে বসে তা হলো একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার।
কিন্তু আমরা কখনো চেষ্টা করেও দেখি না যে কীভাবে আমাদের এই আইডিয়াগুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়া যায়। অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে শুরু হতে পারে আমাদের ছোট ব্যবসার পথচলা যা কিনা হয়ে উঠতে পারে আমাদের স্বপ্নের চেয়েও বড়! তাই আজ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম কিছু দারুণ টিপস যা সাহায্য করবে তোমাকে ছাত্রজীবনে একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
ভালো লাগার কাজটি দিয়েই শুরু হোক তোমার পথ চলা:
“Find something you love to do so much, you can’t wait for the sun to rise to do it all over again.” – Chris Gardner
তুমি যখন মনোযোগের সঙ্গে ভালোবেসে কোনো কাজ করবে তখন সেই কাজটা অসাধারণ হয়ে ওঠে। কেননা তুমি যখন তোমার প্রিয় কাজটির প্রতি মনোনিবেশ করো তখন তা তোমার ভেতরের সম্ভাবনাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
তাই নিজের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা থাকতে হবে। নিজে কী চাই সেটা খুঁজে বের করতে হবে। নিজের সেই ভালোলাগার কাজকে বেছে নিয়েই সাজাতে হবে কর্মকৌশল। এরপর অধ্যবসায় আর নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যেতে হবে নিজের ভালোলাগার কাজটি নিয়ে।
সুযোগের অপেক্ষায় বসে না থাকা:
“Don’t wait for the opportunity, create it.” – Debasish Mridha
সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা বোকামী। সুযোগ তৈরি করতে পারাটাই যোগ্যতা। একটা গল্প বলি আজ তোমাদের। প্রায় ৪০ বছর আগের কথা, আমেরিকার একটি ছোট কারখানায় তিন চারজন মানুষ মিলে ছোটখাটো একটা কাজকর্ম শুরু করে। কিন্তু সেই সময় তারা নিজেরাও জানতো না তাদের কাজটির কতটা বাস্তবিক রূপ দিতে পারবে তারা।
আজ প্রায় ৪০ বছর পরে এসে এই তিন চার জন মানুষের কোম্পানিটি এখন প্রায় ৯৩ হাজার মানুষের কর্মক্ষেত্র। যাদের বার্ষিক বিক্রয় মূল্য হচ্ছে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যার মানে দাঁড়ায় ২০০ বিলিয়ন ডলার। এখন বলতে পারবে এতগুলো টাকা দিয়ে কী করা যেতে পারে?এই পরিমাণ টাকা দিয়ে প্রায় ৬৭ টা পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব আমাদের দেশে।
হয়ত তোমরা অনেকেই ইতোমধ্যে বুঝে গেছো আমি কোন কোম্পানির কথা বলছি, হ্যাঁ ঠিক ধরেছ আমি ‘অ্যাপল ইনকর্পোরেশন’ এর কথাই বলছি।
আজ তোমাদের এই গল্পটা বলার একটাই কারণ, প্রায় ৪০ বছর আগে যদি এই কয়েকজন মানুষ ভয় পেয়ে তাদের কাজকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না করেই বসে থাকতো তবে কখনোই আজ এই কোম্পানিটি পৃথিবীতে এত বড় জায়গা করে নিতো না, হয়ে উঠতো না সবার এত পরিচিত।
এই গল্পটি থেকে আমরা একটা বিষয় শিখতেই পারি, শুধু আইডিয়া নিয়ে বসে থাকলেই হবে না তা বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করতে হবে প্রতিনিয়ত এবং তা শুরু হতে পারে ছাত্র অবস্থায়ই।
আরো পড়ুন: অ্যানিমেশন কী? অ্যানিমেশন শিখতে যা যা দরকার
সেরাদের কাছ থেকে শেখা:
আমাদের সবার মাঝেই একটা আফসোস কাজ করে – “ইসস, আমার যদি এটা থাকতো”, “আমার যদি ওর মত বড় ভাই থাকতো”, কিংবা “ওকে তো ওর বাবা-চাচা হাতে ধরে ব্যবসা শেখায়!” “আমারতো কেউ নাই, আমাকে কে শেখাবে, আমার কী হবে!” আরো অনেক হতাশা আমাদের জীবনে। কিন্তু আমরা কী কখনো চিন্তা করেছি আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান একটা জিনিস আছে যা দিয়ে এই সমস্যা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারি?
এই মূল্যবান জিনিসটি হলো “বই”। পৃথিবীতে যারা সফলতা অর্জন করেছে এবং যাদের আমরা সফল বলে জানি তাদের সবার জীবনভিত্তিক বইগুলো পড়েও আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি।
এছাড়া টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়েও আমরা আমাদের বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারি। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমেও আমরা অনেক অসাধারণ আইডিয়া পেতে পারি একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার জন্যে যা কাজে লাগাতে পারি আমাদের বাস্তবিক জীবনে। তাই “আমার কেউ নেই”, “আমার কী হবে” এই কথা গুলো থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে আমাদের। আর আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে নিজের সমস্যার সমাধান।
কাজে লাগাও নিজের অভিজ্ঞতা:
বইপত্রে আমরা অনেক কিছুই পড়ি কিন্তু মাঠে নামলে দেখা চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। সবকিছু বইতে লিপিবদ্ধ করা থাকে না। তাই বাস্তব জীবনে কিছু করতে তখনই পারা যায় যখন নিজের ব্রেইনটাকে খাটানো যায়।
আর কেউ যদি ব্রেইনটা একবার খাটায় সে হয়ে উঠবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেটা চাকরীর বাজার হোক আর ব্যবসা ক্ষেত্রেই হোক। তাই ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে ছাত্রজীবন থেকেই। আর অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর।
ধৈর্য এবং সততা যখন সফলতার মূল চাবিকাঠি:
“If you take shortcuts, you get cut short.” – Gary Busey
ছাত্র জীবনে শর্টকাটে বা খুব সহজে বড় হওয়ার স্বপ্নে আমরা অনেকেই বিভোর থাকি। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। বর্তমানে আমরা আশেপাশে অনেক ধরণের বিজ্ঞাপনও দেখে থাকি – এক সপ্তাহে অনর্গল ইংরেজি বলুন কিংবা ৫ দিনে হয়ে উঠুন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। এছাড়া বই এর নামও দেয়া থাকে শর্টকাট Success। আমাদের এটা মাথায় রাখা উচিত সব কিছু রাতারাতি হয়ে যাবে না।
আমাদের মাঝে এমন একটা প্রবণতা চলে এসেছে যে, আমরা মূল রাস্তায় যেতেও চাই না, সবাই শর্টকাট দিয়েই যেতে পছন্দ করি। কিন্তু আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ধৈর্য, কেননা ধৈর্য আমাদের ভিত্তিকে অনেক মজবুত করে। আজ যাঁরা পৃথিবীতে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত, আমরা তাদের পেছনের দিকে তাকালে দেখতে পাবো ধৈর্য ছিল তাঁদের অন্যতম বড় গুণ আর সততা ছিল তাদের মাথার মুকুট।
নেটওয়ার্কিং এবং নির্ভরযোগ্য টিম হয়ে উঠতে পারে তোমার সাফল্যের সিঁড়ি:
তোমার লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি সঠিক টিম তৈরি করতে তোমাকে কিছুটা পরিশ্রম করতেই হবে। কোন মানুষ সবদিক দিয়ে সম্পূর্ণ হয় না, তাই তোমার স্বপ্ন পূরণের অনেক বড় একটা অংশ হয়ে উঠতে পারে তোমার টিম।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কীভাবে টিম গড়ে তুলবো! থাকার জায়গা নাই, পকেটে নাই টাকা, টিম কীভাবে করবো? আসলে জিনিসটা অনেক সহজ। ছাত্র জীবনে তোমার টিম মেম্বার হয়ে উঠতে পারে তোমার স্কুল কিংবা কলেজের বন্ধুরাই।
তবে আর দেরি কেন? বন্ধুদের নিয়ে করে ফেলো একটি দক্ষ টিম যা কিনা তোমাকে করে তুলবে আরো অনেক বেশি পরিপূর্ণ। তোমরা ইতোমধ্যে অনেকেই জেনে গেছো আমাদের জীবনে নেটওয়ার্কিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ারেন বাফেট এর কাছে সময় টাকার মতই মূল্যবান
চাকরিজীবি কিংবা উদ্যোক্তা যাই হতে চাও না কেন! নেটওয়ার্কিং লাগবেই। তুমি যে ব্যাপারে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরে গড়ে তোলার চেষ্টা করো তোমার নেটওয়ার্ক। যার মাধ্যমে তোমার অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও অনেক গুণে বেড়ে যাবে।
“Dream without networking goes to drain”
“লোকে কী বলবে” না ভেবে এগিয়ে যাওয়া:
জীবনে চলার পথে আমাদের আশে পাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা সব কাজকেই কোন না কোনভাবে নেগেটিভ দিকে নিয়ে যাবেই। আর আমরা “মানুষ কী ভাববে” এই চিন্তাটা করতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের স্বপ্ন থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ি, হাল ছেড়ে দেই। কিন্তু আমরা কখনো ভেবেও দেখিনি আমাদের সমাজে যে সব নিয়ম, ধ্যান-ধারণা এসব আমাদের মত মানুষেরই তৈরি।
“Everything around you that you call life, was made up by people that were no smarter than you.”– Steve Jobs
তাই তুমি যদি তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজগুলো করে যাও এবং কে কী বলবে না বলবে এসব না ভাবো, তাহলে তোমার সফলতা আটকে রাখার মত কেউ নেই। তুমি যদি আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাও, পেছনে যে যাই বলুক না কেন নিজের কাজ করে যাও, তবে একদিন তোমার হাতেই ধরা দিবে সাফল্য। আর তোমার পেছনে যারা হাসি আর তামাশা করতো তারাও বিস্মিত হবে তোমার সফলতা দেখে।
প্রতিটি সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা:
পাঠ্যবইয়ে কতবারই সময়ানুবর্তিতার গল্প গুলো পড়েছি; কিন্তু সেগুলোকে শুধু পরীক্ষা পাশের উপায় বলেই জেনেছি। ওয়ারেন বাফেট আমাদের জানান সত্যিকার অর্থেই জীবনের সময়ের কত উপযোগিতা।
ওয়ারেন বাফেট এর কাছে সময় টাকার মতই মূল্যবান। তাঁর সাফল্যের মূলমন্ত্র হল সময়ের সঠিক ব্যবহার। ওয়ারেন বাফেটের মতে সবার হাতেই তো ২৪ ঘণ্টা সময়, এর সঠিক ব্যবহার যে করতে পারবে সেই এগিয়ে যাবে একধাপ। তাই সময় ব্যবহারে হতে হবে অনেক সতর্ক যদি তুমি হতে চাও একজন উদ্যোক্তা।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
তাহলে আর দেরি কেন? দ্রুত কাজে লাগাও এই টিপসগুলোকে আর ছাত্রজীবনেই হয়ে উঠো একজন সফল উদ্যোক্তা। আর ধৈর্য নিয়ে যারা টিপসগুলো পড়লে তাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। কেননা এই ধৈর্যর ফলেই আসবে সফলতা।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন