STARBUCKS theory: ভুল শুধরে নেওয়ার চমৎকার কৌশল!

November 3, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।

পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে বুকে হাতে দিয়ে বলতে পারবে জীবনে কোনদিন ভুল করে নাই! আমরা সবাই ভুল করি, কেউ বেশি কেউ কম। ভুল করা দোষের কিছু তা নয়, কিন্তু ভুল শুধরানোর চেষ্টা না করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া, অস্বীকার করা, অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া- এগুলো মোটেই ভাল কিছু নয়! অনেক ক্ষেত্রে এমন আচরণের পেছনে একটাই কারণ কাজ করে- ভুল কিভাবে শুধরাতে হয় সে ব্যাপারে না জানা। Ego খুব বাজে একটা জিনিস। ‘ক্ষমা চাইতে গেলে যদি অপমানিত হতে হয়?’ এমন নানান চিন্তা ভিড় করে মনে। তাই, কেমন হয় যদি বিশ্ব বিখ্যাত কফিশপ কোম্পানি স্টারবাকস (Starbucks) এর কাছে শিখে নেওয়া যায় ভুল শুধরে নেওয়ার চমৎকার একটি কৌশল?

Starbucks এ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ কফি পান করতে আসেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে তাদের শাখা- এতো বিপুল আয়োজনে ছোটখাটো ভুল কিন্তু হয়েই যেতে পারে! সেই ভুলগুলোকেই কিভাবে সামলে নেওয়া যায়, ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখা যায়- সেজন্য Starbucks এর একটি পদ্ধতি আছে। তাদের বিখ্যাত LATTE (ল্যাটে) কফির নামে এই থিওরি LATTE শব্দটির পাঁচটি বর্ণ পাঁচটি শব্দকে তুলে ধরেL = listen, A = acknowledge, T = take action, T = thanks এবং E = explanation. ধাপে ধাপে এই পাঁচটি বিষয় অনুসরণ করে যেকোন রকম সমস্যার মোকাবেলা করে স্টারবাকস, যেটি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও দারুণ কাজে দিতে পারে!

L=Listen

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মাঝে ঝগড়া বাধে তখন- যখন দুপক্ষের কেউ কারো কথা শুনতে চায় না, বুঝতে চায় না! তাই যেকোন ভুল বুঝাবুঝিতে এই ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ- অপর পক্ষ কী বলতে চায়, সেটি মন দিয়ে শোনা! তাহলেই কিন্তু ঝগড়াটা আর বাধার সুযোগ পায় না!

মনে করো, তোমাদের দুই বন্ধুর একটা গ্রুপ প্রজেক্ট করার কথা। সকাল বেলা তুমি ঘুমিয়ে আছো, তোমাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না! বন্ধুর তো মেজাজ চড়ে মহাখাপ্পা! তুমি বেলা করে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখলে একগাদা মিসড কল। কল ব্যাক করার সাথে সাথে বন্দুকের গুলির মতো ঝাড়ি শুরু হলো অপর প্রান্ত থেকে! এখন দোষ যেহেতু হয়েই গেছে, চুপচাপ ঝাড়িটা শুনে যাওয়াই নিরাপদ!

মাঝখান দিয়ে তুমি যদি কিছু বলতে যাও তখন বন্ধু আরো রেগে যেতে পারে- ভাববে যে একে তো কাজ করো নি এখন আবার অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করছো! তাই তাকে রাগটা ঝাড়তে দাও। একবার মন থেকে রাগের অনুভূতিটা বেরিয়ে গেলে মাথা ঠাণ্ডা হয়ে আসবে আপনা থেকেই, তখন কথা বলো তার সাথে। দেখবে, ঝগড়ার বদলে সুন্দরমতো একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে কথা বলে। এভাবেই ভুল শোধরানোর প্রথম ধাপের কাজ হয়ে গেল!

star

A=Acknowledge

আমি একবার আমার এক বন্ধুর সাথে একটা শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছিলাম প্রতিযোগিতার জন্য। সময় খুব কম, আমাদের শুটিং এর অনেক কাজ বাকি। ভোর ছয়টার ভেতর আমাদের বাসায় ওর চলে আসার কথা। আমি ফজরের নামাজ পড়ে অপেক্ষা করছি, এমন সময় ওর ফোন এলো। ‘তাশফিক, আমি এই প্রজেক্টে কাজ করবো না!’ আমার তো মাথায় বাজ পড়লো! কেন করবে না? সে বললো, তার কয়দিন কাজ করে মনে হয়েছে শুটিং, মিডিয়া এগুলো তার জন্য না। সে ফিন্যান্সে পড়বে, ডেস্কে বসে অফিসে কাজ করবে- এটাই তার স্বপ্ন!

আমার মেজাজ খারাপ হলো এতোদূর এগিয়ে এসেছি এখন কেন সে এই কথা বলছে! শুরুতে বললে তো আমি অন্য কাউকে নিতাম। খুব রাগারাগি হলো, কিন্তু একটা মানুষের যখন মন উঠে গেছে, তাকে দিয়ে জোর করে তো আর সৃজনশীল কাজ করানো যায় না। খাওয়ার টেবিলে বসে রাগ ঝাড়ছি, তখন আব্বু বললেন, ‘তোমার বন্ধুর একটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লেগেছে!’ আমি তো অবাক! ‘কোন দিকটা?’ ‘তোমার বন্ধু কিন্তু অজুহাত দেখাতে পারতো। বলতে পারতো সে অসুস্থ বা কোন সমস্যা আছে। সে কিন্তু এগুলো না করে একদম সত্যি কথাটা বলেছে!’

তখন আমারও মাথায় ঢুকলো ব্যাপারটা! আসলেই তো! এবং তখন নতুন করে একটা শ্রদ্ধা জন্মালো সেই বন্ধুটির প্রতি। আর দশটা বন্ধুর সাথে কখনো ঝগড়া হয়না, সবাই খুব সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলে, কিন্তু যখন বিশ্বাসের ব্যাপারটা আসে, এই বন্ধুটির নামই সবার আগে মাথায় আসে আমার! ঠিক সেরকম, একটা ভুল করে ফেললে আমরা অনেকেই অজুহাত বানাতে যাই, দোষটাকে ঢাকতে চাই। এভাবে হয়তো সাময়িক মুক্তি মিলবে, কিন্তু সত্যি কথাটা স্বীকার করে নিলে তাতে হারানোর কিছু নেই, ছোট হওয়ার কিছু নেই। বরং তোমার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, বিশ্বাসের জায়গাটা আরো মজবুত হবে।

T=Take Action

একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ- তুমি হয়তো খুব সুন্দর করে ক্ষমা চাইলে, মানুষটার মন একদম গলিয়ে ফেললে, কিন্তু ভুলটা শুধরানোর জন্য যদি পদক্ষেপ না নাও, তাহলে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না! এজন্য বুদ্ধিমান মানুষদের মাঝে ঝগড়া হয় খুব কম, কারণ তারা কে দোষ করেছে সেটা নিয়ে চেঁচামেচি করে সময় নষ্ট করে না, তারা সমাধান বের করার জন্য ঠাণ্ডা মাথায় একসাথে কাজ করে।

তোমার হয়তো প্রতিদিন ক্লাসে যেতে দেরি হয়ে যায়। এখন তুমি এজন্য বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাকে দোষ দিতে পারো, অথবা আরেকটু আগে বাসা থেকে বের হতে পারো! বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় গ্রুপে কাজ করার সময় নানা রকম সমস্যা হয়, কারো ভুলের জন্য হয়তো গোটা গ্রুপ ঝামেলায় পড়ে- যে গ্রুপগুলো সফল, দেখবে তারা কিন্তু ভুল করা গ্রুপ মেম্বারটিকে দোষারোপ করে না, বরং ঝামেলা থেকে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া যায় সেটি বের করার জন্য সবাই মিলে কাজ করে।

বোকা মানুষরা দোষারোপ করে প্রচুর সময়-শক্তি অপচয় করে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না! তাই সমস্যাটা কতো কঠিন সেটা নিয়ে মন খারাপ না করে সবাই মিলে সমাধানের জন্য কাজে লেগে পড়ো।

 

T=Thank

তোমার বন্ধু যদি তোমাকে ভুল করার জন্য ঝাড়ি দেয়- সুন্দর করে একটা ধন্যবাদ জানাও তাকে! শুনতে বেশ অবাক লাগে ব্যাপারটা, রাগারাগির জন্য ধন্যবাদ?! কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝবে আসলে ব্যাপারটা কতোটা ভাল হয়েছে দুজনের জন্যই!

যেমন ধরো আমাদের সবারই আব্বু-আম্মুর সাথে ঝগড়া হয়, রেগেমেগে একদম ইচ্ছা করে ঘর থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই! কিন্তু ঠিকই রাতের বেলা খাবার সময় ডাক পড়ে আম্মুর, ‘এই খেতে আয়!’ এটাই হচ্ছে খুব কাছের মানুষগুলোর সাথে সম্পর্ক- আবেগের বহিঃপ্রকাশগুলো অনেক স্বচ্ছ।

তোমার প্রতিবেশী- যার সাথে কথাবার্তা কেবল ‘আরে কেমন আছেন?’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তার সাথে কিন্তু তোমার কখনো ঝগড়া হবে না! কাছের মানুষদের সাথে হবে, আবার তোমার বিপদে সেই কাছের মানুষগুলোই সবার আগে এগিয়ে আসবে।

তুমি যদি কারো উপর কোন কারণে রাগ করো, সেটা তখনই প্রকাশ করলে ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সামনাসামনি কিছু না বলে মনের ভেতর রাগ পুষে বেড়ায়, এবং সেই ক্ষোভ জমতে জমতে একদিন বিস্ফোরণ ঘটে! তাই কোন কারণে কারো সাথে ভুল বুঝাবুঝি হলে ব্যাপারটা আলোচনা করে তখন মিটিয়ে নিলেই ভাল।

এখানে একটি মজার জিনিস হচ্ছে- কাছের মানুষগুলোর সাথে তোমার নিয়মিত দেখা হয়, কথা হয়, তাদের সাথে ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়াও সহজ। কিন্তু যেই মানুষগুলোর সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়- তাদের মনে কোন কারণে কষ্ট দিলে সেটি শুধরে নেওয়া খুব কঠিন! তাই বাসায় কোন মেহমান আসলে আমি চেষ্টা করি যতদূর সম্ভব আপ্যায়ন করার। মানুষটি হয়তো খুব অল্প কিছুক্ষণের জন্য এসেছে, কিন্তু আমি তার সাথে কেমন ব্যবহার করছি- আমার সম্পর্কে তার মনে তেমন ধারণাই তৈরি হবে। দেখা গেল কোন কারণে আমার মেজাজ খারাপ ছিল আমি দূর্ব্যবহার করেছি কারো সাথে- সেই মানুষটির সাথে আবার দেখা হলো পাঁচ বছর পর! এই পাঁচ বছর মানুষটির মনে আমার সম্পর্কে ‘খুব বদমেজাজী খারাপ একটা মানুষ’ এমন ধারণা রয়ে গেছে! কী সর্বনাশ! তাই দূরের মানুষদের সাথে আরও সাবধান!  

E=Explain

সবকিছুর জন্য একটা পরিবেশ পরিস্থিতি লাগে। তোমার সাথে তোমার বন্ধুর তুমুল ঝগড়া হয়েছে, তখন যদি তুমি আবার গিয়ে কারণ ব্যাখ্যা করতে যাও- তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে! সবকিছু মিটে যাওয়ার পর, সমস্যার সমাধান হওয়ার পর ঠাণ্ডা মাথায় চা খেতে খেতে তুমি যদি কারণটা বন্ধুর সামনে তুলে ধরো- তখন দেখা যাবে সেও সুন্দরমতো বুঝতে পারবে তোমার অবস্থানটি। তোমার সম্পর্কে তার মনে যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, সেটিও দূর হয়ে যাবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশান ইত্যাদি স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য 10 Minute School Skill Development Lab নামে ১০ মিনিট স্কুলের রয়েছে একটি ফেইসবুক গ্রুপ।

আমরা অনেক সময় খুব অভিমান করি। ‘ও কেন আমাকে ভুল বুঝলো?’ এমন ভাবি। কিন্তু ওর দিক থেকে চিন্তা করলে হয়তো তোমার মনে হবে ওকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই! তাই এই ব্যাপারগুলো উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নিলেই সবচেয়ে ভাল হয়।  

ভুল স্বীকার করতে জানা অনেক বড় একটি গুণ। ভুল স্বীকার করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, বরং মানুষের মনে তার সম্পর্কে ইতিবাচক একটি ধারণা তৈরি হয়। আমরা সবাই যদি নিজেরা ভুল করলে সেটা স্বীকার করি, সেটা শুধরে নেওয়ার জন্য কাজ করি এবং ‘Ego’ নামের বিষাক্ত শব্দটিকে মন থেকে ঝেড়ে সরিয়ে ফেলি- দেখবে জীবনটা হয়ে উঠবে অনেক সুন্দর!


১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন