আমরা বর্তমানে যে যুগে আছি সে যুগটিকে আধুনিক যুগ বলা হয়। আধুনিক যুগের আগেও যথাক্রমে প্রাচীন ও মধ্যযুগ ছিল। সপ্তাশ্চর্য একটি জনপ্রিয় তালিকার নাম যাতে সমকালীন সময়ে পৃথিবীর আশ্চর্যজনক মনুষ্য নির্মিত স্থাপনাসমূহের নাম স্থান পায়। এই স্থাপনাসমূহকে অবশ্যই হতে হয় ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্বসম্পন্ন। প্রাচীনকালে হেলেনীয় সভ্যতার পর্যটকেরা একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। ঐতিহাসিক হিরোডোটাস (৪৮৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ– ৪২৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) আলেক্সান্ড্রিয়ার প্রদর্শণশালায় বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। কিন্তু সে সময়ে তাঁদের প্রকৃত লিপিটির সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
সপ্তাশ্চর্য শব্দটির মধ্যেই একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতির ছোঁয়া আছে মনে হয় আমার কাছে। আর থাকবেই বা না কেন! শব্দটির মধ্যেই তো আশ্চর্য শব্দটি লুকিয়ে আছে। এই আশ্চর্যের ছোঁয়া লেগেছিল প্রাচীন যুগেও। প্রাচীন যুগে প্রতিষ্ঠিত সপ্তাশ্চর্যগুলো কী ছিল জেনে নেয়া যাক।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Video Editing with Premiere Pro
প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যগুলো হল:
রোডস নগরদ্বারে স্থাপিত কলোসাসের (গ্রিক সূর্যদেব) মূর্তি
১। গিজার মহা পিরামিড (Great Pyramid of Giza)
Great Pyramid of Giza এর অবস্থান মিশরের গিজা নামক স্থানে, নীল নদের পশ্চিম পাড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫৮৪ থেকে ২৪৬৫ অব্দের মাঝামাঝি সময়ে গিজায় এই পিরামিড বানানো হয়েছিল। এটি বর্তমানে মিসরের এল গিজা নামক স্থানের কাছে অবস্থিত। গিজার গোরস্তানের তিনটি পিরামিডের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন এবং বড় পিরামিড এটি। পিরামিডটিকে গ্রেট পিরামিড বা মহা পিরামিড বলা হয় কারণ পিরামিডটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল মিশরের সম্রাট ফারাও (সম্রাট) খুফু’র সমাধি বা কবর হিসেবে।
প্রাচীন মিশরে ফারাও রাজবংশের রাজারা একসময় রাজত্ব করতেন। সে সময়ে মিশরের মানুষেরা বেশ কিছু অদ্ভুত বিষয়ে বিশ্বাস করত। তারা বিশ্বাস করত পৃথিবীতে মানুষের বাস খুব স্বল্প সময়ের জন্য, আর মৃত্যুর পরবর্তী জীবন হলো অনন্ত সুখের। তাদের বিশ্বাস ছিল—মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ যদি অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তারা পরলোকে অনন্ত শান্তির জীবন যাপন করতে পারবে।
আরও পড়ুন: রোবটিক্স -এ হাতেখড়ি: রোবট তৈরির গাইডলাইন
২০ লক্ষ ত্রিশ হাজার (২.৩ মিলিয়ন) চুনাপাথরের ইট দিয়ে এই পিরামিডের আকতি দেয়া হয়। ১৪০ মিটার (৪৬০ ফুট) উঁচু পিরামিডে তিনটি প্রধান প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এর গ্র্যান্ড গ্যালারির দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার, উচ্চতায় ৮ মিটার। বিজ্ঞানীরা পিরামিডটির ভেতরে একটি ‘বড় শূন্যস্থানের’ সন্ধান পেয়েছেন। গ্রেট পিরামিড নিয়ে মিশরে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যা হল-
“Man fears time, but time fears the Pyramids.”
পিরামিডই প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একমাত্র নিদর্শন, যা আজও টিকে আছে। তবে বহাল তবিয়তে ঠিক না, কারণ পিরামিডের সাদা পাথরগুলো কায়রোতে বাড়ি বানানোর উপকরণ হিসেবে খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
২। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান (Hanging Gardens of Babylon)
এটি প্রাচীন যুগের অন্যতম আকর্ষণীয় সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি। ছোটবেলায় যখন বইয়ে পড়তাম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান খুবই অবাক লাগতো তখন। আসলেই কী এমন কোনো উদ্যান ছিল যা সত্যিই ঝুলে থাকতো? তখন আমরা কেবলই নামগুলো মুখস্ত করতাম। এখন আর আমরা অতটা আশ্চর্য হই না, কেননা সে যুগে মানুষ ভূমির সংস্পর্শ ছাড়া বাগান করার চিন্তাও করতে পারতো না। কিন্তু সে সময়ে এরকম একটা বিশাল পরিসরের বাগান করা হয়েছিল বলে সবার কাছে এই বাগান বা উদ্যানটি শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে অনেক বেশি সমাদৃত হওয়ায় ঝুলন্ত উদ্যান নামে মানুষের মধ্যে প্রচলিতে হয়ে পড়ে। উদ্যানটি ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে নির্মিত হয়। ব্যবিলনীয় সভ্যতার অন্যতম দৃষ্টান্ত এই উদ্যান।
নির্মাণের ইতিহাস
সম্রাট নেবুচাদনেজার II– এর (৬০৫ – ৫৬২ খ্রিষ্টপূর্ব) শাসনকালে তার নির্দেশনায় এটি নির্মাণ করেন। এই ঝুলন্ত বাগান গড়ে তোলার পিছনে তাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল তার প্রিয়তম সম্রাজ্ঞী। সম্রাট তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রাসাদের সামনে এই উদ্যান বা বাগানটি নির্মাণ করেন।
সম্রাট নেবুচাদনেজার ছিলেন ভীষণ আমুদে। নিনেভে দখল করার সময় মিডিয়ান সম্রাট তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। মিডিয়ান রাজকন্যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর রাজকন্যা হলেন ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞী। কিন্তু ব্যাবিলন সম্রাজ্ঞীর আদৌ ভালো লাগত না, কারণ মিডিয়া ছিলো পাহাড় পর্বতের দেশ। আর ব্যাবিলন ছিল সমতল ভূমি। সম্রাজ্ঞী পাহারী দৃশ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন।
সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মনের কথা বুঝতে পেরে তাকে খুশী করতে প্রাসাদের ওপর বিশাল পাহাড় তৈরি করেন। পাহাড়ের সঙ্গে তৈরি হলো মনোরম বাগান। সারা পৃথিবী থেকে চমৎকার সব উদ্ভিদ আর ফুল এনে সাজিয়ে দেয়া হল বিশ্ববিখ্যাত সেই বাগান। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব আনন্দ আর সুখ প্রদানের মাধ্যমে সম্রাজ্ঞীর জন্য ভালোবাসার প্রতীক অঙ্কন করতে।
নির্মাণশৈলী
উদ্যানটি নির্মাণ করার জন্য প্রথমেই স্থাপন করা হয় হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর দাঁড়িয়েছিল। বিশাল এই স্থাপনার ছিল বিভিন্ন তলা, ছিল বারান্দার মতন স্থান, সেসব স্থানে ছিল ফুল, গাছপালা। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেঁচানো নলে সাহায্যে।
৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।
৩। আর্টেমিসের মন্দির (Temple of Artemis)
Temple of Artemis ডায়নার মন্দির নামেও পরিচিত। এটি গ্রিক মন্দির যা নির্মাণ করা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে ইফেসাস অঞ্চলে। মন্দিরটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১২০ বছর। মন্দিরটি ছিল ৩৭৭ ফুট লম্বা ও ১৮০ ফুট চওড়া। পুরোটাই মার্বেল পাথরের তৈরি। এতে ১২৭ টি স্তম্ভ আছে প্রত্যেকটি ৬০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। মন্দিরের প্রতিটি দেয়াল জুড়ে বসানো ছিল মণি, মুক্তা, রুবি, পান্না আর হীরক খণ্ডের মত মহামূল্যবান রত্নরাজি।
প্রবেশ পথের দু’ধারে বসানো হয়েছিল ডায়ানার মূর্তি। এই মন্দিরটি ছিল প্রার্থণাঘর যা শিকার আর ফসল উৎপাদনের দেবী আর্টেমিসকে উৎসর্গ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরটি যেখানে বানানো হয়েছিল, সেই ইফেসাস বর্তমানে তুরস্কের মধ্যে পড়েছে। ৩৫৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে গথা জাতি (পূর্ব জার্মানের বাসিন্দা) এই মন্দিরটা ধ্বংস করে ফেলে। পুরাতাত্ত্বিকদের গবেষণা মতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়।
এটির ধ্বংসাবশেষ এখনও তুরস্কে পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে গবেষকরা খুঁজে বেড়িয়েছেন এই মন্দিরটির অবস্থান। অবশেষে ১৮৬৯ সালে জন টার্টল ঊড ও তাঁর অনুসন্ধানী দল মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। মন্দিরের ঐ এলাকা থেকে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
৪। অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি (Statue of Zeus at Olympia)
Statue of Zeus at Olympia পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি। জিউসের মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন গ্রিক ভাস্কর ফিডিয়াস খ্রিস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে। জিউস হলেন গ্রিক ঈশ্বরদের প্রধান, আর বিখ্যাত হারকিউলিসের পিতা। গ্রীক দেবাধিরাজ জিউসের মূর্তিটি ছিল প্রায় ৪২ ফুটের মতো লম্বা ও ৬ ফুট ব্যাসার্ধের। সাতজন মিস্ত্রী আড়াই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মূর্তিটি তৈরি করেন। সোনা, মূল্যবান পাথর এবং হাতির দাঁতে তৈরি মূর্তিটি একটি কাঠের কাঠামোর উপর ছিল বলে কথিত আছে।
ভাস্কর্যটিতে দেখা যায়, দেবতা জিউস একটি কাঠের উপর উপবিষ্ট আছে যেখানে তার ডান হাতে আছে একটি ছোট মূর্তি যা নির্দেশ করছে জিউসের জয় এবং জৌলুস। অপরদিকে তার সিংহাসনের বাম দিকে আছে একটি ঈগল যা নির্দেশ করছে জিউসের শক্তি ও তার প্রতি আনুগত্য। কিন্তু ভাস্কর্যটির বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য এই মূর্তিটি খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারের সাথে সাথে খ্রিষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে ধ্বংস করে ফেলা হয়। কারও কারও মতে, মূর্তিটি সেখান থেকে কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুল)-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সেখানে, অগ্নিকান্ডে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
৫। রোডস এর মূর্তি (Colossus of Rhodes)
মহাবীর আলেকজান্ডারের কথা সবারই জানা। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বীর হলেন আলেকজান্ডার। তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ২৩ বছর। এই অল্প সময়েই তিনি পৃথিবীর অনেক অংশজুড়ে তার রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। তার রাজ্যের মধ্যে আটলান্টিক সাগরের মেডিটেরিয়ান অঞ্চলের রোডস দ্বীপটিও ছিল। সাগর তীরে অবস্থিত সর্ববৃহৎ রোডস দ্বীপে নির্মাণ করা হয় এক বিশাল মূর্তি। Colossus অর্থ হল বিশালাকার মূর্তি। কিন্তু কতটা বিশাল? গ্রিক সূর্যদেবতা হিলিয়াস–কে রূপায়িত করা হয়েছিল ব্রোঞ্জ দিয়ে (আজও সূর্যকেন্দ্রিক কোনোকিছুকে helio- প্রিফিক্স বা উপসর্গ দিয়ে সূচিত করা হয়)।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Graphic Designing with Photoshop
Colossus of Rhodes নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৯২ থেকে ২৮০ অব্দে। গ্রিসের দ্বীপ রোডস–কে পাহারা দেয়ার জন্যই যেন দাঁড়িয়ে আছেন বিশাল হিলিয়াস যা রোডস দ্বীপের প্রবেশ–মুখে বানানো হয়েছিল। মূর্তিটি লম্বায় ছিল ১০৫ ফুট এবং এটি তৈরিতে সময় লাগে ১২ বছর। এই মূর্তি দুই স্তরে বিভক্ত। প্রথম স্তরটি ছিল ৪০ মেট্রিক টন ওজন বিশিষ্ট পাথরের ভিত্তি। এই ভিত্তির উপর তৈরি হয়েছে মূর্তির মূল কাঠামো। মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে, প্রয়োজন সাপেক্ষে কিছু লোহাও ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যবহৃত তামার ওজন ছিল ২৫০ মেট্রিক টন।
প্রাচীন যুগের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত ছিল রোডসের মূর্তি। নির্মাণের দিক থেকে সাতটি সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে এটিই সর্বশেষ আশ্চর্য কিন্তু ধ্বংস দিক থেকে প্রথম। খ্রিস্টপূর্ব ২২৮ অব্দে এক প্রলংকরী ভূমিকম্পে মূর্তিটির এক পা ভেঙ্গে যায়। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সারাসিন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করে মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।
৬।আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর (Lighthouse of Alexandria)
লাইটহাউজ বললে খুব সহজেই সবাই চেনেন, বাংলা নাম বাতিঘর। এটিকে অনেক সময় আলেকজান্দ্রিয়ার “আলোক গৃহ” নামেও বলা হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় দ্বিতীয় টলেমীর রাজত্বকালীন খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দের দিকে ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী দ্বীপ ফ্যারোস-এ লাইটহাউজ তৈরি করা হয়। এই বাতিঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল নাবিকদেরকে সমুদ্র বন্দরের ভেতরে দিক-নির্দেশনা দেয়া। প্রথমে এটিকে বন্দরের পরিচিতি চিহ্ন হিসেবে তৈরি করা হলেও পরবর্তীকালে এটি বাতিঘর হিসেবে কাজ করে। এখনতো বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে আকাশ অবধি আলোকে ছুঁড়ে দিতে দেখি আমরা কনসার্টে। কিন্তু সে যুগে না ছিল বৈদ্যুতিক বাতি, না ছিল টর্চ-লাইট। তাই কুপির বড়সড় সংস্করণ বলা যায় এই বাতিঘরকে।
বাতিঘরের মূল ভিত্তিভূমির আয়তন ছিল ১১০ বর্গফুট। উচ্চতা ছিল ৪৫০ ফুট যা একটি ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। মূল কাঠামোর সম্পূর্ণ অংশে একটা প্যাঁচানো সিঁড়ি ছিল। এই সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হত। বাতিঘর তৈরির সময় ৪৫০ ফুট উঁচুতে যে বিশাল অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্বে সেটি আর কেউ নিভতে দেখেনি। ৫০ মাইল দূর থেকেও বাতিঘরটি দেখা যেত। ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এটি ঝড়ে আর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর ১৪শ শতাব্দীর কোনো এক সময় এক ভূমিকম্পে এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়েছে ভূমধ্যসাগরের তলদেশে।
৭। হ্যালিকারনেসাসের সমাধি মন্দির (Mausoleum of Halicarnassus)
Mausoleum of Halicarnassus খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অবস্থিত কারিয়া রাজ্যে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান তুরস্কের বোদরাম-এ, যেখানে ছিল প্রাচীন শহর কারিয়া, তারই হ্যালিকারনেসাস নামক স্থানে এক বিশালাকায় সমাধি মন্দির (মন্দির শব্দের অর্থ কিন্তু ‘ঘর’) বানানো হয়। রাজা মোসোলাস-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে এটি বানিয়েছিলেন রাণী আর্তেমিসিয়া (তিনি ছিলেন তাঁর আপন বোনও, তখনকার সময়ে আপন বোনকে বিয়ে করা সামাজিকভাবে ট্যাবু ছিল না)।
সেই সময়কার সেরা ভাস্করদের দিয়ে এটি বানানো হয়েছিল। আর এর জাঁকজমকই আসলে একে এত সুনাম দিয়েছিল। এই সমাধি স্তম্ভটি ১৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ মার্বেল পাথরে। এটি তিন স্তরে বিভক্ত ছিল। প্রথম স্তরে আয়তাকার বিশাল এক প্রস্তর ভিত্তি। দ্বিতীয় স্তরে ছিল ৩৮টি থাম, যার প্রতিটির উচ্চতা ছিল ৫৬ ফুট। তৃতীয় স্তরটি ছিল সোজা ঊর্ধ্বাকাশে উঠে যাওয়া বিশালাকৃতির পিরামিড আকারের গম্বুজ। গম্বুজের উচ্চতা ছিল ৫০ ফুট।
সম্ভবত ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এটি, আর এর ধ্বংসাবশেষ লোকজন বাড়ি–ঘর বানাতে কাজে লাগিয়ে ফেলেছিল। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, কিন্তু আজও mausoleum শব্দটি রয়ে গেছে আমাদের অভিধানে। মোসোলিয়াম শব্দের অর্থ: জাঁকজমকপূর্ণ সমাধি।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল করো এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন