বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় সমস্যা- আত্মবিশ্বাসহীনতা

May 3, 2017 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও ।

পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলছি, তুমি যদি বুঝে থাকো যে তোমার আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন, এটা খুবই অসাধারণ একটা ব্যাপার। অথবা, আরও অসাধারণ ব্যাপার যদি তুমি আত্মবিশ্বাসী কিন্তু, আরো আত্মবিশ্বাসী কিভাবে হওয়া যায় তা জানতে আগ্রহী হও। অতএব, আত্মবিশ্বাসী হওয়া কেন দরকার সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। কাজ করার সময় যদি তোমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসহীনতা কাজ করে, তাহলে দেখবে সাফল্য অর্জনটাও বেশ দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে! আমেরিকার বিখ্যাত নাট্যকার David Storey বলেন- 

Self-confidence is the memory of success.”

১. আত্মবিশ্বাসহীনতা কমাবার প্রথম নিয়ম: নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো

আমাদের সাথেই একদল মানুষ রয়েছে তারা যা করে সে ব্যাপারে তাদের নিজের ওপর কোন ভরসা থাকে না। অর্থাৎ, পদে পদেই মনে হয় যে, আমি কি ঠিক করছি? কোথাও কি ভুল হচ্ছে? এরা যে সমস্যায় ভোগেন সেইটিই আত্মবিশ্বাসহীনতা। আরেকদল মানুষ এই অনুভূতির ভেতর দিয়েই যান না- তারাই আত্মবিশ্বাসী।

এই দুই দলের মানুষের মধ্যে পার্থক্য একটাই- যারা আত্মবিশ্বাসী তারা বিশ্বাস করেন যে তাদের মধ্যে যোগ্যতা আছে কাজটা করার, তারা সেই কাজ করার সুযোগ ডিজার্ভ করেন। পাশাপাশি তারা বিশ্বাস করেন তার কাজটা এবং তিনি নিজে মূল্যবান।
অতএব, প্রথমেই তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, তুমি মূল্যবান। তুমি যোগ্য, তোমার অধিকার আছে এই সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবার, ভালোবাসা পাবার, সম্মান পাবার এবং এটাই স্বাভাবিক।

একবার ভেবে দেখো, এই পৃথিবীতে তোমার বেঁচে থাকাটা কত সৌভাগ্যের একটা বিষয়। তুমি নিজেকে যত ক্ষুদ্রই মনে করো না কেন, তোমারও একটা শৈশব আছে, কৈশোর আছে, তোমার জীবনেও এমন অনেক মুহূর্ত আছে যা অন্য কারো নেই। তোমারও কোন না কোন বিষয়ে অন্যদের থেকে দক্ষতা আছে। যদি চাও যে অন্যদের চোখে তোমার আত্মবিশ্বাসী চেহারা ধরা পড়ুক, তবে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো।

self-confidence hacks

২.পাওয়ার পোজিং:

প্রথমেই, নিজের দাঁড়ানোর, বসার এবং মানুষের সাথে কথা বলার ভঙ্গি ঠিক করো। মানুষ দূর থেকেই তোমার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দেখে তোমার বিষয়ে ধারণা করে নেয়। তাই, তুমি কিছু বিশেষ উপায়ে দাঁড়ালে, বসলে বা কথা-বার্তা বললে আশেপাশের মানুষের মনে তুমি আত্মবিশ্বাসী- এই ধারণা তৈরি হবে। আর নিজেকে ভালোভাবে অন্যের সামনে প্রেজেন্ট করার মাধ্যমে তোমার নিজের মধ্যেও  self-confidence তৈরী হবে। একটাই তো জীবন, মাথা নিচু করে থাকলে সামনে কী আছে দেখবে কিভাবে?

৩. গোমড়ামুখো হলেই আত্মবিশ্বাসহীনতা বাড়ে:

ছোটবেলায় ফিরে যাও একটু। মামা, চাচা, খালা, ফুপু, স্কুল টিচারদের কথা ভাবো। তাঁদের মধ্যে কারা তোমার প্রিয় ছিল? এবার আরেকটু ভালো করে দেখ, যাঁরা প্রিয় তাঁরা সবাই কিন্তু তোমার সামনে হাসিমুখে থাকতেন। যারা গোমড়া মুখে থাকে, তাদের কাউকেই সহজে ভালো লাগে না। এখন যদি গোমড়মুখো চাচা প্লেস্টেশন থ্রি কিনে দেয় তো ভিন্ন কথা। ওটা ব্যতিক্রম। কিন্তু সহজেই লাইকেবল হতে গেলে এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা কমাবার অ্যাকশন নিতে গেলে, মুখে হাসি ধরে রাখার বিকল্প নেই। তাই বলে সব জায়গায় গিয়ে আবার দাঁত কেলিয়ে বেড়াতে বলছি না। প্রসন্ন একটা এক্সপ্রেশন ধরে রাখা উচিত।

[ten_Ms_ad type=”banner” ad_id=”66897″]

৪.আই কন্টাক্ট:

কেন জানি না, আই কন্টাক্টের কথা শুনলেই আমার একটা গানের কথা মনে পড়ে, চোখ যে মনের কথা বলে। যখনই কারো সাথে কথা বলবে তার চোখে চোখ রেখে কথা বলার চেষ্টা করো, এটা তোমার কথা আর কাজে লেভেল অফ কনফিডেন্সের ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট করে! কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকাবে না বা অন্য কিছু করবে না। এটি আত্মবিশ্বাসী হবার একটি অন্যতম চিহ্ন। অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলা আত্মবিশ্বাসহীনতা প্রকাশ করে। 

৫. আত্মবিশ্বাসহীনতা কমাতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী: 

তোমাকে নিয়ে বলা নেতিবাচক কথাগুলো মনে ধরে রাখবে না। আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর মধ্যে কেউ প্রশংসা করে আবার কেউ ভুল ধরিয়ে দিয়ে কাজ আদায় করতে চেষ্টা করে। বুঝতে চেষ্টা করো অপর পক্ষের  মানসিকতা কেমন। হয়তো সে তোমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছে তোমার কাছ থেকে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ আদায় করতে। আর সেটা কি তোমার যোগ্যতার কারণেই নয়? চেষ্টা করো নিজের ভুলগুলো শুধরে নেবার। আমি খুব অগোছালো, ডেডলাইন ছুঁতে পারি না, ধীরে কাজ করি, অন্যদের মত ভালো প্রেজেন্টেশন করতে পারি না ইত্যাদি নিজের নেতিবাচক দিকগুলো কখনোই কর্মস্থলে বলতে যাবে না। এতে আত্মবিশ্বাসহীনতা বাড়বে বই কমবে না। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো বলো, এতে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

self-confidence hacks

৬. নিজের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তিগুলো লিখে রাখো:

মানুষজনের কথায় কেবল নিজের অপ্রাপ্তি নিয়ে হতাশায় ভুগবে না। বরং ভাবো, নিজের প্রাপ্তিগুলো নিয়েও। লিখে ফেলো একটি ডায়েরিতে আগামীর লক্ষ্যও! দেখবে হারানোর চেয়ে অর্জন আর সম্ভাবনায়ই ভরে উঠেছে তোমার ডায়েরির পাতা ও মন।

৭. আগ্রহের জায়গায় দক্ষতা বাড়ালে কমবে আত্মবিশ্বাসহীনতা:

ভাষা, পড়াশোনা বা প্রযুক্তি, যেখানেই তোমার আগ্রহ থাকুক না কেন, দক্ষতা বাড়াও। তোমার পেশাদারী আত্মবিশ্বাসে একটি নতুন পালক যুক্ত হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

৮.ক্ষতিকর মানুষদের সঙ্গ আত্মবিশ্বাসহীনতা বাড়ায়:

যারা কেবল তোমার সম্পর্কে নেতিবাচক কথাই বলে ও সুযোগ পেলে তোমার ক্ষতি করতেও দ্বিধা করবে না, হোক বন্ধু বা সহকর্মী, এদের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখো। কনফিডেন্স লেভেল কমাতে, আত্মবিশ্বাসহীনতা বাড়াতে এদের জুড়ি নেই।

সাফল্য প্রত্যাশা করো এবং ততটুকুই কাজ নাও, যতটা শেষ করতে পারবে। নিজেকে দায়িত্বশীল প্রমাণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ কাঁধে নিয়ে ভালোভাবে না করতে পারলে সেই ব্যর্থতা তোমার আত্মবিশ্বাসহীনতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এর চেয়ে যতটুকু সম্ভব ততটুকু কাজ আর ভালো দক্ষতাকে মূলমন্ত্র করেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাও।
আর কাজ করার সময় মনে রাখো,

You are the only person on earth who can use your ability.


১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/

১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের ?তে? প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন