‘আপনার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কী?’ এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে সংকোচবোধ করলেও আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই উত্তরটা হচ্ছে আমাদের হাতের স্মার্টফোন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের ফোন। আমাদের যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য, ফাইল কি সংরক্ষণ না করছি এই স্মার্টফোনে! তাই আমাদের সকলের জন্য হ্যাকার এক ত্রাসের নাম। একটু সতর্ক হলেই কিন্তু হ্যাকারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটিকে। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
যেভাবে স্মার্টফোন হ্যাক করা হয়
(১) স্মার্টফোন হ্যাক করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আপনার ফোনটি কিছুক্ষণের জন্য হাতে পেলে স্পাই অ্যাপ ইনস্টল করে ফেলা। স্পাই অ্যাপ হচ্ছে মোবাইল ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন। যেমন: স্পাই ফোন অ্যাপ, স্পাইজি, স্পাইএরা ইত্যাদি। এসব অ্যাপ দিয়ে আপনার জিপিএস লোকেশন, অনলাইন অ্যাক্টিভিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ও স্কাইপের কমিউনিকেশন ট্র্যাক করা যায়।
(২) এয়ারপোর্ট বা পাবলিক রেস্টুরেন্টে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে হ্যাক করা যাবে আপনার স্মার্টফোন। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি অজান্তেই আপনার সকল ট্রাফিক শেয়ার করে থাকেন আপনার চারপাশের সকলের সাথে।
(৩) অজানা ইউএসবি দ্বারা ফোন চার্জ দিলে আপনার ফোনের তথ্যাদি ট্রান্সফার হয়ে হ্যাক হবার সম্ভাবনা থাকে। যদিও সব ফোন সমসংখ্যক ডাটা ট্রান্সফার করে না তবে তারা আপনার ফোনের ডিভাইস নাম, ধরণ, সিরিয়াল নাম্বার, ম্যানুফ্যাকচারার, অপারেটিং ও ফাইল সিস্টেম তথ্য ও ইলেক্ট্রনিক চিপ আইডি ট্রান্সফার করে দিতে পারে। আর এইসব তথ্যাদি আপনার ফোন হ্যাক করতে যথেষ্ট।
(৪) এসএমএস ফিশিং হলো ফোন হ্যাক করার আরেকটি পরিচিত পদ্ধতি। যেমন ধরুন আপনার ফোনে কেউ মেসেজে একটা লিংক দিলো। আপনি সেই লিংকে ঢুকলে আপনার সব ইনফরমেশন ট্র্যাক করা যাবে। তথা ফোনটি হ্যাক করা যাবে।
যেভাবে বুঝবেন আপনার স্মার্টফোন হ্যাক হয়েছে কি না
(১) আপনার ফোনে এমন অ্যাপ্লিকেশন আবিষ্কার করবেন যা আপনি নিজে ইনস্টল করেননি।
(২) আপনার ফোন ধীর হয়ে যাবে। ক্লিক বা টাচ করার সাথে সাথে কাজ করবে না।
(৩) আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এটি মূলত হয় আপনার অজান্তেই ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো অ্যাপ্লিকেশন চালু থাকার কারণে।
(৪) আপনার স্মার্টফোন উষ্ণ হয়ে উঠবে। এমনকি যখন সেটি আপনার হাতে নেই অর্থাৎ আপনি সেটি চালাচ্ছেন না তখনও। এর কারনও অজানা কোনো অ্যাপ্লিকেশন চালু থাকা।
(৫) আপনার স্মার্টফোন নিজে নিজেই রিবুট নিবে অর্থাৎ বন্ধ হয়ে আবার চালু হবে। আরও ভয়ানক ব্যাপার হলো, এমনকি কখনো দেখবেন তাতে একাই ফোন নাম্বার টাইপ করা হচ্ছে, কোনো অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হচ্ছে ইত্যাদি।
(৬) আপনার ফোনের রিসেন্ট কললিস্টে অচেনা ফোন নম্বর দেখতে পাবেন যাদের আপনি ডায়াল করেননি।
(৭) আপনি চাইলেও আপনার ফোনটি সুইচ অফ করতে পারবেন না। সেটি করতে গেলে ফোনের ব্রাইটনেস বেড়ে যাওয়া, কোনো অ্যাপ চালু হওয়া ইত্যাদি অদ্ভুত আচরণ করবে।
(৮) ফোনে কথা বলার সময় এমন আওয়াজ বা প্রতিধ্বনি শুনতে পাবেন যা আপনার আশেপাশে নেই।
(৯) মোবাইল ব্রাউজারে ওয়েবসাইটের অ্যাপিয়ারেন্স বা চেহারা বদলে যেতে পারে।
(১০) আপনার ফোনের ডাটা ইউসেইজ হঠাৎ বেড়ে যাবে। আপনি লক্ষ্য করবেন আপনি যতটা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তার থেকে বেশি ব্যবহার রেকর্ড হবে।
(১১) আপনার ফোনে হঠাৎ সময়ে সময়ে পপ-আপ চালু হবে।
আরো পড়ুন: ইমোজির কারসাজি
হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
(১) আপনার ফোন আপডেটেড রাখুন। আপনি যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন সেগুলোর আপডেটের ভার্শন আসলেই ইনস্টল করে নিন। পুরাতন ভার্শন ব্যবহার করবেন না। কথাটি কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আপডেট করা একটি ক্লান্তিকর ও বিরক্তিকর প্রক্রিয়া হতে পারে, এবং এটি মাঝে মাঝে আপনার ব্যবহৃত পরিচিত ইন্টারফেসে পরিবর্তনের সৃষ্টি করে। তবুও আপনার স্মার্টফোনের সকল অ্যাপ্লিকেশন আপডেটেড রাখা উচিত।
(২) আপনি যখন একটি স্মার্টফোন অ্যাপ ইনস্টল করেন, তখন আপনাকে আপনার ফাইল, ক্যামেরা অ্যাক্সেস সহ বিভিন্ন অনুমতি চেয়ে একটি মেসেজ প্রদর্শন করে। সেই মেসেজটি সতর্কতার সাথে পড়ে, ভেবেচিন্তে তারপর তাতে সম্মতি দিন। এটি বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য, যেহেতু গুগলের অ্যাপ পরীক্ষণ প্রক্রিয়াটি অ্যাপলের মতো সূক্ষ্ম নয়, এবং রিমুভ করার আগে প্লে-স্টোরে মাস খানেকের মতো কোনো ভাইরাসযুক্ত অ্যাপের অবস্থান নেয়ারও রেকর্ড রয়েছে।
এছাড়াও অ্যান্ড্রয়েড তৃতীয় পক্ষের উৎস থেকে অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করতে দেয়। এই যেমন আমাজনের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপস্টোরকে সেবা পরিচালনার জন্য অনুমতি দেয়, কিন্তু এটি কখনো কখনো বিপদজনক অ্যাপকেও আপনার ফোনে প্রবেশের সহজ পথ তৈরি করে দেয়। তাই কোনো অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে কিছু ইনস্টল না করার পরামর্শ থাকলো।
(৩) যদি আপনার ফোনের অ্যাপ্লিকেশনগুলি সহজ ও নিরাপদ বলে মনে হয় তবুও তাদের পরবর্তী আপডেটগুলি তাদের আরো ভয়ানক কিছুতে পরিণত করতে পারে। আপনার স্মার্টফোনে সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলির পর্যালোচনা করার জন্য দুই মিনিট সময় নিন এবং দেখুন তারা কোন অনুমতি ব্যবহার করছে। আপনি ফোনের প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য পাবেন।
অ্যানড্রয়েডে কোন অ্যাপ কোন অনুমতি ব্যবহার করছে তা জানা একটু কঠিন, কিন্তু Avast ও McAfee-এর ফ্রি প্যাকেজ-সহ প্রচুর পরিমাণ সিকিউরিটি অ্যাপ রয়েছে। যদি আপনি এমন কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার চেষ্টা করেন যা বিপদজনক, তখন এগুলো আপনাকে সতর্ক করে। আবার যদি “ফিশিং” কৌশলের ধোঁকায় আপনি কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে একটি পাসওয়ার্ড দেয়ার চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রেও এরা আপনাকে সতর্ক করে থাকে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Web Design Course
(৪) আপনার ফোনে পাসকোড লক সিস্টেম চালু রাখুন। আপনার ফোন হাতে পেলেই যে কেউ যেন তা ব্যবহার করতে না পারে তাই পাসকোড ব্যবহার করুন। পাসকোড নির্বাচনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী কোড ব্যবহার করবেন যা সহজে আন্দাজ করা যায় না। তবে বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাস-এর ব্যবস্থা রয়েছে যা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
(৫) পূর্ব পরিকল্পনা করুন, আপনার ফোন যদি চুরিও হয় তবু আপনার ডাটা নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত থাকে। সেটিংস এমন রাখুন যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভুল পাসকোড দিলে তা আপনাতেই ফোনের সব ডাটা মুছে ফেলে। যদি মনে করেন এই প্রক্রিয়া একটু ঝুঁকিপূর্ণ তাহলে ভুলবেন না, গুগল ও অ্যাপল উভয়েরই “ফাইন্ড মাই ডিভাইস” সার্ভিস চালু রয়েছে যা দ্বারা আপনি একটি ম্যাপের মাধ্যমে দেখতে পাবেন আপনার ফোন কোথায় আছে। অ্যাপল ব্যবহারকারীরা Settings > iCloud > Find My iPhone অপশনটি অন রাখবেন এবং অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা https://myaccount.google.com/intro/find-your-phone -এই সাইটে গিয়ে আপনার ফোন লোকেশন জানতে পারবেন। তাই ফোনের লোকেশন অপশনটি সবসময় অন রাখুন।
(৬) অটো-লগইন একটি খুব সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে যেহেতু একটি ভার্চুয়াল কীবোর্ড পাসওয়ার্ড টাইপ করতে পারে। একজন মানুষ কেবল আপনার ব্রাউজার ওপেন করলেই সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছে, ব্যাপারটি ঝুকিপূর্ণ নয় কি? নিশ্চয়ই হ্যাঁ। তাই অটো লগইন অপশন কখনোই চালু রাখা উচিত না। আপনার কাছে অনুমতি চেয়ে ‘Would you like to save your password for this site?’ এমন ধরনের একটি মেসেজ প্রদর্শন করবে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত তাতে অসম্মতি দেয়া। যদি না আপনি নিশ্চিত থাকেন যে আপনার ফোন অন্য কেউ কখনোই ধরবে না, তাহলে আপনার উচিত প্রতিবার কাজ শেষে অ্যাকাউন্ট লগ-আউট করা।
(৭) আপনার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে ফোনের ডাটা সংরক্ষণ করুন। তারপর একটি বাহ্যিক হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে তথ্যগুলি ব্যাক আপ করুন। আপনি যদি আপনার ফোনে খুব বেশি কিছু সংরক্ষণ করে থাকেন তবে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ সিস্টেমের মাধ্যমে তা করতে পারেন।
(৮) আপনি হয়তো জানেন যে একটা ওপেন ওয়াইফাই ব্যবহার ঝুকিপূর্ণ তবে আপনি সত্যিই জানেন না এই ঝুঁকি কতটা গুরুতর। আপনার চারপাশে যে কেউ আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি দেখতে বা জানতে পারবে। তাই পাবলিক ক্যাফে রেস্টুরেন্ট বা যেকোনো স্থানে ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
(৯) অনেক অ্যাপ আপনার ফোনের লকস্ক্রিনে নোটিফিকেশন বা বিজ্ঞপ্তি পপ আপ করে। এই বিজ্ঞপ্তিগুলি কী প্রকাশ করতে পারে সে বিষয়ে চিন্তা করা উচিত।
(১০) এককভাবে বিভিন্ন অ্যাপের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ধরুন আপনার ফোনে লক দেয়া আছে কিন্তু যদি ঘটনাক্রমে আপনি ফোন ব্যবহার করার সময় অর্থাৎ ফোনের লক খোলা অবস্থায় কেউ ফোন হাতে পায় তাহলে সে যেকোনো অ্যাপ, ফোল্ডার, ফাইলে ঢুকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি জানতে পারবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত অ্যাপগুলোতে পাসওয়ার্ড দিন।
যদিও অ্যান্ড্রয়েডে এককভাবে অ্যাপ লক করার নিজস্ব সিস্টেম নেই তবে বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন ‘ফোল্ডার লক’ বা ‘এভিজি এন্টিভাইরাস ফ্রি’ দিয়ে তা করা যায়।
(১১) বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, জিমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ ইত্যাদি সবকিছুর জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে আপনি একইসাথে সব হারাবেন যখন আপনার যেকোনো একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখা স্বাভাবিকভাবেই কষ্টকর। এজন্য ব্যবহার করতে পারেন ‘Lastpass’, ‘Dashlane’ ইত্যাদি অ্যাপ।
তাহলে হ্যাকারের কবল থেকে আপনার স্মার্টফোনটি রক্ষা করতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন আজই।
Reference:
- https://www.theguardian.com/technology/2017/mar/26/12-ways-to-hack-proof-your-smartphone-privacy-data-thieves
- https://m.wikihow.com/Prevent-Your-Cell-Phone-from-Being-Hacked
- https://blog.avira.com/how-to-protect-your-smartphone-against-hackers/
- https://brightside.me/inspiration-tips-and-tricks/6-clear-signs-that-your-phone-was-hacked-386010/
- https://www.youtube.com/watch?v=IZy6Z9_2ZHQ&t=138s
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন