“সময় নেই” এই আক্ষেপ আমাদের সবার। মাঝেমধ্যে ভাবি- “ইশ! দিনটা ২৪ ঘণ্টার না হয়ে যদি ৪৮ ঘণ্টার হতো তাহলে কতো কতো কাজ করে ফেলতে পারতাম!” মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে এতো ব্যস্ততা, ছুটোছুটি- এরই ফাঁকে কিন্তু অনেকটা সময় অপচয় হয়ে যায় প্রতিদিন! আমরা সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে জানলে খুব অল্প সময়েই অনেকখানি কাজ সেরে ফেলা সম্ভব, এবং সেজন্য দারুণ কাজের একটি কৌশল হচ্ছে “RAC Method”!
RAC Method কিভাবে কাজ করে?
RAC Method খুব সহজ তিনটি ধাপ নিয়ে গঠিত। Record, Analyze, এবং Change.
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমাদের এই যে নানারকম ব্যস্ততা, এর ভেতর সত্যিকারের কাজের পরিমাণ আসলে অনেক কম! আমাকে সেদিন একজন জিজ্ঞেস করলো, “সারাদিন কি কি করলে তুমি?” উত্তর দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম বলার মতো তেমন কিছু আসলে খুঁজে পাচ্ছি না! এমন নয় যে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি, নানারকম কাজেকর্মে ব্যস্ত ছিলাম দিনজুড়ে কিন্তু খেয়াল করে দেখলে সেগুলো কোনটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়!
RAC Method এর মাহাত্ম্য এখানেই, সময়কে সচেতনভাবে কাজে লাগানোর কাজে দারুণ সাহায্য করে এ কৌশল।
1st Step: Record
একটা প্ল্যান করলে কেমন হয়? আগামীকাল সকাল থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেই যেই কাজে সময় কাটবে সারাদিন সেগুলো সব কোথাও লিখে রাখতে হবে। একদম খুঁটিনাটি সব কাজ, হোক যতই গুরুত্বহীন তাই বলে বাদ দেওয়া যাবে না।
যেমন ধরা যাক পড়ার টেবিলে পুরোটা সময় কি বইয়ের পাতায় কাটে? ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকে নোটিফিকেশন চেকসহ আরো
কতো জায়গায় ঢুঁ মারি আমরা পড়তে বসে! তেমনি প্রতিটা কাজে কতোটা সময় কাটলো সেটার একটা Record রাখলে Time Management গুছিয়ে আনা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
2nd Step: Analyze
দিনের শেষে সারাদিন কি কি করলাম সেটার তালিকা নিয়ে যদি বসি, আমি বাজি ধরে বলতে পারি আমাদের অনেকেই আবিষ্কার করবে দিনের বিশাল একটি সময় কেটে গেছে একদম Unproductive সব কাজে!
যেই চ্যাপ্টারটা আধ ঘণ্টায় সমাপ্ত করা যেত সেটা পড়তে লেগেছে দেড় ঘণ্টা! কারণ পড়ার ফাঁকে বারবার বিভিন্ন রকম কাজে ব্যস্ত ছিলাম- মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া, নোটিফিকেশন চেক করা, প্রতি দশ মিনিট পরপর
ফেসবুকে একটা ঢুঁ মেরে আসা..
মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা যখন পড়তে বসে এসব করি তখন সেটাকে দোষের কিছু মনে হয়না, মনে হয় “জাস্ট দুই মিনিট ঘুরে
আসলে কিচ্ছু হবে না!”
কিন্তু এই দুই মিনিটের Distraction এ হারানো মনোযোগ ফিরে পেতে যে দশ মিনিট নষ্ট হয় সেটা কিন্তু খেয়াল করি না! এবং সেজন্যই আমাদের অনেকের চিরন্তন আক্ষেপ, “সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকি পড়া আগায় না!”
এখানে একটি মজার ব্যাপার রয়েছে, আমাদের মন কিন্তু ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে সময় হিসেব করে না, তার নিজস্ব একটি গতি রয়েছে। যখন আমরা পছন্দের কোন কাজ করি তখন সময় যে কিভাবে পেরিয়ে যায় টেরই পাওয়া দায়! এজন্যই বন্ধুদের আড্ডায় পাঁচ মিনিটের জায়গায় পাঁচ ঘণ্টা কেটে যায়, ফেসবুকে দুই মিনিটের জন্য ঢুকে দুই ঘণ্টা দেখতে দেখতে কেটে যায়, সকালে পাঁচ মিনিটের Extra ঘুম এক ঘণ্টায়ও শেষ হয়না, কিন্তু পড়তে বসে দশ মিনিটেই হাঁপিয়ে যাই!
তাই আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ সব কাজ- “নোটিফিকেশনটা দেখেই বের হয়ে যাচ্ছি”, “দশ মিনিটই তো আড্ডা দিয়েছি”, “এই জাস্ট মেসেজটা পাঠিয়ে নেই” গুলোই সবচেয়ে বেশি সময় খেয়ে নেয়। আমাদের মন সেটা ধরতে পারে না সেভাবে, কিন্তু এসবে কতোটা সময় কাটে সেটার তালিকা করলে বিস্ময়ে মুখ হাঁ হয়ে যাবে নিশ্চিত!
তাই সারাদিনের কাজের ফিরিস্তি থেকে বাছাই করতে হবে কোন পাঁচটা কাজে সবচেয়ে বেশি সময় অপচয় হয় আমাদের। লক্ষ্য থাকবে একটাই, পরদিন এই পাঁচটা কাজ যেন অবশ্যই এড়িয়ে চলি, সেটা একদমই সম্ভব না হলে অন্তত কাজগুলোয় সময়ের ব্যাপ্তি যেন যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনি।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
3rd Step: Change
দিনের শুরুতে যদি একটা ছোট তালিকা বানিয়ে ফেলি- আজকে আমার জন্য কোন পাঁচটা কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে কিন্তু Time Management অনেক সহজ হয়ে যায়! তালিকাটি এমন কোথাও রাখতে হবে যেন সারাদিন চোখের সামনে থাকে। চমৎকার কিছু উপায় হচ্ছে মোবাইল বা কম্পিউটারের ওয়ালপেপারে লিখে রাখা, ছোট কাগজে লিখে পকেটে রাখা, বোর্ডে লিখে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা ইত্যাদি।
এতে করে যেই সুবিধাটি হবে, আমাদের মনের উপর সার্বক্ষণিক একটি Pressure থাকবে কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য। যখনই সময় নষ্ট হয় এমন “Time pass” কাজে জড়াবো আমরা, তখনই মাথায় খচখচ করতে থাকবে সেই পাঁচটা কাজের কথা, সময় অপচয়ও রাতারাতি কমে আসবে অনেক!
পরীক্ষার প্রস্তুতির উদাহরণই দেওয়া যাক, বছরের অন্যান্য সময়ে পড়া একটুও আগায় না কিন্তু পরীক্ষা এসে গেলে সেটাই তিন দিনে শেষ করে ফেলি আমরা! -এর পেছনের রহস্যটা খুব সহজ। হাতে সময় থাকলে সবসময়ই মনে হবে “থাক কালকে করবো”, পরদিন আবার “থাক কালকে করবো” এভাবে চলতে থাকবে। কিন্তু পরীক্ষা এসে গেলে তখন আর পেছানোর সুযোগ নেই দেয়ালে পিঠ একদম ঠেকে গেছে, আমরা তখন একটি সুনির্ধারিত লক্ষ্য ঠিক করতে বাধ্য হই, এবং এজন্যই পড়া আগায় তরতর করে।
আমাদের মস্তিষ্ক তখনই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করে যখন সামনে একটি Deadline থাকে। তাই প্রতিদিন এমন পাঁচটি কাজের ডেডলাইন ঠিক করে নিলে সময়টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো অনেক সহজ হয়ে উঠবে।
RAC Method এর সুফল
RAC Method অত্যাশ্চর্য কোন আবিষ্কার নয়, এটি খুব সহজ একটি কৌশল কিন্তু অসাধারণ ফল দেয়। এক সপ্তাহ যদি এটি ঠিকভাবে অনুসরণ করা যায়, সপ্তাহের শেষে গিয়ে দেখা যাবে সময় অপচয়ের হার অনেক কমে এসেছে। এরকম প্রতি মাসে অন্তত এক সপ্তাহ মেথডটি ব্যবহার করলে Time Management নিয়ে আমাদের সমস্যাগুলো আর থাকবে না, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যথাসময়ে সেরে ফেলা যাবে, দুশ্চিন্তাহীন সুন্দর একটি জীবন গড়ে উঠবে!
আরও পড়ুন: জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ১০০+ কিবোর্ড শর্টকাট!
আমাদের সবার জীবনেই কিন্তু প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সময়, এই সময়টা কে কতোটুকু কাজে লাগাচ্ছি তার উপরই সাফল্য আর ব্যর্থতা নির্ভর করে। তাই আর নয় Time Management নিয়ে হিমশিম খাওয়া, এখন থেকে সময়ের লাগাম হাতে নিয়ে নাও RAC Method এর মাধ্যমে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
আপনার কমেন্ট লিখুন