পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
(প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই হাজারো ছবি চোখে পড়ে আমাদের। কথায় যা প্রকাশ করা দূরূহ, ছবি অবলীলায় তা তুলে ধরে চোখের সামনে। কিছু ছবি আমাদের করে স্তম্ভিত, নাড়া দিয়ে যায় বিশ্ববাসীর আবেগকে। এমনই পাঁচটি মর্মস্পর্শী ছবি আর তার পেছনের গল্প নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।)
5. “Wait for me, daddy!”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে সবখানে। হিটলারের হিংস্র থাবা রুখে দিতে দলে দলে যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে দেশবাসী। যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পারবে কিনা জানা নেই। দেশের ডাক সবার উপরে। পরিবার প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে বুকে পাথর বেঁধে মার্চ করে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যোদ্ধারা। কিন্তু ছোট্ট শিশুর অবুঝ মন কি এত কিছু মানে? বাবা ওকে একা ফেলে কই চলে যাচ্ছে, ভেবে মনটা আকুল হয়ে উঠলো তার। মায়ের কোল থেকে একলাফে নেমে এলো পাঁচ বছরের ওয়ারেন। বাবাকে ছুটে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমার জন্য অপেক্ষা করো বাবা! আমাকেও নিয়ে চলো তোমার সাথে!” বাবার বুকটা হুহু করে উঠলো। ওয়ারেনকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে বললেন, “দেশের ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছি সোনা! শত্রুর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে তবেই ফিরবো। ততদিন তুমি মায়ের লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থাকবে, কেমন?”
ওয়ারেন হাসে খিলখিল করে। বাবার মুখেও হাসি। সেই হাসিতে চোখের কোণে একফোঁটা জল চিকচিক করে ওঠে।
আরো পড়ুন: সফলতার সূত্র
4. The Tank Man
সময়টা ১৯৮৯। গণতন্ত্রের দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠেছে চীনের ছাত্রজনতা। হাজার হাজার তরুণ নেমে পড়েছে রাজপথে মুক্তির মিছিলে। কম্যুনিস্ট সরকার পেশিশক্তির প্রয়োগে থামিয়ে দিতে চাইলো এ বিপ্লব। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে মুখর হয়ে উঠলো চীনের রাজপথ। কিন্তু মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে কি দুর্বার টগবগে তরুণদের দাবিয়ে রাখা যায়! রক্তে তাদের বিপ্লবের আগুন, সংগ্রামের দাবীতে আজ কোলাহলের রুদ্ধশ্বাস তিয়েনমেন স্কয়্যারে।
সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক ঝাঁকে ঝাঁকে এগিয়ে আসছে জনতার কন্ঠ গুঁড়িয়ে দিতে। কিন্তু আজ যে তারুণ্য মাথা নোয়াবার নয়! আজ তারা বিধাতার মতো নির্ভয়। অকুতোভয় তরুণ দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেল বুক চিতিয়ে। দানবের মোকাবেলায় হৃদয়ের অদম্য মনোবলটাই যে সম্বল। আজ রক্তে রঞ্জিত হোক তরুণের সাদা শার্ট, সবাই দেখবে সেখানে দাউদাউ করে জ্বলছে গণতন্ত্রের প্রাণ!
3. President Obama sitting on Rosa Park’s seat
সময়টা ১৯৫৫ সাল। বর্ণবাদের বিষাক্ত ছায়া যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে রেখেছে। কালো মানুষদের প্রতি শত শত বছর ধরে যে অত্যাচার, নিপীড়ন চলে এসেছে তা আর মেনে নেওয়া যায় না। রোজা পার্ক সম অধিকারের দাবিতে সোচ্চার এক নারী। গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে মানুষকে যাচাই করা- এ কেমন অন্যায়? কিন্তু এমনটাই যে হয়ে আসছে অনাদিকাল হতে। কালো মানুষদের স্কুল আলাদা, খাওয়া দাওয়ার জায়গা আলাদা, এমনকি বাসে বসার ক্ষেত্রেও তাদের পিছনে বসতে হয় নির্ধারিত সিটে। তারা যেন অচ্ছুত, গায়ে স্পর্শ লাগলে ব্যাধি ছড়াবে! এমনই এক অন্ধকার যুগে রোজা পার্ক স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর আমেরিকার, যেখানে মানুষে মানুষে কোন বিভেদ থাকবে না।
সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে বাসে চড়েন তিনি। পথের মাঝে সাদা মানুষ কয়জন উঠে বাসে, রোজাকে বলে পিছনে কালোদের জন্য নির্ধারিত সিটে গিয়ে বসতে। রোজার সাথে আরো যে কয়জন কালো মানুষ ছিলেন তারা মুখ বুঁজে উঠে যান সিট থেকে। কিন্তু রোজা নির্বিকার। তিনি এক ইঞ্চিও নড়লেন না সিট থেকে। ইস্পাতদৃঢ় চোয়াল শক্ত করে জানিয়ে দিলেন পৃথিবীকে, “না! আমি এই সিট ছেড়ে উঠবো না! এই বর্ণবৈষম্য নিপাত যাক!” এ কথা শুনে হতভম্ব বাসের সাদা মানুষেরা। কত বড় আস্পর্ধা! পুলিশ এসে গ্রেফতার করলো রোজা কে।
মুহূর্তের ভেতর ছড়িয়ে পড়লো গ্রেফতারের খবর চারপাশে। দাবানলের মত আগুন জ্বলে উঠলো মানুষের মনে। হাজার বছরের শোষণ নিপীড়ন আর মুখ বুঁজে সইবার নয়। এবার সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার। আন্দোলনে নেমে এলো লাখো জনতা। সরকার বাধ্য হলো মানবতার প্রতি এই চরম অবমাননাকর আইনগুলো বাতিল করতে।
রোজা পার্কের সেদিনের সেই “না!” মুক্তির সূচনার যে বীজ পুঁতে দিয়েছিলো, পঞ্চাশ বছর পর সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হলো! আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন একজন কালো মানুষ! প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গেলেন সেই বাসটিতে। গভীর আবেগে গিয়ে বসলেন ইতিহাসের সাক্ষী সেই সিটটিতে। আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে শুধুমাত্র কালো মানুষ হওয়ার অপরাধে যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল রোজা পার্ককে, আজ সেখানেই বসে আছেন একজন কালো চামড়ার প্রেসিডেন্ট! বিজয় হলো আজ মানবতার।
আরো পড়ুন: হাইজেনবার্গের গল্প: অ্যালান টিউরিং
2. Rana Plaza Tragedy
২০১৩ সালের এপ্রিলের এক ঝলমলে সকাল। অন্যান্য দিনের মতোই কর্মীদের ব্যস্ততা আর কোলাহলে মুখর রানা প্লাজা। হঠাৎ হুড়মুড় করে কেঁপে উঠলো দালানটি। মানুষের আর্তনাদে মুহূর্তেই নরক নেমে এলো সেখানে। মুহূর্তের ভেতর ধ্বসে পড়লো বহুতল ভবনটি। হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়লো ধ্বংসস্তুপের নিচে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশি যে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয় আখ্যা দেওয়া হলো একে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নেমে পড়লো উদ্ধারকাজে। লাশের গন্ধে আর স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ইট পাথরের স্তুপ সরাতে হঠাৎ থমকে গেলেন সবাই।
একটা কাঁচের দেয়াল যে আজ জীবন আর মৃত্যুর মাঝে সীমানা টেনে দিয়েছে।
এ কি অভূতপূর্ব দৃশ্য! দুটি মানুষ মৃত্যুর মুহূর্তেও একে অপরকে ছেড়ে যায়নি। মাথায় যখন আকাশ ভেঙে পড়ছে, সবাই নিজ নিজ প্রাণ বাঁচাতে উন্মাদের মত ছুটোছুটি করছে, এ দুটো মানুষ শক্ত করে হাত ধরে ছিলো গোটা সময়টায়। আহারে! না জানি কত স্বপ্ন ছিলো তাদের! পোষাককর্মীর এই কঠিন জীবনেও একটা সুখের নীড় হবে, সংসার হবে, দেবশিশুর মত কয়টা সন্তান হবে আরো কত স্বপ্ন! এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে সুখ চিরদিন অধরাই রয়ে গেল। জীবনযুদ্ধে হেরে গেল মানুষদুটো, কিন্তু ভালবাসার যে স্বর্গীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেল তা যে অম্লান হয়ে রইবে চিরদিন মানুষের মনে।
1. The girl & her dog
২০১১ সালের মার্চ মাস। শান্ত সুশৃঙ্খল জাপানের জনজীবন। হঠাৎ বিকট ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো চারপাশ। সুনামির বেগ ভাসিয়ে দিলো উপকূলের জনপদ। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হয়ে পড়লো অচল। তখনো জাপানবাসী জানেনা এর চেয়েও কি ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট অচল হয়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দুষণ ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে! যারা তখন বাইরে ছিল সবাইকে জরুরি অবস্থায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হলো। তাতেও কি রক্ষা মিললো? যেই মানুষটা সকালে বাজার করে বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিসে গেল তাকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না অফিস থেকে। স্ত্রী বিকালে মাঠে হাঁটতে যায়, আজকেও কি বেরিয়েছে? বাচ্চাটা স্কুলেই আছে তো? এতক্ষণে তো ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা! ও স্রষ্টা! ওরা যেন বের না হয়! কুলকুল করে ঘামছে লোকটা।
এভাবেই সেদিন জাপানে এমন অনেক মানুষ আলাদা হয়ে পড়লো পরিবার থেকে। আর কোনদিন হয়তো লোকটির দেখা হয়নি স্ত্রী সন্তানের সাথে। কোনদিন হয়তো এই মেয়েটির বলা হয়নি বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কতোটা ভালবাসে সে তাদের। সে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের শিকার। প্রিয়জনের উষ্ণ আলিঙ্গন যে তার আর কোনদিন পাওয়া হবে না! কাঁচের ওপারে প্রিয়জন। কলিজার টুকরা পোষা কুকুরটা। আর কোনদিন ছুঁয়ে দেখা হবে না! এত কাছে, তবু কত দূরে! একটা কাঁচের দেয়াল যে আজ জীবন আর মৃত্যুর মাঝে সীমানা টেনে দিয়েছে।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন