শহীদ আসাদ দিবস: কে ছিলেন শহীদ আসাদ?

April 10, 2023 ...

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা 

সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক; 

আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা। 

‘আসাদের শার্ট’ নামে এই কবিতাটি কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ আসাদকে নিয়ে। এই ব্লগে আমরা আজ জানবো শহীদ আসাদ কে ছিলেন সে সম্পর্কে। জানবো প্রতিবাদের এই প্রতীকের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো সম্পর্কে।

শহীদ আসাদ কে ছিলেন?

শহীদ আসাদ ছিলেন অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সরব একজন ছাত্রনেতা। তার পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান হলেও সর্বসমক্ষে তিনি শহীদ আসাদ নামেই অধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামের হাতিরদিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বি.এ.বি.টি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাষ্টার ছিলেন।

বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স

কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • পিএসসি প্রণীত সিলেবাসের আলোকে সাজানো ৮০টি লাইভ ক্লাস
  • বিসিএস স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন মোকাবেলা করার কৌশল
  • ১৪৭টি রেকর্ডেড ভিডিও এবং ১৪৭টি ক্লাস ম্যাটেরিয়াল
  • ১২৫টি লেকচার শিট, ২৯৪০টি কুইজ ও ২৪টি মডেল টেস্ট
  •  

    আসাদের মায়ের নাম মতি জাহান খাদিজা খাতুন। তিনি নারায়ণগঞ্জ আই.ই.টি (ইসলামিক এডুকেশন ট্রাষ্ট/Islamic Education Trust) গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। আসাদের জন্মের পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। তাঁর ছয় পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে আসাদ ছিলেন চতুর্থ।

    আসাদ আইয়ুব খানের পতনের দাবীতে মিছিল করার সময় জানুয়ারি ২০, ১৯৬৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। শহীদ আসাদ হচ্ছেন ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে পথিকৃৎ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের তিন শহীদদের একজন; অন্য দু’জন হচ্ছেন – শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান।

    শহীদ আসাদ
    Source: banglatribune

    শহীদ আসাদ দিবস কবে?

    ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার এই আত্মত্যাগ স্বৈরশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।

    বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এটি তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আসাদুজ্জামান। আসাদ শহীদ হওয়ার পর তিন দিনের শোক পালন শেষে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। সংঘটিত হয় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ুব খানের।

    শহীদ আসাদের এই বীরত্বগাথাকে স্মরণ করতে প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি দেশব্যাপী শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

    আসাদ দিবস
    Source: 10 Minute School

    আসাদ দিবসের পটভূমি

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবীর স্বপক্ষে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্যান্য আসামীদের মুক্তি দাবীর আন্দোলনে আসাদের মৃত্যু পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করে তুলে ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী’র ডাকে হরতাল আহ্বানের ফলে ব্যবসায়ীরা তাতে পূর্ণ সমর্থন জানায়। এ প্রেক্ষাপটে গভর্নর হাউজ ঘেরাওয়ের ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো পূর্ব থেকেই নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছিল।

    ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, যাতে প্রধান ভূমিকা রাখেন শহীদ আসাদ। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। ফলে গভর্নর হিসেবে মোনেম খান ১৪৪ ধারা আইন জারী করেন যাতে করে চার জনের বেশি লোক একত্রিত হতে না পারে।

    আসাদ দিবসের ইতিহাস

    শহীদ আসাদ দিবস
    Source: bdnews24.com

    পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুরে ছাত্রদেরকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খাঁ’র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁ’র ব্রীজে বাঁধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ঐ অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পুলিশের গুলীতে ছাত্র নিহত’ শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।

    শহীদ আসাদের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাবলি

    ছাত্র-জনতা কর্তৃক আসাদের রক্তমাখা শার্ট:

    হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুনরায় মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। ফলশ্রুতিস্বরূপ আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু’মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইনপ্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।

    জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে:

    শোকাতুর ও আবেগে আপ্লুত অগণিত ছাত্র-জনতার মিছিলে শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি শামসুর রাহমান তার অমর কবিতা “আসাদের শার্ট” লিখেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের অন্যতম কবি হেলাল হাফিজ এ ঘটনায় ক্রোধে ফেঁটে পড়েন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে কালজয়ী “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়” কবিতাটি লিখেন।

    রশীদ তালুকদারের চিত্রকর্ম: 

    ছাত্র আন্দোলনে আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি ওঠান।

    সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • বিষয়ভিত্তিক স্ট্রং বেসিক তৈরির উপায়
  • সরকারি চাকরি প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি বিষয়ের বেসিক টপিক
  • পরীক্ষা দিয়ে নিজের প্রস্তুতি যাচাই এর মাধ্যমে দুর্বল টপিক চিহ্নিত করা
  •  

    হরতাল আহ্বান:

    ১৯৭০ সালের ১৫ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালনের জন্য পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ঐদিন পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করে।

    শার্ট হস্তান্তর:

    ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদ, শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন অণুষ্ঠানে শহীদ আসাদের ভাই অধ্যাপক এইচ এম মনিরুজ্জামান আসাদের শার্ট হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালীর কালু মিয়া শেখের পুত্র শহীদ রুস্তমের রক্তমাখা শার্ট জাদুঘরে জমা দিয়েছেন তার সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ।

    শেষকথা

    আসাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য হচ্ছে গণজাগরণ। ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের উত্তরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বা ডাকসু’র উদ্যোগে আসাদের স্মৃতিকে অমর ও অক্ষয় করে তুলতে এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে জাগ্রত রাখতে গণজাগরণ নামে নির্মিত হয় আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোত দাস এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন।


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন