পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম মানব ‘সেন্ট্রাল সিটি’ শহরের ব্যারি অ্যালেন একজন সুপার হিউম্যান। ঘণ্টায় সে কয়েক হাজার মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে। তার সহকর্মী ‘ট্যাকিয়ন ডিভাইস’ নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করার পর সেটি পরে ব্যারি আরও অনেক বেশী গতিতে দৌড়াতে পারবে। পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে যন্ত্রটি পরে দৌড়ানো শুরু করলে এত বেশি গতিতে ব্যারি দৌড় শুরু করে যে, নিজের অজান্তেই সে একটি ফুটো তৈরি করে তার ভিতর দিয়ে ঢুকে যায়। হঠাতই সে দেখে যে বিশাল এক বিল্ডিং এর উপর থেকে একটি মেয়ে পড়ে যাচ্ছে। মেয়েটিকে বাঁচানোর পর তার সাথে কথা বলে ব্যারি অ্যালেন বুঝতে পারে সে তার নিজের শহর ‘সেন্ট্রাল সিটি’তে নেই; এমনকি সে নিজের পৃথিবীতেই নেই। সে চলে গেছে অন্য একটি পৃথিবীতে।
বলছিলাম ‘ডিসি কমিকস’ এর অন্যতম একটি চরিত্র নিয়ে তৈরি করা ‘দ্য ফ্ল্যাশ’ সিরিজ এর কথা। সেখানে দেখানো হয়েছে নায়ক কীভাবে পৃথিবীর মতই আরেকটি গ্রহে পৌঁছে যায়; যেখানে সবকিছুই প্রায় পৃথিবীর মতন। এটিকে প্যারালাল ইউনিভার্স বলে। গল্প বা সিনেমায় প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে অনেক কথা থাকলেও প্যারালাল ইউনিভার্স এর অস্তিত্ব আসলেই আছে কিনা কিংবা এ নিয়ে বিজ্ঞান কী বলে তা জানতে হলে পড়তে হবে এই লেখাটি।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
HSC 23 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স (বিজ্ঞান বিভাগ)
প্যারালাল ইউনিভার্স:
প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল বিশ্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যেখানে বলা হয়েছে মহাবিশ্বে একাধিক পৃথিবী রয়েছে এবং তারা একটি অন্যটির প্রতিরূপ। প্যারালাল ইউনিভার্স আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো আরও একটি বা একাধিক ব্রহ্মাণ্ড যা ঠিক আমাদেরই মতো। সেখানকার প্রকৃতি, ভূমণ্ডল এমনকি প্রাণিজগৎও একেবারে আমাদেরই মতো। হুবহু আমাদেরই মতো দেখতে সবকিছু। একেবারে যেন আমাদের যমজ বিশ্ব।
এমনকি এটাও ধারণা করা হয় যে, প্যারালাল ইউনিভার্স এর পৃথিবীর মত যে গ্রহগুলো আছে সেগুলোতে একই ধরণের মানুষ আছে। হতে পারে আপনি যেমন এই লেখাটি এই মুহূর্তে পড়ছেন ঠিক আরেকটি প্যারালাল ইউনিভার্স এ আপনার প্রতিরূপ আরেকজন আছে যে এই মুহূর্তে এই লেখাটিই পড়ছে এবং আপনারা দু’জনেই দু’জনের কথা ভাবছেন। প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে ‘দ্য ওয়ান’ সিনেমাটিতে দেখানো হয় এক লোক পৃথিবীর সবগুলো প্যারালাল ইউনিভার্স এর গ্রহগুলোতে গিয়ে সেখান থেকে তার মত দেখতে মানুষগুলোকে মেরে ফেলছে।
প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে জানার মাঝে আমরা পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা জানব যেগুলোকে এখন পর্যন্ত প্যারালাল ইউনিভার্স এর কারণে ঘটেছে বলে মনে করা হয়। তার মাঝে একটি ঘটনা হচ্ছে-
প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আসা নারী:
২০০৮ সালের ১৬ জুলাই লেরিনা গার্সিয়া গর্ডো নামের একজন স্প্যানিশ নারী একটি অনলাইন ফোরামে সাহায্যের জন্য পোস্ট করে বসেন। ৪১ বছর বয়সী এই নারী দাবী করেন যে, তিনি একটি প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে এসেছেন। ঘুমানোর আগে তিনি যা যা দেখে ঘুমিয়েছিলেন তার অনেক কিছুই মিল নেই। সেগুলো যত ছোট ছোট ব্যাপারই হোক না কেন, তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তিনি তার নিজের ইউনিভার্স এ নেই, চলে এসেছেন প্যারালাল একটি ইউনিভার্স এ।
তার কাহিনীটি হচ্ছে এরকম-
১৬ জুলাই ২০০৮ এর একটি সুন্দর সকালে লেরিনা ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ খেয়াল করেন, তার বিছানার চাদরের রং বদলে গেছে। তিনি বেশ অবাক হয়ে যান। বিষয়টির কোনো যৌক্তিক ব্যাখা না পেয়ে তিনি খানিকটা ভ্রু কোঁচকানো অবস্থাতেই তার অফিসের জন্য বের হলেন। লেরিনা এই অফিসে শেষ ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন।
বাসার সামনে যেখানে লেরিনা গাড়ি পার্ক করে রেখেছিলেন ঠিক সেখানেই গাড়িটি রাখা আছে। উনি গাড়িতে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। এখন যে অ্যাপার্টমেন্টটিতে তিনি আছেন সেটিতে ওঠার পর গত সাত বছর থেকে উনি এই রাস্তাতেই যাতায়াত করছেন। অফিসে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তার কাছে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ঝামেলার শুরু অফিসে পৌঁছানোর পর।
লেরিনা তার অফিসে ঢুকে বেশ কিছু অপরিচিত মানুষকে দেখতে পান। বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে তিনি বেশ বড়সড় একটি ধাক্কা খেলেন। অফিসে তার নিজের রুমের দরজার বাইরে অন্য একজনের নামের ট্যাগ লাগানো!
তিনি ভাবলেন অন্য কোনো তলায় চলে এসেছেন কিনা। কিন্তু ঠিক তলাতেই আছেন নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি পাশের ডিপার্টমেন্টে উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে টের পেলেন সেখানে তার নামের ট্যাগ লাগানো হয়েছে। লেরিনা হতবাক হয়ে ভাবলেন, বিশ বছর ধরে এত সততার সাথে চাকরি করার পরেও তাকে বরখাস্ত করে অন্য জায়গায় পাঠানো হলো অথচ তাকে কিছু বলাও হয়নি?
তিনি তার ল্যাপটপ বের করে কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলেন তার নাম লিস্টে আছে ঠিকই কিন্তু অন্য একটি ডিপার্টমেন্টে অন্য একজন ম্যানেজারের অধীনে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী লেরিনা সেখানেই কাজ করেন। অথচ লেরিনা কখনও ওই ডিপার্টমেন্ট কিংবা ম্যানেজারের অধীনে কাজ করেননি।
তারপর তিনি সাথে সাথে তার ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং তার অফিসের আইডি কার্ড বের করে চেক করেন। কিন্তু সেখানে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। একই নাম, একই ছবি এবং একই বাসার ঠিকানা ছিলো সবগুলো কার্ডে। তারপর তিনি ভাবতে শুরু করলেন সব তথ্য ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু কেনো অপরিচিত লাগছিলো। তিনি ভাবলেন হয়তো সকালের ঘটনাটি নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর কারণে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আর তাই তার কাছে সবকিছু এলোমেলো এবং অপরিচিত লাগছে। তাই লেরিনা একদিন বিশ্রাম নিলেন এবং পরেরদিন ডাক্তার এর কাছে যাবেন বলে মনস্থির করলেন।
পরের দিন তিনি ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলার পর ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন যে লেরিনা মাদকাসক্ত কিনা। কিন্তু পরীক্ষার রিপোর্টে তার মাদকাসক্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি বাসায় ফিরে তার সমস্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পারসোনাল চেক, বিল বের করে কয়েকবার করে চেক করেন। কিন্তু সবগুলো ডকুমেন্টের তথ্য দেখে তিনি আরও হতভম্ব হয়ে যান এবং ভাবতে থাকেন এসব কি হচ্ছে। তিনি ভাবলেন, হয়তো তিনি অ্যামনেসিয়ায় ভুগছেন। তাই হয়তো তিনি তার স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছেন।
এজন্য লেরিনা একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে যান যাতে করে জানতে পারেন তার কোনো মানসিক সমস্যা হচ্ছে কিনা। কিন্তু অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও লেরিনার কোনো মানসিক সমস্যা ধরা পড়েনি। লেরিনা এই বিষয়গুলো তার নতুন বন্ধু অগাস্টিনকে জানাতে চাইলেন। অগাস্টিনের সাথে তিনি গত চার মাস থেকে নিয়মিত কথা বলছেন। প্রতিদিনের মত অগাস্টিনকে কল দিলে সেখানে বাঁধে আরেক বিপত্তি। লেরিনা কল দেয়ার পরে অন্য একজন লোক কথা বলা শুরু করে। অগাস্টিনকে চাইলে লোকটি লেরিনাকে বলেন সেখানে অগাস্টিন বলে কেউ থাকেনা; এমনকি লোকটি যে বাসার ঠিকানা দিলেন তার সাথে লেরিনার বন্ধু অগাস্টিনের বাসার ঠিকানার কোনো মিলই নেই।
এত ঝামেলার মাঝ থেকে রেহাই পেতে লেরিনা তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন আগেই তার ছোটবোনের কাঁধের অপারেশন হওয়ায় তিনি যখন পরিবারের সবার কাছে বোনের অপারেশন এর খোঁজ নিতে যান তখন তারা বিস্মিত হয়ে লেরিনাকে বলে যে তার ছোটবোন কেন পরিবারের কারোরই কখনও কাঁধের অপারেশন হয়নি।
আস্তে আস্তে আশেপাশের প্রায় সব রকমের পরিবর্তন দেখে লেরিনা কাউকেই কোনো কিছু বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। একদিন তিনি ইন্টারনেটে এসে প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে জানতে পারেন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি খেয়াল করে দেখেন যে, প্যারালাল ইউনিভার্স এর সাথে তার জীবনের এই পরিবর্তনের ব্যাপারগুলো মিলে যাচ্ছে। শেষমেশ তিনি তার ব্যাপারে অনলাইনে পোস্ট করেন যেটি সমগ্র বিশ্বের বড় বড় ওয়েবসাইট ও পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করা হয়।
লেরিনার পোস্ট এর পরে সবার মাঝেই প্রশ্ন জেগেছে যে লেরিনা আসলেই প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে এসেছিলেন কিনা।
প্যারালাল ইউনিভার্স বা অনেকগুলো ইউনিভার্স মিলে যে মাল্টিভার্স এর তত্ত্ব – এসব কথা উঠেছেই প্রথম কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর হাত ধরে। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর কঠিন কথা বোঝার মত বড় বড় ডিগ্রী আমাদের অনেকেরই নেই। তাই চলুন কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ প্যারালাল ইউনিভার্স কী কিংবা কীভাবে এলো সেটা খুব সহজ কথায় আলোচনা করি।
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৫
কোয়ান্টাম মেকানিক্স – একটি গোপন ফাঁস:
পদার্থবিদরা ছবি পছন্দ করেন। সত্যি বলতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর শতকরা ৮০ ভাগ কাজই হচ্ছে একের পর এক ছবি এঁকে সময়ের সাথে কোনো কিছুর পরিবর্তন দেখানো। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাঁরা এগুলোর সাথে বিশেষ চিহ্ন(। >) যোগ করে দেন যেগুলোকে ‘কেট’ বলে।
কেট গুলো দিয়ে বোঝায় যে, আমরা কোনো একটা কিছুর কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়-
কোনো একটা ছবি আর সে ছবির সাথে কেট(। >) জুড়ে দেয়া ছবির মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, কেট দেয়া ছবি দিয়ে বোঝায় আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর আলোকে সেটির কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি।
ইলেকট্রন:
ঠিক কী কারণে প্যারালাল ইউনিভার্স রয়েছে এবং সেগুলোতে আমাদেরই প্রতিরূপ চলাফেরা করছে তা জানতে হলে আমাদের একদম ছোট্ট ইলেকট্রন থেকে শুরু করতে হবে। ইলেকট্রন হচ্ছে একটি অতিপারমাণবিক মৌলিক কণা। বোঝার সুবিধার্থে আমরা ইলেকট্রনকে একটি ছোট্ট গোলক হিসেবে ধরে নেই। ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে। তাই এই গোলকও ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে ধরে নেই।
এখন দেখি কেট চিহ্নটি ব্যবহার করে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘোরা ইলেকট্রন এর কোয়ান্টাম অবস্থা –
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অদ্ভুত ব্যাপার:
একটি ক্রিকেট বল কিংবা ফুটবলের মত ইলেকট্রনও ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে ইলেকট্রন এর একটি অন্যরকম ক্ষমতা আছে। এটি একই সাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে।
চমকে গেলেন?
এটা কীভাবে সম্ভব তা বোঝার জন্য ধরে নেই ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাটি সাদা রং এর এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরাটি কালো রং এর। তাহলে ইলেকট্রন এর ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘোরার ফলে রংটি হবে ধূসর। এটি আমাদের বোঝার জন্য খুবই গোলমেলে একটা ব্যাপার। যেহেতু আমরা কখনো একটি জিনিসকে একই সাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে দেখিনি। কিন্তু গাণিতিক হিসেব অনুযায়ী এটি একদম ঠিক। সেহেতু আমরা ধরে নিচ্ছি একটি ইলেকট্রন একই সাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরছে।
চলুন দেখা যাক, আমাদের এই অবস্থাটিকে আমরা কেট চিহ্ন ব্যবহার করে কীভাবে বোঝাতে পারি। আমরা ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকা আলাদা আলাদা ইলেকট্রন এর কেট চিহ্নসহ ছবির মাঝে যোগ চিহ্ন দিয়ে বোঝাবো যে, ইলেকট্রন একই সাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের চারপাশে সবখানেই এই ধূসর রং এর কণা ছড়িয়ে আছে যা একইসাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমাদের চারপাশেই যদি এই ধূসর কণাগুলো ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে তাহলে আজ পর্যন্ত আমরা সেটি কিংবা এর কোনো ফলাফল দেখতে পাইনি কেনো?
এই প্রশ্নটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এটির উত্তর আমাদের সোজাসুজি নিয়ে যাবে প্যারালাল ইউনিভার্স আর মাল্টিভার্স এর দিকে।
আরো পড়ুন: প্যারালাল ইউনিভার্সের অস্তিত্ব: বিজ্ঞান কী বলে? (দ্বিতীয় পর্ব)
কোয়ান্টাম মেকানিক্স কেট এর গল্প:
প্যারালাল ইউনিভার্স কিংবা মাল্টিভার্স এ পৌঁছাতে গেলে তার আগে আমাদেরকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ কেট দিয়ে গল্প বলতে হবে।
মনে করুন আপনার কাছে একটি বদ্ধ বাক্সে ইলেকট্রন আছে। ইলেকট্রনটির পাশেই একটি বিশেষ ধরণের ডিটেক্টর আছে। এটি চালু করার পর ইলেকট্রন যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে তাহলে ডিটেক্টরটি ক্লিক শব্দ করবে আর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরলে ডিটেক্টরের কোনো পরিবর্তন হবে না।
এখন ধরুন বাক্সে একটি বন্দুক আর একটি বিড়ালও আছে। চালু করার পর ডিটেক্টরটি যদি ক্লিক শব্দ করে তাহলে সেটি বন্দুকে একটি সংকেত পাঠাবে আর সংকেত পেলে বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে বিড়ালটি মারা যাবে।
এখন ইলেকট্রনটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে ধরে নিয়ে ডিটেক্টরটি চালু হওয়ার আগের দৃশ্য যদি আমরা কল্পনা করি তবে বিষয়টি হবে এরকম-
এখনও ডিটেক্টরটি চালু হয়নি দেখে বাক্সের বাকি সবকিছু অপরিবর্তিত আছে। কিছুক্ষণ পর ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে চলার জন্য চালু করলে ডিটেক্টরটি ক্লিক শব্দ করে। ডিটেক্টরের ক্লিক শব্দ করাকে আমরা একটি টিক চিহ্ন দিয়ে বুঝতে পারি।
ডিটেক্টরটি এরপর বন্দুকে সংকেত পাঠায়। সংকেত পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বন্দুক থেকে গুলি বের হয়। এই মুহূর্তে আমাদের বাক্সের অবস্থা হবে এরকম-
কিছুক্ষণের মাঝেই বন্দুকের গুলি আমাদের বিড়াল পর্যন্ত পৌঁছায় আর বেচারা বিড়ালটি এই গবেষণার শিকার হয়।
অন্যদিকে ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরলে যেহেতু চালু করলেও ডিটেক্টরটি ক্লিক শব্দ করবেনা, সেজন্য বাক্সে কিছুই হবে না।
এখন পর্যন্ত আমরা যে গল্প দুইটি পড়লাম তা ভালো করে বুঝলেও সমস্যাটা দাঁড়ায় এখানে যে, ইলেকট্রন যদি আলাদা আলাদা ভাবে ঘড়ির কাঁটার দিকে বা বিপরীতে না ঘুরে একসাথেই ঘড়ির কাঁটার দিকে বা বিপরীতে ঘোরে তখন কী হবে?
একটাই উত্তর তখন চলে আসে সামনে। আর তা হচ্ছে – কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ভাষায় ‘Zombie Cat’।
কোয়ান্টাম বিড়াল:
চলুন এবার দেখি একই সাথে ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে ঘুরছে। এবার আমাদের বাক্সের অবস্থা হয়ে যাবে এরকম-
এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে যে, চালু করার পর আমাদের ডিটেক্টরটি কি ক্লিক শব্দ করবে নাকি করবে না? কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ভাষায় এটি দুইটি কাজই করবে। এর একটি অংশ দেখবে যে, ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে, আরেকটি অংশ দেখবে ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরছে। বিষয়টি তখন এরকম হবে যে, ডিটেক্টরটিই আমাদের ইলেকট্রন এর সাথে দুইভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে।
কেট ব্যবহার করে বিষয়টি দাঁড়ায়,
আমাদের এই লাল ব্র্যাকেট এর মাঝে একইসাথে দুইটি ঘটনা ঘটছে। একটিতে ডিটেক্টর ইলেকট্রন এর ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরা দেখে ক্লিক শব্দ করছে এবং আরেকটিতে ডিটেক্টর ইলেকট্রন এর ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরা দেখে কিছুই করছে না।
এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে বন্দুকটিতে কি সংকেত যাবে? এটি গুলি করবে নাকি করবে না? এটার জন্যেও উত্তর হচ্ছে – দুইটিই করবে। বন্দুকও ডিটেক্টরের মত দুইটি ভাগ হয়ে যাবে। যেখানে একটি ক্লিক শব্দের সংকেত পেয়ে গুলি করবে, আরেকটি গুলি করবে না।
বাকি থাকল আমাদের বিড়াল।
এতক্ষণে আপনি হয়ত বুঝে গেছেন আমাদের বিড়ালটির কী পরিণতি হতে চলেছে। এটিও ডিটেক্টর আর বন্দুকের মত দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। যেখানে একটিতে আমাদের বিড়াল গুলিতে মারা পড়বে। আরেকটিতে বিড়ালের কিছুই হবে না।
আমাদের বাক্স এ শেষমেশ যে অবস্থা দাঁড়াবে –
খেয়াল করে দেখুন, আমাদের এখানে দুইটি স্বাধীন ঘটনা ঘটেছে বাক্সের ভিতর। যেখানে একটিতে ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরে বন্দুকের গুলি বিড়ালকে মেরে ফেলে, আরেকটিতে ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে কিছুই হয়না এবং বিড়াল জীবিত থাকে।
এখানে দুইটি ঘটনাই ঘটছে বাক্সের ভিতর একইসাথে এবং দুইটি ঘটনাই সত্য। ইলেকট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকেও ঘুরছে, ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকেও ঘুরছে। ডিটেক্টর ক্লিক শব্দ করছে এবং করছে না। আর বিড়াল জীবিতও থাকে এবং মৃতও থাকে।
এ থেকেই আমাদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ বিড়াল এর নাম এসেছে ‘Zombie Cat’।
এই কোয়ান্টাম Zombie বিড়াল থেকে কী করে প্যারালাল ইউনিভার্স আর মাল্টিভার্স বোঝা যায়, প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে বিজ্ঞান ঠিক কী কী বলে, এ নিয়ে মতবিরোধ আর প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে হঠাৎ করে এসে উধাও হয়ে যাওয়া এক বিজনেসম্যান এর ঘটনা জানতে হলে পড়তে হবে পরের পর্বটি।
প্যারালাল ইউনিভার্সের অস্তিত্ব:বিজ্ঞান কী বলে? প্রথম পর্ব
তথ্যসূত্র-
- https://www.space.com/32728-parallel-universes.html
- https://www.space.com/18811-multiple-universes-5-theories.html
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন