আজকে আমি তোমাদের একটা সিক্রেট বলব আমার সম্পর্কে। কনফেশন বলতে পারো। সেটা হচ্ছে, আমি অর্থনীতির শিক্ষার্থী হয়েও টাকা পয়সার হিসাব ভালো মতন রাখতে পারি না। মনে করো, আমার কাছে আছে ১০০০ টাকা। আমার কিছু কেনাকাটা আছে যা এই টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। আর ভাবছি এই টাকা দিয়ে পুরো এক সপ্তাহ চালিয়ে নিব। এটা আমার সপ্তাহ শুরুর ভাবনা। মার্কেটে গেলে আমার খালি হাত নিশপিশ করে।
ধরো, কিনতে গেলাম একটা ওড়না। হুট করে এক জোড়া কানের দুলে চোখ পড়লো! “আরে কী সুন্দর!” তখন মনে হয় এই কানের দুল না কিনলে কানের দুলজোড়ার প্রতি অবিচার করা হবে। তাই আবেগ আপ্লুত হয়ে কিনেই ফেলি। ভাবি কী আছে জীবনে! এক জোড়া কানের দুলই তো! এটা শুধু কোনো একদিনের ঘটনা না। যখনই মার্কেটে যাই এরকম ঘটবেই আমার সাথে। একদম সোজা বাংলায় বলবে, মার্কেটে গেলে আমি এটা ওটা কিনেই ফেলব। আমার মনে হয় উলটাপালটা খরচ করার বাতিক আছে!
তো আমার ১০০০ টাকা এক সপ্তাহ চালানো যে প্ল্যান ছিল তাতে সপ্তাহের প্রথম দুইদিনেই আমি পানি ফেলে দিয়েছি। অন্যদিন মানিব্যাগে টাকা খুঁজতে গিয়ে দেখি আরে, দুইদিন আগেই না ১০০০ টাকা রাখলাম! গেলো কই?
আমার তো মাথায় হাত! কী করলাম এত টাকা দুইদিনে? খাবার দাবারের জন্য কিছু খরচ গিয়েছে, রিকশা ভাড়াতেও কিছু গেলো এইতো! আর তো কিছুই মনে পড়ছে না! হায় হায়! আমার তো হিসাব মিলছেই না। কী করি আমি?
মার্কেটে গেলে আবেগের বশে জিনিসপাতি কিনে ফেলা যেমন আমার জন্য নতুন কিছু না, তেমনি টাকার হিসাব মিলছে এটাও আমার জন্য নতুন কিছুই না।
আমি বুঝতেই পারি কেমনে কেমনে টাকা খরচ করে ফেলি।
এর উপর আমি তো ইকোনোমিক্সের স্টুডেন্ট সেই হিসেবে আমার আরো বেশি বুঝেশুনে খরচ করা উচিত। অথচ আমি কিনা উল্টো! ইশ কী লজ্জার ব্যাপার। তাই এটা আমি অনেকদিন সিক্রেট রেখেছিলাম।
কিন্তু মাঝেমাঝে জিনিসটা আমাকে খুবই ভাবাতো। কারণ আমি থাকি অন্য শহরে, বাবা মা থাকে আরেক শহরে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠানো হয় সেটাও যদি এভাবে উল্টাপাল্টাভাবে খরচ করে ফেলি বেশি কষ্ট লাগে। বারবার তো আর টাকা চাওয়া যায় না বাবা মার কাছ থেকে। যাই বলো, বড় হয়েছি না!
তাই কিভাবে টাকার হিসাব রাখা যায় বা কিভাবে নিজেকে লাইনে আনা যায় তা নিয়েই একটু গবেষণা করছিলাম। তখন আমি সন্ধান পেলাম কিছু অ্যাপসের। এসব অ্যাপসের মূল কাজই হচ্ছে তোমার টাকার হিসাব রাখবে। তুমি দিনে কিসে কিসে টাকা খরচ করছো, কী পরিমাণ খরচ করছো, তোমার মাসিক আয় কত, তুমি কত টাকা সঞ্চয় করছো এমনকি তুমি কিসে অধিক টাকা খরচ করছো সেটাও তোমাকে জানিয়ে দিবে।
আমার জন্য এসব অ্যাপস পুরাই লাইফ সেভিং! আর তোমরা যারা আমার মতো এরকম আছো তাদের জন্য ও বটে।
এরকম আমি অনেকগুলো অ্যাপ দেখেছি। তবে এর মধ্যে চারটি অ্যাপকে আমি আমার পছন্দের তালিকায় এনেছি। যেই চারটি অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরের এডিটর চয়েস তালিকাতেও আছে। সেগুলো নিয়েই আজকে কথা বলব।
Personal Finance Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
মানিফাই (Monefy):
রেটিং: 4.6
মানিফাই ইউজ করা সবচেয়ে একদম পানির মতো সহজ। যে কেউ এটি খুব সহজেই, স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারবে এটা আমি নিশ্চিত! মানিফাইতে ঢুকলেই প্রথমে দেখবে একটা বৃত্ত! এর চারপাশে নানারকমের আইকন দেওয়া। তোমার খরচগুলো আগেই তোমার সুবিধার জন্য নানানরকম ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া আছে। যানবাহন, খাওয়া দাওয়া, কাপড়, চিকিৎসা, বাড়িভাড়া, কেনাকাটা, রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া, খেলাধুলা, টয়লেট্রিজ এমনকি তোমার যদি কোনো পোষা বিড়াল বা কুকুর বা কোন পাখি তাদের পিছনের খরচেরও ক্যাটাগরি আছে সেখানে।
তোমার কাজ তাই অনেক অনেক কমিয়ে দিয়েছে মানিফাই। তুমি শুধু ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচের পরিমাণ লিখবে।
পাশাপাশি তুমি তোমার ডিপোজিট, স্যালারি এসবেরও রেকর্ড রাখতে পারো। যদি হুট করে কোনো টাকার ট্রান্সফার করতে হয় সেটার রেকর্ডও রাখা যাবে।
এবং মানিফাই তোমার আয় ব্যয় তথ্যগুলোকে মাথায় রেখে একটা চার্ট দিবে তোমাকে। তখনই বুঝবে তুমি কেমন খরচ করছো! সেই রিপোর্ট একদিনের হতে পারে, এক সপ্তাহ বা এক মাসের হতে পারে। নির্ভর করছে তোমার উপর। যেমন ধরো আমি ১০০০ টাকা এক সপ্তাহ চালাবো বলেছিলাম। সেক্ষেত্রে আমি টাইম পিরিয়ড সেট করব এক সপ্তাহ এবং স্যালারির ওখানে ইনপুট দিব ১০০০।
মানিফাই এন্ড্রয়েড এবং আইওএস ইউজারদের জন্য ফ্রি। তবে তুমি যদি তোমার মানিফাইকে আরেকটু কর্মদক্ষ চাও তাহলে মানিফাই প্রো কিনতে পারো। আমি মনে করি, আমাদের মতো স্টুডেন্ট মানুষদের জন্য মানিফাই অ্যাপই ঠিক আছে।
খুব সহজ করে বানানো হয়েছে বলেই হয়তো এই অ্যাপের কিছু ত্রুটি আছে। যেমন এতে কোনো রিমাইন্ডার দেওয়ার অপশন নেই। তারপরও যারা শুধু কত খরচ হচ্ছে কত আয় হচ্ছে এর হিসেব রাখতে চাও তাদের জন্য এটা অনেক উপকারী।
মানি ম্যানেজার এক্সপেন্স এন্ড বাজেট (Money Manager Expense & Budget):
রেটিং: 4.6
এডিটরস চয়েসে থাকা এই অ্যাপটি ৫ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে গুগল প্লে স্টোর থেকে। তবে এটি ব্যবহারে মানিফাই থেকে কিছুটা জটিলতা আছে। ঠিক তেমনি এটাতে অনেক খুঁটিনাটি হিসাবও রাখতে পারবে। যেমন ধরো তোমার কাছে আছে ৫০০০ টাকা। সেটা কি তোমার monthly allowance, নাকি তোমার বেতন, নাকি এমনে কিছু খুচরা টাকা, নাকি বোনাস পেয়েছ এসব যোগ করার অপশন থাকে। এখন তোমার টাকাটা যদি বেতনের টাকা হয় তাহলে তুমি ক্যাটাগরিতে বেতন সিলেক্ট করবে। আবার তোমার টাকাটা কি নগদ আছে না ব্যাংকে আছে না ক্রেডিট কার্ডে আছে তারও রেকর্ড রাখা যাবে।
তেমনি খরচের হিসেব রাখার ক্ষেত্রেও অনেক অপশন রয়েছে। যেমন ধরো, একটা জামা কিনলে। কত তারিখ, কয়টার সময় কিনলে সেটা রেকর্ড করতে পারো। তারপর ইনপুট দিতে হবে একাউন্ট টাইপ। মানে তুমি কি ক্যাশ পে করেছো নাকি একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করে কিনেছো নাকি কার্ড ব্যবহার করে কিনেছো। আর এরপর টাকার পরিমাণ লিখবে। ক্যাটাগরি সিলেক্ট করবে “cloths.” আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে এখানে তুমি চাইলে ক্যাশমেমোর ছবি তুলেও সংরক্ষণ করতে পারো, যাতে করে ভবিষ্যতে জামার কেনার তথ্য সঠিক কিনা এরকম সন্দেহ হলে ক্যাশমেমো দেখে বুঝতে পারো যে আসলেই তুমি জামাটা কিনেছিলে।
এরপর এই অ্যাপের সাহায্যে তুমি তোমার খরচাপাতির একটা পরিসংখ্যান দেখতে পারবে। একটা পাই চার্টের মাধ্যমে তোমাকে তা দেখানো হবে।
এটিও ফ্রি এন্ড্রয়েড এবং আইওএস ইউজারের জন্য।
ওয়ালেট (Wallet):
রেটিং: 4.5
ওয়ালেট অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে “Top grossing finance” তালিকায় তিন নম্বরে আছে। ১ মিলিয়নের মতো ডাউনলোড হওয়া অ্যাপটি ইউজ করার ক্ষেত্রে তোমাকে লগইন করতে হবে তোমার গুগল একাউন্ট কিংবা ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো মেইল আইডি থেকে।
এটির সবচেয়ে মজার ফিচার হচ্ছে তুমি এতে তোমার ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণের পর একটা পিন সেট করতে পারবে। অর্থাৎ কেউ চাইলেই তা দেখতে পারছে না। কী কী খরচ করলে তারও একটা নিরাপত্তা দিচ্ছে এটি। রিমান্ডার সেট করা যায় এতে। এতে করে ওয়ালেট নিজেই তোমাকে মনে করিয়ে দিবে তোমার খরচের হিসাব করার সময় এসেছে। মানে হচ্ছে, তুমি যদি কোনো খরচের কথা ইনপুট দিতে ভুলে যাওয়ার আশংকা থেকে থাকে তাহলে আগে থেকেই সেট করে রাখো রিমাইন্ডার। পরে ওয়ালেটই জানিয়ে দেবে তথ্য আপডেটের কথা।
আবার যদি কোনো পেমেন্ট ভবিষ্যতে করার থাকে সেটারও প্ল্যানিং করে নিতে পারো। ওয়ালেট তো আছেই মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
সেক্ষেত্রে কী করতে হবে তোমাকে? ধরো, তুমি ৫ দিন পর ৫০০ টাকা পাবে এক বন্ধুর কাছ থেকে। তুমি প্ল্যানিং গিয়ে ডেইট টাইম লিখে দাও। টাকার পরিমাণ লিখে দাও। ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে ফেলো। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে ওরা জানতে চাইবে তোমাকে ডেইলি মনে করিয়ে দিবে নাকি একদিন আগে করবে। তো বুঝতেই পারছো নানারকমের সুবিধা আছে।
পাশাপাশি যদি একগাদা হিসেবের সঠিক পরিমাণটি লিখতে না পারো তাতেও কোনো সমস্যা নেই। তুমি শুধু তোমার আয় ব্যয় লিখে যাও ওয়ালেট নিজেই ক্যালকুলেট করে সঠিক তথ্য জায়গা অনুযায়ী বসিয়ে দিবে।
ওয়ালেট আইওস ও এন্ড্রয়েডে ফ্রি।
Facebook Marketing
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
স্পেন্ডি (Spendee):
রেটিং: 4.2
স্পেন্ডি অ্যাপের পুরো নাম হচ্ছে স্পেন্ডি বাজেট অ্যান্ড এক্সপেন্স ট্র্যাকার অ্যান্ড প্ল্যানার (Spendee – Budget and Expense Tracker & Planner)। ১ মিলিয়নের মতো ডাউনলোড হওয়া এই অ্যাপটির অবস্থান গুগল প্লে স্টোরের “Top Grossing Finance” এর তালিকায় ওয়ালেটের পর পরই। অর্থাৎ তালিকায় এটি আছে চার নাম্বারে।
স্পেন্ডি চালাতেও লগইন করতে হয়। সেক্ষেত্রে তুমি তাই ওয়ালেটের মতই নিজের গুগল একাউন্ট বা ফেসবুক বা অন্যকোনো ইমেইল দিয়ে তা সহজেই করতে পারো!
এখানে রয়েছে মোট ১৭ রকমের ক্যাটাগরি। স্পেন্ডি ১৭ টা ক্যাটাগরিতে তোমার খরচকে ইতোমধ্যে ভাগ করে রেখেছে। তুমি শুধু নিজের খরচের পরিমাণটা ক্যাটাগরি অনুযায়ী দিবে। এই তো! আমার স্পেন্ডির সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ফিচার লেগেছে যেটা সেটা হলো এখানে ইনকামেরও ৮ ধরনের ক্যাটাগরি আছে। ব্যবসা, বেতন এসব তো আছেই। পাশাপাশি, এক্সট্রা ইনকাম, গিফট, লোন এসবেরও ক্যাটাগরি আছে। এমনকি পৈতৃক সম্পত্তি থেকেও যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকো বা ইনস্যুরেন্স থেকে তারও ক্যাটাগরি পেয়ে যাবে তুমি স্পেন্ডিতে।
অনেক সময় বিদেশের অ্যাপগুলোর মূল প্রবলেম থাকে কারেন্সি নিয়ে। তোমার কাছে আছে বাংলাদেশি টাকা কিন্তু ইনপুটে যদি চায় ডলার তাহলে ভালোই মুশকিল না বলো? এটাতে কারেন্সি ও সেট করে নেওয়া যায়।
এখানেও রিমাইন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আছে তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা। লক করার জন্য এখানে ফিংগারপ্রিন্ট স্ক্যানার।
স্পেন্ডি আইওএস এবং এন্ড্রয়েডে পাওয়া যায়। এটি ফ্রি একটি অ্যাপ। তবে তুমি যদি আরো নিখুঁত ভাবে হিসাব রাখতে চাও আর চাও ম্যানুয়ালি না করে ওরা নিজেরাই করে দিবে তাহলে তুমি স্পেন্ডির সাবস্ক্রিপশন নিতে পারো।
আরও পড়ুন: টি-শার্ট ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা টি-শার্ট ডিজাইনিং টিপস
আশা করি এই চারটি অ্যাপ তোমাদেরকে আমার মত সমস্যায় পড়া থেকে বাঁচাবে। কারণ কাগজের এই টুকরো জিনিসটাই যে কত শত মানুষের হাই ব্লাড প্রেশারের কারণ সেটা তো আমি তুমি আমরা সবাই জানি। আমি বাবা নিজেকে এই বয়সেই ব্লাড প্রেশারের রোগী বানাতে চাই না। তাই নিজের খরচের হিসেব রাখার জন্য যেকোনো একটি অ্যাপ ব্যবহার করাই শ্রেয় মনে করছি।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন