পড়ালেখায় একটু খারাপ করলে আমরা প্রায়ই আমাদের স্মৃতিশক্তিকে দোষ দিয়ে থাকি। বলি, “আসলে আমার মেমরিটা-ই খারাপ, কিছুই মনে থাকে না, তাই ভালো করতে পারিনি।” অথচ আমরা ক’জনই বা জানি এই স্মৃতিশক্তিটা ঠিক কীভাবে কাজ করে? হ্যাঁ, খুব কম মানুষই জানি তা। একটা জিনিস ঠিক কীভাবে কাজ করে তা না বুঝেই তার দোষ দিয়ে ফেলাটা কিন্তু আমাদের অবিচক্ষণতারই প্রমাণ দেয়। বরং আমরা যদি এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানতে চেষ্টা করি তবে আমরা নিজেরাই বুঝবো কীভাবে এই স্মৃতিশক্তিকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে আমরা অনেকেই মূলত ধারণা পেয়েছি গল্পের বই, টিভি বা সিনেমা থেকে। দেখেছি শার্লক হোমসের তুখোড় স্মৃতিশক্তি, বা “বিগ ব্যাং থিওরি”-এর শেলডনের ‘আইডেটিক মেমরি।’ তবে স্মৃতিশক্তি কীভাবে কাজ করে তার একটি বেশ মজাদার উদাহরণ আমরা পেয়েছিলাম ২০১৫ সালের বিখ্যাত অ্যানিমেটেড মুভি ‘ইনসাইড আউট’-এ।
সেখানে মানবমস্তিষ্ককে দেখানো হয়েছে একটা লাইব্রেরির মত যেখানে জ্বলজ্বলে বিভিন্ন বলের মধ্যে সজ্জিত থাকে আমাদের বিভিন্ন স্মৃতি যার সাথে বাস্তবের আসলে বিন্দুমাত্র মিল-ও নেই। হ্যাঁ, সিনেমা হিসেবে ‘ইনসাইড আউট’ অনন্য হলেও নিউরোসায়েন্সের সোর্স হিসেবে এই সিনেমা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ বাস্তবতা এর থেকে ঠিক যতটা ভিন্ন হওয়া সম্ভব ঠিক ততটাই ভিন্ন!
প্রকৃতপক্ষে আমাদের মস্তিষ্কের কোনোখানেই এভাবে একসাথে স্মৃতিগুলো সাজানো থাকে না। সারা মস্তিষ্ক জুড়ে ছড়ানো থাকে আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতিগুলো। মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি মস্তিষ্ক কোষ বা নিউরন একসাথে কাজ করে শুধুমাত্র একটি ছোট্ট স্মৃতি তৈরির জন্য।
যেমন সর্বশেষ ছুটির দিনে তোমার মায়ের রান্না করা সুস্বাদু রান্নার স্মৃতিটাকেই ধরো। এটা প্রকৃতপক্ষে কোনো একক স্মৃতি নয়। তোমার কিছু মস্তিষ্ক কোষ হয়তো মনে রেখেছে সেই রান্নার গন্ধ, কিছু মনে রেখেছে সেটি দেখতে কেমন দেখাচ্ছিল, কিছু মনে রেখেছে তোমার জিভে লাগা সেই অদম্য স্বাদ। এই কোষগুলোর অবস্থান একটি থেকে আরেকটির বহুদূরে। অথচ এদের সম্মেলনে তৈরি হওয়া সেই রান্নার স্মৃতিটাকে তোমার একটা মাত্র স্মৃতি বলেই মনে হচ্ছে। কী অদ্ভুত একটা ব্যাপার!
বাস্তবিক অর্থে স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কে কোনো বাহ্যিক বস্তু হিসেবে সঞ্চিত থাকে না। স্মৃতি মূলত অনেক অনেক ইলেক্ট্রিক সিগন্যালের কম্বিনেশন। একটা স্মৃতি মানে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল অনেকগুলো নিউরনের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হওয়া। এবং একটি নিউরনই যেহেতু বিভিন্ন প্যাটার্নে সিগন্যাল জেনারেট করতে পারে, একটা নির্দিষ্ট কোষগুচ্ছই বিভিন্ন মেমরি তৈরি করতে পারে। একারণে আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণের ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি, বাইটের হিসাবে ধারণা করা হয় তা পঁচিশ লক্ষ গিগাবাইটের সমান।
একটি স্মৃতির জন্য জ্বলে উঠতে হয় অনেকগুলো নিউরনকে; source: theverge.net
আচ্ছা মস্তিষ্কের কোথাও স্মৃতি জমে নেই বোঝা গেল, কিন্তু মস্তিষ্কের কোনো না কোনো অঙ্গ তো এই বিভিন্ন কোষের স্মৃতিগুলোকে সমন্বয় করবার ভূমিকা পালন করেছে?
হ্যাঁ, আমাদের মস্তিষ্কের বেশ গভীরে গেলে আমরা খুব ছোট্ট একটা অঙ্গ খুঁজে পাই, দেখতে অনেকটা সিন্ধুঘোটক বা সি-হর্সের মত। ১৮ শতকের বিজ্ঞানীরা এই অঙ্গের নাম দেন ‘হিপোক্যাম্পাস’ গ্রীক ভাষায় যার অর্থ সি-হর্স। তোমার মাথার এই সি-হর্সটাই তোমার স্মৃতিশক্তিকে সচল রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।
সিন্ধুঘোটকের মত দেখতে হিপোক্যাম্পাস; source: wikimedia commons
এটা জানার পেছনে বিংশ শতাব্দীর এক রোগীর বিশাল ভূমিকা রয়েছে (হ্যাঁ, ডাক্তার নয়, রোগী)। নাম হেনরি মোলাইসন, বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত “এইচএম” হিসেবে। ১৯৫৩ সালে একটি সার্জারিতে তার হিপোক্যাম্পাসের প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দেখা যায় সার্জারির আগের যত স্মৃতি আছে, সবই তার স্পষ্ট মনে আছে, কিন্তু তার পর যা-ই ঘটছে কিছুই তার আর মনে থাকছে না। অর্থাৎ আগের স্মৃতিগুলো তার জমা আছে ঠিকই, কিন্তু নতুন স্মৃতি আর তৈরি হচ্ছে না। তখনই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে স্মৃতি তৈরি করাতে ভূমিকা রাখে হিপোক্যাম্পাস, কিন্তু সেখানে কোনো স্মৃতি জমা থাকে না।
কিন্তু একটি অভিজ্ঞতা কীভাবে স্মৃতিতে পরিণত হয়?
তুমি যখন কোনো ঘটনায় অংশ নিচ্ছো, তোমার মস্তিষ্ক সেই ঘটনার বিভিন্ন দিক (অর্থাৎ শব্দ, দৃশ্য, গন্ধ) তোমাকে অনুভব করানোর জন্য অনেক অনেক সিগন্যাল জেনারেট করছে বিভিন্ন কোষের মধ্যে। এরপর তুমি যদি সেই সিগন্যালগুলোকে এর পরপরই মাথায় আরো জেনারেট করো, অর্থাৎ ঘটনাটা নিজের মাথায় রিপ্লে করো, সেই কোষগুলোর মধ্যে কানেকশন আরো শক্ত হবে। পরবর্তীতে তুমি যদি এমন কিছু দেখো যেটা ওই আগের ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত, বা নিজেই চেষ্টা করো ঘটনাটা মনে করার, তোমার মস্তিষ্ক তখন প্রায় সেই একই সিগন্যালগুলো জেনারেট করতে পারবে। তখন সেটা আর তোমার অভিজ্ঞতা নেই, সেটা হয়ে গেছে তোমার সেই পূর্ব অভিজ্ঞতার স্মৃতি।
ইলেক্ট্রিক সিগন্যালের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে স্মৃতি; source wikimedia commons
কিন্তু সব স্মৃতিই তো আমাদের সমানভাবে মনে থাকে না। হয়তো তোমার নিজেরই তোমার প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনটার কথা স্পষ্ট মনে আছে কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগে লাঞ্চে কী খেয়েছিলে সেটাই মনে নেই। এ ব্যাপারটিকে বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে তাকাতে হবে আমেরিকান দুই সাইকোলজিস্ট এটকিনসন আর শিফ্রিনের ষাটের দশকে তৈরি করা একটি মডেলের দিকে। সেখানে আমাদের স্মৃতি তিন রকম- সেন্সরি মেমরি, শর্ট টার্ম মেমরি আর লং টার্ম মেমরি
এটকিনসন এবং শিফ্রিনের মডেল অনুযায়ী, যেকোনো তথ্যকে আমরা প্রথমে মস্তিষ্কে নেই তৎক্ষণাৎ স্মৃতি হিসেবে, যেগুলোকে আমরা মাথায় রাখি খুবই অল্প সময়ের জন্য। যেমন আমি যদি একসাথে নতুন কয়েকজনের সাথে পরিচিত হই, তখন পরমুহূর্তেই দেখি আমার একটি নামও মনে নেই। কারণ ওই তথ্যটা আমার মাথায় তখনই ঢুকে তখনই হারিয়ে গিয়েছে। এই যে তৎক্ষণাৎ স্মৃতি, এর নাম সেন্সরি মেমরি।
কিন্তু সেই তথ্যটা নেবার পর যদি আমরা নিজের মাথায় অনেকবার রিপিট করি, তখন সেটা সেন্সরি মেমরি থেকে শর্ট টার্ম মেমরিতে রূপ নেয়। ফোন নাম্বার, পাসওয়ার্ড এধরণের ব্যাপারগুলা সাধারণত প্রথম প্রথম আমাদের মাথায় শর্ট টার্ম মেমরি হিসেবে জমা হয়, কারণ এগুলো শোনা মাত্রই আমরা মনে রাখার তাগিদে মাথার মধ্যে বেশ কয়েকবার বলে ফেলি, (বা আমার ক্ষেত্রে আমি জোরে জোরেই বলি)। এসব স্মৃতিগুলো তখন হয়ে যায় শর্ট টার্ম মেমরি।
কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে এই শর্ট টার্ম মেমরিগুলোরও স্থায়ীত্ব বেশ কম, অনেক রিপিট করার পরও এটা মাথায় পুরোপুরি অক্ষত থাকে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তারপর সেই মেমরিটা হয় হারিয়ে যায়, নয়তো ট্রান্সফার হয় লং টার্ম মেমরিতে। তোমার সব জ্ঞান, স্কিল, অভিজ্ঞতা তোমার মাথায় জমা আছে লং টার্ম মেমরি হিসেবে, এটাই বলা আছে এটকিনসন-শিফ্রিনের মডেলে।
তিন রকম মেমরি; source: opentextbooks.org.uk
এরপর এটকিনসন শিফ্রিন মডেলের পর অনেকগুলো বছর কেটে গেল। এরপর মনোবিদরা একসময় দেখলেন ক্লাসিকালি যেভাবে শর্ট টার্ম আর লং টার্ম মেমরিকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে ব্যাপারটা আসলে এতটা সহজ নয়। তাই পরবর্তী প্রজন্মের মনোবিদরা শর্ট টার্ম মেমরির আইডিয়াটা নিয়ে আরো গবেষণা করে এর নতুন একটা নাম দিলেন- “ওয়ার্কিং মেমরি।”
আমরা যে মেমরিকে ব্যবহার করছি আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সেটাই হচ্ছে ওয়ার্কিং মেমরি। সাধারণ জীবনে আমরা কিন্তু আমাদের সব স্মৃতিকে একসাথে কখনো স্মরণ করি না, এবং যত তথ্য আমরা চারপাশে পাচ্ছি, সব তথ্য মনে রাখারও আমাদের প্রয়োজন হয় না। কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্য এবং স্মৃতি দিয়ে চলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন- যেটাকে বলা হচ্ছে “ওয়ার্কিং মেমরি।” এই ওয়ার্কিং মেমরি থেকেই বিভিন্ন স্মৃতি গিয়ে লং টার্ম মেমরিতে জমা হয়, প্রয়োজনে সেগুলো আবার ফিরে আসে ওয়ার্কিং মেমরিতে।
বর্তমান সময়ের নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে আমাদের স্মৃতি জমানোর ক্ষমতাটা অসীমরূপ হলেও, এই ওয়ার্কিং মেমরিটা সীমিত। অনেকটা কম্পিউটার মেমরির সাথে ব্যাপারটা মেলানো যায়, যেখানে লং টার্ম মেমরি হচ্ছে আমাদের হার্ড ড্রাইভ, ওয়ার্কিং মেমরি হচ্ছে আমাদের র্যাম। র্যাম দিয়ে প্রোগ্রামগুলো চলে, আর কম্পিউটারের সকল তথ্য জমা থাকে হার্ড ডিস্কে।
এই যে ওয়ার্কিং মেমরিতে তথ্য নিয়ে সেটা লং টার্ম মেমরিতে জমা হওয়া, সেটা ঐচ্ছিক বা অনৈচ্ছিক দু’ভাবেই হতে পারে। যেমন তোমার পড়াশোনার ব্যাপারটা ঐচ্ছিক। আর আগুন দেখে তুমি যদি ভয় পাও, সেটা তোমার যেই লং টার্ম মেমরি থেকে উদ্ভুত, সেটা অবশ্যই জমা হয়েছিল অনৈচ্ছিকভাবে। অনৈচ্ছিকভাবেই তোমার প্রতিরক্ষার জন্য, বা ভালো থাকার প্রয়োজনে, মস্তিষ্ক অনেক কিছুই তার লং টার্ম মেমরিতে জমিয়ে ফেলে।
এই লং টার্ম মেমোরিরও বিভিন্ন ধরণ আছে আবার। যেমন সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, কিংবা লেখা- এগুলো সব শেখার সময় অনেক কঠিন ব্যাপার ছিল, অথচ শেখার পর মাথায় পুরো থিতু হয়ে আছে। এগুলোকে বলে “প্রোসিডিউরাল মেমরি।”
এছাড়াও দেখবে তোমার শৈশবের অনেক ঘটনা তোমার আলাদা করে অনেক স্পষ্টভাবে মনে আছে। এগুলোকে বলে “এপিসোডিক মেমরি।”
অনেক তো জানলাম, চলো আবার দেখি কীভাবে হ্যাক করা যায় আমাদের স্মৃতিশক্তিকে!
এই মেমরি সম্পর্কে একটু শেখার পর দেখো, আমরা আমাদের মেমরিকে হ্যাক করার কিছু উপায় সহজেই বাতলে ফেলতে পারব। যেমন ধরো আমার যে সমস্যাটা, কারো সাথে পরিচিত হওয়া মাত্রই তার নাম ভুলে যাই, আমি নিশ্চিত এটা তোমাদের অনেকেরই হয়। তো আমি যদি নামটা শোনা মাত্রই মাথার মধ্যে কয়েকবার রিপিট করে ফেলি তবে সে নামটা আমার শর্ট টার্ম মেমরিতে চলে গেল! সুতরাং নাম ভোলার বিড়ম্বনা থেকে বেঁচে গেলাম!
তারপর দেখা যাচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক যেসব তথ্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সেসবকে নিজে থেকেই লংটার্ম মেমরিতে রেখে যায়। তাই তুমি পড়াশুনা করবার সময় যদি তুমি তোমার জীবনে বিভিন্ন ঘটনার সাথে রিলেট করে করে পড়ো, বা শুধুই শুষ্ক তথ্য হিসেবে না পড়ে গল্পের মতো করে পড়ো, তবে দেখবে অবশ্যই তোমার আগের থেকে অনেক বেশি মনে থাকছে। যেমন পড়ছো ধরো ইতিহাস, অনেক অনেক সন আর তারিখ সেখানে। ভেবে দেখো তারিখগুলো বা সালগুলোর সাথে সম্পর্কিত তোমার ব্যক্তিগত কোনো গল্প আছে কীনা, সেগুলো ভেবে ভেবে পড়লে আরো ভালো মনে থাকবে। যেমন সাতচল্লিশের দেশভাগ ১৪ই আগস্টে, তোমার কোনো বন্ধুর জন্মদিনও হয়তো ১৪ই আগস্টে! বিজ্ঞান পড়ার সময় তৈরি করে নিলে নিজের মতো গল্প যে গল্পে হয়তো কপারের সাথে জিংক মারামারি করে তার দু’টো ইলেকট্রন নিয়ে নেয়!
()
আর বেশি পড়লে বেশি মনে থাকবে এটা বলতে অবশ্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই, তবে বিজ্ঞানও অবশ্য সে কথাটাই বলছে।
আমরা আরও দেখেছি মস্তিষ্ক পরিচিত জিনিসের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। অতীতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিছু দেখলে তোমার মস্তিষ্ক নিজে থেকেই তোমাকে মনে করিয়ে দেয় অতীতের কথা। পরিচিত সবকিছুর মাঝে মস্তিষ্ক কাজও করে ভালো যেহেতু তার নতুন তথ্য কম গ্রহণ করা লাগছে, লং টার্ম মেমরি থেকে তথ্য নিয়েই সে কাজ চালিয়ে দিতে পারছে। সুতরাং তুমি যদি নতুন কিছু মনে রাখতে গিয়ে তোমার পরিচিত কিছুর সাথে মিলিয়ে কোনো ছন্দ বা সিস্টেম তৈরি করো, তবে সেটা তুমি অবশ্যই অনেক বেশি সহজে মনে রাখতে পারবে। এ ব্যাপারটির একটি নাম-ও আছে- “নেমোনিক (mnemonic)।”
এই কাজটা অবশ্য তোমরা অনেকেই ইতোমধ্যেই করেছো, যেমন পিরিয়ডিক টেবিল মনে রেখেছো হয়তো অনেকে ছন্দ দিয়ে, রংধনুর সাত রঙকে বলছো “বেনীয়াসহকলা।” এই সবই আসলে মস্তিষ্ককে হ্যাক করার উদাহরণ।
সরল করার নেমোনিক; source: quickermaths.com
এছাড়াও মস্তিষ্কে “শ্যালো প্রসেসিং” বলে একটা ব্যাপার আছে। খুবই বেসিক লেভেলের তথ্য, মানে একটি বস্তুর কালার, বা দেখতে কেমন এগুলো ব্রেইন খুব সহজে মনে রাখতে পারে। তাই তুমি যা মনে রাখতে চাইছো তা যদি একটু রঙিন বা সুন্দর করে তুলো, যেমন হাইলাইটার দিয়ে লেখাটাকে রঙিন করলে বইতে, বা খুব সুন্দর হাতের লেখায় নোট করলে বা যা মনে রাখতে চাইছো সেটাই লিখলে, তবে সেই তথ্য অবশ্যই তোমার মনে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। তাই সবসময় চেষ্টা করবে তোমার পড়াশুনার বাহ্যিক ব্যাপারগুলো সুন্দর রাখতে, তোমার স্মৃতিশক্তি দেখবে এমনিতেই বেড়ে গেছে তখন।
সুতরাং দেখলে তো, তোমার স্মৃতিশক্তি আসলে ধরাবাঁধা কোনো স্কেলে আটকানো নেই। তুমি চাইলেই এটাকে বাড়াতে পারো, চাইলেই এর ব্যবহার না করতে করতে কমিয়ে ফেলতে পারো। চয়েসটা আসলে তোমারই।
মনে রাখবে, তোমার স্মৃতিগুলোই তৈরি করে তোমার ব্যক্তিত্বকে, গড়ে তোলে তোমার জীবনকে। তাই এই প্রভাবশালী ব্যাপারটির অবশ্যই সদ্ব্যবহার করতে হবে তোমাদের, তবেই দেখবে জীবনের ব্যর্থতার জন্য আর স্মৃতিশক্তিকে দোষ দিচ্ছো না, বরং সাফল্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছো।
References:
https://www.verywellmind.com/what-is-memory-2795006
http://www.bbc.com/future/story/20140221-how-does-your-memory-work
https://www.sciencedaily.com/releases/2016/05/160517131928.htm
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন