পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব – ইলোন মাস্ক। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ ভ্রমণ কিংবা দ্রুতগতির গাড়ি নিয়ে যাদের কিছুটা হলেও আগ্রহ রয়েছে তাদের সবার কাছে ইলোন মাস্ক এক পরিচিত নাম।
Pay-Pal এর দ্বারা অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থাকে কেবল কয়েক ক্লিকের মধ্যে আনা ইলোন তাঁর কোম্পানি Space-X এর মাধ্যমে অর্জন করে চলেছেন মহাকাশ অভিযানের একের পর এক মাইলফলক। মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে কয়েক দশকেই তাঁর হাত ধরে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের।
শুধু তাই না, তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি Tesla, সোলারপ্যানেল ব্যবস্থাপনার কোম্পানি Solarcity এবং পরবর্তী প্রজন্মের দ্রুত যাতায়াতের জন্য Hyperloop কাজ করে যাচ্ছে ভবিষ্যতের অনেক সমস্যার সমাধানের।
এজন্যই আজ ইলোন মাস্ককে তুলনা করা হয় মার্ভেল কমিকস ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সুপারহিরো টনি স্টার্ক বা আয়রন ম্যানের সাথে।
ইলোন মাস্কের জীবন, দর্শন ও ক্যারিয়ার থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। তাঁর শুরুর গল্পটা না হয় অন্য দিনের জন্য তোলা থাকুক। ইলোন মাস্কের সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হল- কীভাবে একজন মানুষ এতো ভিন্নধর্মী ক্ষেত্রে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মাস্কের জীবনের নানা দিক অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন অ্যাশলি ভান্স তাঁর “Elon Musk: Tesla, SpaceX, and the Quest for a Fantastic Future” জীবনীতে। এই গ্রন্থ, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও থমাস ফ্র্যাংকের কলেজ ইনফো গিকের সাহায্যে এই ব্লগে বিশ্লেষণ করা হয়েছে ইলোন মাস্কের কর্মকৌশল।
এত Productivity সম্পন্ন এই মানুষটির কর্মকৌশল যাচাই করলে আমরা পাবো ৫টি বৈশিষ্ট্য যা আমাদেরও সাহায্য করবে আমাদের Productivity বহুগুণে বাড়াতে। সেগুলো হল –
১। প্রতিদিন গোসল করা:
কী? খুব বেশি অদ্ভুত শোনাচ্ছে? মনে হচ্ছে, “এসব কী আজেবাজে টিপস!” অথবা “প্রতিদিন তো আমিও গোসল করি। কই আমার তো কোনো বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি নেই?”
এই প্রশ্নগুলো যদি তোমার মাথায় আসে তাহলে অভিনন্দন! কারণ এই প্রশ্নগুলো আসাই স্বাভাবিক। ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ইলোন মাস্ককে প্রশ্ন করা হয় – “কোন দৈনিক অভ্যাসটি আপনি মনে করেন আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে?”।
তিনি উত্তর দেন– “গোসল”। এই উত্তরে সমগ্র রেডিটে হাসির রোল পড়ে যায় এবং কিছুক্ষণ আগে তোমার মাথায় যেই প্রশ্নগুলো আসলো সেগুলো তাদের মাথায়ও খেলে যায়।
প্রথম দেখায় অনেকের মনে হতে পারে, “এটা মনে হয় মাস্ক সাহেবের ট্রলিং। আহা! এতো বড় মাপের মানুষ হয়েও তাঁর সেন্স অফ হিউমার এখনো ঠিক আছে”। কিন্তু, আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখবো এই উত্তরটি তিনি ট্রলিং-এর জন্য দেননি। আসলে এর ২টি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো দৈনিক পালন করার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও আত্ম-শৃঙ্খলা। এই দুই গুণ আয়ত্বে থাকলে যেকোনো কাজই তুমি করতে পারবে সহজে।
দ্বিতীয়ত, নিয়মিত গোসল, নিজের ওয়ার্কস্পেস বা পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা – এই কাজগুলো স্বাভাবিকভাবেই প্রোডাকটিভ কাজের আগ্রহ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
২। দলের জন্য উদাহরণ হওয়া:
কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার – প্রায় সবক্ষেত্রেই আমাদের কাজ করতে হয় অন্যদের সাথে। যখনই আমরা এই সম্মিলিত কাজ করতে যাই, তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। কাজের মধ্যে তো সমন্বয় বা উন্নতি হয়ই না, উল্টো কাজের আউটপুট প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে।
লেখক অ্যাশলি ভান্স তাঁকে তুলনা করেন একজন T-Shape মানুষ হিসেবে
এই ক্ষেত্রে ইলোন মাস্ক যেই কাজটি করেন সেটি হল – তিনি তাঁর দল ও সহকর্মীদের কাছ থেকে যেমন কাজ আশা করেন তাঁর চেয়ে বেশি উদ্যম নিয়ে তিনি কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি প্রায় ৮৫-১০০ ঘণ্টা কাজ করেন এবং প্রায়ই সপ্তাহে ৭ দিনই তিনি কর্মব্যস্ত থাকেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা তাঁর দলের জন্য শুধু উদাহরণ না, হয়ে ওঠে মনোবলের উৎস।
৩। স্ট্রেচ গোল:
স্ট্রেচ গোল হল এমন একটি লক্ষ্য যা তোমার বর্তমান সাধ্য বা ক্ষমতার বাইরে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে যা তোমার “ধারণাকৃত” সর্বোচ্চ ক্ষমতার বাইরে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ধরো, তুমি জানো তুমি একবারে ১০বার পুশ-আপ দিতে পারো।
তুমি ভাবছো এটাই তোমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তোমার কোচ তোমাকে বললো তোমার ২০বার দেয়াই লাগবে। তুমি তাই করার চেষ্টা করলে। প্রায় শত ভাগ সম্ভাবনা তুমি পারবে না কোচের টার্গেট পূরণ করতে। কিন্তু তুমি পুশ-আপ দিলে ১৫ বার। সেটা তোমার টার্গেট না পূরণ করলেও তা তোমার পূর্বের ধারণাকৃত ক্ষমতার চেয়ে বেশি।
ইলোন মাস্ক তাঁর টেসলা ও স্পেস-এক্স -এর প্রত্যেকটি প্রজেক্টেই স্ট্রেচ গোল হিসেবে প্রায় অবাস্তব ডেডলাইন সেট করেন। এজন্যই তাঁর কোম্পানিগুলো এতো কম সময়ে এতো অভাবনীয় উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়।
৪। জ্ঞানের পরিমণ্ডল বিস্তৃত করা:
উদ্ভাবন বা সমস্যার সৃজনশীল সমাধানের জন্য প্রয়োজন জ্ঞানের বিস্তৃতি অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান রাখা। এই গুণটির জন্যই ইলোন মাস্ক আজ এতো বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে নিজেকে জড়াতে পেরেছেন এবং সফল হয়েছেন।
ইলোন মাস্কের জীবনী লেখক অ্যাশলি ভান্স তাঁকে তুলনা করেন একজন T-Shape মানুষ হিসেবে। এই বিন্যাসে, I – shape মানুষেরা যেকোনো এক বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন। তিনি সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হলেও অন্য বিষয়ে তাঁর জানা শোনা থাকে একেবারে শূন্য।
Dash(-) shape মানুষরা হল তাঁরা যাদের অনেক ক্ষেত্রে জ্ঞান কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই গভীর না। অর্থাৎ Jack of all trades, master of none.
T-shape হল তাঁরাই যাদের অনেক বিস্তৃত ও গভীর জ্ঞানের ক্ষেত্র রয়েছে।
এরকম বিস্তৃত ও গভীর জ্ঞানের ক্ষেত্র অর্জনের জন্য ইলোন মাস্ক উপদেশ দেন প্রচুর বই পড়তে, সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করতে- অর্থাৎ জ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যেতে।
৫। সবসময় ভাবা আমি আরও উন্নতি করতে পারব:
পরিবর্তন – সেটা ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক, সেটার সূচনা হয় আমাদের মনে বা আমাদের চিন্তায়। ইলোন মাস্ক হঠাৎ করেই বা উত্তরাধিকার সূত্রে সফল হন নি। তাঁর শুরুটাও হয়েছে ছোট থেকেই। কিন্তু তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন।
এখান থেকে যে শিক্ষাটি আমরা পাই – সেটি হল নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং সবসময় খুঁজতে থাকা আমাদের কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব ও কীভাবে আমরা তা করতে পারি। এই ধরনের চিন্তা চেতনাকে বলা হয় -“গ্রোথ মাইন্ডসেট”।
“ফিক্সড মাইন্ডসেট” নিয়ে থাকা মানুষেরা এগিয়ে থাকলেও একসময় আর সফল হতে পারেন না। কারণ, সবসময় এগিয়ে থাকতে হলে লাগাতার নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে হবে।
আশা করি, এই ৫ টিপস তোমার জীবনকে আরও বেশি কর্মময় করতে সাহায্য করবে। হয়তোবা এভাবেই তুমি এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতের ইলোন মাস্ক হবার পথে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন