পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
আমাদের সমাজে এখনও ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া ছেলেটাকেই আদর্শ ছাত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। সারাদিন বইয়ের ভেতর মাথা গুঁজে রাখা ছেলেটা কখনোই একজন আদর্শ ছাত্র হতে পারে না। আদর্শ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো ছেলেটা কতটুকু স্মার্ট! কিন্তু আফসোসের বিষয় এখনও স্মার্ট বলতে স্যুট-টাই পরে সাহেব হয়ে ঘুরে বেড়ানোকেই বুঝায়। যেই ছেলেটা ছেঁড়া জামা পরে বাসে চড়ে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সেই ছেলেটা কি তবে আনস্মার্ট? সে ছেলেটা কি তবে সমাজের কাছে আদর্শ নয়?
হতে পারে সেই ছেলেটি সমাজের কারো কারো কাছে আনস্মার্ট কিন্তু স্মার্টনেসের প্রকৃত সংজ্ঞানুসারে আসল স্মার্ট হয়তো এই ছেলেটাই। স্মার্টনেস আসলে সামগ্রিক বিষয়। একে শুধু একটি অনুষঙ্গ দিয়ে বিচার করলে হবে না। পোশাক, রুচি, চিন্তাভাবনা, বিভিন্ন কার্যক্রম, বিশ্বাস, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে একজন ছাত্র পরিপূর্ণ আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। চলো তাহলে জেনে নেই একজন আদর্শ ছাত্র হতে যে সকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজনঃ
সুন্দর করে কথা বলতে পারাঃ
সুন্দর করে কথা বলতে পারাটা একটা শিল্প। তুমি তোমার কথা দিয়ে মানুষকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারবে। রেডিওতে যখন রেডিও জকিরা খুব সুন্দর করে কথা বলে তখন মনে হয় মানুষটা না জানি কত স্মার্ট! তুমি বাকপ্রতিবন্ধী না, তোমার মুখে জন্মগতভাবে কোন জড়তা না থাকলে সুন্দর করে কথা বলতে আপত্তি কোথায়! আঞ্চলিকতা পরিহার করে যথাসম্ভব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে শিখো। কোন কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি বলার চেষ্টা করো। কথা হবে শ্রুতিমধুর, স্পষ্ট।
পরিপাটি থাকাঃ
তোমার জামাটা কম দামী হতে পারে কিন্তু সেটা পরিষ্কার পরিপাটি থাকার মাঝেও একজন আদর্শ ছাত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। ইসলাম ধর্মে এটাকে ঈমানের একটা অঙ্গের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তোমাকে কোন জায়গায় কী পরিধান করতে হবে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ভাইভা বোর্ডে একটি গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে যাওয়াটা কোনভাবেই কাম্য নয় কিংবা শার্টের বোতাম ৩-৪ টা খুলে রেখে কোন মুরব্বির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলাটাও কাম্য নয়।
আত্মনির্ভরশীল হওয়াঃ
তুমি ভার্সিটিতে পড়ছো, বাবা-মার টাকা উড়াচ্ছো আর খুব বাহাদুরি দেখাচ্ছো; এর মাঝে কিন্তু তোমার স্মার্টনেস প্রকাশ পায় না। নিজের খরচটা নিজে চালানোর মাঝেই তুমি কতটুকু স্মার্ট তা প্রকাশ পাবে। সেটা হতে পারে কলেজ জীবন থেকে অথবা ভার্সিটি জীবন থেকে।
অনেকের ধারণা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সময়-সুযোগ, রেফারেন্স (যা আমাদের সমাজে মামার জোর হিসেবে প্রচলিত) কিংবা প্রচুর টাকা-পয়সা থাকতে হয়। এটা সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারণা। এখন টাকা রোজগারের হরেক রকম উপায় রয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি দিব্যি রোজগারে নেমে যাও। তোমার বাবার অঢেল টাকা থাকতে পারে কিন্তু নিজের টাকায় চলার মাঝে কী পরিমাণ প্রশান্তি বিরাজমান তা আত্মনির্ভরশীল হলেই বুঝতে পারবে।
ব্যক্তিত্ব বজায় রাখাঃ
Anybody can love your looks, but it’s your heart & personality that makes someone stay with you.
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যক্তিত্ব বলতে বুঝায় কোনো একজনের মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণের এমন এক স্বতন্ত্র ধরন, যা কেবল তার মধ্যেই বিদ্যমান থাকবে যেটি কিনা অন্যদের কাছ থেকে সেই ব্যক্তিকে আলাদা করবে।
তোমার ব্যাক্তিত্ব হয়তো তোমাকে সবার মাঝে আলাদা করে রাখবে, হতে পারে সেটা সবার কাছে অনুকরণীয় অথবা ঘৃণার কারণ। গুণীজনেরা বলে গেছেন, যার ব্যক্তিত্ব কিংবা চরিত্ব বলতে কিছু নেই তার মত দরিদ্র আর কেউ নেই। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষই প্রকৃত মানুষ। সুতরাং তোমার ব্যক্তিত্বকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করো।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
HSC 2024 ক্র্যাশ কোর্স - প্রথম পত্র [বিজ্ঞান বিভাগ]
রুটিন মেনে চলাঃ
সময়ের কাজ সময়ে করতে পারাটাও একজন আদর্শ ছাত্রের উদাহরণ। আজকের রুটিনে যা যা করতে হবে তা যেন আগামীকালের জন্য ফেলে রাখা না হয়। মনে রাখবে ছোট ছোট কাজ জমতে জমতে শেষে এত বড় আকার ধারণ করে যে সেগুলো শেষ করতে গোঁজামিল লেগে যায়, শেষে দেখা যায় কোনটাই সম্পূর্ণভাবে শেষ করা হয়ে উঠে না।
কঠোর পরিশ্রমী হওয়াঃ
Hard work beats talent when talent doesn’t work hard.
প্রতিভা দিয়ে সব হয় না। তুমি অনেক প্রতিভাবান হতে পারো কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া কখনোই উন্নতি লাভ করতে পারবে না। এক সময় কেউ তোমার প্রতিভার কথা বলবে না, বলবে তোমার পরিশ্রমের কথা। আমরা সফল মানুষদের শুধু সফলতাটাই চোখে দেখি, তার পেছনে কী পরিমাণ অক্লান্ত পরিশ্রম ছিলো সেটা দেখি না। সুতরাং আর অলসতা নয়; কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠো। কঠোর পরিশ্রমীকে সবাই পছন্দ করে।
একাডেমিকের পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিজে জড়িত থাকাঃ
এখনও আমাদের সমাজে এটা বিশ্বাস করা হয় পড়ালেখা মানেই বোর্ডের কারিকুলামে যে টেক্সট বইগুলো আছে, শুধু ঐগুলোই যথেষ্ট। এর বাইরে আর যা কিছু আছে তা পড়ালেখা নয়। এই ধারণাটা কত ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিভাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজকে অকাজের খাতায় ফেলে রাখছি।
শুধুমাত্র টেক্সট বই তোমাকে একটি গণ্ডির মাঝে আটকায় রাখবে। বরং বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিজে জড়িত থাকার ফলে তোমার জ্ঞানের পরিধি আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং, তোমার পড়ালেখা ঠিক রেখে যেটাতে বেশি আনন্দ পাও সেটাতে নিজেকে নিমগ্ন রাখো। অবশ্যই সৃষ্টিশীল কিছুর মাঝেই আনন্দ খুঁজে নাও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণঃ
এখন ফেসবুকীয় যুগ। এই আধুনিক যুগে তোমার ডিজিটাল বায়োডাটা হলো তোমার ফেসবুক একাউন্ট। মানুষ তোমাকে ঠিক চিনে নিবে তোমার ফেসবুকের কার্যকলাপ দেখেই। সুতরাং তোমার ফেসবুক একাউন্টটাই কিন্তু তোমার একটা প্রতিচ্ছবি। ফেসবুকের মাধ্যমেই সমাজের কাছে নিজেকে সুন্দর রূপে তুলে ধরার এই মোক্ষম হাতিয়ারটা কেনইবা হাতছাড়া করবে! ফেসবুকের প্রোফাইলে works at student, works at baper hotel এইসব পরিহার করো। নিজের একটি পরিচয় স্থাপন করতে শেখো।
পরিশেষে বলবো উপরের সবগুলো গুণাবলি হয়তো তোমার মাঝে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এটা না যে তুমি স্মার্ট না। আমরা কেউই সম্পূর্ণভাবে স্মার্ট না, কোন না কোন জায়গায় অবশ্যই ঘাটতি থেকেই যায়। কিন্তু তারপরেও, সেকেলে ধ্যান-ধারণাকে ভুলে যতটুকু সম্ভব উপরোক্ত গুণাবলি আয়ত্বে আনার চেষ্টা করতে থাকি। আর হ্যাঁ, একজন স্মার্ট মানুষ অবশ্যই একদিন জীবনে চরম সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করবে; আদর্শ এবং অনুকরণীয় হয়ে উঠবে সবার কাছে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
আপনার কমেন্ট লিখুন