পুরো সেমিস্টার সময় নষ্ট করে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কেনো পরীক্ষার আগের রাতের জন্য প্রায় সব পড়াই জমিয়ে রাখে?
আমার এই ব্যাপারটি একদম মাথায় ধরে না আর আমিও নিজেও এই সমস্যার বড়সড় একজন ভুক্তভোগী।
কিংবা ধরো পড়তে বসলেই ঘুম আসার যেই ব্যাপারটি ! চিন্তাভাবনা করে চুল পাকিয়েও এই সমস্যাগুলোর কারণ খুঁজে পেলাম না।এরপর রাগের মাথায় ভাবলাম এই সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষণা করে পুরো ছাত্রসমাজ কে উদ্ধার করবো। ছাত্রসমাজ আমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
কিন্তু বাপরে ! গবেষণা করতে গিয়ে পরলাম মহাবিপদে। গবেষণার “গ” তো করতে পারলামই না উল্টো মানুষের সাইকোলজি নিয়ে পড়তে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাবার যোগাড় হোল। এক টপিক নিয়ে পড়াশোনা করি তো আরেকটা ভুলি। পড়ার অভ্যাস না থাকায় বেশিক্ষণ পড়তে পারছি না। এমন আরও হাজারটা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে উল্টো আরও হতাশ হয়ে গেলাম।
তাহলে আমার ভুল কোথায় ছিল? চাইলেই কি আমি গবেষণা শুরু করে দিতে পারি না? ইন্টারনেটে তো তথ্য,উপাত্ত থেকে শুরু করে গ্রাফ, চার্ট, ডাটা, আর্টিকেল সব কিছুই আছে। তবে সমস্যা কোথায় হোল?
এবার কিভাবে গবেষক হতে হয় সেই বিষয়ে একটু গবেষণা করলাম। পুরো ব্যাপারটা কেঁচো খুরতে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসার মতো হয়ে গেলো। জানলাম গবেষক হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি এক সপ্তাহ এক মাস কিংবা এক বছরের ব্যাপার নয়। গবেষণা করার জন্য গবেষক হওয়ার লক্ষ্য তো থাকতে হবেই, তার সাথে সাথে সেই গোল অনুযায়ী নিজেকে প্রতিটি মুহূর্তে তৈরি করতে হবে।
গবেষক হয়ে গড়ে ওঠার ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করে কি ফলাফল পেলাম সেই রিসার্চ পেপারটিই এখন তোমার সামনে সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Word Course
গবেষণা কি ? গবেষণার উদ্দেশ্যই বা কি?
গবেষণা বা ইংরেজিতে রিসার্চ হোল মানুষের সার্বিক বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে চুলচেরা অনুসন্ধানের একটি প্রক্রিয়া। যেমন ধরো প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিস্কারের নেশায় বিজ্ঞানীরা একাগ্রচিত্তে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা খরচ করে হাজারটা বিষয়ে পড়াশোনা করে চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষণা। গবেষণা বা রিসার্চ হতে পারে অরিজিনাল, সায়েন্টিফিক, আর্টিস্টিক কিংবা হিউম্যানিটিস এর উপর ভিত্তি করে। অনেক গবেষক আবার হিস্টোরিকাল রিসার্চ করে থাকেন। গবেষক যেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করুক না কেন তার উদ্দেশ্য একটাই- মানুষের জীবনে তার এই গবেষণা যাতে কোনো নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
গবেষক হতে হলেঃ
-
নিজেকে জিজ্ঞেস করো “আমি কি সত্যিই গবেষক হতে চাই?”
গবেষক হওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে সত্যিই গবেষক হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না সেটি বার বার পরখ করে নেয়া। গবেষক হওয়ার প্রক্রিয়াটি অ্যাকাডেমিক লাইনে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বলা যায়, একজন ব্যাক্তির গবেষক হওয়া মানে অ্যাকাডেমিক লাইনে সে সফল ভাবেই ক্যারিয়ার সাজিয়ে নিতে পেরেছে।
তোমার যদি পড়াশোনা করতে ভালো লেগে থাকে কিংবা কোনো বিষয় নিয়ে নতুন কিছু জানার আগ্রহ থাকে তবে আমি বলব তোমার গবেষক হওয়ার প্ল্যান শুরু করে দেয়া উচিত।
তবে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। অ্যাকাডেমিক লাইনে এই ক্যারিয়ার গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে দায়িত্ববোধ। তুমি যদি লম্বা সময় ধরে ছুটি কাটানো কিংবা ঘনঘন কাজ থেকে বিরতি নেয়া মানুষের দলে থাকো তবে বলবো গবেষক হওয়ার চিন্তাভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কেননা একজন গবেষক নিজেই নিজের বস। সফল গবেষক হওয়ার জন্য তাকে প্রায় ঘড়ির কাঁটার মতো প্রতিনিয়ত রিসার্চ করতে হয়। কিন্তু নিজেই নিজের বস হওয়ার সুবাদে স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে গবেষক তো হতেই পারবেনা উল্টো অ্যাকাডেমিক লাইনে ক্যারিয়ার বিশাল হোঁচট খাবে।
“ভাইয়া আমার রিসার্চ করতে ভালো লাগে তাই গবেষক হবো”। তাহলে তো খুবই ভালো কথা। ভালো লাগার ব্যাপারে শ্রম দিলে কিন্তু সবাইকেই ছাড়িয়ে যাওয়া যায়! কাজেই যেই সিদ্ধান্তই নাও না কেনো তা হতে হবে খুব ভেবে চিন্তে!
-
এবারে তোমার কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে এসোঃ
এই ব্যাপারটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষক হওয়ার জন্য তোমাকে প্রতিনয়ত নতুন বিষয় নিয়ে জানতে হবে, তোমার মাইন্ড সেট আপের সাথে মিলে যায় এমন মানুষদের সাথে মিশতে হবে, নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করতে হবে কিংবা পড়াশোনার জন্য পাড়ি দেয়া লাগতে পারে অন্য দেশে। কাজেই নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার অভ্যাস করে ফেলতে হবে এক্ষুনি।
উপরের GIF এর কথাটি কিন্তু আমার বেশ মনে ধরেছে!
-
বিনয়ী হয়ে ওঠো আর ক্রিটিসিজম নিতে শিখোঃ
শুধুমাত্র গবেষক নয়, যে কোনো কিছু হয়ে ওঠার ধাপে তোমাকে বিনয়ী হওয়া শিখতে হবে। প্রতিটি ধাপে তুমি হাজারটি ভুল করবে আর সেই ভুলের জন্য তোমার আশাপাশের মানুষের ক্রিটিসিজম নিজের ভুল শুধরানোর উপায় হিসেবে দেখতে হবে। কেননা ভুল করতে করতেই তুমি শিখবে। তোমার মতো গবেষক হওয়ার মাইন্ড সেট আপ যাদের আছে তাদের থেকে তুমি ফিডব্যাক নিতে পারো। আবার তুমিও তাদের কাজের ফিডব্যাক দিতে পারো, করতে পারো ক্রিটিসিজম। এভাবে একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমেই কিন্তু সবাই সবার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারো।
-
কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াওঃ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তোমার কাজগুলো অন্যান্য গবেষকদের সামনে প্রদর্শন করতে হবে, তার সাথে তোমার অডিয়েন্স তো আছেই। এদের সামনে নিজের আইডিয়া আর গবেষণা ঠিকঠাক মতো যদি উপস্থাপন করতে না পারো তাহলে গবেষক হওয়ার পেছনে পুরো শ্রমটাই বৃথা গেলো তোমার।
নেটওয়ার্ক বাড়াওঃ
কেবল নিজে নিজে গবেষণা করলেই তো আর গবেষক হয়ে যাবে না! তোমার মতো মাইন্ড সেট আপের মানুষজন কে কি করছে সেই বিষয় সম্পর্কেও ধারণা রাখাটা জরুরী। তাই তোমার মতো যাদের গবেষক হওয়ার ইচ্ছা কিংবা যেসব গবেষক রিসার্চ করেই দিনের অধিকাংশ সময় পাড় করে দিচ্ছেন তাদের সাথে ইমেইল এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারো। তোমার গবেষণার বিষয়টি নিয়ে খুঁটিনাটি যাবতীয় প্রশ্ন তাদেরকে মেইল করতে পারো। এতে তাদের জ্ঞান চর্চা হোল আর তোমারও জ্ঞানের পরিধি বাড়ল। পুরোই উইন উইন সিচুয়েশন!
এছাড়াও তোমাকে আরও যে কাজগুলোর অভ্যাস করতে হবে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেশি বেশি প্রশ্ন করা।কারণ প্রশ্ন করলেই তুমি জানতে পারবে। উত্তর নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন মাথায় নিয়ে চলাফেরা করাই হোল গবেষকদের কাজ।
গবেষক হওয়ার জন্য কি কি গুণ বা বৈশিষ্ট্য তোমার থাকা লাগবে সেটিতো জানলে। এবার দেখ একজন গবেষকের প্রতিদিন কোন দক্ষতাগুলোর সাথে গবেষণা কাজ চালিয়ে যেতে হয়।
গবেষকের গুণাবলিঃ
-
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টঃ
পুরো প্রজেক্ট পরিচালনার প্ল্যান করা, সেই প্ল্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য থেকে শুরু করে রিসোর্স সংগ্রহ করা, রিসার্চ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং যোগাড় করা সহ আরও অনেক কিছু প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এর আওতায় পরে। একোজণ গবেষককে প্রতিদিনই এই ম্যানেজমেন্টের সাথে বোঝাপড়া চালিয়ে যেতে হয়।
আরো পড়ুন: গবেষক হতে চাইলে যা জানতেই হবে
-
টিম ম্যানেজমেন্টঃ
খুবই পরিশ্রম সাধ্য একটি ব্যাপার। কিভাবে অন্যসব কো-ওয়ার্কারদের থেকে সেরা ফলাফলটি বের করে নিয়ে আসা যায় সেই সম্পর্কে একজন গবেষকের ভালো ধারণা থাকতে হবে। নতুবা রিসার্চ টিম “সারভাইভ” করবেনা।
-
আই টি স্কিলঃ
তথ্য প্রযুক্তিতে বলতে গেলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বড় রকমের পরিবর্তন আসছে। আর গবেষকদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস যেই তথ্য উপাত্ত, তার সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে প্রায় সব রকমের কাজের জন্যই প্রয়োজন পরে এই তথ্য প্রযুক্তির । কাজেই একজন গবেষককে নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করতে হয়।
এমফিল গবেষক কিঃ
এমফিল হচ্ছে মাস্টার অফ ফিলোসোফি। এটি একটি পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী। এটি হচ্ছে একটি অ্যাডভান্স রিসার্চ ডিগ্রী। পি এইচ ডি এর পরেই এর অবস্থান।
বাংলাদেশে গবেষণাঃ
আশার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের গবেষণার হার কম হলেও বর্তমানে শিক্ষকরা গবেষণামুখী হচ্ছেন। সঠিক পর্যবেক্ষণের এবং ফান্ডিংয়ের অভাবে অনেক গবেষণাই মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু গবেষণা বাংলাদেশে আশার আলো জাগাচ্ছে। যেমনঃ
- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্তকরণের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। পুরো গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড।ইয়াসমিন হক। নন লিনিয়ার অপটিক্যাল প্রযুক্তি বব্যবহার করা হয়েছে এতে। দেশে বসেই মাত্র ৫০০ টাকা খরচের মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে।
- সম্প্রতি আরও উদ্ভাবিত হয়েছে কোনো ক্যামিকেল ছাড়া পাটকাঠি থেকে পার্টিকেল বোর্ড বানানোর প্রক্রিয়া আর এই পার্টিকেল বোর্ড জার্মানিতে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাদাত মোহাম্মদ নোমানের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন।
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছে সয়েল টেস্টিং কিট। এই কিটটি অত্যন্ত অল্প সময়ে এবং কম খরচে মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে পারে।
এছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গিয়েছে। আরও কিছু গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘুরে আসতে পারো এই লিঙ্কটিতেঃ
লিঙ্কঃ http://www.ittefaq.com.bd/national/14501/দেশের-সেরা-৭-গবেষণা
একজন গবেষকের সারাদিনের শত ব্যাস্ততা দেখতে চাইলে ঘুরে আসো এই লিঙ্কেঃ
লিঙ্কঃ https://youtu.be/dNkvHiMpEsw
গবেষণা নিয়ে গবেষণা করে আমার রিসার্চ পেপার তোমার সামনে তুলে ধরলাম।
এবার তোমার গবেষক হওয়ার পালা।
একজন সফল গবেষক হয়ে তুমি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না?
এক্ষুনি নেমে পড়ো।
সুত্রঃ
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঘরে বসে Freelancing Course
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- T-Shirt Design করে Freelancing Course
- SEO Course for Beginners
- Web Design Course
- Cartoon Animation Course by Antik Mahmud
- Graphic Designing Course with Photoshop by Sadman Sadik
- Adobe Illustrator Course
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন