আজকের দিনে আমাদের পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সবসময় বিষয়টি এমন ছিল না।
’৬০ এর দশকে পরিবেশ দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের ফলে মাটি, পানি, বায়ু সবকিছুই দূষিত হয়ে পড়ছিল। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, তখন এই দূষণ প্রতিকারের জন্য কোন আইন পর্যন্ত ছিল না!
এমন এক সময় ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে তেল উপচে পড়ে বিশাল দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাটি দেখে উইসকন্সিনের সিনেটর গেলরড নেলসন অত্যন্ত বিচলিত হন। তিনি ভাবতে শুরু করেন, কী করা যায়!
সময়টি ছিল ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের। যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্রসমাজ এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। নেলসন এই যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের শক্তি পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনেও নিয়ে আসতে আগ্রহী হন।
এই লক্ষ্যে তিনি গণমাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষার জন্য একটি দিন পালনের ঘোষণা দেন। রিপাবলিকান রক্ষণশীল সিনেটর পিট ম্যাকক্লাওয়াস্কিকে তাঁর সাথে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার জন্য রাজি করান।
একইসাথে সারা দেশে দিবসটি সফল করার জন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেনিস হেয়েসকে ন্যাশনাল কো-অরডিনেটর বানান। হেয়েস দিবসটিকে সফল করার জন্য ৮৫ জনের একটি দল তৈরি করেন।
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
২২ এপ্রিল, ১৯৭০ সালে প্রায় ২০,০০,০০০ আমেরিকান বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ধরিত্রী দিবস পালন করেন। দেশজুড়ে বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরিত্রী দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়। যেসকল প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করছিল, তারা শিল্পায়ন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ, কীটনাশক প্রভৃতির বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি সেদিন তুলে ধরেন।
ধরিত্রী দিবসের ফলে সে বছরই যুক্তরাষ্ট্রে “Environmental Protection Agency” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এই লক্ষ্যে তারা আইন প্রণয়ন, গবেষণা, অনুদান প্রদান প্রভৃতি কাজ করে।
তাছাড়া, সে বছরই যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম নিরাপদ পানি, বায়ু এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য পৃথক পৃথক আইন প্রণীত হয়।
পরিবেশবাদী আন্দোলনের উৎপত্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭০ সাল থেকে ২২ এপ্রিলকে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
পরবর্তীতে গেলরড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সম্মানজনক বেসামরিক খেতাব, “প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম” লাভ করেন।
এরপর ১৯৯০ সালে ধরিত্রী দিবসকে একটি নতুন মাত্রা দেয়া হয়। সে বছর থেকে ডেনিস হেয়েসের উদ্যোগে ধরিত্রী দিবস বিশ্বব্যাপী পালন করা শুরু হয়। সে বছর ১৪১ টি দেশে দিবসটি পালিত হয়।
আরো পড়ুন: জাতিসংঘ: শান্তিপূর্ণ বিশ্বের কারিগর
সে বছর ব্যবহৃত দ্রব্য পুনর্ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তাছাড়া, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনেও ধরিত্রী দিবস প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।
নতুন শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ধরিত্রী দিবসে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সে বছর প্রায় ৫০০০ পরিবেশবাদী সংগঠন ১৮৪ টি দেশে কাজ করে ধরিত্রী দিবসকে সফল করার জন্য।
২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে বিশ্বের রাষ্ট্রনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি সার্বজনীন চুক্তি সই করতে ব্যর্থ হন। ফলে, ২০১০ সালের ধরিত্রী দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সে বছর ধরিত্রী দিবসে যুক্তরাষ্ট্রে ২,৫০,০০০ মানুষ নিয়ে একটি বড় সমাবেশ হয়। তাছাড়া, A Billion Acts of Green নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করা হয়।
এই ক্যাম্পেইনের আওতায় মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসকরণ, প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করা, মাংস কম খাওয়া প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ক্যাম্পেইনটিতে বর্তমানে ২ বিলিয়নের অধিক কার্যক্রম লিপিবদ্ধ রয়েছে।
বর্তমানে ধরিত্রী দিবস এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সারা বিশ্বে এক বিলিয়নেরও অধিক মানুষ দিবসটি পালন করে।
এ বছর ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করা। প্লাস্টিক দূষণের ফলে আমাদের পরিবেশের মাটি এবং পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও প্লাস্টিক বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে ধরিত্রী দিবস কর্তৃপক্ষ সকলকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য শপথ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
টেন মিনিট স্কুলের ব্লগের পাঠকদেরও উচিত প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর জন্য শপথ নেয়া। এই কাজটি তুমি ধরিত্রী দিবসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.earthday.org/plastic-calculator/) গিয়েও করতে পারো!
২০২১ সালে ধরিত্রী দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপিত হবে। সেই লক্ষ্যে ভবিষ্যতের জন্য কিছু নতুন লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তুত করার কাজ বর্তমানে চলছে। আশা করা হচ্ছে যে, দিবসটির ৫০ বছর পূর্তিতে পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলন নতুন প্রাণ পাবে।
ধরিত্রী দিবসের মহৎ এই উদ্যোগ সফল করার জন্য আমাদের সকলেরই কাজ করা উচিত। তাহলে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলতে পারবো, আমরা তাদেরকে নির্মল, সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছিলাম।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন