পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও ।
পৃথিবীতে পারফেকশন বলে কিছু নেই। মানুষের নানা রকম ভুল ত্রুটি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সমস্যা বাঁধে যখন এই ভুল ত্রুটিগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়। একটা মানুষের ছোটবেলা থেকে কিছু হলে অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখা স্বভাব, দেখা গেল বড় হয়েও সেই অভ্যাসটা সে ছাড়তে পারছে না! তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপারে তার তীব্র অভিমান হচ্ছে। ব্যাপারটা ছেলেমানুষির পর্যায়ে পড়ছে এটা সে বুঝতেও পারছে না। মাঝখান দিয়ে আশেপাশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
আমরা কেউই মানবীয় দুর্বলতার ঊর্ধ্বে না। সব নেতিবাচক স্বভাব নর্দমায় ঝেড়ে মহাপুরুষ হয়ে যাবো এটা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু একটু সচেতন হলেই জীবনটাকে অনেক সুন্দর করে তুলতে পারি সবাই।
সেজন্য সবার আগে দরকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা। দেখে নাও ঝটপট, এই সর্বনাশা স্বভাব গুলোর কোনটি খুঁজে পাও কিনা নিজের মাঝে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
১। Procrastination
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব যে কিনা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তার procrastination এর অভ্যাস নেই! বাঙালি আরামপ্রিয় জাতি। কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে বসতে চায়, বসতে পেলে শুতে চায়। হয়ে যাক একদফা ঘুম, কাজ পরে করা যাবে খন!
একবার ভেবে দেখো তো, এমন ঠিক কতবার হয়েছে যে পরীক্ষায় খারাপ করার পর প্রতিজ্ঞা করলে পরেরবার খুব আঁটঘাট বেঁধে পড়বে, কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতেই সব প্রতিজ্ঞা বানের জলে ভেসে গেছে?
তুমি ওজন কমাতে চাও, আজকে থেকে ব্যায়াম শুরু করো, ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করো। কোন স্কিল অর্জন করতে চাও, আজকেই ইউটিউবে টিউটোরিয়াল গুঁতোগুঁতি শুরু দাও, মানুষের সাথে আলাপ করো। কালকে করবে ভেবে যে ফেলে রাখছো, কাল বেঁচে থাকবে তুমি তার নিশ্চয়তা কি?
সুনীলের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার সেই “দেখিস, একদিন, আমরাও” এই তীব্র হাহাকার যেন জীবনে কখনো করতে না হয়। পরীক্ষায় আসা অঙ্কটা তুমি পারতে, আগে করেছিলে, কেবল অনুশীলনের অভাবে আজ উত্তর করতে পারলে না- এর চেয়ে বড় আক্ষেপ যে আর হয় না!
২। ঘুমের প্রতি অযত্ন
একটা সামান্য কচ্ছপের তুলনায়ও মানুষের আয়ুষ্কাল অনেক কম। এই ছোট্ট জীবনের আবার প্রায় এক তৃতীয়াংশই কেটে যায় ঘুমের অতলে! প্রকৃতি কিন্তু এ ব্যবস্থা এমনি এমনি করেনি। একটা সুস্থ সতেজ লাইফস্টাইলে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য, কিন্তু তা হতে হবে ছকে বাঁধা। সাধারণত মানুষজন যা করে- সারা সপ্তাহ কম কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনগুলোয় ঘুমিয়ে কাবার করে দেয়। অনেকে আবার আছে একটু ফুরসত মিললেই ঘুমিয়ে একাকার! আসলে বেশি ঘুম বা কম ঘুম কোনটিই ভাল নয় স্বাস্থ্যের জন্য। রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা- ঘুমানোর আদর্শ সময়।
শুনতে হয়তো খুব কষ্টকর মনে হচ্ছে, কিন্তু কয়দিন একটু চেষ্টা করে দেখো, দেখবে শরীর হয়ে উঠবে সতেজ, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর! অবসাদ ক্লান্তি দূর করতে রাতজুড়ে সুন্দর একটা ঘুমের চেয়ে ভাল উপায় আর হয় না!
৩। টেক আসক্তি
শেষ কবে এমন একটা দিন কাটিয়েছো কোনরকম গ্যাজেট ছাড়া? মনে পড়ে? আমরা স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটারে এমনভাবে বুঁদ হয়ে ডুবে থাকি যে এর বাইরেও একটা জগৎ আছে সেটা বিস্মৃত হয়ে যাই।
কম্পিউটারে ফিফা প্রায় সবাই খেলে, কিন্তু বৃষ্টির দিনে কাদা মাখামাখি করে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলার যে আনন্দ, সেটা কি কম্পিউটারে মেলে?
শুধু ক্লাসের পড়াশোনা দিয়ে বাস্তব দুনিয়ায় বেশদূর আগানো যায় না
তুমি গেইম খেলো, মুভি দেখো, অনলাইনে ঘুরাঘুরি করো- এই পুরোটা সময় কিন্তু তুমি কাটাচ্ছো অন্যদের তৈরি করা কনটেন্টে। নিজের কাজে আসবে, প্রোডাক্টিভ কিছু হবে- এমন কিছু কি আদৌ করেছো কখনো? অথচ সেটাই কি করার কথা ছিলো না?
আমরা অনেকেই ফুটবলের পাঁড় ভক্ত। প্রিয় দল, প্রিয় ক্লাব নিয়ে অনলাইনে তর্কাতর্কি, গলাবাজি তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। একবার ভেবে দেখো তো, আজ যদি তোমার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকেন, সেই খরচ কি তোমার প্রিয় ক্লাবের খেলোয়াড়রা দেবেন?
No. Because they don’t know you & they don’t give a damn about you.
এটাই বাস্তবতা। সুতরাং হাত থেকে স্মার্টফোনটা রেখে একবার মায়ের সাথে গল্প করে আসো, বাবার সাথে বাজারে যাও, খাবার টেবিলে সবাই একসাথে গল্পে মেতে ওঠো- দেখবে জীবনের এক নতুন মানে খুঁজে পাবে।
৪। খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম
এই সেদিনই এক আঙ্কেল নামাজের কাতারে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। ধরাধরি করে হাসপাতালে নিতে নিতে সব শেষ। ডাক্তার জানালেন হার্ট এটাক। আঙ্কেল গরুর মাংস খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন। কারো ওজর আপত্তি মানতেন না। এখন তো সব খাওয়াদাওয়ার পালা চুকেই গেলো!
তিনি তো তাও গরুর মাংস খেতেন, এই প্রজন্মে তো অবস্থা আরো খারাপ! রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যাঙের ছাতার মত ফাস্টফুডের দোকান গজিয়ে উঠেছে। আমার অনেক বন্ধু আছে যারা সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে, খাওয়ার সময় তিন বেলা ফাস্টফুড খাওয়া হয়। এখন বয়স কম, সবকিছুতে ড্যামকেয়ার এটিচিউড, এসব অনিয়ম গায়ে লাগছে না। কিন্তু এটার পরিণতি যে কতো খারাপ হচ্ছে, সেটা এখন হয়তো বোঝা যাবেনা। বোঝা যাবে বিশ বছর পর, যখন শুধু একাই মরবে না, পুরো পরিবারকেও শেষ করে দিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ১০০+ কিবোর্ড শর্টকাট!
আজ যেই ছেলেটা SWAG দেখাতে স্মোকিং করছে, ঠিক পঁচিশ বছর পর হয়তো একই বয়সী আরেকটা ছেলের ভার্সিটি এডমিশন আটকে থাকবে বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য।
একটা সুন্দর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলো। পাতে শাক-সবজি মাছের পরিমাণ বাড়াও। শরীরটা এতো ঝরঝরে লাগবে যে মনে হবে জীবনটা সত্যিই ভীষণ সুন্দর!
৫। অবসরের সময়টুকু কাজে না লাগানো
সপ্তাহজুড়ে কাজের ধকলের পর কার না ইচ্ছা করে ছুটির দিনটা বিছানায় গড়াগড়ি করে কাটিয়ে দিতে? কিন্তু এই অবসরের সময়টাও কিন্তু চাইলে অনেক কাজে লাগানো যায়! সপ্তাহে একদিন বাজারে গেলে, নতুন কিছু রান্না করা শিখলে, কোন ফাংশনে ভলান্টিয়ার হলে।
চাকরির বাজারে সবাই অভিজ্ঞতার খোঁজ করে, মনে হতে পারে তুমি সবে পড়ালেখা শেষ করে বের হলে, অভিজ্ঞতা কোত্থেকে আসবে?
এখানেই কিন্তু ধরা খেয়ে যাচ্ছো তুমি। ছাত্রজীবনে তুমি যখন ছুটির সময়গুলো হ্যাংআউট, ট্রিপ, সিটকম দেখে কাটিয়ে দিচ্ছো, ঠিক এই সময়ই তোমার কোন বন্ধু রাতজেগে প্রোগ্রামিং শিখছে, পাওয়ারপয়েন্ট, এক্সেল রপ্ত করছে, সাবলীল ইংরেজি বলায় দক্ষ হয়ে উঠছে।
দেশে চাকরির অভাব নেই। অভাব দক্ষ জনবলের। শুধু ক্লাসের পড়াশোনা দিয়ে বাস্তব দুনিয়ায় বেশদূর আগানো যায় না। তোমার বিভিন্ন স্কিল অর্জন করতে হবে। এজন্য ছুটির দিনগুলো কাজে লাগাও। বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে বর্তমানে প্রায় চার লাখ বিদেশি কাজ করছে। এই বিদেশিরা, বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে পাঠাচ্ছেন। চার লাখ মানুষ পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। পারার কারণ হলো, তাদের যে কর্মদক্ষতা আছে, তা আমাদের দেশের ‘উচ্চশিক্ষিতদের’ মধ্যে নেই।
সুতরাং আজকে থেকে নতুন উদ্যমে শুরু করো জীবন। একটু একটু করে নিজেকে গড়ে তুলতে শুরু করো, দেখবে জীবন বদলে যাবে চিরদিনের জন্য। সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সে ভবিষ্যতের কান্ডারী হয়ে ওঠার শুরু হোক আজ থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন