পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
জাপান- প্রশান্ত মহাসাগরের একদম পূর্ব কোণে ৬৮০০ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দেশ; কিন্তু এই দেশটি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের বিস্ময়ের সীমা নেই। প্রযুক্তির মুন্সিয়ানায় গোটা বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে জাপানিরা, কিন্তু তাদের সাফল্যের দৌড় কেবল কাঠখোট্টা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, শিল্প সাহিত্যে চিত্রকলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ঈর্ষণীয় বিচরণ। জাপানের চলচ্চিত্র অস্কার পেয়েছে, কুস্তির জগতে যুক্তরাষ্ট্রের পর তাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি প্রসার, আবার পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের তালিকায়ও মাফিয়ার পরই জাপানের দুর্ধর্ষ ইয়াকুজার অবস্থান! সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের এমনই কিছু বিচিত্র মজার তথ্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
১। জাপান গুরুত্ব দেয় শৈশবে
জাপানে শিশুদের স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি আদব-কায়দা শেখানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়ে থাকে। গুরুজনদের সম্মান করা, মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, সবাই মিলে কাজ করা ইত্যাদি শিক্ষা একদম ছেলেবেলায় জাপানিদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়। স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক নিজেরাই মিলেমিশে একসাথে ক্লাসরুম, ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি পরিষ্কার করেন, কোন কাজকেই ছোট করে না দেখার অভ্যাস এখান থেকেই গড়ে ওঠে জাপানী শিশুদের।
২। পরিশ্রমী জাতি
বিশ্বজুড়ে অসম্ভব করিৎকর্মা পরিশ্রমী একটি জাতি হিসেবে জাপানীদের দারুণ সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের পরও তারা ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করে না। ঘরের কাজে, বাচ্চাদের যত্নআত্তিতে, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কেটে যায় তাদের। পরিশ্রমের সুফলটাও প্রত্যক্ষ। জাপানের মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে কম, শরীর শক্তপোক্ত থাকে বহুবছর পর্যন্ত। সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষের তালিকায় জাপানের অবস্থান তৃতীয়। গড়ে প্রায় ৮৩ বছর বাঁচে জাপানীরা, পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায়, পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে।
আরো পড়ুন: কেন পড়তে যাবে জাপানে?
৩। ডাস্টবিনহীন দেশ জাপান!
জাপানের রাস্তায় কোন ডাস্টবিন থাকে না! এমনকি দেশটির কোথাও অন্যান্য দেশের মত বর্জ্যের ভাগাড় পর্যন্ত নেই, কারণ জাপানীরা সবরকম বর্জ্য রিসাইকেল করে ফেলে! যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব না সেগুলো খুব সুশৃংখল একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়। ধূমপায়ীরা ব্যাগে করে ছাইদানি নিয়ে ঘুরেন, জাপানের রাস্তায় যে সিগারেটের ছাই পর্যন্ত ফেলা নিষিদ্ধ!
৪। শিশুর জন্য নিরাপদ দেশ জাপান
শৈশবে নৈতিক শিক্ষাদানের অভ্যাসটির দারুণ সুফল পেয়েছে জাপান। বড় হয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে জাপানি তরুণরা, মানবিক মূল্যবোধ তাদের অসাধারণ, শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ, তাই অপরাধের প্রসারও অসম্ভব কম। জাপানের রাজধানী টোকিও পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটি শহর, ছয় বছরের একটি শিশুও এই শহরে কোন রকম বিপদ আপদের আশঙ্কা ছাড়াই ইচ্ছামতো সারা শহর ঘুরে বেড়াতে পারে নিরাপদে!
৫। প্রবল আত্মসম্মানবোধ
জাপানিদের আত্মসম্মানবোধ টনটনে! সম্মানের খাতিরে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার ভুরিভুরি নজির রয়েছে দেশটিতে। জাপানের বেশ কয়জন প্রধানমন্ত্রী অল্প কয়টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, কথা দিয়ে সে কথা রক্ষার ব্যাপারে তারা এতটাই কঠোর। টাইটানিক জাহাজডুবি থেকে যে কয়জন জাপানি বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিলেন, দেশে ফিরে তাদের প্রবল জনরোষের সম্মুখীন হতে হয়। “সহযাত্রীদের বাঁচাতে যদি নাই পারলে, তবে তাদের সাথেই প্রাণ কেন দিলে না!” এই ছিলো জনতার আক্ষেপ!
৬। ওভারটাইম বিষয়টিই নেই যে দেশে!
নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ করার জন্য “ওভারটাইম” নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়াজুড়ে, শুধুমাত্র জাপানে এই শব্দটির কোন অর্থ নেই। জাপানিরা স্বভাবগতভাবেই অফিসের সময় শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না তারা, যত জরুরী তাড়াই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার। কাজের প্রতি ভালবাসা তাদের মজ্জাগত, ছোটবেলাতেই এই বিষয়টি তাদের খুব ভালভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাপানের মানুষ তাই গড়ে প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করে অফিসে এবং এই অতিরিক্ত খাটুনির ব্যাপারটি নিয়ে তাদের কোন বিরক্তি বা আক্ষেপ নেই, খুব সাধারণভাবেই তারা বিষয়টি মেনে নেয়।
আমরা সবাই জাপানি, আমার জাপানি ভাইয়ের জন্য আমি সবার আগে প্রাণ দেবো
আরো পড়ুন: এশিয়া মহাদেশ: জেনে নিন বিস্তারিত
৭। অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!
“ওভারটাইম” শব্দটি না থাকলেও জাপানি ভাষায় এরচেয়ে অনেক গুরুতর একটি শব্দ আছে- “কারোশী” যার অর্থ “অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!’’ ব্যাপারটি শুনতে আজব মনে হলেও জাপানের প্রেক্ষাপটে এটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর গড়ে ১০,০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজের চাপে, ডায়াগনোসিসে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়- “কারোশী”!
এটি ঠেকাতে অবশ্য জাপানিদের অভিনব একটি পন্থা রয়েছে। পৃথিবীর আর যে কোন দেশে অফিসে ঘুমালে মানুষ বসের ঝাড়ি খায়, এমনকি চাকরিও চলে যেতে পারে, কিন্তু একমাত্র জাপানে এই ব্যাপারটিকে উৎসাহিত করা হয়! কেননা সেখানে কাজ ফাঁকি দিয়ে ঘুমাবে এমন মানুষ বলতে গেলে নেই, বরং স্বেচ্ছায় ভয়াবহ খাটুনি করতে গিয়ে মারা পড়ার ঝুঁকি ঢের বেশি, তাই কাজের ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি বলতে গেলে অলিখিত একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে দেশে!
৮। ভুমিকম্পের দেশ!
আমাদের দেশে হঠাৎ একটি ভূমিকম্প হলে সবাই হতচকিত হয়ে পড়ি, মানুষ প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটে ঘর থেকে নেমে আসে রাস্তায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে জাপানে এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! মানুষ অফিসে কাজ করছে, ছাত্ররা পরীক্ষা দিচ্ছে, রেঁস্তোরায় রান্নাবান্না হচ্ছে, এর মাঝেই ভূমিকম্প হচ্ছে- মানুষজন নির্বিকার। কারণটা হচ্ছে- জাপানে প্রতিবছর প্রায় ১৫,০০০ ভূমিকম্প হয়! ব্যাপারটি নিত্যদিনের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে এটি তাদের জন্য এখন গা সওয়া একটি ব্যাপার! তাদের বাড়িঘরগুলোও সেভাবেই ভূমিকম্প প্রতিরোধের উপযোগী করে তৈরী, তাই এত বিপুল পরিমাণ ভূমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় তুলনামূলক অনেক কম।
৯। সময়ানুবর্তিতার দেশ!
জাপান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কাজে এক মিনিট দেরি করে আসাকেও বিরাট অপরাধ হিসেবে দেখা হয়! সবকিছু অসম্ভব নিখুঁতভাবে সময় মেনে চলে, এতটাই নিখুঁত যে পাবলিক ট্রেনগুলোর গড়ে ১৮ সেকেন্ডের বেশি দেরি করার কোন নজির নেই। এবং দেরিগুলোও হয় বিচিত্র সব কারণে, সবচেয়ে বড় কারণ ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা! প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের একটি অন্ধকার দিক আছে, পারিবারিক বন্ধনগুলো দুর্বল করে দিচ্ছে এই প্রযুক্তির আতিশয্য। একটা অসুস্থ আসক্তির বুদবুদের ভেতর আটকা পড়ে থাকে হাজার হাজার মানুষ, ব্যক্তিগত জীবনে অসম্ভব নিঃসঙ্গ এই মানুষগুলো বিচিত্র সব উপায়ে নিঃশেষ করে দেয় তাদের জীবন ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিদিন।
১০। দৃঢ় সামাজিক বন্ধনের দেশ
জাপানে সামাজিক বন্ধনগুলো খুব দৃঢ়। বিভিন্ন সমস্যায় সবাই মিলে একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমাধানে। জাপানের প্রতিটি মোবাইল ফোনে একটি ইমার্জেন্সি এলার্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত করা থাকে। যে কোন দুর্যোগ বিপর্যয়ে এই এলার্মগুলো বেজে ওঠে সবার মোবাইলে (সাউন্ড অফ করা থাকলেও!) এবং মুহূর্তের মাঝে চলে যায় মেসেজ- এই দুর্যোগ মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের সেটি জানিয়ে। একবার একটি মজার ঘটনা ঘটেছে। সুনামি আর ভূমিকম্পের আঘাতে বিপর্যস্ত পুরো জাপান, আক্রান্ত জনপদের কাছে খাদ্য, চিকিৎসা, সেবা ইত্যাদি পৌঁছে দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার, এমন সময় জনগণের সেবায় মাঠে নেমে এলো কুখ্যাত জাপানি মাফিয়া গোষ্ঠী- ইয়াকুজা!
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
তাদের সংঘবদ্ধতা এবং পেশাদারিতা পুলিশের চেয়ে ঢের বেশি, দেখা গেল দুর্গম সব লোকালয়ে সরকারি সাহায্য পৌঁছানোর অনেক আগেই পৌঁছে গেছে তাদের ত্রাণ! এভাবেই দুর্যোগ আর বিপর্যয়ে গোটা জাতি যখন দুরবস্থায় পড়ে, ভাল খারাপের সীমানাটা তখন মুছে যায়, মুখ্য হয়ে উঠে একমাত্র পরিচয়- “আমরা সবাই জাপানি, আমার জাপানি ভাইয়ের জন্য আমি সবার আগে প্রাণ দেবো।” তাই তো যুগে যুগে পারমাণবিক বোমার আঘাত সহ নানা ভয়াবহ আক্রমণের ধাক্কা সইয়েও আজ জ্ঞানে-কল্যাণে-প্রযুক্তিতে সাফল্যের শীর্ষে ছোট্ট এই দেশটি, পৃথিবীবাসীর কাছে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধামিশৃত বিস্ময়ের একটি নাম- জাপান!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন