ফেসবুকে বুস্টিং এবং পেইড ফেসবুক মার্কেটিং -এর আদ্যোপান্ত

March 14, 2023 ...

ফেসবুকের নীল-সাদা জগতে অজস্র ছবি, লেখনী কিংবা ভিডিওর ভীড়ে কিছু কিছু কন্টেন্ট হঠাৎই আমাদের কৌতূহলী করে তোলে; ভাষা-প্রদর্শনী অথবা শক্তিশালী বার্তা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পণ্য সম্পর্কে জাগিয়ে তোলে আগ্রহ। এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি অনলাইন জগতে আমরা সবাইই কম-বেশী হয়েছি, প্রতিনিয়ত হচ্ছি। কখনো কী আমরা ভেবে দেখেছি, ফেসবুক কোন মন্ত্রবলে এই বিজ্ঞাপনী কন্টেন্টগুলোকে ঠিক ঠিক আমাদের সামনে এসে হাজির করছে!

ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট

এতক্ষণ যে ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছিলাম, সেই ব্যবস্থার পেছনের কারিগর হলো মূলত ‘ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট’, যা ফেসবুকের বিপুল সংখ্যক বৈশ্বিক গ্রাহক এবং এর মালিকানাধীন অন্যান্য অ্যাপস যেমন হোয়াটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রামের সাহায্যে যেকোনো বিজ্ঞাপন গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। উল্লেখিত অ্যাপসগুলোর সমন্বিত প্রায় ২.২ বিলিয়ন দৈনিক ও ২.৮ বিলিয়ন মাসিক গ্রাহকের সুবিশাল সংখ্যা বিভিন্ন স্টার্টআপ থেকে শুরু করে বাঘা বাঘা কোম্পানি- সবাইকেই আকৃষ্ট করে এ অ্যাপসগুলোকে বিজ্ঞাপনী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে।

ফেসবুক মার্কেটিং বর্তমানে খুব সহজে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকের দোরগোড়ায় নিজের সেবা বা পণ্য পৌঁছাবার একটি সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যম, দিন দিন যার সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বেড়েই চলেছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করেন, এই ধারা প্রতিনিয়ত বাড়বে বৈ কমবে না।

Facebook Marketing

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • ফেসবুকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের ব্যবহার, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের অর্গানিক রিচ বাড়ানো।
  • ফেসবুক বুস্টিং ও ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড দাঁড় করানোর উপায়।
  •  

    ব্যবসা সম্প্রসারণে ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কেন প্রয়োজন?

    ফেসবুকের নতুন নীতিমালা: গত বছর ফেসবুক তাদের গ্রাহকদের চাহিদা ও গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যাতে বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপের থেকে ব্যবহারকারীর বন্ধুতালিকা থেকে আপলোডকৃত কন্টেন্টকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার হলে, বর্তমানে পেইড অর্থাৎ স্পন্সর করা কনটেন্ট না হলে সেই বিজ্ঞাপন গ্রাহকের ফিডে পৌঁছাবার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

    যত বেশী গ্রাহক, তত বেশী সম্ভাবনা!

    ফেসবুকের বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা, কিংবা আরেকটু নির্দিষ্টভাবে বললে, এর বিপুল সংখ্যক অ্যাক্টিভ অডিয়েন্স, যে কোনো কোম্পানি বা স্টার্টআপের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্যই অমিত সম্ভাবনাময়! পেইড অ্যাডভারটাইজমেন্টের মাধ্যমে এই বিশাল গ্রাহকসংখ্যা থেকে একটি টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে সহজেই বিজ্ঞাপনটি পৌঁছানো যায়।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট
    Source: pixabay.com

    ফলাফলের উপর ভিত্তি করে প্রতিনিয়ত কার্যকারিতা বৃদ্ধি

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভারটাইজমেন্টের আরেকটি অনন্য সুবিধা হলো, এটি নিয়মিতভাবে আপনার বিজ্ঞাপনটি টার্গেট অডিয়েন্সের মাঝে কেমন সাড়া ফেলছে, কিংবা আদৌ সাড়া ফেলছে কিনা- অথবা কী পরিবর্তন আনলে এটির কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব; এর শক্তিশালী অ্যালগরিদমের সাহায্যে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত দ্বারা আপনাকে বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত নিতেও সহায়তা করবে, ফলশ্রুতিতে বাড়বে প্রচার, ঘটবে প্রসার!

    ফেসবুক পেইড অ্যাড ও বুস্টিংয়ের জন্য কী কী প্রয়োজন হয়?

    পেইড অ্যাড ও বুস্টিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে নাহয় জানা গেলো। তবে কথা হলো, বুস্টিং বা পেইড অ্যাডভারটাইজিং করায় উপায় কী? বেশ কঠিন কিছু? একদমই না! সহজ কিছু ধাপ ধৈর্য্য ধরে সম্পন্ন করতে পারলেই আপনি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন। যেমন:

    1. আপনার ক্রেডিট কার্ড এনডোর্স করা

    খুব সহজ ভাষায়, ডলার কেনাকেই এনডোর্সমেন্ট বলা হয়। ক্রেডিট কার্ড এনডোর্সমেন্ট হলো, আপনার যদি কোনো প্রিপেইড, ডুয়েল কারেন্সি বা ক্রেডিট কার্ড থাকে এবং তাতে যদি পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকে, এবং আপনি যদি সেই কার্ডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার সমপরিমাণ মূল্যের ইউ এস ডলার ব্যবহার করতে চান, তবে আপনার ক্রেডিট কার্ডটি এনডোর্স করার প্রয়োজন হবে।

    ক. কার্ডের সাহায্যে পেইজ বুস্ট করতে অবশ্যই যে ব্যক্তির নামে কার্ডটি আছে, তার একটি ভ্যালিড পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে। তবে, এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, পাসপোর্টের মেয়াদ যখন শেষ হবে, তখন এই পাসপোর্ট দিয়ে আর বুস্ট করা যাবে না; এর আগে পাসপোর্টটি রিনিউ করে নিতে হবে।

    মাস্টারকার্ড, ভিসা ইত্যাদি বহুল প্রচলিত কার্ডগুলো দিয়ে সহজেই পেইজ বুস্ট করা যায়।

    যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তার বয়স যতই হোক, পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি এক বছরে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার এন্ডোর্স করতে পারবেন। ধরা যাক, ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি মাসে আপনি ৫ হাজার ডলার এনডোর্স করলেন এবং ফেব্রুয়ারির মাঝেই পুরোটি খরচ করে ফেললেন। সেক্ষেত্রে, ২০২৩ এর জানুয়ারি পর্যন্ত, অর্থাৎ পুরো এক বছরে আপনি আর কোনো ডলার এনডোর্স বা খরচ করতে পারবেন না।

    খ. কার্ড এনডোর্সমেন্ট করলে এখানে একটি লিমিটেশন থাকে। ধরা যাক, রাতুল ব্যাংক থেকে কার্ড নিয়ে পাসপোর্ট এনডোর্স করতে গেলেন, এবং দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বললেন ২০০০ ডলার কার্ডে এনডোর্স করে দিতে। এর অর্থ, উক্ত বছর রাতুল সাহেব ঐ কার্ডের জন্য ২০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। বাকি যে ৩০০০ ডলার রয়ে গেলো, তা থেকে রাতুল সাহেব চাইলে পরবর্তীতে আরো কিছু ডলার এনডোর্স করতে পারবেন, তবে তা অবশ্যই মোট মিলিয়ে, বাৎসরিক হিসেবে ৫ হাজার ডলারের মাঝেই থাকতে হবে।

    সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দেন, কখনোই পুরো লিমিট অর্থাৎ ৫ হাজার ডলার একবারে এনডোর্স না করতে। কেননা, আপনি ১ম বারেই পাঁচ হাজার ডলার এনডোর্স করে ফেলার পর, কোনো আকস্মিক, অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে আপনার ক্যাশ এনডোর্স করার প্রয়োজন হলো। তখন আবার একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডলার এনডোর্সমেন্ট বাতিল করে ক্যাশে কনভার্টের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাঝে দিয়ে যেতে হতে পারে।

    গ. উক্ত কার্ডটি ‘ডুয়েল কারেন্সি’ সাপোর্ট করে কি না- তা যাচাই করে নিতে হবে। সাপোর্ট না করলে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই, সংশ্লিষ্ট কোম্পানি/ব্যাঙ্কের গ্রাহকসেবায় ফোন দিয়ে সহজেই এই ফিচারটি চালু করে নেয়া যাবে!

    ঘ. অনেক ক্রেডিট কার্ডে উপরের সবগুলো ধাপ অনুসরণের পরও বুস্ট করা নাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে কার্ডটির ‘ই-কমার্স’ বা ‘অনলাইন ট্রাঞ্জেকশন’ ফিচারটি চালু নেই- এটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ফোন দিয়ে সহজেই চালু করে নেয়া সম্ভব।

    1. আপনার ফেসবুক বিজনেস/অ্যাড ম্যানেজারে সেট করা

    প্রথমে ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজার অ্যাপটি ডাউনলোড করে সাইন-আপ করতে হবে। বিজনেসের ডিটেইলস, নিজের নাম দিয়ে ‘সাবমিট’ এ ক্লিক করুন।

    অন্তত একটি ফেসবুক পেইজ থাকতে হবে নিজের স্টার্টআপ / কোম্পানির, অন্যথায় বিজনেস ম্যানেজার কাজ করবে না। এর জন্য বিজনেস ম্যানেজারের হোমপেইজ > মোর টুলস > বিজনেস সেটিংস > অ্যাকাউন্টস > পেইজ এ গিয়ে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট
    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট
    Source: adespresso.com

    এবার হোম পেইজের বামপাশে টাস্কবারে যেয়ে ‘ক্রিয়েট অর অ্যাড এ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট’ > অ্যাড অ্যাকাউন্টস > অ্যাড এর সাহায্যে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। অ্যাডমিন এবং এমপ্লয়ি দুটো রোলে পেইজ ম্যানেজ করা যাবে। কোন রোলে কি কি কাজ, তা সেখানে বিস্তারিত লেখা পাবেন, সে অনুযায়ী সিলেক্ট করতে পারবেন।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    বিলিং এবং পেমেন্ট ইনফর্মেশন

    টাস্কবার থেকে অ্যাড অ্যাকাউন্ট সেটিংস অপশনটি খুঁজে নিন।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    সেখান থেকে পেমেন্ট সেটিংসে প্রবেশ করুন। এখান থেকে আপনি নতুন পেমেন্ট মেথড যুক্ত করা, বর্তমান পেমেন্ট মেথড পরিবর্তন, খরচের সীমা, পরবর্তী বিল- ইত্যাদি দেখতে পাবেন।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    ১. পেমেন্ট অপশন যুক্তকরণ

    অ্যাড পেমেন্ট মেথড থেকে কোন পেমেন্ট মেথড যুক্ত করতে চান- তা নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করুন।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    ২. পেমেন্ট মেথড পরিবর্তন

    পেমেন্ট অপশনের পাশে থাকা ‘থ্রি ডটস’ এ ক্লিক করলে আপনি এডিট অপশন দেখতে পাবেন। তবে, পেমেন্টের প্রাইমারি সোর্স পরিবর্তন করা যাবে না, নতুন একটি পেমেন্ট মেথড যুক্ত করার পর আগেরটি মুছে দেয়া যাবে।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    ৩. বিলিং

    অটোমেটিক, ম্যানুয়াল- এ দুটো পদ্ধতিতে বিলিং সম্পন্ন হয়। ম্যানিয়াল পেমেন্ট হলো ‘পে-অ্যাজ-ইউ-গো’ অর্থাৎ খরচের সাপেক্ষে বিল নির্ধারণ হওয়া, অন্যদিকে অটোমেটিক পদ্ধতিতে মাসিক বা নির্দিষ্ট সীমা স্পর্শ করার পর বিলিং সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত জটিল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিল প্রদানের তুলনায়।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    ৪. অ্যাকাউন্ট স্পেন্ডিং লিমিট নির্ধারণ

    ‘অ্যাকাউন্ট স্পেন্ডিং লিমিট’ অপশনের ডান পাশে থাকা ‘থ্রি ডটস’ ক্লিক করে একটি লিমিট সেট করে তা সেভ করে রাখা সম্ভব। কোনো অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সির সাথে কাজ করলে এটি বিশেষ উপকারী, কেননা এজেন্সি যেন অ্যালোকেটেড বিলের বেশী খরচ করতে না পারে- নির্দিষ্ট স্পেন্ডিং লিমিট সেট করার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com

    ফেসবুক বুস্টিংয়ের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড (বেস্ট প্র্যাকটিস)

    নিম্নে সংক্ষেপে ফেসবুক পেইজ বুস্টিংয়ের ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:

    1. প্রথমে ফেসবুক পেইজে প্রবেশ করুন।
    2. যে পোস্টটি বুস্ট করতে চান সেটির সাথে থাকা নীল ‘বুস্ট পোস্ট’ বাটনে ক্লিক করুন।
    3. বুস্টেড পোস্টটি থেকে কী ধরনের কার্যকারিতা বা ফলাফল প্রত্যাশা করেন, তা উল্লেখ করুন (যেমন, অধিক মেসেজ পাওয়া, ওয়েবসাইট ভিজিটর পাওয়া, বেশি ফোন কল রিসিভ করা ইত্যাদি)। এছাড়াও ‘অটোম্যাটিক’ সিলেক্ট করেও পোস্ট বুস্ট করা সহায়ক হতে পারে।
    4. গ্রাহক পর্যায়ে কোন অপশনটি শো করবে- তা নির্ধারণ করুন।
    5. আপনার অডিয়েন্স নির্বাচন করুন। অর্থাৎ, বুস্টকৃত পোস্টটি দ্বারা আপনি মূলত কোন শ্রেণির ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে চান – তা নির্ধারণ করুন।
    6. কতদিন অথবা কোন সময়ে (যেমন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন অথবা বিকেলবেলা) আপনি পোস্টটি বুস্ট করতে চান, সেটিও কৌশলগত ভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
    7. আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন।
    8. কোন প্লাটফর্মে (যেমন ফেসবুকের পাশাপাশি ইন্সটাগ্রাম) বা পেমেন্ট মেথডে আপনি অ্যাডভার্টাইজমেন্টের বিল পরিশোধ করতে চান, তা যাচাই করুন।
    9. আপনার পুরো বুস্টেড পোস্টের খসড়াটি একবার যাচাই করুন এবং সম্পূর্ণ নিশ্চিত হলে ‘বুস্ট পোস্ট নাউ’ অপশনে ক্লিক করুন।

    এভাবে পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার পেইজের যেকোনো এক বা একাধিক পোস্ট বুস্ট করতে পারেন। এখানে ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে দেয়া হলো:

    1. ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের সঠিক প্রয়োগ

    ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারকে বলা যায়, আপনার বিজ্ঞাপনী প্রচারণা ও কৌশল নির্ধারণের মূল আস্তানা! এর সাহায্যে অ্যাড ক্যাম্পেইন সেট করা, কন্টেন্ট পরিচালনা কিংবা পরিবর্তন, অডিয়েন্স নির্ধারণ, অ্যাড ক্যাম্পেইনের কার্যকারিতা যাচাই- ইত্যাদি কাজ করা যায়। অ্যাড ম্যানেজারের বিভিন্ন সুবিধা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য এটির বিভিন্ন ফিচার সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন, যা পূর্বে ইতোমধ্যে আলোচলা করা হয়েছে।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com
    1. একটি টার্গেট নির্ধারণ

    অ্যাড ম্যানেজার থেকে সবুজ ‘ক্রিয়েট অ্যাড’ বাটন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার অপশন পাওয়া যাবে। যেমন: ক্যাম্পেইনটি কী সচেতনতামূলক, কনসিডারেশন বা যাচাইমূলক নাকি কথোপকথনের মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধিমূলক- এটি নির্ধারণ করে নিতে হবে। কোন অপশন সিলেক্ট করলে ক্যাম্পেইনটি কীভানে রান করবে, তাও অ্যাড ম্যানেজার আপনাকে সেখানে জানিয়ে দেবে। এবার আপনার ক্যাম্পেইনের একটি সুচিন্তিত, আকর্ষণীয় নাম দিতে হবে। এই তো! হয়ে গেলো আপনার ক্যাম্পেইন তৈরি!

    1. অডিয়েন্স নির্ধারণ

    বলার অপেক্ষা রাখে না, ভুল অডিয়েন্স নির্ধারণ আপনার হিসেব-নিকেশ, অর্থ ও শ্রমে তৈরি একটি ক্যাম্পেইনকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে ফেলতে পারে।
    সঠিক অডিয়েন্স নির্ধারণে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-

    • অবস্থান (দেশ, বিভাগ, জেলা, জিপ কোড কিংবা মাইল রেডিয়াস)
    • বয়স ও লিঙ্গ
    • ভাষা
    • শিক্ষাগত যোগ্যতা (পড়াশোনার বিষয়, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি)
    • একই আগ্রহের জায়গা (বিনোদন, রাজনীতি কিংবা খেলাধুলা)
    • গ্রাহকের ব্যবহারগত অভ্যাস (কোন ধরণের পণ্য কিনতে পছন্দ করেন, কত টাকার মাঝে খরচ করেন, কোন পদ্ধতিতে খরচ করেন ইত্যাদি)
    • খরচের পরিমাণ

    ইত্যাদি বিষয়গুলো।

    1. ক্যাম্পেইনের বাজেট নির্ধারণ

    ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের বাজেট নির্ধারণে নানামুখী সুবিধা প্রদান করে। যেমন: দৈনিক কত খরচ হবে অথবা সবমিলিয়ে পুরো ক্যাম্পেইনে কত খরচ পড়ছে ইত্যাদি। এই খরচকে অন্য ভাবেও ভাগ করা যায়, যথা: সিপিসি এবং সিপিএম।

    সিপিএম হলো, প্রতি ১০০০ বার আপনার অ্যাড গ্রাহকের কাছে প্রদর্শনে কত খরচ পড়ছে এবং সিপিসি ভোক্তা কতবার আপনার অ্যাডটিতে ক্লিক করলো, তার সংখ্যাকে নির্দেশ করে। এছাড়াও ম্যানুয়াল বিডের (পার লিংক ক্লিকের জন্য আপনি সর্বোচ্চ কত খরচ করতে চান- তার পরিমাণ) মাধ্যমেও খরচ নির্ধারণ করা যায়।

    1. অ্যাড কোথায় রান করতে চান তা নির্ধারণ

    ডেস্কটপ বা মোবাইলের নিউজফিডে আপনি অ্যাড রান করতে চান, নাকি অন্য কোনো ডিভাইসে, বা অ্যাপ্লিকেশনে (যেমন, ইন্সটাগ্রাম) তা নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি, ফেসবুক অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক কিংবা ডেস্কটপের জন্য রাইট হ্যান্ড কলামে অ্যাড প্রদর্শন করা হবে কীনা- তাও নির্ধারণ করে দেবার সুযোগ আছে।

    1. অ্যাডের ফরম্যাট

    এ পর্যায়ে আপনার নির্ধারণ করতে হবে অ্যাডটি আপনি কী আকারে ভোক্তার নিকট পৌঁছাতে চান। ইমেজ, ভিডিও আকারে নাকি স্লাইডশো, ক্যারোজেল কিংবা কালেকশন হিসেবে- এটি নির্ধারণ করে দেয়া যায়। প্রতিটি ধরণের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা উক্ত ধরণের সাথেই অ্যাড ম্যানেজার আপনাকে শো করবে। সে অনুযায়ী আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার অ্যাডের পারপাস বা উদ্দেশ্য কোনটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।

    1. অর্ডার প্লেস করুন

    এবার সবুজ ‘প্লেস অর্ডার’ বাটনে ক্লিকের মাধ্যমে আপনি দেখতে পাবেন আপনার তৈরিকৃত অ্যাডটি কোনো প্রকার কমিউনিটি রুল ভায়োলেট করেছে কিনা।

    1. কার্যকারিতা যাচাই

    আপনার অ্যাডটি কতটা সফল হচ্ছে পণ্যের প্রসারে অথবা আদৌ সফল হচ্ছে কীনা- এ সমস্ত তথ্য আপনি এখান থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয়ের মাঝে রয়েছে:

    • অ্যাডটি কতবার ক্লিক করা হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ।
    • অ্যাডটি কতবার দেখা হয়েছে, সেটি যাচাই।
    • কনভার্শন রেট অর্থাৎ অ্যাডটি যতজন ভোক্তা ক্লিক করেছেন, তার মাঝে কতজন আসলে পণ্যটি কিনেছেন, সে সংখ্যা পর্যবেক্ষণ।

    উপরের ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণের মাধ্যমে আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইন একজন ভোক্তার ফ্রেন্সলিস্টের পোস্টের ভেতর থেকেও ফিডে কার্যকরী উপায়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে!

    আমি বুস্ট করছি কিন্তু আমার সেলস বাড়ছে না: সমাধানে ৭টি টিপস

    ফেসবুকের বুস্টিং সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে বিজ্ঞাপন প্রচারে প্রত্যাশিত ফলাফল নাও আসতে পারে। বুস্টিং ব্যবহারের ৭টি টিপস নিচে দেওয়া হলো:

    1. বিজনেস ওয়েবসাইটের সাথে ফেসবুক যুক্তকরণ

    ফেসবুকের সাথে ওয়েবসাইট যুক্ত করার কিছু উপায় হলো:

    ফেসবুক শেয়ার বাটন

    ফেসবুকের পেইজ শেয়ারের অপশন একজন গ্রাহককে পেইজটি তার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করার সুবিধা তৈরি করে দেয়।

    ফেসবুক লাইক বাটন

    ওয়েবসাইটে একটি ফেসবুক লাইক বাটন থাকা অত্যন্ত কার্যকরী কেননা এর সাহায্যে একজন ক্রেতা সরাসরি ফেসবুকে না যেয়েই এর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন।

    ওয়ান ট্যাপ লগ-ইন

    বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটার সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বারবার নতুন করে লগ-ইনের ঝামেলা এড়াতে চান। এক্ষেত্রে, ফেসবুক দিয়ে ‘ওয়ান ট্যাপ লগ-ইনের’ সুবিধা অনেকসময়ই গ্রাহক লুফে নেন।

    ফেসবুক মেসেঞ্জার

    ওয়েবসাইটে মেসেঞ্জার চ্যাটের সুবিধা রাখা হলে গ্রাহক যেকোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এটির মাধ্যমে করতে পারবেন।

    ফেসবুক পিক্সেল

    ফেসবুকের এই ফিচারটির সাহায্যে একজন বিজ্ঞাপনদাতা দেখতে পারেন গ্রাহক তার বিজ্ঞাপনে কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন। যেমন: তিনি কি বিজ্ঞাপনটিতে শুধুমাত্র ক্লিক করছেন, নাকি কিছু কেনাকাটা করছেন অথবা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছেন ইত্যাদি।

    1. ফেসবুকে ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড

    এক জরীপে দেখা যায়, ভিডিও কন্টেন্ট অন্যান্য কন্টেন্ট থেকে ৫৯% বেশি কার্যকরী। তবে, ভিডিও কন্টেন্ট আপলোডের সময় মাথায় রাখতে হবে যেন একটি আকর্ষণীয়, প্রাসঙ্গিক ক্যাপশন এতে থাকে। পাশাপাশি, ফেসবুক লাইভে ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড করাও গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর একটি ভালো মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

    ফেসবুক পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কী?
    Source: adespresso.com
    1. ফেসবুক পেইজে ‘শপ’ যুক্তকরণ

    এটি গ্রাহকের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পৌঁছাবার কিংবা পেইজে নতুন ‘লাইক’ প্রদানকারীদের নতুন গ্রাহকে পরিণত করা। তবে, যেন তেন শপ খুলে রাখলেই কিন্তু চলবে না। বরং, নিজেকে জিজ্ঞাসা কততে হবে, আমি ক্রেতা হলে শপের পণ্য বিবরণী এবং প্রেজেন্টেশনে আমি আকৃষ্ট হতাম কিনা।

    ফেসবুক শপ
    ফেসবুক শপ
    Source: about.fb.com
    1. ফেসবুকে এক্সক্লুসিভ ডিলস এবং অফারস ক্যাম্পেইন রান করা

    ফেসবুকে বিভিন্ন ধরণের অফার অ্যান্ড ডিলস ক্যাম্পেইন রান করার মাধ্যমে যেমন পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি করা যায়, পাশাপাশি নতুন দীর্ঘমেয়াদি কাস্টমারও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। তবে, আপনি কি পুরোনো গ্রাহকদের কাছে নিজের পণ্যের প্রচার এবং বিক্রি চাচ্ছেন নাকি নতুন অডিয়েন্সকে টার্গেট করছেন- এটি নির্ধারণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

    এই পদ্ধতি কার্যকর করার একটি দারুণ উপায় হলো, আগ্রহী অডিয়েন্সকে তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে মেনশন দিতে আহ্বান করা। এর ফলে চেইন ইফেক্টের সাহায্যে একটি বড় অডিয়েন্সের মাঝে নিজের পণ্যের প্রচার ঘটানো যায়।

    1. ফেসবুক অ্যাডস

    মাসিক ২.৫ বিলিয়ন ইউজার নিয়ে খুব সহজেই ফেসবুক বিজ্ঞাপন জগতে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি মাধ্যম হিসেবে স্থান লাভ করে আছে। কথা হলো, ফেসবুক অ্যাডস এতটাই কার্যকরী কেন? কারণ হিসেবে বলা যায়, ফেসবুক বিজ্ঞাপন দেবার সময় অত্যন্ত নির্দিষ্টভাবে টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করা যায় এবং সম্ভাব্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে গ্রাহককে পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রতিদিন মাত্র ৫ ডলার সমমূল্যের বিজ্ঞাপন দ্বারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর অনেক বড় একটি অডিয়েন্সের সামনে নিজের পণ্য উপস্থাপন ও বিক্রয় সম্ভব। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে খরচ বাড়ানো কিংবা কমানোরও সুযোগ এখানে রয়েছে।

    1. গ্রাহকের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন

    অনলাইন জগতে গ্রাহকদের কেনাকাটার অন্যতম ভরসাস্থল একটি পেইজের ‘পেইজ রিভিউ’ যাচাই করা। একটি জরীপে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ ক্রেতা ফেসবুকে কোনো পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী হলে পেইজ রিভিউ দেখে ইতিবাচক বা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হন। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো, ক্রেতাকে রিভিউ দিতে আগ্রহী করা। এই বিষয়ে অনেকে মনে করেন, রিভিউ দিতে উৎসাহী করার একটি উপায় হলো ক্রেতাকে নিজের অভিজ্ঞতা প্রদানের পুরষ্কারস্বরূপ ছোটখাটো কোনো ডিস্কাউন্ট অফার করা।

    1. পোস্টে নিজের পণ্যের সুকৌশলী প্রচারণা

    ফেসবুককে একটি প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে, তা হলো, পুরোনো গ্রাহকদের ধরে রাখা ও নতুন গ্রাহক তৈরিতে পণ্যের নিয়মিত আকর্ষণীয় কনটেন্ট শেয়ার করা। ধরা যাক, আপনি গেমিং এক্সেসরিজ বিক্রি করতে চান। সেক্ষেত্রে, আপনি আপনার নতুন কী-বোর্ডে গেমটি খেলে কতটা উপভোগ করছেন, কী কী বিষয় আপনাকে আনন্দ দিয়েছে- তা উল্লেখ করতে পারেন। পোস্ট দেবার সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন যেন অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ধর্ম-জাতি-সংস্কৃতিকে আঘাত না করে।

    উল্লিখিত টিপস ব্যাবহার করলে আশা করা যায়, ফেসবুক বিজ্ঞাপন দ্বারা বেশ উপকৃত হওয়া সম্ভব হবে।

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন