পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
বর্তমান প্রজন্মের জন্য দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ফেসবুক। সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তাই চরম অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। হ্যাকারের কাজের ভিত্তিতে তা কখনো প্রভাব ফেলে আমাদের সামাজিক ইতিবাচক পরিচিতির উপর, আবার ক্ষেত্রবিশেষে কখনো দিতে হয় অর্থমূল্য। এই ভোগান্তির শিকার যেন হতে না হয় তার জন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা যায়।
১) শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। পাসওয়ার্ডে নিজের নাম বা জন্মতারিখের কোনো অংশ কিংবা কোনো সাধারণ শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। পাসওয়ার্ড এমন হতে হবে যেন তা সহজে আন্দাজ করা না যায়। পাসওয়ার্ডটি হবে কমপক্ষে ৮ অক্ষরের। যত বড় ততই ভালো কারণ সেক্ষেত্রে হ্যাকার বা যে কারও জন্য তা আন্দাজ করা কঠিন হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, বিশেষ চিহ্ন ও সংখ্যার মিশ্রণ।
২) ফেসবুক পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না
আপনার ব্যবহৃত সব ওয়েবসাইটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আবার একই পাসওয়ার্ড কেবল সামান্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করাও উচিত না (যেমনঃ অক্ষর একই রেখে শুধু সংখ্যা পরিবর্তন করে অন্য সাইটের জন্য ব্যবহার করা); বরং সেগুলো হতে হবে সম্পূর্ণই আলাদা।
৩) প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে তা মনে রাখা স্বাভাবিকভাবেই কষ্টকর। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ‘Lastpass’, ‘Dashlane’ ইত্যাদি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। এগুলোতে নিরাপদে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
৪) একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত না
প্রতি ছয় মাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নতুন পাসওয়ার্ড দেয়া উচিত। এটি শুধু ফেসবুক নয়, সকল সাইটের জন্যই প্রযোজ্য। যদি এটি করতে মনে রাখা কঠিন মনে হয় তবে আপনার ক্যালেন্ডারে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখতে পারেন।
৫) ‘Remember Password’ ফিচারটি ব্যবহার না করাই শ্রেয়
এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য যখন আপনি অন্য কারও ডিভাইস দিয়ে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করেন। ফেসবুকে লগইন করার সময় “Would you like to remember password for this site?” -এধরণের একটি মেসেজ প্রদর্শন করে। এটিতে Remember password অপশনে ক্লিক না করে ‘Never remember password for this site’ কিংবা ‘Not now’ অপশনটি বেছে নেয়া নিরাপদ। অন্যের ডিভাইস দিয়ে লগইন না করাই উত্তম, আর করলেও লগ-আউট করে পরে আবার নিজের ডিভাইস থেকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
৬) সতর্কতার সাথে সঠিক সাইট লিংক টাইপ করতে হবে
অনেকসময় অসতর্কতাবশত সাইটের লিংক লিখতে ভুল হয়, যেমন facebook.com লিখতে গিয়ে face.com, facebook.co, facebook1.com ইত্যাদি টাইপ করে সেই লিংকে প্রবেশ করা হয়। কিন্তু সাবধান! ইন্টারনেট ফিশাররা মূল লিংক একটু এদিক সেদিক করে ট্র্যাপ লিংক তৈরি করে। তাই সঠিক লিংক টাইপ করতে হবে। আপনি যেসব সাইট বেশি ব্যবহার করে থাকেন সেগুলো আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখুন, যাতে এক ক্লিকেই তাতে প্রবেশ করা যায়; আর এক্ষেত্রে লিংক ভুল হবারও কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
৭) লগইন অ্যালার্ট চালু রাখুন
যখন অন্য কোনো ডিভাইস বা ব্রাউজার থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করা হয় তখন আপনাকে জানানো হবে, এটিই লগইন অ্যালার্ট। ফেসবুক নোটিফিকেশন, মেসেজ নাকি ফোনে টেক্সট মেসেজ -আপনি যেকোনো মাধ্যম বেছে নিতে পারেন যে মাধ্যমে আপনি জানতে চান। তবে এক্ষেত্রে সর্বোত্তম হলো ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে টেক্সট মেসেজ গ্রহণের অপশনটি বেছে নেয়া। “Settings > Security and Login > Setting up extra security > Get alerts about unrecognized logins” -এই ডিরেকশনে গিয়ে লগইন অ্যালার্ট চালু করার সেটিংটি পাবেন। শেষে অবশ্যই ‘Save changes’ -এ ক্লিক করতে ভুলবেন না।
৮) Login Code Verification
এটি আরও অধিক শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর ফলে কোনো অপরিচিত ব্রাউজার থেকে লগইন করলে একটি কোড নাম্বারের মাধ্যমে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। “Settings > Security and Login > Two-factor Authentication > Use Two-factor Authentication” এই ডিরেকশনে গিয়ে সেটিংটি করতে হবে। আপনি যে ফোন নাম্বার সেখানে সেট করবেন সেই নাম্বারে কোড পাঠানো হবে। সেই কোড নিশ্চিত করলে তবেই লগইন করা যাবে।
Settings > Mobile > Time of Day (Choose when you want to get texts from Facebook) এই ডিরেকশনে গিয়ে দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময় না দিয়ে ‘Anytime’ অপশনটি নির্বাচন করে সেটিংটি সেইভ করুন।
এখন কথা হচ্ছে, আপনার কাছে সবসময় ফোন নাও থাকতে পারে। যেমন ধরুন বিমানে ভ্রমণকালে বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে। তখন কীভাবে কোড ভেরিফিকেশন করবেন? এই সমস্যার সম্মুখীন যেন না হতে হয় তার জন্য রয়েছে ব্যাক-আপ প্ল্যান। উক্ত ডিরেকশনেই ‘Recovery Codes’ অপশন পাবেন, এর পাশে ‘show codes’-এ ক্লিক করলে আপনাকে ১০টি কোড দেয়া হবে। এগুলো স্ক্রিনশট নিয়ে সেইভ করে রাখতে পারেন কিংবা কোথাও লিখে রাখতে পারেন। প্রতিটি কোড একবার করে ব্যবহার করা যাবে।
৯) Trusted Contact
“Settings > Security and Login > Setting up extra security > Choose 3 or 5 friends to contact if you get locked out” এই ডিরেকশনে গিয়ে আপনি নির্বাচন করতে পারবেন আপনার কয়েকজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে, আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন সংক্রান্ত অসুবিধার ক্ষেত্রে আপনি যাদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। এক্ষেত্রে এমন বন্ধুদেরই নির্বাচন করতে হবে, যাদের কাছে সাময়িকভাবে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেও আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করবেন তথা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে বিশ্বাস করেন।
১০) আপনি কোথায় লগড-ইন আছেন তা চেক করুন
“Settings > Security and Login > Where you’re logged in” এই ডিরেকশনে গিয়ে আপনি সম্প্রতি যেসব ডিভাইস দিয়ে লগইন হয়েছেন ও এখন আছেন তার সময় ও লোকেশনসহ একটি তালিকা দেখতে পারবেন। যদি অপরিচিত কোনো ডিভাইস আবিষ্কার করেন তাহলে তা তৎক্ষণাৎ লগ আউট অপশনে ক্লিক করুন। আপনি যদি অন্য কারও ডিভাইস থেকে লগইন করার পর লগ আউট করেছেন কিনা তা মনে করতে না পারেন সেক্ষেত্রে এটি বোঝার দারুণ উপায়ও এটি।
১১) অন্যান্য সতর্কতা
i) ফেসবুকের একটি পরিচিত অংশ ফেইক আইডি। হ্যাকার বা ইন্টারনেট ফিশাররা সাধারণত ফেইক আইডি দিয়ে কারও ফ্রেন্ড হওয়ার পর তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করতে পারে। তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বাছবিচার করা উচিত।
ii) ফেসবুকে পাবলিক অডিয়েন্সে যাচ্ছেতাই শেয়ার করা উচিত না। একান্ত প্রয়োজন না হলে পোস্টের প্রাইভেসি ‘ফ্রেন্ডস’ রাখা উত্তম। আর ব্যক্তিগত তথ্যাদি ফেসবুকে শেয়ার না করাই ভালো।
iii) ফেসবুক মেসেঞ্জারে কেউ কোনো লিংক শেয়ার করলে তাতে নির্বিচারে প্রবেশ করা উচিত না। অনেক ক্ষেত্রেই এসব লিংক ‘স্প্যাম’ বা ফাঁদ হতে পারে। তাই লিংকটি ভালো করে লক্ষ্য করে নিন। অপরিচিত বা অর্ধ-পরিচিত কেউ অপ্রাসঙ্গিক কোনো লিংক দিলে তাতে প্রবেশ করবেন না।
দূর্বল ব্যাকরণ, বানান, অদ্ভুত চিহ্নসম্বলিত কিংবা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ক্রেডিট কার্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য ইত্যাদি চায় এমন লিংক বা মেসেজ সন্দেহজনক হতে পারে।
iv) ফেসবুকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্ট বা মেসেজ পেলে রিপোর্ট করুন। যদি কোনো আইডি ফেইক বলে নিশ্চিত হন তবে তাও রিপোর্ট করুন। রিপোর্ট করার সময় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অপশনগুলো ক্লিক করলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেটির বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোনো আইডি বা পোস্ট রিমুভ করে দেয়।
v) আপনার ডিভাইসে শক্তিশালী ও আপডেটেড অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করুন। নিয়মিত ডিভাইস স্ক্যান করুন। আপনার ডিভাইসের সকল অ্যাপ নিয়মিত আপডেট দিন।
Reference:
- https://www.wikihow.com/Protect-Your-Facebook-Account-from-Hackers
- https://www.theticblog.com/top-10-tips-to-secure-your-facebook-account-from-getting-hacked/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: [email protected]