বিশ্ববিদ্যালয় জীবন গড়ে তোলো এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ-এর সহায়তায়!

June 11, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!

পড়ালেখা শেষ করার পরপরই চাকরির চিন্তা। আর এই চাকরি পেতে গেলে কিছু বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। আমি দেখেছি, এই প্রজন্মের অনেকেই পড়ালেখার পাট চুকানোর পরে চাকরির সন্ধানে গেলে চরম হতাশাজনক একটা চক্রে পড়ে যায়। চক্রের নাম এক্সপেরিয়েন্স চক্র।

এই চক্রের শুরুটা হয় প্রথম জব এপ্লিকেশনের সময়ে। জবদাতা প্রতিষ্ঠান সবার আগে অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স খোঁজে। কিন্তু সদ্য পড়ালেখা শেষ করা ছেলেটি কী করে বা কোথা থেকে পাবে এত এক্সপেরিয়েন্স? এই প্রশ্নটা থেকেই যায়, আর ঠিক সেই কারণেই চাকরি আর মেলে না।

চক্রের শুরু কিন্তু হয়ে গেছে। ছেলেটিকে চাকরি পেতে হলে তার দরকার হবে এক্সপেরিয়েন্সের, কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স পেতে হলে তো তাকে চাকরি পেতে হবে সবার আগে! এ যেন সেই গল্পের “ডিম আগে না মুরগি আগে”-এর মত অবস্থা! অনেকেই এই চক্রের ঘুরপ্যাঁচে আটকে যায়, সহজে আর বের হতে পারেই না!

এমন একটা চক্র থেকে বের হতে চাইলে কী করা দরকার? কীভাবে মেলে মুক্তি? প্রশ্নটা রয়েই যায়। আর এই প্রশ্নের উত্তর হলো ক্লাব, ফোরাম আর অর্গানাইজেশন। পড়ালেখা করার সময় তুমি যদি শুধু পড়ালেখাই করো, অন্যান্য কোনকিছুতে চোখ না দিয়ে, তাহলে দিনশেষে ওই আধা পৃষ্ঠার সিভি আর এক্সপেরিয়েন্সের অভাব নিয়েই বসে থাকতে হবে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এগুলোর পাশাপাশি ক্লাবগুলোর গুরুত্ব অনেক!

হয়তো তোমার মনে হতে পারে, ক্লাবে গেলে তো শুধু শুধু সময় নষ্ট, সেখানে গিয়ে শেখার আবার কী আছে? মজার ব্যাপার হলো, ক্লাব বা ফোরাম কিংবা কোন অর্গানাইজেশন থেকে তুমি যতো কিছু শিখতে পারবে, পাঠ্যবইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে তার সিকিভাগ শিখবে কি না, সন্দেহ কিন্তু রয়েই যায়!

ক্লাব বা কোন অর্গানাইজেশন সবার আগে তোমাকে যেটা শেখাবে সেটা হলো দায়িত্ববোধ। তোমাকে একটা কাজ দেয়া হলে কতোটুকু দায়িত্বের সাথে সেটা করছো তুমি, তার উপর নির্ভর করে তোমার কতোটুকু এক্সপেরিয়েন্স হলো। আবার একসাথে একটা টিমে কাজ করার যে টিমওয়ার্ক, যেকোন জব ইন্টারভিউতে এই স্কিলটা খুবই দরকারি। এর পাশাপাশি সৃজনশীলতা, বুদ্ধির ব্যবহার থেকে শুরু করে আরো হাজারো কাজ শিখে নিতে পারো তুমি এগুলো থেকে। পড়ালেখাময় বোরিং জীবনে এইটুকুও যদি না করো, অভিজ্ঞতা আসবে কোত্থেকে?

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে তুমি যখনই কোন ক্লাব বা ফোরামে থাকবে, সেখান থেকে তুমি কোন টাকা পাবে না। সেটা কিন্তু মোটেও মুখ্য বিষয় না! এই ক্লাব বা অর্গানাইজেশনে যখন তুমি যাবে, সেখানে তুমি যে স্কিলগুলো পাবে, সেগুলো কিন্তু অন্তত টাকা দিয়ে কেনা যায় না, সেগুলোকে অর্জন করতে হয় নিজের শ্রম দিয়ে। এই লেখাটায় আমি এরকম ৫টি স্কিলের কথা বলবো।

১। অর্গানাইজিং স্কিল

তুমি একটা ক্লাবে যখন কাজ করবে, তখন সেখানে তোমাকে হরেক রকম ইভেন্ট নামাতে হবে, ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হবে। বেশ খাটাখাটুনি হবে তাতে, আর সাথে তোমার অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়তে থাকবে। তুমি কাজ করে একটা ইভেন্ট নামিয়ে ফেলছো, সেটা সফল হচ্ছে, ভাবতেই অসাধারণ লাগছে না? এই অর্গানাইজিং স্কিলটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বানিয়ে ফেলার জন্য এর থেকে ভালো সুযোগ আর নেই।

তোমার অফিসের বস যদি তোমার মধ্যে দায়িত্বশীলতা আর এই লীডারশিপটা দেখতে পারে, তোমার প্রমোশন ঠেকায় কে?

২। টিমওয়ার্কিং স্কিল

তুমি এর আগে হয়তো অনেক কম্পিটিশন জিতেছো, অনেক কাজ করেছো, কিন্তু সেগুলো একা একাই। সবাই মিলে একটা কাজ সফলভাবে করে ফেলার যে একটা ভালো লাগা, সেটা তুমি বুঝতে পারবে কোন ক্লাব বা ফোরামে কাজ করলে। একটা টিমে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা এতো বেশি কাজে লাগবে চাকুরি জীবনে, তোমার কোন ধারণাই নেই! কারণ একটা অফিসে টিমওয়ার্ক ছাড়া কোন কাজ কি চলে?

৩। নেটওয়ার্কিং স্কিল

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন ক্লাবে নিয়মিত হলে যে বিষয়টা হয়, প্রচুর মানুষের সাথে খাতির জমে, অনেকের সাথে পরিচয় হয়। এতে নেটওয়ার্কিংটা অনেক বেশি দৃঢ় হয়। এদের মধ্যেই কেউ হয়তো জীবনে অনেক সফল হয়ে বিশাল কিছু করে ফেলবে, আর তুমি হয়তো কোন এক জব ইন্টারভিউতে তাকেই পাবে ইন্টারভিউ বোর্ডের ওপাশে! তাতে আর যাই হোক, তুমি নির্ভয়ে, টেনশন ছাড়াই ইন্টারভিউ দিয়ে আসতে পারবে, তাই নয় কি?

৪। লীডারশিপ স্কিল

বলা হয়, কোন একটা চাকুরিতে উপরে ওঠার সিঁড়ি হচ্ছে নিজের লীডারশিপ স্কিল দেখানো। তোমার অফিসের বস যদি তোমার মধ্যে দায়িত্বশীলতা আর এই লীডারশিপটা দেখতে পারে, তোমার প্রমোশন ঠেকায় কে? আর এই স্কিলটা অর্জন করতে পারবে ক্লাবের মধ্য দিয়েই। একটা ক্লাবের হয়ে তোমাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হতে পারে। এই কাজগুলো করতে গিয়ে যদি তুমি শিখে নিতে পারো নেতৃত্ববোধের এই স্কিল, তাহলেই কেল্লাফতে!

৫। কর্পোরেট স্কিল

আমার চোখে এই স্কিলটা খুব বেশি দরকারি কোন অফিসে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে। বর্তমান যুগ হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট যুগ, সবাই মূলত এই কর্পোরেট স্কিলগুলো দেখে যখন কোন চাকুরি দিতে হয় বা প্রোমোশন দিতে হয়। আর এই কর্পোরেট গ্রুমিংটা হয় কোন অর্গানাইজেশনে কাজ করলে। এই গ্রুমিংটা জীবনের বাদবাকি কর্পোরেট অফিসে সবসময় কাজে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে বলা যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ চার বছর। এই চার বছরে তুমি যদি সারাদিন পড়ালেখা করেই কাটিয়ে দাও, তাহলে কী লাভ? বরং, ক্লাব বা অর্গানাইজেশন কিংবা যেকোন ফোরামের হয়ে কাজ করতে থাকলে তুমি কাজ শিখবে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনন্দটাও পেয়ে যাবে!  

এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো

এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে তাওহিদা আলী জ্যোতি


১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/

১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন