স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন, আইজ্যাক নিউটন আর এদিকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এদের নাম তো সবাই জানি আমরা। এনারা বিখ্যাত, জগদ্বিখ্যাত। আমরা সবাই এনাদের মতো হতে চাই, তাই না? কিন্তু আমাদের সাথে কি হয় এবার দেখা যাক।
শীতল আর আবিদ দুই ভালো বন্ধু। তারা সম্প্রতি এইচ.এস.সি শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে উঠেছে। দুর্ভাগ্যবশত আবিদ এইচ.এস.সি তে ম্যাথে এ প্লাস মিস করে যার জন্য বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারে না। এটা আবিদ কখনোই মানতে পারে না কারণ স্কুল, কলেজে আবিদ ছিল দারুণ মেধাবী। আর এজন্য সে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে।
কিন্তু শেষমেষ একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবিদ কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। আর এদিকে শীতল বুয়েটে চান্স পেয়ে যায়।
…এরপর থেকেই আবিদ আর শীতলের মধ্যে একটা বৈষম্য সৃষ্টি হতে থাকে।
উদাধারণ হিসেবে: শীতল আজ নামি দামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেলফি তোলে, ভালো ভালো জায়গায় গিয়ে চেক-ইন দেয়। যেটা আবিদ মেনে নিতে পারে না, কারণ ঐ যে সে বুয়েট…। নিজেকে খুব অসহায় লাগে তার কাছে, এই জন্য সে ডিপ্রেশনে ভোগে। আর মাঝে মাঝেই আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করে।
এখন আশা যাক মূল কথায়, এইভাবে চলতে থাকলে আবিদ কিভাবে আইনস্টাইন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে? সে তো এখন শীতলের অ্যাক্টিভিটি দেখার কাজে ব্যস্ত।
(উপরের সব ঘটনা কাল্পনিক)
আসলে এই ধরনের প্রবলেমেই ভুগছি আমরা। ৮০-৯০% টিনএজারদের প্রব্লেমই এ ধরণের অনলাইন রিলেটেড। আমরা নিজেরাই ওয়েবে একটা বৈষম্যের প্রাচীর তৈরি করে ফেলেছি, কিন্তু এই ইন্টারনেট যেটা কিনা আমাদের একটা শেখার মাধ্যম ছিল। কিন্তু আমরা কি শিখলাম? কিভাবে ডিপ্রেসড হতে হয়?
নিজেকে তাই আবিস্কার করে ফেলো এখনই
ও এত কিছু করছে আর আমি কিছুই পারি না, এই ডিপ্রেশনে যত দিন তুমি ভুগবে ততই তুমি x অক্ষের নিচে চলে যাবা। আর একসময় গ্রাফের বাইরে। সেটা তুমি চাও? কেউই চাই না এমন।
এখন তাই আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো এই প্রব্লেম থেকে বেরিয়ে আসা। তাই আমি কিছু উপায় এখানে দেখাবো যেটা অনুসরণ করলে আশা করি আমাদের এই জেনারেশন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবে।
তো শুরু করা যাক।
১। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে-
আচ্ছা নিজেকে ব্যস্ত তো অনেক ভাবেই করা যায়, গেম খেলে, টিভি দেখে, তাহলে আমি কি করব?
আসলে প্রথমে তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সমান মেধা দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, যে মানুষটা চর্চা করেছেন, পরিশ্রম করেছেন তিনিই নাম কামিয়েছেন।
তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে তুমি এমন কিছু করতে পারো যেটা অন্য কেউ ভাল পারে না, কাজ করো ভালো ভালো। ইউনিভার্সিটির ৪/৫ টা বছর অবহেলার জায়গা না, তুমি এই সময়ে অনেক কিছু করতে পারো চাইলে। আসলে এই ৪/৫ টি বছর পড়াশোনার পাশাপাশি যে যত বেশি দক্ষ হতে পারবে তার ভবিষ্যৎ তত উজ্জ্বল। তুমি কাজ শিখো, নইলে তুমি যেইটা ভাল পারো সেটা দিয়ে শুরু করো।
তুমি এই সময়ে চাইলে ডিজাইনিং শিখতে পারো, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারো, অ্যানিমেশন করতে পারো। আর এই রিলেটেড কাজের যে কি দাম তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এইসব ক্রিয়েটিভ কাজ করায় তুমি সেইখানে এইগুলো করতে পারো, তাছাড়া তুমি ইউটিউবেও এইসব শিখে ফেলতে পারো।
তুমি ফটোগ্রাফি ভাল পারো? তোমার কাজে অনেক সুযোগ, অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ফটোগ্রাফার চায়, তাছাড়া কমার্শিয়াল কাজেও অনেক ডিমান্ড।
তুমি ছবি ভাল আঁক? কার্টুন করো? তোমার সামনে অফুরন্ত সম্ভাবনা।
এইভাবে কাজ করতে থাকলে তোমার অনেক ভাল ভাল মানুষদের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে, অনুপ্রেরণা পাবে, আর এইভাবেই মানুষ সামনে এগোয়।
এইভাবে যদি তোমার পছন্দের কাজের কাছাকাছি তুমি চলে যাও তাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি বড় একটা স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে আরও ৫০ হাজার ছেলেমেয়েদের ইন্সপায়ার করছো।
এখনও তুমিও কি ডিপ্রেশনে থাকবা?
২। স্বপ্নে বিভোর থাকা–
স্টিভ জবস কি কখনো ভেবেছিলেন যে তিনি অ্যাপলকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবেন? আমারাও কি ভেবেছিলাম? কিন্তু তিনি স্বপ্ন ঠিকই দেখেছিলেন। একটা কথা আছে যেটা স্বপ্নে দেখা যায় সেইটা বাস্তবেও করা যায়। তুমি স্বপ্ন দেখা শেখো, তোমার কাজ নিয়ে, আজ যে কাজটা করছো এইটা নিয়ে স্বপ্ন দেখো।
তোমার নিজের উপর যদি বিশ্বাস থাকে আর তুমি যদি তোমার কাজের উপর যথেষ্ট মনোযোগী আর ভালবাসা নিয়ে করো একদিন চোখ খুলে দেখবে সব বাস্তব হয়ে গেছে।
জাদুর মতো লাগলেও এইটাই সত্যি।
জাস্ট একটা কথা তোমার কাজ দেখে অনেকে অনেক কথা বলবে, কেউ ভাল কথা বলবে আবার কেউ একটু বাঁকা কথা বলবে, এইটা বলবেই।
যখনই দেখবা বাঁকা কথা শুনতে পাচ্ছো তখন নিজের উপর আস্থা রেখে আবার শুরু করো। স্টার্টিং কারো-ই ভালো হয়না। বিশ্বের যত বড় বড় কোম্পানি আছে খেয়াল করে দেখবা স্টার্টিং কোনোটারই ভালো ছিল না। তাও বর্তমানে তারা এ অবস্থানে কিভাবে আসলো?
ধৈর্য্য ধরো……
৩। আইডিয়ার সাথে কথা বলো–
এই জিনিসটাই অনেক ইন্টারেস্টিং।
তুমি একটা অভ্যাস করে ফেলতে পারো না? প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১০টা মিনিট টেবিলে বসো। একটা পেপার আর একটা পেন নিয়ে।
চোখ বন্ধ করো। এরপর তুমি তোমার আইডিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করো, দেখবে অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছো। তুমি যা করতে চাও সেইগুলো নিয়ে ভাবো। আর সেগুলো লিখে ফেলো।
এইভাবে করলে সপ্তাহে ৭০ মিনিট মানে এক ঘন্টা ১০ মিনিট, Can you imagine?
এই তুমি আইডিয়া নিয়ে ভাবছো এইটাতে তুমি নিজের অজান্তেই কত বড় একটা কাজ করছো তুমি নিজেও জানো না। এই আইডিয়া দিয়েই সারা পৃথিবী চলছে। Microsoft, Google, Apple এই সবই কিন্তু একটা আইডিয়ারই ফসল।
আর তুমিও তোমার আইডিয়া দিয়ে সারা পৃথিবীকেই চেঞ্জ করতে ফেলতে পার। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। চোখ বন্ধ করে একবার বলো– “হ্যাঁ, আমিও পারব।”
তাই আর ডিপ্রেশন না। জাস্ট ৩টা কাজ। তুমি বিল গেটস আর তুমিই স্টিভ জবস।
নিজেকে তাই আবিস্কার করে ফেলো এখনই। তুমি যেটা ভাল পারো লেগে পড়ো সেইটা নিয়ে। সফল তুমি হবেই!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন