এমনটা কখনো হয়েছে যে, কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এরপর মনে হচ্ছে নেয়াটা ঠিক হয়নি? আবার ঐ সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে কিনা তাও বুঝতে পারছেন না? আবার এর জন্য ভেতরে ভেতরে হতাশ হয়ে যাচ্ছেন? যদি হয়ে থাকে, তবে বুঝে নিতে হবে যে, আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের গোড়ায় গলদ ছিল।
মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মাঝে একটি হচ্ছে কোনো বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ। একটা ভাল সিদ্ধান্ত যেমন আপনার জীবনটাকে পালটে দিতে পারে, তেমনি আপনার জীবনকে অতিষ্ট করে দেবার জন্য একটা ভুল সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। তাই জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্তই নিতে হবে খুব সচেতনতার সাথে যার জন্য আপনাকে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
১। আপনি কী চান?
আমার পরিচিত একজন বিবিএ স্টুডেন্ট রয়েছে যে কিনা তার বিবিএ জীবনের মাঝামাঝিতে এসে বুঝতে পেরেছে যে বিবিএ আসলে তার জন্য না। সে সবসময় মনোবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছিলো, কিন্তু ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী হবার কারণে তার মানসিকতা ছিল এমন যে, তাকে ব্যবসায় শিক্ষাতেই ক্যারিয়ার গড়তে হবে। উচ্চশিক্ষাও নিতে হবে এর উপরেই। পড়তে হবে সবচেয়ে ভাল জায়গায়। এতবড় লক্ষ্যের ছায়ায় সে নিজে কি চায় তা যেন একদম ঢেকে গিয়েছিল।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিশ্রমের ফাঁকে সে নিজেকে প্রশ্ন করতেই ভুলে গিয়েছিল যে সে নিজে কী চায়। ফলাফল? আর সে অনেক ভাল প্রতিষ্ঠানে ভাল বিষয় পড়ছে, কিন্তু কোনোকিছুতেই যেন সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের সারাজীবনের জন্য নেয়া হয়ে থাকে। তাই সাময়িক একটা ইচ্ছা যেন আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কখনো প্রভাবিত করতে না পারে। লক্ষ্য নির্ধারণ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি এমনটাই চান? সারাজীবন কি আপনি এমনটাই চাইবেন? ভবিষ্যতেও? এরপর নিজেকে দেয়া নিজের উত্তরের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
২। অন্যের উপদেশ।
উপদেশ হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র ভাল জিনিস যা যেকোনো ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যে বিনামূল্যে দিতে সদাপ্রস্তত। উপদেশ যে সবসময় কাজে আসবে, এমনটা না। কিন্তু, উপদেশ নিলে কখনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই উপদেশ গ্রহণকে নিজের দূর্বলতা মনে করে হীনমন্যতায় ভোগে, যা একদমই ঠিক না। উপদেশ নেয়া দোষের কিছু না, এটা যে কারো থেকে নেয়া যায়। হতে পারে একজন মানুষ আপনার থেকে কম শিক্ষিত, কিন্তু অনেক বিষয়ে হয়ত আপনার থেকে তার জ্ঞান অনেক বেশি।
যত বেশি মতামত পাবেন, আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ততই সহজ হবে। তবে মনে রাখবেন যে, বাংলা একটা প্রবাদ রয়েছে, “অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট”। উপদেশ গ্রহণ করবেন ঠিকই, তবে সবার উপদেশ যেন আপনার সিদ্ধান্তে প্রভাব না ফেলে কিংবা আপনার সিদ্ধান্ত যেন পুরোপুরি অন্যের উপদেশের উপর ভিত্তি করে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমার এক বান্ধবীকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময়, তার সকল আত্মীয় একটা বিষয় নিয়ে পড়ার উপদেশ দিল, কিন্তু সে একমাত্র নিজের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে অন্য এক বিষয়ে ভর্তি হয়ে গেল। এখন সে এই বিষয় নিয়ে খুবই খুশি, যা সে তার আত্মীয়দের কথা শুনলে কখনোই হতে পারত না।
৩। কেন করছেন?
সহজ একটা উদাহরণ দিই। আপনি বিয়ে করছেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন করছেন? আপনি কি আসলেই বিয়ে করতে চান? যাকে বিয়ে করছেন তার সাথে থাকতে চান নাকি অন্যদের দেখে আপনার ইচ্ছা করছে? নাকি পরিবারের চাপে? একইভাবে, আপনি যদি কর্পোরেটে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি একজন সফল কর্পোরেট লিডার হতে চান নাকি আপনি মাস শেষে ছয় সংখ্যার বেতনটা চান? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই আপনি বুঝে যাবেন আসলেই আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন কিনা।
৪। সুবিধা অসুবিধাগুলো।
সব সিদ্ধান্তেরই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সেই সুবিধা অসুবিধাগুলোকে পরিমাপ করে দেখতে হবে। সুবিধার পাল্লা ভারী হলে, সিদ্ধান্তটি নেয়া উচিত, তার অসুবিধার পাল্লা ভারী হলে তার উল্টোটা। কর্পোরেটের উদাহরণটাই ধরি, মনে করুন আপনি একজন সফল কর্পোরেট লিডার হতে চান। এতে করে আপনি অনেক টাকা কামাবেন, আপনার খ্যাতি বাড়বে এবং আপনি অনেক হাইলি স্কিল্ড হিসেবে পরিচিতি পাবেন।
কিন্তু, অপরদিকে আপনার এর পেছনে অনেক শ্রম দিতে হবে এবং আপনি আপনার পরিবারকে কম সময় দিতে পারবেন। এখন আপনার কাছে যদি আপনার পরিবারকে সময় দেয়াটা মূখ্য হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা আপনার জন্য ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
৬। সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করে নিজেকে বা অন্য কাউকে কষ্ট দিচ্ছেন না তো?
অনেক সময় কোনো একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমরা এতটাই উত্তেজিত থাকি যে, আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তই আমাদের সাথে সম্পর্কিত মানুষগুলোর এবং নিজের উপর যে প্রভাব ফেলে- এই ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে যাই। যেমন, একটা বড় চাকরি করতে গেলে, আপনি অনেক ইনকাম করবেন কিন্তু ঐ টাকা দিয়ে কিছু করার অবসরটাই হয়ত আপনার থাকবে না। আপনার পরিবার আপনার টাকাটাই পাবে কিন্তু আপনাকে পাবে না।
তবে হ্যাঁ, অনেক সময় আপনার অনেক সিদ্ধান্ত আপনাকে কিংবা অন্য কাউকে অদূর ভবিষ্যতে কষ্ট দেবে, কিন্তু সুদূর ভবিষ্যতে হয়ত তা সকলের জন্যই কল্যাণকর। কিন্তু অপ্রয়োজনে কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কখনোই উচিত না।
৬। সিদ্ধান্তের ফলাফলগুলোকে, রঙিন চশমা খুলে দেখুন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে লিখতে গিয়ে এক লেখক লিখেছেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সুদূর গ্রামে গিয়ে থাকব। শহর থেকে দূরে, নির্জন গ্রামে একটা কুটিরে থাকব দুইজন। ব্যপারটা শুনতে অনেক সুন্দর লাগলেও, আমি যখন আমার রঙিন চশমা খুলে পুরো ব্যপারটা চিন্তা করলাম, তখন দেখলাম যে, গ্রামটা শীতের সময় অনেক বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়। এতে করে চলাচলে অনেক অসুবিধা হবে। তবে কুটিরের ভিতরে একটা ফায়ারপ্লেস রয়েছে, যার মানে হচ্ছে সেখানে কোনো হিটারের ব্যবস্থা নেই।” আশাবাদী হওয়া অবশ্যই ভাল তবে আশাবাদী আপনার সাথে যুদ্ধে বাস্তববাদী আপনি যেন হেরে না যায়।
৭। আপনার সিদ্ধান্ত কি আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে মানানসই?
ধরে নিন, আপনি সংবাদপত্রের সম্পাদক হতে চান কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় জার্নালিজম বাদে অন্য কোনো বিষয় ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত নিলেন। আপনার কি মনে হয় যে, আপনার এই সিদ্ধান্তটি আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে মানানসই? আপনি বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, কিন্তু এই দেশে একটা ছোট ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এটা কি মানানসই? এমন করে প্রতিটি সিদ্ধান্তই আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সাথে যাচ্ছে কিনা তা বিচার করে নিন।
৮। সেরাটা নয়, উপযোগীটা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়, বিষয় নির্বাচনের সময় আমরা বেশিরভাগ মানুষ যে ভুলটা করি, তা হচ্ছে, আমরা সবাই সেরা বিষয়টা নিয়ে পড়তে চাই। আমরা কেউ দেখি না যে কোন বিষয়টা আমাদের উপযোগী হবে, কোন বিষয়টার উপর আমাদের দক্ষতা রয়েছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ও আমরা প্রায়শই এই ভুলটা করি। আমাদের জন্য কোন সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করা সবচেয়ে ভাল হবে, তার চেয়ে আমরা গুরুত্ব দিই কোন সিদ্ধান্তটা সবচেয়ে ভাল হবে, তার উপর। যা করা একদমই ঠিক নয়। সবসময় নিজের জন্য যেটা ভাল হয় সেটা বেছে নিতে হবে, সেটা সবসময় সেরাটা নাও হতে পারে।
৯। সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো তাড়া নেই।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ যত ধীরেসুস্থে হবে ততই ভাল। তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গেলে, অনেক যৌক্তিক চিন্তা মাথা থেকে বের হয়ে যায় এবং তখন নিজের চেয়ে অন্যদের মতামতের প্রভাব আপনার সিদ্ধান্তকে বেশি প্রভাবিত করবে। একটা সিদ্ধান্তের ফলাফল কখনোই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় না, তাই সিদ্ধান্তটাও যেন তাড়াহুড়ার মাঝে নেয়া না হয়। একটা সিদ্ধান্ত দেরিতে নেয়ার ফলে আপনার যতটুকু ক্ষতি হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে যদি তাড়াহুড়ার মাঝে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেন।
১০। ভয়কে দূরে রাখুন।
কম-বেশি সবাইই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক ভয় পাই, যার কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই ভয়ের কারণে অনেক সময় আমরা অনেক ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, আবার অনেক সময় আমরা ভয়ের কারণে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাগুলোকে বেশি নজরে রাখি।
ছোট বড় যাই হোক না কেন, সব সিদ্ধান্তেরই আমাদের জীবনের উপর রয়েছে অনেক প্রভাব। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেন কখনো কোনো আপোষ না করা হয়। কখনো যদি মনে হয় যে সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি, তাহলে, বর্তমানে আপনি যে কাজগুলো করছেন, সেগুলো নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি এখন যা জানেন, কাজটা শুরু করার আগেই যদি তা জানতে পারতেন তাহলে কি কাজটা করতেন? তা যেকোনো কিছু হতে পারে। উচ্চশিক্ষা, চাকরি, সম্পর্ক… যেকোনো কিছু। আপনার প্রশ্নের উত্তর যদি না হয়, তবে আপনার সেই কাজটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ছেড়ে দেয়া উচিত।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মনিরা আক্তার লাবনী।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Personal Finance Course by Nafeez Al Tarik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন