জেনে নাও ক্লাসরুমের ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব

September 19, 2017 ...

মিস ফারিহা ক্লাসরুমে ঢুকে বেশ একটু বিরক্তবোধ করলেন। তার একটি কারণ সম্ভবত আজকে সকালের কফিটা তেমন একটা জমে নি, আর অন্য কারণ হচ্ছে ক্লাসরুমের অবস্থা যুদ্ধ-পরবর্তী কুরুক্ষেত্র। আজকে তার দশম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষিকা হিসেবে প্রথম দিন।

ক্লাসের দিকে একবার তাকিয়ে তিনি মোটামুটি আতংকিত হলেন, এতগুলো স্টুডেন্টকে আসন্ন এক বছর কীভাবে সামলানো যাবে, বিশেষত যখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তিনি ক্লাসরুমে ঢোকার পরেও পাঁচজন স্টুডেন্ট ডেস্কের উপরে বসে আছে, একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের দিকে কাগজ পাকিয়ে ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করছে কিন্তু নিশানা ভালো না, একবারও লাগছে না, অন্যদিকে কয়েকজন ছেলেমেয়ে চেয়ার নিয়ে গোল হয়ে বসে কী যেন আলোচনা করছে!

মিস ফারিহা গলা খাঁকারি দিলেন।

কয়েকজন তার উপস্থিতি টের পেয়ে সোজা হয়ে বসলো। মিস ফারিহা দ্বিতীয়বার গলা খাঁকারি দিলেন। এবার মোটামুটি সবাই সোজা হয়ে যে যার জায়গায় বসলো।

মিস ফারিহা হাতের বইখাতা সামনের ডেস্কে রাখতে রাখতে বললেন, “আজকে আমরা খুবই ইন্টারেস্টিং এবং ইম্পর্ট্যান্ট একটা টপিক পড়বো। এইটা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনবা কারণ আগামী ক্লাসে এইটার উপরে একটা পরীক্ষা হবে।”

ক্লাসের ছেলেমেয়েরা একটু অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো, এ কেমন টিচার? প্রথম দিন এসেই নাম নাই পরিচয় নাই পড়ানো শুরু করে দিচ্ছেন এমনকি পরের ক্লাসে পরীক্ষাও নিতে চাইছেন?

behavioral tips, life hacks, life tips

মিস ফারিহা তার স্টুডেন্টদের চেহারার দিকে তাকিয়ে স্পষ্টই বুঝতে পারলেন তারা কী ভাবছে। কিন্তু তিনি কোনোরকম ইন্ট্রোডাকশনের ভেতর দিয়ে গেলেন না। সরাসরি বোর্ডের দিকে ফিরে মার্কার দিয়ে লিখলেন, “ক্লাসরুমের আদবকেতা”।

স্টুডেন্টরা আরেকবার অবাক হলো, তাদের রুটিন অনুযায়ী ফারিহা মিসের বাংলা পড়ানোর কথা কিন্তু ক্লাস টেনের বাংলা বইয়ে “ক্লাসরুমের আদবকেতা” নামের কোন গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ নাই। কেউ কেউ ব্যাপারটায় বেশ মজা পেয়েছে মনে হলো।

মিস ফারিহা বললেন, “কী জিনিস পড়াবো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। তোমাদের শ্রেণি শিক্ষিকা হিসেবে এটাকে আমি আমার দায়িত্ব মনে করি,  ক্লাসরুমে তোমরা কেমন আচরণ করবে সেটা সম্পর্কে তোমাদের একটা ধারণা  দেয়া। ক্লাসরুম বলতে শুধু আমার ক্লাসে না, সব শিক্ষকের ক্লাসেই আমরা যাতে চেষ্টা করি এগুলো অনুসরণ করার।”

মিস ফারিহা এতটুকু বলার পরেই দরজার কাছ থেকে কারো কন্ঠস্বর শোনা গেলো, “মিস আসতে পারি?”

সময়মত ক্লাসে আসা…

মিস ফারিহা ঘড়ির দিকে তাকালেন, দশটা বেজে পাঁচ। যে মেয়েটা এসেছে সে পাঁচ মিনিট লেইট। মিস ফারিহা ক্লাসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “রুল নাম্বার ওয়ান, দশটার ক্লাসে দশটায়ই আসতে হবে, দশটা এক বা দুইয়ে না। এই তুমি, ভিতরে আসো। দেরি হলো কেন?”

মেয়েটা ভয়ে ভয়ে ভিতরে এসে বললো, “ম্যাডাম কোন রিকশা পাচ্ছিলাম না। কেউ আসতে চায় না।”

মিস ফারিহা মেয়েটার ভীত চেহারার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন, “পরেরবার রিকশা আসতে না চাইলে ফোন করে আমাকে ধরিয়ে দিবা। আমি বলে দিবো। যাও নিজের সিটে বসো।”

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৪

ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:

  • প্রতি ক্লাসে ২ জন শিক্ষক পড়াবেন; একজন ক্লাস নিবেন, অন্যজন সমস্যার সমাধান দিবেন
  • দেশের যেকোনো জায়গায় বসে দেশসেরা শিক্ষকদের কাছ থেকে অনলাইনে সর্বোচ্চ মানের পড়ালেখার সুযোগ
  • লাইভ ক্লাসের ভেতরেই পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধা
  •  

    তারপর ক্লাসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এরকম অনেক হবে যে ফেইসবুক দেখতে দেখতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছে, আগেরদিন দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত হয়ে পরেরদিন সকালে উঠতে পারো নাই, অমুক বন্ধুর মনের দুঃখের কথা শুনতে গিয়ে রাত তিনটা পার হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। দুই একদিন ক্লাসে লেইট হতেই পারে সমস্যা নাই, কিন্তু এটাকে যেন আমরা নিয়মিত অভ্যাস না বানিয়ে ফেলি।”

    বলতে বলতে হঠাৎ ক্লাসের কোন এক কোণা থেকে “পিওর লাভ” রিংটোন শোনা গেলো। পেছনের দিকে একটা ছেলে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ হাতিয়ে নিজের ফোনটা বের করে বন্ধ করে ফেললো।

    মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখা…

    মিস ফারিহা তার স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “গানটা সুন্দর না?”

    অর্ধেক স্টুডেন্ট হেসে ফেললো, যার ফোন বেজেছিল সেও মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

    behavioral tips, life hacks, life tips

    মিস ফারিহা বললেন, “যেদিন পিকনিক হবে সেদিন এরকম আরও অনেক সুন্দর সুন্দর গান বাজানো হবে, হাই ভলিউমে। কিন্তু ক্লাসরুমে যেন আমরা আমাদের ফোনগুলোকে সাইলেন্ট রাখি। ক্লাসে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করবো, হৈমন্তী গল্পের আলোচনার সময় যদি পিওর লাভ বেজে ওঠে তাহলে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই উদ্ভট হয়ে যাবে?”

    মাঝের সারি থেকে একটা ছেলে হাত তুললো।

    ক্লাসে আলোচনায় অংশ নেয়া…

    মিস ফারিহা বললেন, “এক্সেলেন্ট। ক্লাসে কেউ কিছু বলতে চাইলে এভাবে হাত তুলবে। ক্লাসটা কেবল আমার কথা বলার জায়গা না, এখানে তোমাদেরও কথা বলতে হবে, অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অবশ্যই অযাচিত কোন মন্তব্য আমরা করবো না। বোঝা গেছে ব্যাপারটা? হ্যাঁ তুমি বলো কী বলছিলে।”

    শিক্ষককে যথার্থ সম্বোধন করা…

    যে ছেলেটা হাত তুলেছিলো সে বললো, “মিস আপনাকে আমরা কী বলে সম্বোধন করলে আপনার ভালো লাগবে?”

    মিস ফারিহা হেসে বললেন, “আমাকে মিস বললেই চলবে। কিন্তু অনেক শিক্ষক আছেন যারা তাঁদের টাইটেল ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, যেমন তোমাদের বায়োলজি শিক্ষক সুপ্রকাশ চৌধুরী স্যার, উনাকে ‘ডঃ চৌধুরী’ বললে উনি যারপরনাই খুশি হন।

    তারপর ইংরেজির টিচার শিউলি ম্যাডাম ‘ম্যাডাম’ শুনতেই পছন্দ করেন, উনাকে মিস বলা যাবে না। এগুলো তো আমি বলে দিলাম, কিন্তু যাদের ব্যাপারে জানা নেই তাঁদের স্যার বা ম্যাডাম বলাটাই নিরাপদ!”

    সবাই মাথা নাড়লে মিস ফারিহা বলতে লাগলেন, “আরও কয়েকটা পয়েন্ট বলে দেই তোমাদেরকে।”

    English Writing for Students

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • Paragraph, Essay ইত্যাদি ইংরেজিতে লেখার উপায়।
  • ইংরেজি লেখার দক্ষতা বাড়ানোর এবং ভুল কমানোর সকল টিপস ও ট্রিকস।
  • বোর্ড পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক ইংরেজি পরীক্ষার রিটেন অংশে ভালো করবার উপায়।
  •  

    ক্লাসে খাবার বা পানীয় নয়…

    “ক্লাসরুমে খাবার খাওয়াটা খারাপ এটিকেটের মধ্যে পড়ে। যেমন ঐযে পেছনের বেঞ্চে তুমি চিউয়িংগাম চিবাচ্ছো, এটাও করা ঠিক না। ক্লাসে বড়জোর পানি খাওয়া যেতে পারে, উপরের ক্লাসে যখন উঠবে তখন অনেক প্রফেসররা তাঁদের দুই ঘণ্টা লম্বা ক্লাসে কফি বা সোডা খাওয়ার পারমিশন দিতে পারেন। পারমিশন দিলে খেতে কোন বাধা নেই কিন্তু এই পর্যায়ের ক্লাসে খাওয়াদাওয়া করাকে আমি নিরুৎসাহিত করে থাকি। চল্লিশ মিনিটের ক্লাস, নিতান্তই খিদে লাগলে টিচার বেরিয়ে যাবার পরে খাওয়া উচিত।”

    ক্লাসে ফিসফিস নয়…

    “ক্লাসে সাইড টক করা যাবে না। দুই সারি দূরে বসা বন্ধুকে চিরকুট পাস করাও নিষেধ। হ্যাঁ তবে জীবন-মরণ সমস্যা হলে বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চিরকুট পাঠানোর ব্যাপারটা যাতে আমার চোখে না পড়ে সেই বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে। ক্লাসে কিছু বলতে হলে টিচারকে বলবে, পাশের বন্ধুর সাথে কথাগুলো ক্লাস শেষ করা পর্যন্ত মুলতবি রাখাই উত্তম।”

    behavioral tips, life hacks, life tips

    সম্পূর্ণ ক্লাসে উপস্থিত থাকা…

    “ক্লাস অর্ধেক করে ‘মিস বাথরুম পেয়েছে’ বলে বের হয়ে গেলাম তো গেলাম আর ফেরত আসলাম না- এটা কোন কাজের কথা নয়। এটা তোমাদের ভালোর জন্যেই বলছি, কারণ পরে কী পড়ানো হয়েছে ধরতে পারবে না। হ্যাঁ তবে কারোর কোন কাজে যাবার দরকার থাকলে সেটা টিচারকে আগে থেকে জানিয়ে রাখা ভালো এবং সেক্ষেত্রে কোন গোলমাল না করে চুপচাপ পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়াই ভালো।

    যতদূর সম্ভব মনোযোগী হবার চেষ্টা করা উচিত

    আর হ্যাঁ, কেউ যদি কোন কারণে কোনদিন অনুপস্থিত থাকো সেটাও আগে থেকে জানিয়ে রাখা উচিত, আর তা সম্ভব না হলে পরেরদিন এসে শিক্ষকের সাথে কথা বলে কী কী পড়ানো হয়েছে জেনে নেয়া উচিত।”


    13th June Blog Coverআরো পড়ুন: ক্লাসে মনোযোগী হবার ১০টি সহজ উপায়


    ক্লাসে মনোযোগী হওয়া এবং ভদ্রতা রক্ষা করা…

    “সব ক্লাস একরকম ভালো লাগবে না লাগার কথাও না, তবে যতদূর সম্ভব মনোযোগী হবার চেষ্টা করা উচিত। কোন কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করা উচিত। পেন্সিল, কলম, খাতা, বই যার যারটা নিয়ে আসা উচিত যাতে ক্লাসের সময় একে ওকে গুঁতিয়ে বিরক্ত না করা লাগে। যখন তোমাদের গ্রুপ ওয়ার্ক করতে দেয়া হবে তখন সবাই সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

    ক্লাসরুমে টিচার যখনি একটু অন্যদিকে তাকালেন অমনি অমুককে একটু ভেঙ্গিয়ে দিলাম- ব্যাপারটা খুবই মজার শোনাচ্ছে কিন্তু এটা যাতে শিক্ষকের বিরক্তির পর্যায়ে না চলে যায়। আর আরেকটা কথা, ক্লাসের সময় শেষ হয়েছে – এটা আকারে ইঙ্গিতে উসখুস করে টিচারকে বুঝাবার কোন দরকার নাই, টিচার জানেন।”

    মিস ফারিহা ঘড়ির দিকে তাকালেন, তার ক্লাসের সময় দুই মিনিট বাকি আছে। তিনি বললেন, “পরের ক্লাসে আমি দেখবো আজকে যা যা বলেছি কে কে মনে রেখেছো আর কে কে রাখোনি।” এটুকু বলে তিনি সেই মেয়েটার দিকে ফিরলেন যে তার বান্ধবীর দিকে কাগজ পাকিয়ে ছুঁড়ে মারছিল, “এই যে তুমি। হাতের কাগজটা নিয়ে এদিকে আসো।”

    মেয়েটা ভয়ে ভয়ে কাগজ নিয়ে উঠে আসলো। মিস ফারিহা কাগজটা মেয়েটার হাত থেকে নিয়ে বললেন, “তুমি যেভাবে ছুঁড়ে মারছিলে তাতে ওর গায়ে লাগার কোন সম্ভাবনাই ছিলো না। এই যে দেখো হাতটা বাঁকিয়ে এভাবে মারবে, “মিস ফারিহা দেখিয়ে দিলেন কাগজ কীভাবে ছুঁড়ে মারতে হবে।

    কাগজটা সাঁই করে গিয়ে অন্য মেয়েটার মাথায় লাগলো, আর মিস ফারিহার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা হেসে দিলো, সাথে পুরো ক্লাস। মিস ফারিহা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কী?”

    মেয়েটা বললো, “সায়মা, মিস।”

    “পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, সায়মা,”। মিস ফারিহা তার ক্লাসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার নাম ফারিহা ইয়াসমিন, আমি তোমাদের শ্রেণি শিক্ষিকা এবং আমি তোমাদেরকে বাংলা পড়ানোর চেষ্টা করবো।”


    ১০ মিনিট স্কুলের অনলাইন ব্যাচগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করো:



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com

    ০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/

    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন