তোমার ফ্রেন্ড সার্কেলে এমন দুই-এক জন বন্ধু আছে না যারা সব সময় যে কোনো কাজে লেট করে? ক্লাসরুমে, কোচিং-এ কিংবা এক সাথে সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসেছো সেখানেও দেরি করে হাজির হবে সে। অনেকে তো দেখা যায় পরীক্ষার হলেও গুনে গুনে ৪-৫মিনিট আগে পৌঁছায়। দেরি করে কোনো জায়গায় উপস্থিত হওয়া মোটেও ভালো কোনো কাজ না। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যার কিনা দেরি করে এই মানুষটা তুমিও হতে পারো। আর যদি তুমি তাদের দলে হও যে কিনা সব সময় সব জায়গায় দেরি করে হাজির হও তাহলে এই লেখাটা তোমার জন্যেই।
দেরি করে উপস্থিত হওয়ার সব থেকে খারাপ দিক হলো কাউকে তোমার জন্যে অপেক্ষা করানো। তুমি যদি একটা মিটিংয়ে দেরি করে উপস্থিত হও তাহলে এর মানে হলো তুমি মিটিংয়ে আগে উপস্থিত হওয়া সবার সময়কে অসম্মান করছো। কারণ যারা আগে উপস্থিত হয়েছে তারাও নিশ্চয়ই সকাল সকাল উঠে অনেক কষ্ট করে টাইম মেইনটেইন করেছে। তাহলে একবার চিন্তা করেই দেখো, অন্যের সময়ের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশের কোনো অধিকার তোমার আছে কি? আর দেরি করে উপস্থিত হলে তোমার কিন্তু কোনো লাভ নেই। ক্লাসে দেরি করলে মাঝখান থেকে পড়া শুরু করলে নিজেই অনেক কিছু বুঝবে না আর কোনো ইন্টারভিউয়ের সময় দেরি করলে তো কথাই নেই। তোমার সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে গেলো!
তাই দেরি না করে কিভাবে যে কোনো জায়গায় উপস্থিত হওয়া যায় তা দেরি না করে জেনে নিতে পারো এখনই!
১) রুটিন তৈরি করো
যদি সত্যিই কাল থেকে আর দেরি করে কোনো দরজার সামনে দাঁড়াতে না চাও তাহলে এখনই তোমার প্রথম পদক্ষেপ নেয়া উচিত একটা রুটিন তৈরির মাধ্যমে। এটা মূলত গতানুগতিক টু-ডু লিস্টের মতন না। এই রুটিনে সর্বপ্রথম তোমার কোন কাজ করতে কত সময় লাগে তা নোট করবে। যেমন, গোসল করতে, খাওয়া দাওয়া করতে, বাহিরে বের হওয়ার জন্যে রেডি হতে ইত্যাদি ক্যাল্কুলেশন যা তুমি আগে কখনোই করোনি।
তারপরে রুটিনে যে কাজগুলো করার জন্যে late হলে চলবেই না সেগুলো লিখে ফেলো। আর সেই কাজ গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আগে থেকেই গুনে রাখা সময়ের কথা মাথায় রেখে প্রিপারেশন নিতে থাকো। এতে করে তুমি ঠিক সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে।
২) আগের রাতে গুছিয়ে রাখো সব কিছু
অনেক সময় এমন হয়না সকালে এক্সাম রাতে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছো। সকালে গোসল করে দেখলে জামা কাপড় কিছুই আয়রন করে রাখো নি। এখন আবার জামা কাপড় আয়রন করতে যেয়ে অনেক সময় নষ্ট হবে। আবার প্রবেশপত্র, পেন্সিল, রাবার, কলম, ক্যাল্কুলেটর সহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রগুলো আগেই গুছিয়ে না রাখলে সকালে দেখা যাবে একটা খুঁজে পাচ্ছো তো আরেকটা খুঁজে পাচ্ছো না।
আবার অনেক সময় দেখা যায় প্রেজেন্টেশন কিংবা মিটিংয়ের জন্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা কিংবা কোনো মেইল পাঠানোর দরকার হলে তা সকালের জন্যে রেখে না দিয়ে রাতেই সেরে ফেলো। অলসতার কারণের আমাদের মাথায় খুব দ্রুত চলে আসে যে এখন না সকালে করে নিবো কিন্তু এই অলসতার কারণের অনেক ক্ষেত্রে তুমি late হয়ে যাও। তাই,সকালে ক্লাস, পরীক্ষা, ইন্টার্ভিউ অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং যাই থাকুক না কেনো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখো আর কাজকর্ম আগেই করে ফেলো।
বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে এসেছি এসেছি। বাসের জন্যে পাঁচ-সাত মিনিট অপেক্ষা করার পর বাস ঠিকই এলো কিন্তু হঠাৎ আমার খেয়াল হলো মানিব্যাগটা ফেলে এসেছি বাসাতেই। মহাবিপদ! টাকা ছাড়া তো আর বাসে করে কলেজে যেতে পারবো না। আবার বাসা পর্যন্ত ফেরত আসা লাগলো। এমন হয়েছে আমার নিজের সাথেই। এমন অভিজ্ঞতা কারো জন্যেই সুখের নয়। অনেকটা পথ চলে এসে আবার বাসার উদ্দেশ্যে পিছে ফিরে যাওয়া আসলেই অনেক বিরক্তিকর একটা বিষয়। আর এর কারণে late হলে সারাদিন মেজাজটা খিটখিটে হয়ে থাকে।
আবার অনেক সময় এমন তো অনেক সময়ই হয় যে মানিব্যাগ টেবিলের উপর তো চাবি বালিশের নিচে খুঁজতে খুঁজতে একগাদা সময় নষ্ট। আর তুমি চাইলেই কিন্তু বাসায় একটা ড্রয়ারকে ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারো। এমন একটা ড্রয়ার যেখানে খুটিনাটি জিনিসপত্র যেমন, মানিব্যাগ, বাসার চাবি, সাইকেলের চাবি, হেডফোন, হাত ঘড়ি ইত্যাদি জিনিস যেগুলো বাসা থেকে বের হওয়ার আগে নিয়ে বের হবে তা গুছিয়ে রাখতে পারো। এতে করে বের হওয়ার আগে একবার ড্রয়ার খুললেই সবকিছু পেয়ে যাবে একই সাথে হাতের কাছে।
আর বাসা থেকে বের হবার আগে শেষবারের মতন প্যান্টের পকেট চেক করতে ভুলো না। বের হয়ে অর্ধেক পথ থেকে যেন ফিরে আসতে না হয়।
৪) ট্রাফিক জ্যামের কথা চিন্তা করে সময় নির্ধারণ করো
আমাদের দেশের ট্রাফিক জ্যাম সম্পর্কে তো নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। তুমি হয়তো বা দেরি করে কোথাও উপস্থিত হলে সব থেকে বেশি যে অজুহাত দিয়েছো তা হলো ট্রাফিক জ্যাম। আমাদের দেশের ট্রাফিক জ্যাম শুধু এই late করে “জ্যাম ছিলো” অজুহাত দেয়া মানুষদের জন্যেই আশীর্বাদ এর মতন কাজ করে।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ট্রাফিক জ্যামের কথা চিন্তা করে আগেভাগে বের হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে অবশ্যই অনুমান করা সময়ের সাথে আধাঘন্টা বেশি সময় হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত। তোমার যদি আইডিয়া থাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগে তাহলে তার সাথে আরও সময় যোগ করেই ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করো। এতে করে আগে পৌঁছে গেলেও কোনো ক্ষতি নেই।
৫) বিকল্প পথ সম্পর্কে ধারণা রাখো
তুমি যদি কোনো জায়গায় দেরিতে উপস্থিত হতে না চাও তাহলে সব প্ল্যানিং এর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা হলো বিকল্প পথ হাতে রাখা। আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং রাস্তাঘাট উভয়ই ভয়ংকর রকমের আনপ্রেডিক্টেবল। তুমি কখনই শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারো না তুমি অবশ্যই সময় মতো পৌঁছাবে। রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চলার জন্যে রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে, হঠাৎ বৃষ্টির জন্যে প্রচণ্ড যানজটের সম্মুখীন হতে পারো, অবরোধ কিংবা হরতালের জন্যে রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে ইত্যাদি যে কোনো সমস্যা তোমার সামনে আসতেই পারে। আর এমন মুহূর্তে সময় মতন গন্তব্যে পৌঁছাতে তোমার বিকল্প পথ সম্পর্কে আগেই প্ল্যান করে রাখতে হবে।
চিন্তা করে রাখো বৃষ্টি হলে অন্য রুটে যাবো যেখানে পানি উঠবে না কিংবা অবরোধ হয়ে রাস্তা বন্ধ থাকলে সিএনজি বা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে বাইক ডাকার ব্যবস্থা রাখবো। এতে করে তুমি যতই সমস্যায় পড় না কেনো সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো তোমার পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৬) আশেপাশে ঘড়ি রাখো
হয়তো তুমি পড়তে বসেছো কিন্তু পড়ার পরে একটা কাজে বাহিরে যেতে হবে। এমন অনেক সময়ই হয় কখন যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে টেরই পাওয়া যায় না। তাই দেয়ালে, হাতে, পড়ার কিংবা কাজ করার টেবিলে ঘড়ি রেখে দাও। এতে করে সময়ের দিকে নজর রাখতে সুবিধা হবে।
সব থেকে ভালো হয় যদি একটা ফোনে একটা অ্যালার্ম দিয়ে রাখো তাহলে কাজের আগেই অ্যালার্ম বেজে উঠলে তুমি চটপট রেডি হয়ে বের হয়ে যেতে পারবে সহজেই।
৭) ঘড়ির সময় পরিবর্তন করে ফাস্ট করে রাখো
Late করা এড়ানোর জন্যে ঘড়ি ফাস্ট করে রাখা একটি প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি। তোমার সব ঘড়ি গুলোকে যদি তুমি ফাস্ট করে রাখো তাহলে তুমি তোমার ঘড়ির অনুযায়ী কোথাও পৌঁছালে দেরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঘড়ি ফাস্ট করে রাখার ক্ষেত্রে সাত মিনিট অথবা তেরো মিনিট ফাস্ট করা সব থেকে ভালো। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই তোমার ব্রেইন জিজ্ঞেস “আমার ঘড়িতে যা বাজে সেটা তো অরজিনাল সময় না! তাহলে আসল সময় কতো” তুমি যদি পাঁচ কিংবা দশ মিনিট ফাস্ট করে রাখো ব্রেইন দ্রুত গননা করে অরজিনাল সময় বের করে ফেলবে। কিন্তু তুমি সাত কিংবা তেরো মিনিট ফাস্ট করলে সহজেই চট করে গণনা করা যাবে না। ফলে তুমি তোমার ঘড়ির টাইমেই অনেক সময় সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করবে।
৮) প্রতিজ্ঞা করো “অন্তত ১৫মিনিট আগে পৌঁছাবো যেকোনো জায়গায়!”
উপরের এতোগুলো কাজে কোনো লাভই হবে না যদি তুমি নিজে থেকে প্রতিজ্ঞা না করো Late না করার। নিজেকে একজন সময়নিষ্ঠ মানুষে পরিণত করতে হলে সব থেকে বেশি প্রয়োজন এই ইচ্ছাশক্তির আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার। পরীক্ষার সময় প্রবেশপত্রে এমন একটা কথা লেখা থাকে “পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে” অনেকটা এমনই একটা বিষয়। সব সময় আগে যাওয়ার চিন্তা মাথায় রাখো। মনে রেখো আগে কোনো কাজের জন্যে উপস্থিত থাকলে তোমার কোনো ক্ষতিই নেই।
সবশেষে শুধু এটুকুই বলবো নিজের সময়ের কথা না ভেবে হোক অন্যের সময়ের কথা চিন্তা করে হলেও নিজেকে সময়নিষ্ঠ মানুষে পরিণত করো। সময়ানুবর্তীতা একটি অসাধারণ গুণ আর সকল সফল ব্যক্তির মতন এই অভ্যাস আয়ত্তে আনতে পারলে আশা করি তুমিও পরিণত হবে একজন সফল সময়নিষ্ঠ ব্যক্তিতে। তোমার জন্যে শুভকামনা।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন