বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে হেভি খানাপিনা শেষে, বাইরে এসে, মানিব্যাগ দেখার পর নিজের কপাল নিজেই একটা ইলেকট্রিক পোলের সাথে ঠুসে দিতে ইচ্ছে হলো মিতুলের! এতগুলো টাকা বেরিয়ে গেলো পকেট থেকে, অথচ গতমাসে ভেবেছিলো কিছু টাকা জমিয়ে সামনের বইমেলা থেকে ফাউন্ডেশন সিরিজের বইগুলো এবার সে সেট ধরে কিনে ফেলবে।
আপনার সাথে কি এমন হয়েছে কখনো? কিছু একটা কিনবেন বা ট্যুর দেবেন বলে টাকা সঞ্চয় করতে চাইছেন, কিন্তু “কত টাকা কত দিকে চইলা যাচ্ছে”? তাহলে এই লেখাটা আপনারই জন্য। এই লেখায় আমি প্রথমত আলোচনা করবো সঞ্চয় কি, আলোচনায় আসবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্কের জায়গাগুলো। আর একদম শেষে টাকা সঞ্চয় করার উপায় হিসেবে ৭টি টিপস যুক্ত করে দেয়া হবে, যা আপনাকে টাকা জমাতে সাহায্য করতে পারে।
সঞ্চয় কি?
দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা বাৎসরিক- যে কোন প্রকারের উপার্জন থেকে খরচ করবার পর বাকি যে অংশটুকু অবশিষ্ট থাকে, তাকেই সঞ্চয় বলা হয়। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি বা পরিবারের সকল রকমের খরচ বহন (যেমন বাড়ি ভাড়া, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন ইত্যাদি), ঋণ পরিশোধের পর মোট যে টাকাটা বাকি থাকে, ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া হয়, সেটাই সঞ্চয়। মানুষ নানা ভাবে সঞ্চয় করে থাকে। কেউ সরাসরি টাকা জমায়, সেটা ব্যাংকে বা নিজের কাছেই রাখে, কেউ আবার ঐ টাকার সমতুল্য সঞ্চয়পত্র কেনে। এই রকম সঞ্চয়ে কোনো ঝুঁকি তো থাকেই না, বরং পরবর্তী সময়ে এর দ্বারা কিছুটা লাভও করা যায়, যদিও তার পরিমান অল্প। সঞ্চয়ের বিপরীত হলো বিনিয়োগ, যার দ্বারা টাকা জমিয়ে না রেখে সেটা কোন একটা ব্যবসা বা অন্য কোথাও লাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করাকে বোঝায়।
Personal Finance Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য
সঞ্চয় কি তা নিয়ে তো আলোচনা হলো, এবার তাহলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। সাধারণভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য হিসেবে বলা যায় যে- সঞ্চয় মানে হাতে থাকা অবশিষ্ট টাকাটা জমিয়ে রাখা, অন্যদিকে বিনিয়োগ মানে সেই টাকাটা কোন একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, কিংবা অন্য কোথাও অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য কাজে লাগানো।
আলোচ্য | সঞ্চয় | বিনিয়োগ |
সঙ্গা | উপার্জিত অর্থ হতে প্রয়োজনীয় অংশ ব্যয় করার পর অবশিষ্ট অংশকে সঞ্চয় বলে | আর এই সঞ্চিত অর্থ যখন অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে কোন কাজে ব্যয় করা হয় তখন তাকে বিনিয়োগ বলে |
ধরণ | সেভিংস একাউন্ট, বীমা | স্টক, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড |
ঝুঁকি | সঞ্চয়ে ঝুঁকি কম | বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, আপনি কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে সেখান থেকে লাভ তো দূর, উলটো ব্যপক লসের মধ্যে পড়তে পারেন |
লাভ | যেহেতু ঝুঁকি কম, তাই লাভও কম | বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, তাই লাভও বেশি। |
সময় | স্বল্পমেয়াদী | দীর্ঘমেয়াদী |
তারল্য | সঞ্চয়ের টাকা আপনি প্রয়োজনের মুহুর্তে হাতের কাছেই পাবেন। যেমন প্রাইজ বন্ড। প্রয়োজন হলো ব্যাংক খোলা থাকা সাপেক্ষে আপনি টাকাটা ক্যাশ করে নিতে পারবেন। | তারল্যের মান কম। যেহেতু আপনি টাকাটা কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন, কিংবা জমি কিনেছেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনের মুহুর্তেই টাকাটা আপনি হাতে পাবেন না, সেজন্য আপনার ব্যবসায় লাভ করতে হবে, জমি বিক্রি করতে হবে। এগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যপার। |
শ্রম | সঞ্চয় করতে হলে শ্রমের কোন প্রয়োজন নেই | শ্রমের প্রয়োজন আছে। বিনিয়োগকৃত ব্যবসা থেকে লাভের টাকা তুলতে হলে দক্ষতা ও শ্রম আবশ্যক। |
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সম্পর্ক
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সম্পর্ক আছে বেশ কিছু। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, এই দুইয়ের মাধ্যমেই টাকা জমানো যায়। Retire Inspired বইয়ের লেখক ক্রিস হোগানের মতে, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ দুটোই হলো ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বর্তমানে কিছু টাকা জমানোর পন্থা। দুটো বিষয়ই টাকা জমানোর ক্ষেত্রে কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল – সঞ্চয়কারীর জন্য আছে ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট, বিনিয়োগকারীর জন্য আছে কোন প্রতিষ্ঠানে টাকা খাটানোর সুযোগ। সঞ্চয়কারীরা ভবিষ্যতের কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় খরচার জন্য পুরো টাকা বর্তমানে ভোগ না করে জমিয়ে রাখেন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারী জানেন যে টাকা বিনিয়োগ করলে একটা সময় তার বিপুল লাভ নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। হোগান বিনিয়োগ বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করছেন টাকাকে ‘স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া’ হিসেবে, তিনি লেখেন, “বিনিয়োগ হলো আপনার স্বপ্ন পূরণ ও ভবিষ্যতের জন্য টাকা বাড়ানোর একটি পন্থা।”
সঞ্চয় কেন গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস?
সঞ্চয় সকলের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ- মানুষের উপার্জন, ব্যয়, জীবনের নানা শখ পূরণে এর ভূমিকা রয়েছে। এই অংশে আমরা এমন কিছু কারণ দেখবো যা আপনাকে সঞ্চয়ী হয়ে উঠতে উদ্ভুদ্ধ করবে।
-
মানসিক শান্তি
আপনি যখন জানবেন যে হুট করে কোন সমস্যা হলেও আপনি সেটা মোকাবেলা করতে পারবেন, অন্তত টাকার কোন সমস্যা হবে না- এই ব্যাপারটা একটা মানসিক শান্তি প্রদান করে। আপনি তখনই চাপমুক্ত থাকবেন যখন আপনার কিছুটা সঞ্চয় থাকবে, যখন আপনি জানবেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেও আপনি তা সামাল দিতে পারবেন।
-
সুন্দর ভবিষ্যৎ-এর প্রতিশ্রুতি
ধরা যাক আপনি ভবিষ্যতে একটা বাড়ি কিনতে চান, মেরুন রঙা একটা গাড়ি কিনতে চান, কিংবা অবসরের পর একটু জমি কিনতে চান- এই সকল কিছু করতে চাইলেও আপনার সঞ্চয়ী হওয়া জরুরী। সঞ্চয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ-কে নিশ্চিন্ত করতে পারবেন, পরিপূর্ণ একটা জীবনকে যাপন করতে পারবেন।
-
সন্তানদের পড়াশোনা
বেশ বড়সড় একটা সঞ্চয় হাতে থাকলে আপনি আপনার সন্তানদের জন্য পৃথীবির যে কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন, তাদের স্বপ্ন পূরণে সঙ্গী হতে পারবেন।
-
শর্টটার্ম লক্ষ্যগুলো পূরণ
সঞ্চয় যে কেবল দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করে এমনটাও না, স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলোও পূরণ করে। এই যেমন আমি যে ল্যাপটপে এখন এই লেখাটা লিখছি, সেটাও কিন্তু টিউশনির টাকা জমিয়ে কেনা। আমার এক বন্ধু এডমিশন সিজনে টিউশনি করে টাকা জমায়, পরে বছরের বাকিদিনগুলো দেশে বিদেশে ট্যুর দিয়ে বেড়ায়। সঞ্চয়ী হলে এমন সব ছোট ছোট লক্ষ্য আপনি সহজেই পূরণ করতে পারবেন।
-
জরুরী প্রয়োজন মেটানো
বলা হয় যে “বিপদের কোন সময়-অসময় নাই”, কথাটা একদম সত্য। আপনার হাতে জমানো কিছু টাকা থাকলে পরিবারের, কিংবা নিজের, অথবা পরিচিত মানুষকে তাদের বিপদে আপনি সাহায্য করতে পারবেন।
সঞ্চয় করার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি
টাকা জমানোর প্রথম বাধা হলো “টাকা জমাবো” এই মানসিকতা থাকার পরেও সব খরচা করে ফেলা! নিচে আমি টাকা সঞ্চয় করার উপায় হিসেবে ৭ টি টিপস নিয়ে আলোচনা করবো, যা মেনে চললে খুব সহজেই আপনি টাকা জমানোর সহজ অথচ কার্যকরী কৌশলটি ধরে ফেলতে পারবেন, যা আপনাকে আপনার স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে সাহায্য করবে।
-
খরচের হিসাব রাখুন
টাকা জমানোর প্রথম ধাপ হলো কত খরচ করলেন তার হিসাব রাখা। সকল প্রকার খরচের হিসাব রাখুন- বন্ধুদের সাথে এক কাপ চা খাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ির ছোটখাট জিনিসপত্র কেনা, ইন্টারনেটের বিল দেয়া- সবকিছু। হিসাব রাখার কাজে চাইলে আপনি কাগজ কলম ব্যবহার করতে পারেন, চাইলে ব্যবহার করতে পারেন স্প্রেডশিট, কিংবা ফোনে যে কোন এপস, যেমন Wallet। মাসের সকল খরচের হিসাব যখন হাতে পেয়ে যাবেন, তখন সেগুলোকে ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফেলুন।
-
আপনার বাজেটে ‘সঞ্চয়’ নামে একটা আলাদা ক্যাটাগরি তৈরী করুন
এখন আপনি জানেন যে আপনার কোন কোন খাতে খরচ হচ্ছে, এবার আপনি একটা বাজেট তৈরি করতে পারবেন। বাজেট তৈরির সময় খেয়াল রাখবেন যেন তা আপনার উপার্জনের চেয়ে বেশি হয়ে না যায়। এমন সব খরচাগুলি আলাদা করে ফেলুন যা প্রতিমাসে প্রয়োজন হয় না, যেমন প্রতিমাসেই আপনার বন্ধুর জন্মদিন থাকবে না, প্রতিমাসে আপনাকে ফোনের ব্যাক কাভার কিনতে হয় না। বাজেটে ‘সঞ্চয়’ নাম লেখা একটা ক্যাটাগরি করুন যেখানে আপনি কত টাকা এই মাসে সঞ্চয় করতে পারবেন তার একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে লিখে ফেলুন।
-
খরচ কমানোর উপায় খুঁজুন
যে পরিমান সঞ্চয় করতে চেয়েছিলেন, পরের মাসে যদি দেখেন সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, তাহলে মূল বাজেট থেকে কিছু খরচ কমানোর উপায় খুঁজুন।
কৌশল | ব্যাখ্যা |
বিনোদনে খরচ কমিয়ে দিন | প্রতিমাসে ‘বহু ব্যয় করি, বহু ক্রোশ ঘুরে’ দূরে যাওয়ার দরকার কী? বরং বাড়ির কাছে ঘুরে বেড়ান। দুই বা তিন মাস গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ট্যুরে যান, খরচও কমবে, সঞ্চয়ও বাড়বে। |
অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশন বাদ দিন | এমাজন, নেটফ্লিক্স, হৈ চৈ- এতগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশনের কি দরকার? কিছু পেতে হলে তো কিছু ছাড়তে হবে! তাই ভেবে চিন্তে একটা প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশন নিন, বাকিগুলো ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করুন। |
বাইরে না খেয়ে বাসায় রান্না করুন | আমরা যারা মেসে থাকি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা ডর্মিটরিতে থাকি, তাদের প্রায়ই বাইরে খেতে হয়। তবে একটু চেষ্টা করুন বাসায় বসে রান্না করে খেতে, এতে খরচ কিছুটা বাঁচবে। |
কিছু কেনার আগে দুইবার ভাবুন | কিছু কেনার কথা মাথায় আসলে, হুট করে সেটা কিনে ফেলবেন না। কিছুদিন ভাবুন, দেখুন ঐ জিনিসটা কি আপনার আদৌ প্রয়োজন কি না। |
-
সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করুন
এই বিষয়টা নিয়ে কিছুটা কথা ইতোমধ্যেই বলেছি। আগামী তিন বছরে বা পাঁচ বছরে কত টাকা আপনি জমাতে চান তার একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুণ, সে অনুযায়ী টাকা জমাতে শুরু করুন।
-
সঠিক পলিসি বেছে নিন
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সঞ্চয়ের নানা পলিসি রয়েছে, এর মধ্যে আপনার জন্য উপযুক্ত পলিসি বেছে নিন।
স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য | দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য |
এক্ষেত্রে আপনি ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারেন। টাকা সঞ্চয় করলে সেই টাকার উপর ব্যাংক ভেদে ৪-৬% লভ্যাংশও পাবেন। | ১০, ১৫, ৩০ বছরের জন্য সাধারণ মেয়াদী বীমা করতে পারেন। নানা রকমের সাধারণ মেয়াদী বীমা রয়েছে, যেমন শিক্ষা বীমা, বিবাহ বীমা ইত্যাদি। |
এছাড়া DPS আপনার কাজে আসতে পারে। DPS করলে সেখানে আপনি একটি নিদির্ষ্ট সময় পরপর টাকা জমা দিলে, নির্ধারিত সময় শেষে লভ্যাংশ সহ টাকাটা ফেরত পাবেন। | ব্যাংকে একটা FDR খুলতে পারেন। FDR-এ নির্ধারিত সময়ের জন্য একবারই টাকা জমা করতে পারবেন, নির্ধারিত সময় শেষে (পাঁচ বা দশ বছরে) ব্যাংক আপনাকে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেবে। |
-
ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দিন
আমার এক ছোট ভাই কেবল বন্ধুদের সামনে ‘ফ্লেক্স’ নেয়ার জন্য একটা ক্রেডিট কার্ড নিয়েছিলো, পরে মাস শেষে বেচারার সেই কার্ডের টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করতে গিয়েই বাকি টাকা শেষ! তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধান হওয়া জরুরী। ক্যাশ ব্যবহার করুন। মানিব্যাগ থেকে এক্সট্রা টাকা চলে গেলে সেটা গায়ে লাগবে, তখন আপনা থেকেই খরচ কমতে শুরু করবে!
-
নিয়মিত Savings Grow-এর খবর রাখুন
প্রতিমাসে আপনার বাজেট রিভিউ করুন, দেখুন লক্ষ্যমাত্রা অব্দি পৌছাতে কত সময় লাগতে পারে। এটা কেবল আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানোর মোটিভেশন যোগাবে এমন না, আপনি বুঝতে পারবেন অতিরিক্ত টাকাটা কিভাবে কোথায় খরচ হচ্ছে।
টাকা জমানোর এই কৌশলগুলো জানলে আপনি নিজেই নতুন নতুন কৌশল বের করতে পারবেন, আপনার লক্ষ্যমাত্রা পর্যন্ত পৌছাতে পারবেন আরো দ্রুত!
সঞ্চয়পত্র: লাভজনক সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর মানুষের হাতে থাকা টাকা সঠিক ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের হাতে থাকা টাকা সরকারের কাছে জমা হয় যার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল হিসেবে জনগণ লাভবান হয়, দেশের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বাংলাদেশে চার ধরণের সঞ্চয়পত্র আছে,
-
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
মূল্যমান | ১০ টাকা; ৫০ টাকা; ১০০ টাকা; ৫০০ টাকা; ১,০০০ টাকা; ৫,০০০ টাকা; ১০,০০০ টাকা; ২৫,০০০ টাকা; ৫০,০০০ টাকা; ১,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ টাকা; ১০,০০,০০০ টাকা; ২৫,০০,০০০ টাকা। |
মেয়াদ | ৫ (পাঁচ) বছর |
ক্রয়ের সীমা | (ক) ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ একক নামে ৩০ লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে ৬০ লক্ষ;
(খ) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেঃ ঊর্ধ্বসীমা নেই। |
সুবিধা | (ক) নমিনী নিয়োগ করা যায়;
(খ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণের পর সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে নিতে পারেন। |
-
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
মূল্যমান | ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকা। |
মেয়াদ | ৩ (তিন) বছর |
ক্রয়ের সীমা | একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে সর্বোচ্চ ৬০ (ষাট) লক্ষ টাকা। |
সুবিধা | (ক) ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়।
(খ) নমিনী নিয়োগ করা যায়। (গ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত যথারীতি প্রতি তিন (৩)মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন। |
-
পরিবার সঞ্চয়পত্র
মূল্যমান | ১০,০০০ টাকা; ২০,০০০ টাকা; ৫০,০০০ টাকা; ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ টাকা এবং ১০,০০,০০০ টাকা। |
মেয়াদ | ৫ (পাঁচ) বছর |
ক্রয়ের সীমা | (ক) ১৮ (আঠার) ও তদুর্ধ্ব বয়সের যে কোন বাংলাদেশী মহিলা,
(খ) যে কোন বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা)এবং (গ) ৬৫ (পঁয়ষট্টি) ও তদুর্ধ্ব যে কোন বাংলাদেশী (পুরুষ ও মহিলা)নাগরিক। |
সুবিধা | (ক) মাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়।
(খ) নমিনী নিয়োগ করা যায় / পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়। (গ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করেটাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত যথারীতি মাসে মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন। |
-
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
মূল্যমান | ৫০,০০০ টাকা; ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকা। |
মেয়াদ | ৫ (পাঁচ) বছর |
ক্রয়ের সীমা | একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা |
সুবিধা | (ক) ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়
(খ) নমিনী নিয়োগ করা যায়। (গ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণের পর সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে পারেন। |
শেষ কথা
সঞ্চয় নিয়ে ওয়ারেন বাফেটের একটা উক্তি আছে,
“খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা খরচ কর।”
আমার এই লেখায় আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি সঞ্চয় কি, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সম্পর্ক কি, পার্থক্য কি- এই বিষয়গুলো। শেষে আমি যুক্ত করে দিয়েছি টাকা সঞ্চয় করার উপায় সম্পর্কে কয়েকটি টিপস।
তবে কথা হলো, টাকা জমাতে হলে তো আগে সেটা উপার্জন করতে হবে! চাকরির বাজার বর্তমানে প্রতিযোগীতায় মুখর, তাই চাইলেই আপনি ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। তাই টেন মিনিট স্কুল আপনাদের জন্য রেখেছে Data Entry দিয়ে Freelancing, T-shirt Design করে Freelancing এবং Logo Design করে Freelancing কোর্সগুলো। তো, উপার্জনের পর টাকা জমিয়ে কি করবেন বলে ভাবছেন?
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঘরে বসে Spoken English Course (by Munzereen Shahid)
- Microsoft Word Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Excel Premium Course (by Abtahi Iptesam)
- Microsoft PowerPoint Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course (by Tahsan Khan)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন