আপনি কি আঁকা-আঁকি করতে ভালোবাসেন? তাহলে এই ব্লগটা আপনার জন্য! যারা আঁকা-আঁকি করেন, তাদের কাছে অ্যানিমেশন খুবই আকর্ষণীয় একটা বিষয়। কিন্তু অ্যানিমেশন বলতে আমরা বুঝি ওয়াল্ট ডিজনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ছবি হাতে এঁকে একটা সিনের এক ভগ্নাংশ তৈরি করছেন। এখনও কি এভাবেই অ্যানিমেশন তৈরি হয়? আসলেই এনিমেশন কি এতটা কঠিন কোনো কাজ?
নিখুঁত অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করা সবার কাছেই একটা চ্যালেঞ্জিং টাস্কের মতো শোনাতে পারে। আর আপনি যদি এই লাইনে একজন নবাগত হন, তবে আপনার জন্য এটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই ব্লগে আমরা অ্যানিমেশনের একদম বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানবো যা আপনার অ্যানিমেটর হওয়ার যাত্রাটা মসৃণ করে তুলবে।
অ্যানিমেশন কি?
এনিমেশন কি জিনিস সেটা আমরা ইতোমধ্যে কিছুটা বুঝেছি। অ্যানিমেশন বলতে আমরা অনেকেই শুধু কার্টুনই বুঝে থাকি। অ্যানিমেশন ও কার্টুন দুটো একই জিনিস, আবার আলাদাও! অ্যানিমেশন হচ্ছে কার্টুন তৈরির প্রক্রিয়া আর কার্টুন হচ্ছে অ্যানিমেশন দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট! কার্টুন সাধারণত টুডি ও হাতে আঁকা হয়ে থাকে, অনেকক্ষেত্রে স্টিল ছবি বা ক্যারিকেচারও ব্যবহার করা হয়। যেমন: মীনা কার্টুন, ঠাকুরমার ঝুলি, টম অ্যান্ড জেরি, ব্যাটম্যান ইত্যাদি।
আর অ্যানিমেশনের কাজ সাধারণত ডিজিটালি করা হয় এবং এটার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। টয় স্টোরি থেকে শুরু করে ফ্রোজেন, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, কুংফু পান্ডা হালের মিনিয়ন; একটু হলেও অ্যানিমেশন দুনিয়ার খোঁজ রাখেন, অথচ এদের চেনেন না, এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কার্টুন কি?
কার্টুন কি জিনিস, আমরা কমবেশ সবাইই জানি। কার্টুন শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো ব্যাঙ্গচিত্র। কার্টুন হলো এক প্রকারের দৃশ্যমান শিল্পকর্ম। এটা সচরাচর হাতে আঁকা হয়, মাঝেমধ্যে অ্যানিমেটেড হয়ে থাকে। তবে, সাধারণত ড্রয়িং একটু অবাস্তবিক হয়, যাতে দেখতে হাস্যকর লাগে। কার্টুন তৈরির মূল লক্ষ্য শিশু-কিশোর হলেও বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যেই কার্টুন জনপ্রিয়। বিশেষত শিশুদের নিকট কার্টুন কি যে জনপ্রিয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন আসতে পারে কার্টুন কি অ্যানিমেশন কিনা।
হ্যাঁ, বর্তমান সময়কার কার্টুনও এক প্রকারের অ্যানিমেশন। অ্যানিমেশন দিয়ে তো অনেক কিছুই করা যায়; কার্টুনও তৈরি করা যায়। তবে, কার্টুন হাতে আঁকাও হতে পারে। যদিও সেটা বর্তমান সময়ে কমে গিয়েছে। আবার, কার্টুন সবসময় যে ভিডিও আকারেই হতে হবে, তেমনও না কিন্তু। কার্টুন ছবি আঁকারেও তৈরি হতে পারে।
এনিমেশন বনাম ভিডিও
অ্যানিমেশন হল কোনো বস্তুর স্কেচ করা এবং তারপরে সেগুলোকে ফ্রেম বাই ফ্রেম একটা সিরিজ হিসেবে দেখানো যাতে এটা আমাদের কাছে একটি চলমান এবং জীবন্ত জিনিসের মতো দেখায়। আর ভিডিও হল স্থির বা চলমান বস্তুর রেকর্ডিং। দুটো জিনিসের ধরন আলাদা হলেও উদ্দেশ্য এক। এনিমেশনটি এমন একটি ভিডিও যা একজন শিল্পীর প্রচেষ্টায় প্রচুর ছবি এঁকে তৈরি করা হয়। আর ভিডিও একটি ভিডিও ক্যামেরার সাহায্যে তৈরি করা হয় এবং আপনি যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় শুটিং শুরু করতে পারেন৷ তবে ভিডিওচিত্র ধারণ করার চেয়ে অ্যানিমেট করা বেশি কঠিন।
এনিমেশন কত প্রকার?
অ্যানিমেশনের অনেকগুলো ধরন রয়েছে। বেসিক কাজ করতে চাইলে এগুলো জানলেই চলবে।
টুডি অ্যানিমেশন
টুডি অ্যানিমেশন হল বহুল ব্যবহৃত অ্যানিমেশন স্টাইল। এখানে ডি শব্দটার মানে হচ্ছে ডাইমেনশন। অর্থাৎ টুডি অ্যানিমেশন ডাইমেনশন হচ্ছে দুটি – প্রস্থ (y এ্যাক্সিস) এবং উচ্চতা (x এ্যাক্সিস)। অর্থাৎ আপনি যখন টম এন্ড জেরির মত কার্টুন দেখেন তখন আপনি ক্যারেকটার এর প্রস্থ, উচ্চতা এবং এক পাশ দেখতে পান। এটাই মূলত টুডি।
থ্রিডি অ্যানিমেশন
থ্রিডি অ্যানিমেশন পদ্ধতিতে ক্যারেক্টারের মুভমেন্ট থেকে শুরু করে কম্পোজিশন, টেকনিক্যাল স্কিল সবই খুব সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করা হয়। আপনি খুব সহজেই অ্যানিমেশনের চরিত্র ও তার যেকোনো অংশকে যেকোনো দিকে ইচ্ছেমতো নাড়াচাড়া করাতে পারবেন। ক্যারেক্টারের মোশন তথ্য নিয়ে ডিজিটাল অ্যানিমেশন থ্রিডি করা হয় কম্পিউটারের সহায়তায়।
হোয়াইটবোর্ড অ্যানিমেশন
হোয়াইটবোর্ড অ্যানিমেশন কি, সেটা অনেকেরই চেনা। এই অ্যানিমেশন মূলত বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য বানানো হয়। হোয়াইটবোর্ড এনিমেশন অনেকদিন পর্যন্ত দর্শকের মাথায় গেঁথে থাকে, আর এটাই মূলত কোনো বিজ্ঞাপনের প্রধান উদ্দেশ্য।
মোশন গ্রাফিকস
অ্যানিমেশন জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল মোশন ক্যাপচার। এর মাধ্যমে যে কোনো ধরনের অঙ্গভঙ্গি বা কার্যক্রমকে রেকর্ড করে তাকে ডিজিটাল মডেলের অ্যানিমেশনে রূপ দেওয়া হয়। এই ধরনের এনিমেশন সাধারণত কমার্শিয়াল এবং প্রমোশনাল কাজে ব্যবহার করা হয়। অ্যানিমেটেড লোগো, কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশন, টিভি প্রোমো, মোশন ওপেনিং টাইটেল- এসবই মোশন অ্যানিমেশনের কাজ।
স্টপ মোশন
এই অ্যানিমেশনের সকল চরিত্র ও বস্তু বাস্তব। এই অ্যানিমেশন শুরুই হয় মডেলের ছবি তোলার মাধ্যমে। এরপর মডেলটি বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে বারবার ছবি তুলে পরপর সাজিয়ে ভিডিও বানানো হয়। এইভাবে তৈরি হয় স্টপ মোশন এনিমেশন।
টাইপোগ্রাফি অ্যানিমেশন
বিভিন্ন ধরনের অক্ষরকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সাজানোর কৌশলকে টাইপোগ্রাফি বলা হয়। মনে করুন আপনি কারো নামটা সোজা ভাবে না লিখে প্রথম অক্ষরটা একটু বড় করে, কিংবা প্রথম অক্ষরটার রং অন্যদের থেকে আলাদা করে দিলেন। অথবা নামের প্রথম অক্ষরটা ঠিক রেখে বাকিগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে একটা ফুলের আকৃতিতে লিখলেন। লেখার এই কৌশলগুলোকে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করাকে টাইপোগ্রাফি এনিমেশন বলা হয়। লিরিক ভিডিও অথবা মিউজিক ভিডিওর জন্য এমন ভিডিও তৈরি করা হয়।
ইনফোগ্রাফিক অ্যানিমেশন
ইনফোগ্রাফিক এনিমেশন আপনাকে আকর্ষণীয় তথ্য ও সুন্দর ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান ও বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ করে দেয়। দৃষ্টিনন্দন সব ডিজাইনের মাধ্যমে ইনফোগ্রাফিক অ্যানিমেশনের সাহায্য খুব সহজে পাঠকদের মন জয় করা যায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো যায়। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও প্রেজেন্টেশন তৈরিতে এই এনিমেশন ব্যবহার করা হয়।
হ্যান্ডক্রাফট অ্যানিমেশন
হ্যান্ডক্রাফট এনিমেশন ভিডিওগুলো কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। যেকোনো জটিল বিষয় আপনি খুব সহজে এই অ্যানিমেশনের মাধ্যমে কাউকে বোঝাতে পারবেন। এই ভিডিওগুলো একটি হাতের মাধ্যমে দৃশ্যের চারপাশে সরানো বস্তুর প্রভাবকে অনুকরণ করে যা স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷
অ্যানিমেশন সেক্টরের প্রাথমিক ধারনা
এনিমেশন কি সেটা ইতোমধ্যে আমরা জেনে গেছি, এখন জানবো এনিমেশন সেক্টর নিয়ে। বর্তমানে অ্যানিমেশনের জগৎ অনেক বড়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অ্যানিমেশনের চাহিদাও বাড়ছে। এই সেক্টরে আসতে হলে বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। আইটি সেক্টরের অন্যান্য কাজের মতো অ্যানিমেশনের জন্যেও কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারণা অবশ্যকীয়। পাশপাশি ড্রয়িং সেন্স, সিনেমা তৈরির কৌশল, সফটওয়্যার চালানোর দক্ষতা, ইংরেজিতে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। গুগল থেকে কিংবা ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখা বা টিউটোরিয়াল খুঁজে বের করা এবং সেগুলো দেখে কাজ শেখার দক্ষতা থাকতে হবে।
আপনার যদি অ্যানিমেশনের উপর ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি থেকে থাকে তাহলে আপনি যেকোনো জায়গায়:
- অ্যানিমেটর
- আর্ট ডিরেক্টর
- ফিল্ম অ্যান্ড ভিডিও ডিরেক্টর
- ভিডিও গেম ডিজাইনার
- অ্যানিমেশন ডিরেক্টর
- ক্যারেক্টার অ্যানিমেটর
- ইফেক্ট অ্যানিমেটর
- কি অ্যানিমেটর
- স্টপ মোশন অ্যানিমেটর
ইত্যাদি পদে আবেদন করতে পারবেন। তবে আপনার যদি ডিগ্রি ছাড়া শুধু এনিমেশন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট দক্ষতাগুলো থাকে তাহলেও আপনি আবেদন করতে পারবেন। সফল অ্যানিমেটরের গুণাবলি:
- ছবি আঁকার দক্ষতা
- নান্দনিক জ্ঞান
- শৈল্পিক দক্ষতা
- ধৈর্য্য ও মনোযোগ
- কালার সেন্স
- কম্পিউটার দক্ষতা
- সৃজনশীলতা
- CAD সম্পর্কে জ্ঞান
- ভিজ্যুয়াল ইমাজিনেশন
আরো পড়ুন: ইমোজির কারসাজি
একজন অ্যানিমেটরের কাজ কী কী?
প্রথমেই বলে নিই, অ্যানিমেশনের কাজ শিখতে চাইলে বেশ ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ এটা একদিনে শিখে ফেলার মতন কোনো কাজ না। তাই প্রথমেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি আসলেই মন থেকে সে অ্যানিমেশন শিখতে চাচ্ছেন কিনা? সে জন্য সময় দিতে পারবেন কিনা? মন স্থির করে এরপরেই সামনে এগোন। একজন অ্যানিমেটরের কাজ কেবল ছবি আঁকাই না, তাকে এর পাশাপাশি এসব কাজেও পারদর্শী হতে হবে:
- ফ্রেম তৈরি করা
- অ্যানিমেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড, বস্তু ও সেট ডিজাইন করা
- চরিত্র ডিজাইন করা
- স্টোরিবোর্ড আঁকা এবং বাস্তবসম্মত মডেল তৈরি করা
- কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে থ্রিডি চরিত্র অ্যানিমেট করা
- ক্লায়েন্ট বা দলের সাথে কাজ করা
- অ্যানিমেশনের সাথে মানানসই স্ক্রিপ্ট ও সাউন্ডট্র্যাক ব্যবহার নিশ্চিত করা
Cartoon Animation Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
অ্যানিমেশন তৈরি
এখন যেহেতু আমরা অ্যানিমেশনের মূল ধারণাগুলো বুঝতে পেরেছি, তাহলে চলুন এবার অ্যানিমেশন বা কার্টুন তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাক।
গল্প
ইউটিউবে অন্তিক মাহমুদের ভিডিওগুলো দেখেছেন? তার ভিডিও শুরুই হয় একটা গল্প দিয়ে। আর অ্যানিমেশন তৈরি করার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে গল্প ঠিক করা। এমন একটা গল্প যেটা আপনি ভালো বলতে পারেন এবং দর্শকও সেটা দেখতে পছন্দ করবে। আপনি যদি শুরুতেই কোনো গল্প ঠিক না করতে পারেন, তাহলে আপনি যত সুন্দর করেই পরবর্তী ধাপগুলো করেন না কেন, কেউ আপনার ভিডিও উপভোগ করবে না। আপনি যত বেশি সময় গল্পের পেছনে দেবেন, তত কম সময় আপনাকে প্রোডাকশনের পেছনে দিতে হবে।
স্ক্রিপ্ট
অ্যানিমেশনে স্ক্রিপ্ট হল ব্লুপ্রিন্ট, যেটা আপনার পুরো অ্যানিমেশনকে একজনের চোখের সামনে দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখতে সাহায্য করবে। আপনার স্ক্রিপ্ট হল আপনার অ্যানিমেশনের ৫০%, স্ক্রিপ্ট অসাধারণ হলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।
আপনার স্ক্রিপ্টটা এমন হতে হবে যাতে আপনার লেখা যে কেউ পড়ে বুঝতে পারে। কিছু ক্যাচি ডায়ালগ ব্যবহার করতে পারেন। ভালো একটা স্ক্রিপ্টে ডায়ালগ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ভিডিওর শুরুটা যেন দুর্দান্ত হয়, নাহলে অনেকে স্কিপ করে চলে যেতে পারেন। “শেষ ভালো যার সব ভালো তার”– প্রবাদটা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন? অ্যানিমেশনের ফিনিশিংটাও যেন ইন্ট্রোর মতনই দুর্দান্ত হয়। ভিডিওর ‘প্যাটি’ অর্থাৎ মাঝের অংশটাকে হেলাফেলা করা যাবে না। এইটাই আপনার ভিডিওর মূল আকর্ষণ। আর ভিডিও বানানো শুরু করার আগে মাথায় রাখবেন:
- এনিমেশন কি টপিকে বানাতে চাচ্ছেন?
- আপনি কেন এই এনিমেটেড ভিডিও তৈরি করছেন?
- এনিমেশন কি কোন বার্তা দিতে বানাচ্ছেন?
- এনিমেশন কি কোন অডিয়েন্সকে টার্গেট করে তৈরি করছেন?
কনসেপ্ট আর্ট
স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত করাত পর ভিজ্যুয়াল স্টাইল প্রতিষ্ঠার শুরু হয় অ্যানিমেশনের কনসেপ্ট আর্ট অর্থাৎ স্টাইল ও ছবির প্যাটার্ন তৈরির কাজ দিয়ে। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হাতে আঁকা হয় প্রতিটি দৃশ্য। তখনই ঠিক হয়ে যায় যে কোন দৃশ্যে কোথায় কীভাবে কোন চরিত্রগুলো দেখা যাবে। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য কী কী প্রয়োজন, চরিত্রগুলোর সাথে আর কোনো জিনিস দেখা যাবে নাকি ইত্যাদি আঁকা হয়।
স্টোরিবোর্ড
অ্যানিমেশন তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটা হচ্ছে স্টোরিবোর্ড। স্টোরিবোর্ডিং আপনাকে আপনার অ্যানিমেশনের সম্পূর্ণ স্পট স্টোরি এবং পেসিং ইস্যু দেখতে সাহায্য করে। একটা চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত আর কয়টি চরিত্র আছে, কার সঙ্গে কী সম্পর্ক- সব লিখে ফেলতে হবে। কোনো একটা চরিত্রের হয়তো বিশেষ কোনো গুণ আছে, সেগুলো সব টুকে রাখতে হবে।
বেশিরভাগ মানুষ স্ক্রিপ্টের চেয়ে স্টোরিবোর্ডের মাধ্যমে নিজের আইডিয়া তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী। আমরা যেসব অ্যানিমেটেড মুভি, কার্টুন বা বিজ্ঞাপন দেখি, এগুলোর যে সিকোয়েন্স বা চরিত্রগুলো যেভাবে নড়াচড়া করে তা একজন স্টোরিবোর্ডের মাধ্যমে কোন দৃশ্যের পর কোন দৃশ্য যাবে তা ঠিক করে দেন। একে এনিমেশনের মেরুদণ্ডও বলা যায়। কারণ আপনার স্টোরিবোর্ড আপনার চূড়ান্ত কাজ কেমন হবে সে সম্পর্কে ধারনা দিবে।
ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যগুলো উপস্থাপন করতে আয়তক্ষেত্রাকার বাক্স আঁকুন। সেখানে সংলাপও বসাতে পারেন। এটা মূলত কমিক্স স্ট্রিপের মতন, একটার পর একটা দৃশ্য থাকে, সেই অনুযায়ী আপনাকে এনিমেশন তৈরি করতে হয়।
অ্যানিমেটিক
চরিত্র তো দাঁড় করানো হলো, এবার দৃশ্য ধরে ধরে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় চরিত্রগুলো ও এদের পারিপার্শ্বিক জিনিস আঁকার পালা। এই প্রক্রিয়াকে বলে অ্যানিমেটিক। মূলত আপনার স্টোরিবোর্ডের মোবাইল ভার্সন হচ্ছে অ্যানিমেটিক। কারণ এখানে আঁকার পাশাপাশি ছবি, সংগীত ও ডাবিংয়ের খসড়া করে নিতে হবে। তারপর তিনটা মিলিয়ে নিলে অ্যানিমেশনের একটা প্রাথমিক চেহারা দাঁড়িয়ে যাবে। এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে অ্যানিমেশনটা কেমন হতে যাচ্ছে।
প্রিভিস
অ্যানিমেশনের কাজ শুরু করার আগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে প্রিভিস বা প্রি-ভিজ্যুয়ালাইজেশন। প্রিভিস হলো অ্যানিমেটিকের পরবর্তী ধাপ, যার উপর থ্রিডি মডেল ব্যবহার করা হয়।
প্রতিটা চরিত্রের উপর খুব বেসিক অ্যানিমেশন ইফেক্ট দিতে হবে যাতে বোঝা যায় কাজ শেষে এটা কেমন দেখাবে। কারণ অ্যানিমেশন খুবই দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া। এই ধাপের পরবর্তী ধাপগুলোয় কোনো ভুল পাওয়া গেলে সেটা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে আর এইটাই আমাদের গল্পে গুরুতর পরিবর্তন আনার শেষ সুযোগ।
অবশেষে আমরা অ্যানিমেশনের জন্য প্রস্তুত! এখানেই আমরা চলচ্চিত্রে জীবন নিয়ে আসি। এখানে অ্যানিমেটরের কাজ হচ্ছে কী-ফ্রেমগুলো আঁকা, মানে চরিত্রগুলোর প্রতিটি কাজের মূল ছবি। এই কাজটা খুবই সূক্ষ্মভাবে করতে হবে। ধরা যাক, কোনো চরিত্র কিছু একটা খাচ্ছে। সেটা বোঝাতে হাতের অনেক অবস্থানের ছবি লাগবে। হাত পায়ের উপর রাখা, ওপরে উঠল, প্লেটের দিকে হাত বাড়ালো, খাবার ধরলো, হাত টেনে মুখের কাছে আনলো। প্রতিটা মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গি ভালোভাবে দেখে আঁকতে হবে। তারপর সেগুলোকে পর পর জুড়ে দিলে মনে হয়, চরিত্রটি কোনো খাবার মুখে দিলো।
চরিত্রগুলোর মূল চেহারা আঁকার সময় তাকে চারদিক থেকে দেখতে কেমন লাগবে সেটার উপর ভিত্তি করে আরো চারটা ছবি আঁকতে হবে, যাকে বলা হয় ‘টার্ন অ্যারাউন্ড’। এরপর ‘এক্সপ্রেশন শিট’ এ চরিত্রটির সব মুখভঙ্গি যেমন: হাসি, মুচকি হাসি, অট্টহাসি, কান্না, অল্প কান্না, বেশি কান্না, আনন্দ, ভয়, রাগ, হতাশা, বিরক্তি ইত্যাদি। আর বানাতে হবে মানুষ কথা বলার সময় অনবরত ঠোঁট নাড়তে থাকার স্টাইল বা ‘লিপ’। এটা মূলত নির্ভর করে শব্দের স্বরধ্বনিগুলোর ওপরে। ‘অ’ বলতে যেমন ঠোঁট একভাবে নড়ে, এরকম ‘আ’, ‘ই’, ‘উ’, ‘এ’ ও ‘ও’র জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ঠোঁট নড়বে।
এরপর আঁকতে হবে আশেপাশের প্রপস ও ব্যাকগ্রাউন্ড, যাতে এনিমেশনটাকে বাস্তব বলে মনে হয়। ডিজনি অ্যানিমেশনগুলো কখনো খেয়াল করেছেন? কোনো চরিত্রের চুল নাড়ানোর জন্যও অ্যানিমেটররা ফ্রেমের পর ফ্রেম ছবি এঁকে যান।
লাইটিং
অ্যানিমেশন তৈরি করা অনেকটা ছবি আঁকা আর সিনেমা তৈরি করার মিশেল। ছবি আঁকার সময় যেমন আলো-ছায়ার ব্যাপার মাথায় রাখতে হয়, আবার সিনেমা তৈরির সময় কোন জায়গায় লাইট বেশি পড়ছে বা কোন জায়গায় কম পড়ছে সেটা দেখা হয়, অ্যানিমেশনেও এই ব্যাপারটার দিকে খেয়াল রাখা হয়।
কালার গ্রেডিং ও কারেকশন
অ্যানিমেশনের কাজ প্রায় শেষ, এবার একটু রঙ ঘষা-মাজা করার পালা। একটি দৃশ্যে রঙের ব্যবহার বা কালার টোন কেমন হবে তা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। কালার কারেকশন হলো প্রতিটা শটের রঙগুলোর মধ্যে যাতে মিল থাকে সেই প্রক্রিয়া। যাতে পুরো ভিডিও জুড়ে আমরা একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সঠিক রঙ পাই। কোথাও যেন বেশি সাদা বা কালো রঙ দেখা না যায়, সেদিকে আলাদা লক্ষ্য রাখতে হবে।
তারপরে অ্যানিমেশনের উপর কালার গ্রেডিং প্রয়োগ করতে হবে, যা ভিডিওর একটা ভিজ্যুয়াল স্টাইল তৈরি করার চেষ্টা করে এবং একটা স্বতন্ত্র চেহারা দেয়। কারণ ভিডিও ফুটেজে কখনোই রঙয়ের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। এই ভিডিওটিকে চূড়ান্ত ভিডিও ফুটেজে রুপান্তরিত করতে আপনাকে হোয়াইট ব্যালেন্স এবং টোন সেটিংস নিয়ে কাজ করতে হবে। এই সেটিংসগুলো আপনার ভিডিও ফুটেজের সামগ্রিক রঙ এবং ভিডিওটি দেখতে কেমন দেখাবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় টেক্সচার। এর সঠিক ব্যবহারেই ফুটে ওঠে অ্যানিমেশনের আসল সৌন্দর্য।
সাউন্ড ডিজাইন
সাউন্ড হিসেবে এমন কোনো শব্দ বা মিউজিক ট্র্যাক ব্যবহার করুন যা আপনার ভিডিওর সাথে মানানসই। চাইলে ভয়েস ওভারের মাধ্যমে আপনি নিজেই সেসব আওয়াজ করতে পারবেন। সেটা হতে পারে হাঁটা-চলার শব্দ, চড় মারার শব্দ কিংবা কোনো ডায়ালগ। ইন্টারনেটে কয়েক লক্ষ মিউজিক ট্র্যাক বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন। চাইলে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন: Motion Graphics vs. Animation: তফাতগুলো জেনে নেই
এনিমেশন তৈরির সফটওয়্যার
অ্যানিমেশন তৈরি করার জন্য একটা সফটওয়্যার প্রয়োজন। সেটা হতে পারে পেইড-ননপেইড উভয়ই। চলুন তাহলে ইউজার ফ্রেন্ডলি তেমন কয়েকটা সফটওয়্যারের নাম জেনে আসা যাক!
- CelAction2D
- Cartoon Animator 4
- Clip Studio Paint
- Adobe Animate
- Adobe Character Animator
- Animaker
- Blender
- Pencil 2D
- Stop Motion Studio
- Moho (Anime Studio)
- Autodesk Maya
CelAction2D
উইন্ডোজ সাপোর্টেড এই সফটওয়্যার টু-ডি ড্রয়িংয়ের জন্য দারুণ উপযোগী৷ কিন্তু এটি বিনামূল্যে পাওয়া যাবে না। এর জন্য আপনাকে মাসে ৭১ ডলার গুনতে হবে৷
Cartoon Animator 4
থ্রিডি থেকে ফোরকে টুডি ড্রয়িংয়ের উপর এটা চমৎকার কাজ করে। উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএস-এ পিএসডি টুল ও ওয়াকম দিয়ে কাজ করতে পারবেন।
Clip Studio Paint
সবধরনের ডিভাইসে এই সফটওয়্যার কাজ করে। ফ্রেম বাই ফ্রেম অ্যানিমেশন তৈরি করার এই সফটওয়্যারের জন্য প্রতি মাসে ২.২৯ ডলার দিতে হবে।
Adobe Animate
উইন্ডোজ ও ম্যাক সাপোর্টেড এই সফটওয়্যার মূলত সবাই ব্যবহার করে থাকেন। কারণ এটা যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি। এটি আপনি উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএস-এ চালাতে পারবেন।
Adobe Character Animator
অটো লিপসিংকিং ফিচার থেকে শুরু করে অটোমেটিক ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ফিচার, হাঁটা, অনুভূতি, শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি প্রক্রিয়া খুব সহজে এখানে আঁকা যায়।
এটি আপনি উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএস-এ চালাতে পারবেন।
Animaker
বিগিনার থেকে এডভান্স লেভেলের সবার জন্য সুবিধাজনক সফটওয়্যার হলো Animemaker। এর সাহায্যে আপনি টুডি ভিডিও, অ্যানিমেটেড ইনফোগ্রাফিক ভিডিও, হ্যান্ডক্রাফট ভিডিও, হোয়াইটবোর্ড ভিডিও, টাইপোগ্রাফি অ্যানিমেশনসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করতে পারবেন। এরসাথে অডিও ফিচারের মধ্যে রয়েছে টেক্সট-টু-স্পিচ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ট্র্যাক, সাউন্ড ইফেক্ট, ভয়েস রেকর্ডিং, কাস্টম সাউন্ড ইত্যাদি যোগ করতে পারবেন।
এই সফটওয়্যারটা ব্যবহার করতে কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই।
Blender
ব্লেন্ডার ব্যবহার করে আপনি অ্যানিমেশন, ভিডিও গেম, রেন্ডার, মডেল এবং আরও অনেক থ্রিডি প্রজেক্ট তৈরি করতে পারবেন। বিল্ট-ইন পাথ-ট্রেসার, প্রিভিউ ফিচার, সিপিইউ-জিপিউ রেন্ডারিং, পিবিআর শেডার, এইচডিআর লাইটনিং সাপোর্ট, ভিআর রেন্ডারিং, এডভান্সড মডেলিং, রিগিং, স্কাল্পটিং, ইউভি টুলস, অ্যানিমেশন টুলস, টুডি মোড থেকে থ্রিডিতে ট্রান্সফরমেশনসহ ইত্যাদি টুল এই সফটওয়্যারে আছে।
ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এইটা আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
Pencil 2D
আপনি যদি হ্যান্ড ড্রয়িংয়ে অভ্যস্ত হন, তাহলে এই সফটওয়্যারটা আপনার জন্য বেশ কার্যকর। এখানে রাসটার ও ভেক্টর উভয় গ্রাফিক্সই ব্যবহার করতে পারবেন।
ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এইটা আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি আপনি উইন্ডোজ, লিনাক্স, ফ্রি বিএসডি ও ম্যাক ওএস-এ চালাতে পারবেন।
Stop Motion Studio
বিগিনারদের জন্য বেশ কার্যকর এক অ্যাপ হচ্ছে স্টপ মোশন স্টুডিও। টুডি স্টাইলে খুব চমৎকার ফোরকে স্টপ মোশন অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারবেন এখানে। এছাড়াও এখানে আপনি আপনার তোলা ছবিও ভিডিওতে ইমপোর্ট করে একসাথে শ্লো মোশন ইফেক্ট তৈরি করে দারুণ সব ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। আর সেই ভিডিওতে যে কোন ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত করা, এমনকি আপনার নিজস্ব অডিও বর্ণনাসহ আরো অনেক কিছু এডিট করার অপশনও রয়েছে।
অ্যাপটির কয়েকটা ফিচার ফ্রি হলেও, প্রো ভার্সন ব্যবহারের জন্য আপনাকে টাকা গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ-
- আইওএস: ৪.৯৯ ডলার
- ম্যাক ওএস: ৯.৯৯ ডলার
- অ্যান্ড্রয়েড: ৪.৯৯ ডলার
- উইন্ডোজ: ১.৯৯ ডলার
এটি আপনি উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস ও ম্যাক ওএস-এ চালাতে পারবেন।
Moho (Anime Studio)
Moho এমন একটি সফটওয়্যার, যা শুধু বড়রা না, ছোটরাও স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবে। কারণ এর টুলগুলো এতই সহজবোধ্য যে, যে কেউই এর কাজগুলো বুঝতে পারে। আপনি চাইলে পিসির সাথে ট্যাবের কানেকশন দিয়েও সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবেন।
নরমাল ভার্সনের মূল্য ৫৯.৯৯ ডলার এবং প্রো ভার্সনের মূল্য ৩৯৯.৯৯ ডলার। এছাড়াও ৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়াল উপভোগ করতে পারবেন। উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএস-এ চালাতে পারবেন।
Autodesk Maya
Autodesk Maya হচ্ছে একটি পেশাদার থ্রিডি মডেলিং ও অ্যানিমেশন সফটওয়্যার। মডেলিং ও স্বনামধন্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যানিমেশন ষ্টুডিওগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাইন সংস্থায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়। এই সফটওয়্যার দিয়ে আপনি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতন ভিজুয়্যাল ইফেক্ট সেট করতে পারবেন। ডিজনি ও পিক্সারের অ্যানিমেটররাও এই সফটওয়্যারটাই ব্যবহার করেন। ‘অ্যাভাটার’, ‘ফাইন্ডিং নিমো’, ‘মনস্টার্স’ এর মতন অ্যানিমেশনগুলো Autodesk Maya দিয়েই তৈরি করা হয়েছে।
এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হলে প্রতি মাসে গুনতে হবে ২১৫ ডলার। তবে আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হন, তাহলে এক বছর বিনামূল্যে Autodesk Maya ব্যবহার করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: শিশুর জন্য সহজ অরিগ্যামি (Origami)
অ্যানিমেটরের ক্যারিয়ার
ক্যারিয়ার নির্বাচনের আগে সবার আগে আমাদের মাথায় যেই প্রশ্নটা আসে, সেটা হচ্ছে এই কাজ করে আমাদের আয় কি ভালো হবে? আপনি যদি কোনো অনলাইন মার্কেট প্লেস বা বিশ্বের যে কোনো বড় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে অ্যানিমেশনের কাজ করেন, তাহলে আপনার দক্ষতা অনুসারে মাসে সর্বনিম্ন এক হাজার ডলার থেকে শুরু করে দশ হাজার ডলার বা তার চেয়েও বেশি আয় করা সম্ভব।
- টুডি অ্যানিমেটর
- থ্রিডি অ্যানিমেটর
- ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট
- ক্যারেক্টার অ্যানিমেটর
- ক্লিন-আপ আর্টিস্ট
- ডিজিটাল ইংক অ্যান্ড পেইন্ট আর্টিস্ট
- ইমেজ এডিটর
- কি ফ্রেম এডিটর
- লেআউট এডিটর
- লাইটনিং আর্টিস্ট
- মডেলার
- রেন্ডারিং আর্টিস্ট
- রিগিং আর্টিস্ট
- স্টোরিবোর্ড আর্টিস্ট
- টেক্সচার আর্টিস্ট
আপনার মধ্যে যদি অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার একাগ্রতা থাকে, তাহলে কোনো শর্টকাট উপায় না খুঁজে আজ থেকেই অ্যানিমেশনের প্র্যাকটিস করা শুরু করে দিন!
অ্যানিমেশন শেখার জন্য ৬টি ওয়েবসাইট এবং টুলস
আপনি এনিমেশন নানান উপায়ে শিখতে পারেন। শেখার উপরে ভিত্তি করে এগুলোকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো:
- অনলাইন
- অফলাইন
এখানে সহজে শেখার কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:
অনলাইন
অনলাইন কোর্স
বাংলা ভাষায় অ্যানিমেশনের কাজ শিখতে চান? টেন মিনিট স্কুলের “Cartoon Animation” কোর্সে রয়েছে বাংলা ভাষায় অ্যানিমেশন শেখার পরিপূর্ণ প্যাকেজ! কার্টুনিস্ট, অ্যানিমেটর ও ইউটিউবার অন্তিক মাহমুদ আপনাকে অ্যানিমেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে, সাউন্ড ডিজাইন কিভাবে করা যায়, Adobe Animate এবং অন্যান্য টুলস ব্যবহার করার স্কিলস ও কৌশল এবং অ্যানিমেশন- এর খুঁটিনাটি সবই শেখাবেন এই কোর্সে।
এই কোর্স থেকে যা যা শিখবেন:
- অ্যানিমেশন তৈরির বেসিক খুঁটিনাটি শেখা যাবে।
- কীভাবে স্টোরিবোর্ড ও কনসেপ্ট আর্ট তৈরি করতে হয়।
- কীভাবে Adobe Animate ব্যবহার করে অ্যানিমেশন তৈরি করতে হয়।
- ব্লকিং, টাইমিং এবং স্পেসিং সম্পর্কে জানা যাবে।
- Audacity Video ব্যবহার করে কীভাবে বেসিক সাউন্ড ডিজাইনিং করা যায়।
- কোর্স ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ১৯টি ভিডিও, ৫ সেট কুইজ ও ১০টি নোট দেওয়া হবে।
- কোর্স শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
ইউটিউব
ইউটিউবের মাধ্যমে বিনামূল্যেও আপনি এ সংক্রান্ত প্রচুর টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। এটি যদিও কোর্সের মতো গোছানো হবে না। কিন্তু ইউটিউব টিউটোরিয়ালও পর্যাপ্ত, যদি শিখতে চান। ইউটিউবে বাংলা, ইংরেজি থেকে শুরু করে যেকোনো ভাষায়ই টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইট
বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন। ইংরেজিতে যদিও বেশি টিউটোরিয়াল, তবুও বাংলায়ও অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।
অফলাইন
চাইলে অফলাইনে আপনি যেকোনো ট্রেনিং সেন্টার থেকেও শিখতে পারেন। এটার মাধ্যমেও এনিমেশন ডিজাইন শিখতে পারবেন খুব সহজেই। এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে আপনি কারো থেকে হাতে-কলমে শিখতে পারেন। সরাসরি সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
Graphic Design করে Freelancing
এই কোর্সটি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করবে?
শেষ কথা
আপনার মধ্যে যদি অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার একাগ্রতা থাকে, তাহলে কোনো শর্টকাট উপায় না খুঁজে আজ থেকেই অ্যানিমেশনের প্র্যাকটিস করা শুরু করে দিন!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন
- Cartoon Animation Course (by Antik Mahmud)
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Design করে Freelancing Course (by Md. Kamruzzaman Shishir and A.S.M Asifuzzaman)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course (by Tahsan Khan)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন