Empathy: যত্নে থাকুক আপন সম্পর্ক

October 3, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।

আমি তখন ছোট্ট, ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ি সম্ভবত। সে বয়সটায় যা হয়, বাসায় নতুন কিছু আসলেই মহা আগ্রহ নিয়ে সেটা বিশ্লেষণে বসে যাই, আব্বু-আম্মুকে জ্বালিয়ে মারি কিছু না বুঝতে পারলে। তো এইরকম একটা সময়ে আমাদের বাসায় একটা চারাগাছ এলো। আব্বু নিয়ে এসেছে, বাসার সামনের আঙ্গিনায় সেটা একটা টবে সুন্দর করে লাগানো হলো।

যথারীতি আমি মহা আগ্রহে চারাগাছকে নিয়ে দিন কাটাই, নামও একটা দিয়েছিলাম মনে হয়! চারাগাছকে নিয়ে আমার এই অতি আগ্রহের পরেও খুব বেশি লাভ হয়নি অবশ্য। চারাগাছটা আর বাড়েনি। বেশ কয়েক মাস যাবার পরেও যখন চারাগাছের তেমন কোন অগ্রগতি দেখা গেলো না, তখন আমি শেষ ভরসার শরণাপন্ন হলাম। সেই ভরসার নাম আব্বু। এই লোকটা হেন কাজ নাই যা পারে না, তাই আব্বুকে বলে নিশ্চিত হলাম, চারা কেন, চারার চৌদ্দগুষ্টি এবার বাড়বে, আব্বু হাত লাগিয়েছে যখন কাজে!

আব্বু কাজে লেগে পড়লেন এবং খানিকক্ষণের মধ্যেই রহস্যোদ্ধার হলো। চারাগাছটা রোদ পাচ্ছে না, আর চারাগাছের মাটিটা কেমন শক্ত আর নিষ্প্রাণ হয়ে আছে!

মাটি খুঁড়ে দেয়া হলো, গাছকে সূর্যের আলো খেতে দেয়া হলো। সেদিনই চারাগাছ প্রাণ ফিরে পেলো।

ছোটবেলার সেই চারাগাছটা আজ হয়তো অনেক বড় গাছ হয়েছে, সে হয়তো আর আমাকে চিনবে না। তবে এই চারাগাছের গল্পটা থেকে একটা বিষয় কিন্তু খুব পরিষ্কার।

চারাগাছটা বেড়ে উঠছে না, সেজন্যে কিন্তু আমি বা আব্বু কেউই সেটাকে “বাজে চারাগাছ, অকম্মা চারাগাছ” বলে ছুঁড়ে ফেলে দেইনি। উলটো খুঁজে ফিরেছি চারাগাছটি কেন বড় হচ্ছে না, আসলে সমস্যাটা কোথায়, সে রোদ পাচ্ছে কি না, মাটি খুঁড়তে সমস্যা হয়েছিলো কি না- আরো কত শত কারণ।

এই একই কাজটা কিন্তু আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষদের ক্ষেত্রে করি না। তারা কোন একটা ভুল করলে, কোন একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা একেবারে হাঁ হাঁ করে তেড়ে যাই, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেই যে সে ভুল, সে ব্যর্থ। একবারের জন্যেও খেয়াল করি না, সে ব্যর্থ হলেও আসলে কেন ব্যর্থ? এই বিষয়টা। চারাগাছের জন্যে আমাদের আবেগের অন্ত থাকে না, অথচ আস্ত মানুষ ভুল করলে সেটা শুধরে না দিয়ে উলটো তাকে তামাশার পাত্র বানাতে আমাদের বেগ পেতে হয় না।

কী অদ্ভুত, তাই না?

অথচ আমরা ছোট্ট একটা কাজ করলে কিন্তু মানুষটাকে এমন হতাশায় পড়তে হতো না। সে একজন মানুষ, তাকে চারাগাছের মত যত্ন না-ই-বা করলে, তার ভুলগুলোকে শুধরে দেয়ার চেষ্টা তো করতে পারো! তার সমস্যাগুলো বের করার চেষ্টা তো করতে পারো, যাতে সেগুলো সামলে সে সামনের দিকে এগোতে পারে!

একজন মানুষকে অনুপ্রেরণা দিলে সে কোন কাজ নিয়ে আরো বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে। ধরো, তোমার বন্ধুর পকেটে কোন টাকা নেই। তার বাবা-মা বাসায় টাকা দেয় না, তাই সে স্কুলে আসতে চায় না। এখন তুমি যদি তার এই দারিদ্রকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করো, তাহলে তো তার স্কুলে আসার আগ্রহটা আরো চলে যাবে, তাই না? এইজন্যে তোমার বন্ধুকে অনুপ্রেরণা দাও, এতে এই খারাপ সময়েও তার মনটা ভালো থাকবে, সুখে থাকবে সে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আমি তপু’-তে তপুর কথা মনে আছে? তপুকে বাসায় প্রচন্ড মানসিক চাপে রাখা হতো। বেচারা এত বড় ম্যাথ জিনিয়াস হয়েও তার প্রতিভা দেখাতে পারছিল না। ওর বন্ধুদের জন্যেই তপু পেরেছে দেখাতে। তোমাদের মাঝে এমন হাজারো তপু লুকিয়ে আছে, তুমি একটু সাহায্য করলেই আকাশ ছুঁতে পারবে তারা।

এই যে অন্যের কষ্টগুলো নিজে উপলব্ধি করা, একে বলা হয় Empathy. শব্দটা খুব শক্তিশালী। এরকম আরেকটা শব্দ আছে, Sympathy, যার অর্থ সান্তনা দেয়া। কাউকে সান্তনা দেবার থেকে সেটা নিজে উপলব্ধি করে কথা বলাটা কিন্তু অনেক বেশি কার্যকরী!

ধরো তোমার বন্ধুর পকেটমার হয়েছে। তার খুব দরকারি কিছু কাগজ হারিয়েছে, টাকা তো গেছেই। সে অতি হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই অবস্থায় তুমি যদি তার কাছে যাও, পকেটমারকে নিয়ে নিজের কাহিনীগুলোও বলো, চেষ্টা করো তার কাগজগুলো উদ্ধারের- তাহলেই তো হয়ে গেলো!

আমাদের সবার মধ্যে এই Empathy বিষয়টা গড়ে তুলতে হবে। সবার সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখবে, আজ যাদের ভুলগুলো দেখে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে কাল সেই ভুলগুলোকে মনে হবে স্বাভাবিক, এমনটা হতেই পারে!

চারাগাছকে যেভাবে আমরা আদর দিয়ে, যত্ন করে বড় করে তুলি, আশেপাশের মানুষদের সেই যত্নের ছিটেফোঁটা দেখালেও কিন্তু চারপাশের পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়ে যায়, আর আমরা দেখি একটি সুন্দর বাংলাদেশ!


১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন