‘’Ancient Mysteries were kept secret because they had great power; the power to inform, to enlighten, and to uplift human beings into a higher octave of personal awareness.’’
চিকিৎসাবিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত যে, ট্রাভেলিং আপনার রক্তচাপ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়। কিন্তু রক্তচাপ কমুক অথবা বাড়ুক, ট্রাভেলিং কি বন্ধ করে দিবেন? অবশ্যই না। আমরা রহস্যপ্রিয়, আমরা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে কাল্পনিক ডানা মেলে উড়তে চাই, করতে চাই জীবন রহস্যের তদন্ত। সমুদ্রের বিশাল গর্জনের সামনে আমাদের দুঃখের ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো মনোযোগ-বৃত্তের অনেক বাইরে চলে যায়, আমরা পাই মুক্তি। আমরা ভাবতে শুরু করি আমাদের এই পৃথিবীতে বিচরণের কারণ, ভাবতে শুরু করি আমাদের এই পাঁচ আঙুলের হাত দু’টো কেন অন্যান্য প্রাণীদের মতো নয়, ভাবতে থাকি প্রাচীন মানুষদের হাতে গড়া অদ্ভুত ইমারতগুলো কেন আমাদেরকে কাছে ডেকে নেয়!
ফ্যান্টাসির এই জগতে আপনি দুইভাবে বিচরণ করতে পারবেন। প্রথমত হলো প্রযুক্তির প্রতিটি বাইনারী মানের সাথে সাথে আপনার পথচলা হবে অত্যাধুনিক জাঁকজমকসমৃদ্ধ। আপনি নিজেকে দেখতে চাইবেন নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে, হাজারো টিভি স্ক্রীনের মাঝে আপনি হারিয়ে যাবেন ডিজিটাল দুনিয়ায়, আপনার ভালো লাগবে নেভাদা মরুভূমির মাঝের রাস্তা দিয়ে শত কিলোমিটারের লং ড্রাইভ, ভালো লাগবে নরওয়ের নর্দান লাইট কিংবা রেড সী তে জাহাজে বসে বিশাল আকাশের সৌন্দর্য্য পর্যবেক্ষণ। এছাড়া আরও কত কি! বলে তো শেষ করা যাবে না।
ওহ হ্যাঁ, আরেকটি হলো আমার মতো রহস্যময় মাটির সন্ধানে একটু বোরিং ভ্রমণ। আপনাকে চোখের তৃপ্তি এনে দিতে না পারলেও মগজের ক্ষুধা বেশ ভালোভাবেই মিটিয়ে দিতে পারবে! আমাদের মস্তিষ্ক যেন জন্মের পর থেকেই রহস্যের কিনারা খুঁজতে ব্যস্ত, ঠিক যেমন সমতল পৃথিবী বিশ্বাসী মানুষেরা খুঁজে পৃথিবীর বক্রতা। এইসব রহস্যময় স্থানে ভ্রমণ আপনাকে লাল নীল বাতির আলোতে স্নান করতে দেবে না কিন্তু আপনি হারিয়ে যাবেন হাজার বছর পেছনে, অদ্ভুত মানুষের ভীড়ে প্রযুক্তিহীন দুনিয়ায় আপনি উত্তর খুঁজবেন ‘কারা আছে এসবের পেছনে?’
আমি ৫টি স্থানের নাম এবং এর কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছি যেখানে আপনারা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই রহস্যপ্রিয় হতে হবে, নান্দনিক সৌন্দর্য্যের চেয়ে হাজার বছরের ইতিহাসের ঘ্রাণ শুঁকে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই এরকম রহস্যময় ৫টি স্থান-
মিশরের পিরামিড
তালিকার প্রথমে রাখার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনি যদি হিস্টোরি ভালোবাসেন তবে অবশ্যই পিরামিডগুলোর সামনে আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে চলে যাবেন যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও ৩১৫০ বছর আগে, শ্যামলা গাত্রবর্ণের রহস্যময় মানুষের মধ্যে কী এমন ছিল যা এত বিশাল জ্যামিতিক সূক্ষ্ম নির্ভুল মাপের পিরামিডগুলো বানাতে সক্ষম হয়েছিল? পাথরগুলোই বা কাটা হলো কীভাবে? আবার ভেতরেই বা কেন এত অভিশাপে মুড়ানো প্রতিটি ফারাও রাজার শয়নকক্ষ? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন অনেক, কিন্তু গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই!
অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী ফারাওদের আজব সব সৃষ্টিকর্তার উপাসনা, আবার হায়ারোগ্লিফিকের রহস্যময় বার্তাগুলো আপনাকে চিন্তায় ফেলতে বেশ যথেষ্ট। শুধু তাই-ই নয়, রহস্যের ফাঁকে একটু বিনোদনও মন্দ নয়! নীল নদের তীরে বসে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে প্রাচীন মিশরীয় রূপকথার গল্প আপনাকে মোটেও হতাশ করবে না।
ফারাওদের ক্ষমতা আর রহস্যময় স্থাপত্যশৈলী আপনাকে নিয়ে যাবে ভাবনার দুনিয়ায়, আপনি প্রশ্ন করবেন নিজেকে, প্রশ্ন করবেন অদ্ভুত গড়নের ফারাওদের সুবিশাল মূর্তির সামনে।
বলা হয়ে থাকে প্রাচীন মিশরীয়রা স্বাভাবিক মানুষদের চেয়ে আলাদা ছিল, সত্যিই তো! না হলে এত কিছু কীভাবে সম্ভব হতো! নাকি এর পেছনে হাত ছিল বহির্জাগতিক কোনো শক্তির? কে জানে! এত এত পুস্তক রচনা করলেন গবেষকরা! সবই সম্ভাবনা।
সাধারণত এপ্রিল-মে মাসের দিকে পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি ভিড় জমায় মিশরে। তাহলে একদিন রহস্যভেদে আর চক্ষুর সামনে বিশাল ইতিহাসকে পর্যবেক্ষণ করতে বেড়িয়ে পড়ুন আফ্রিকার এই মরুভূমির দেশটিতে। ওহ হ্যাঁ! আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘরও কিন্তু আপনাকে বেশ দ্বিধায় ফেলে দেবে!
উইল্টশায়ারের স্টোনহেঞ্জ
ইংল্যান্ডে অবস্থিত। রহস্যময় পাথরগুলোকে কোথা থেকে কে না কে এসে এই জায়গায় বসিয়ে দিয়ে গেল, আর ব্যস! রহস্যই থেকে গেল। ভ্রমণের জন্য ইউরোপ বেশ বিখ্যাত। তাই এই জায়গাটি ভ্রমণ করলে আপনি রহস্যের আরও গভীর জালে আটকে যাবেন।
ইংল্যান্ডে উইল্টশায়ারের এই খোলা প্রান্তরে সাজানো চমৎকার পাথরের টুকরোগুলোর সাথে সংযুক্ত কোন রহস্য আপনার মনে নাড়া না দিয়ে যাবে না। এইখানে যতগুলো পাথর রয়েছে তার প্রত্যেকটি প্রায় ছয় টন ওজনের। এগুলো একে অপরকে নিমজ্জিত করে দাঁড়িয়ে আছে এবং অতীতের গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে এই বিস্ময়কর স্তম্ভগুলি প্রকৃতপক্ষে ২৫০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পুরোনো।
স্টোনহেঞ্জের গঠন খানিকটা জটিল। এর বাইরের দিকে একটি বৃত্তাকার পরিখা রয়েছে। প্রবেশপথটির কিছুটা দূরেই রয়েছে মাটির বাঁধ। এ বাঁধের ভেতর চতুর্দিকে বেষ্টন করে আছে ৫৬টি মৃত্তিকা গহ্বর। পাথরগুলোর মধ্যে আরও দুই সারি গর্ত বেষ্টন করে আছে। পাথরগুলোর গঠনের মধ্যে আছে দুইটি বৃত্তাকার এবং দুইটি ঘোড়ার খুরের নলের আকারবিশিষ্ট পাথরের সারি। এ ছাড়াও কতগুলো পৃথক পাথর রয়েছে অলটার স্টোন বা পূজা বেদীর পাথর বা শ্লটার স্টোন বা বধ্যভূমির পাথর।
সেখানে অনেকেই বিশ্বাস করে যে এটি নিওলিথিক লোকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন এটিই হচ্ছে মানব ইতিহাসের দরজা।
ঘুরে আসতে পারেন এই রহস্যময় স্থানটিতে। তবে প্রবেশের অনুমতি মিলবে সপ্তাহের যেকোনদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। তবে বেশিরভাগ পর্যটকই রবিবার আর শনিবারে ভ্রমণের কথা বলেছেন। কিন্তু কেন, তা আমার জানা নেই!
বলিভিয়ার পুমা পুংকু
দক্ষিণ আমেরিকা বরাবরই প্রাচীন সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করে। ইনকা সভ্যতার রহস্যের গন্ধ যেন পুরো লাতিন আমেরিকার মাটি জুড়েই পাওয়া যায়। তাই রহস্যপ্রিয় মানুষদের অন্যতম ভ্রমণের মহাদেশ হতে পারে দক্ষিণ আমেরিকা। যাই হোক পুমা পুংকুর ব্যাপারে আসি।
পুমা পুংকু শব্দের অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে ‘পুমার দরজা’। গ্রানাইট পাথরের তৈরি এ প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের কোন কোন পাথর ২৫ ফুট লম্বা এবং ১৫০/২০০ পাউন্ড ভারী।
যদিও মূল কাঠামো কি ছিল সেটা এখন আর বোঝা যায়না। পাথরের ধারগুলো এতো সূক্ষ্ম আর মসৃণ যে আপনার চোখ নিমিষেই কপালে উঠে যাবে! বড় বড় পাথরগুলো এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেন মনে হয় প্রচন্ড কোন শক্তি প্রাচীন এই স্থাপনাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
খুবই সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় আপনাকে পুরো রহস্যের এক দশমাংশও বুঝাতে পারিনি। কিন্তু যদি রহস্যপ্রিয় হোন, H আকৃতির মসৃণ পাথরের ব্লকগুলো একবার ছুঁয়ে দেখতে চান তাহলে পুমা পুংকু আপনাকে উত্তরবিহীন প্রশ্নের সাগরে ভাসাতে যাচ্ছে। লাপাজ থেকে কোনো গ্রুপের সাথে তিউয়ানাকু গেলেই কাছে পুমা পুংকু যেতে পারবেন।
মাচু পিচু
কিছুক্ষণ আগে ‘ইনকা’ বলে কোনো একটা শব্দ বলেছি। মনে আছে? ইনকা রহস্য নিয়ে আমি এখনো বই পড়ে যাচ্ছি। তাই মিথোলোজীর অন্যতম স্বর্গ বলতে পারেন এই ইনকা রাজ্যকে।
মাচু পিচু ঐতিহ্যবাহী ইনকা বাস্তুকলার এক অনুপম নিদর্শন। পালিশ করা পাথর নির্মিত এই শহরের প্রধান স্থাপনাগুলো হচ্ছে ইন্তিউয়াতানা (কেচুয়া: Intiwatana সূর্য স্তুপ), সূর্য মন্দির ও তিন জানালা ঘর ইত্যাদি। পুরাকীর্তিবিদদের কাছে মাচু পিচুর পবিত্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত অংশে এ স্থাপনাগুলো অবস্থিত।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে হাইরাম বিঙাম মাচু পিচু থেকে যে সব পুরাকীর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন সেসব ফেরত দেবার জন্য ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পেরু সরকার ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত পর্যটক সমাগমের ফলে এই প্রাচীন শহরের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন! উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে এখানে আগত পর্যটকের সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যায়!
এই শহরের ধ্বংসাবশেষের দিকে তাকালে আফসোস লাগবে খুব! ইনকাদের হারানো শহর খ্যাত পেরুর এই নগরীটি কতটুকু যে প্রসিদ্ধ ছিল তা ইতিহাস পড়লেই বুঝতে পারবেন। আর ইনকারা কেন মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বড় অংশ দখল করেছে তাও আপনার অ্যানসিয়েন্ট হিস্টোরি জ্ঞানচর্চার উপর ছেড়ে দিলাম। আপনি তখন অবশ্যই এই রহস্যময় স্থানে নিজেকে স্বশরীরে উপস্থিত করতে উদ্বিগ্ন হবেন, বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তেওতিহুয়াকান/তিউটিইউকান
অদ্ভুত নাম হলেও মেক্সিকান এই ঐতিহাসিক জায়গাটি ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে জায়গা করে নেয়।
আপনাকে যদি পিরামিড নিয়ে কোন প্রশ্ন করা হয়, প্রশ্ন করার আগেই পিরামিড নাম শুনে আপনি মিশর ধরে নেবেন। কিন্তু মিশরে যত পিরামিড আছে তার কয়েকগুণ বেশি পিরামিড মেক্সিকোতে অবস্থিত!
এই জায়গাটি ‘The God of the City’ নামে পরিচিত। আর যে পিরামিডটি দেখতে পাচ্ছেন, তা পরিচিত ‘The God of the Sun’ নামে। যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ১০০ বছর পূর্বে এই অঞ্চলটি স্থাপিত হয় বলে মনে করা হয়।
মেক্সিকোর এবং মেক্সিকো রাজ্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেক্সিকো রাজ্যের সান জুয়ান তিওটিইউকান পৌরসভার অন্তর্গত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ৮৩ বর্গ কিলোমিটার (৩২ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং এটি মেক্সিকোতে সর্বাধিক পরিদর্শন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে খ্যাত। ২০১৭ সালে ৪,১৮৫,০১৭ জন পর্যটক দর্শন লাভ করে। সুতরাং রহস্যপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই স্থানটি কত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতেই পারছেন।
ভ্রমণের জন্য এভাবে বুকিং করতে পারেন-
তাহলে আর দেরি না করে সুবিধামত সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। চষে বেড়ান রহস্যময় স্থানগুলোতে। তবে প্রতিটি স্থানে যাবার পূর্বে একটু ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে আরও আকর্ষণ বাড়বে।
কোনো এক সময় এরকম আরও কিছু জায়গা নিয়ে লিখবো।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
ধন্যবাদ।
আপনার কমেন্ট লিখুন