“Amazon.com strives to be the e-commerce destination where consumers can find and discover anything they want to buy online.”
-Jeff Bezos
১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরে জেফারি বেজোসের হাত ধরে শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং সেন্টার অ্যামাজনের পথচলা। সে সময় “ইন্টারনেট বিজনেস বুম”-এ অংশগ্রহণ করতে না পারায় বেজোসের যেই অনুশোচনা হয়, বেজোস তা থেকে তৈরি করেন, “রিগ্রেট মিনিমাইজিং ফ্রেমওয়ার্ক”, যার থেকে সৃষ্টি হয়েছে এই অ্যামাজন।
শুরুতে অ্যামাজন ছিল ছোট একটা অনলাইন বইয়ের দোকান যার অফিস ছিল একটা ছোট গ্যারেজে, অথচ তেইশ বছরের মাঝেই এর মাধ্যমে বিকিকিনি হয় সেই A থেকে শুরু করে Z পর্যন্ত সবকিছুর, যা প্রকাশ পায় অ্যামাজনের লোগোর মাধ্যমেই। লোগোতে এই A to Z প্রকাশ করা তীরচিহ্নটা যেন এও বুঝিয়ে দেয় যে, অনলাইন ক্রেতাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে এই অ্যাামাজনই!
শুরুতে এর নাম ছিল ক্যাডাব্রা, কিন্তু এক বছর পরে অ্যামাজন নামটা বেজোস পান ডিকশনারি ঘেঁটে। তাঁর লক্ষ্য ছিল, একসময় অ্যামাজনের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে। ঠিক অ্যামাজন নদীর মত। মাত্র ৩ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করা অনলাইনভিত্তিক তাঁর এই ব্যবসায় বর্তমানে ৫,৬৬,০০০ লোক কর্মরত আছে।
বইয়ের দোকান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও অ্যামাজনের অধীনে বর্তমানে চালু রয়েছে ১৭ ধরণের পণ্য এবং সেবা যার মাঝে, অ্যালেক্সা, অ্যামাজন, একো এবং কিন্ডেলের নাম কে না শুনেছি! বেজোসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১০৮.৯ বিলিয়ন ডলার! কী ছিল বেজোসের এই সাফল্যের পেছনে মূলমন্ত্র?
সামিট এলএ১৭-তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেজোস তাঁর সফলতার পেছনের কয়েকটি অন্যতম কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে,
এক সময় একটা কাজ
বেজোস মাল্টিটাস্কিং-এ বিশ্বাসী নন। তিনি যখন যেটা করছেন, তখন শুধু সেটাই করতে চান। ছোট থেকে ছোট বিষয়েও তিনি একই কাজ করেন। যেমন, তিনি যখন ইমেইল পড়ছেন, তখন তিনি শুধু ইমেইলই পড়তে চান।
সঙ্গী নির্বাচন
বেজোস জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছেন চতুরতার সাথে, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, সফলতার অনেকটাই জীবনসঙ্গীর উপর।
প্রতিভার মূল্যায়ন
নিজের প্রতিভা যাই হোক না কেন, তাকে কাজে লাগান বেজোস। হোক না তা যত অকেজো। যেমন, বেজোসের স্বপ্ন হচ্ছে একজন বারটেন্ডার হওয়া, কিন্তু আসল বারটেন্ডারদের মত এত দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারেন না। তাই তিনি বলেছেন যে, তিনি তাঁর বারের দেয়ালে লিখে দেবেন, “আপনি আপনার পানীয়টি ভাল চান, না দ্রুত?”
রোমাঞ্চ আগে, পরে স্বাচ্ছন্দ্য
বেজোস মনে করেন, মানুষ নিজেই তার জীবনের গল্পটা তৈরি করতে পারে। এর জন্য তাকে দু’টি বিকল্পের থেকে একটি নির্বাচন করতে হয়। স্বাচ্ছন্দ্য না রোমাঞ্চ? রোমাঞ্চকে নির্বাচন করেই বেজোস আজ এত সফল
দলগত কাজের জন্য বেজোস দিয়েছেন কিছু উপদেশ।
সঠিক মানুষদের সাথে থাকুন
বেজোস যাদের সাথে থাকেন, তাদের তিনি “ট্যালেন্টেড এক্সপার্ট” বলে আখ্যায়িত করেন। এর মানে কি এই যে সব ট্যালেন্টেড মানুষই এক্সপার্ট না? বেজোসের মতে, একটা দলে কে কে আছে তার থেকে বেশি জরুরি হচ্ছে, দলের মানুষ কীভাবে কাজ করছে। একদল প্রতিভাবান ব্যক্তি একসাথে থাকলেই যে কাজটা ভাল হবে এমনটা না। তারা কেমন কাজ করছে, তাদের একত্রে কাজ করার সামর্থ্য কতটুকু, এমন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে দলটির সফলতা। তাই বেজোস ভাল নয় বরং সঠিক মানুষদের সাথে থাকতে বলেছেন।
“Life is too short to hangout with people that are not resourceful.”
শেখার প্রতি আগ্রহ রাখুন
দলগত কাজ করতে গেলে, আপনাকে একজন ছাত্রের মত আচরণ করতে হবে। একটা দলে অনেক রকমের দক্ষ মানুষ থাকে। তাই দলে কাজের সময় সবসময় নিজেকে বিগিনার মনে করতে হবে এবং সবার থেকেই অনেক কিছু শিখতে হবে এমন মানসিকতা রাখতে হবে। আপনি হয়ত একটা কাজ একভাবে করেন। আরেকজন হয়ত সেই একই কাজ ভিন্নভাবে করে যাতে কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। শেখার কোনো শেষ নেই।
রাতারাতি কিছুই হবে না
কোম্পানি কিংবা ছোট কোনো উদ্যোগই একরাতে সফল হয়ে যায় না। এর জন্য অনেক কিছু পোহাতে হয়। অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে এমন মানসিকতা নিয়েই কাজে নামুন।
এতো গেল, বেজোসের দেয়া ব্যক্তিগত এবং দলগত সাফল্যের কিছু সূত্র, বেজোস ব্যক্তিগতভাবে যেমন সফল, তেমনি সফল তাঁর ব্যবসায়ও। ব্যবসাকে সফল করার জন্যও বেজোস ৫টি মূলমন্ত্রের কথা বলেছেন। যেগুলো হচ্ছে,
দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল
বেজোস বলেন, “আমি যদি ৫০ জনের ইন্টারভিউ নিই এবং তার থেকে যদি আমার কাউকে ভাল না লাগে, তাহলে আমি কাউকেই নির্বাচন করবো না, কিন্তু তাও আমি ভুল মানুষকে রিক্রুট করব না।“ এমনকি বেজোস তাঁর শেয়ারহোল্ডারদের কাছে লিখিত এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, কর্মী নির্বাচন অ্যামাজনের সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এবং সারাজীবন এমনটাই থাকবে।
অ্যামাজনের কর্মী নির্বাচনের সময় নেয়া ইন্টারভিউর প্রশ্নগুলোও এই আদর্শ অনুসরণ করে। প্রশ্নগুলো হয় এমন, আপনাকে যদি মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হয় তাহলে আপনি সেখানকার সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করবেন? আবার ধরুন, আপনাকে যদি ৩৪% ডিসকাউন্টে ১০,০০০ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ অফার করা হয়, তবে আপনি কি তা গ্রহণ করবেন?
জেদী এবং নমনীয়, দুইই হোন
আপনার লক্ষ্যের প্রতি আপনাকে হতে হবে জেদী আর লক্ষ্যার্জনে হতে হবে নমনীয়। যদি আপনি জেদী না হন, তাহলে গবেষণামূলক কাজগুলোতে সফল না হলে হাল ছেড়ে দেবেন। আবার যদি জেদী কিন্তু নমনীয় না হোন, তবে আপনি নতুন নতুন পন্থায় গবেষণা না করে বরং সফল না হলে দেয়ালে মাথা ঠুকবেন এবং পরে আবার গিয়ে সেই পুরনো পন্থায়েই আবার গবেষণা করতে যাবেন।
ভোক্তাদের আলাদা কিছু দিন
আপনার প্রতিযোগীরা আর আপনি যদি একই পণ্য ভোক্তাদের কাছে উপস্থাপন করেন, তাহলে আপনার বিশেষত্বটা কী? ভোক্তা কেন আপনার পণ্য কিনবে? তাই ভোক্তাদের কাছে আলাদা কিছু উপস্থাপন করতে হবে। যেমন, শুরুতে যখন সবাই নিজে গিয়ে বই কিনত, ঠিক তখনই অ্যামাজন নিয়ে এলো অনলাইন বইয়ের দোকান যা বাঁচিয়ে দিল ভোক্তাদের সময় ও শ্রম দু’টোই।
“We see our customers as invited guests to a party, and we are the hosts. It’s our job every day to make every important aspect of the customer experience a little bit better.”
কর্মীদের সন্তুষ্টি যেন ভোক্তার অসন্তষ্টির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়
ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য, কিন্তু বাহ্যিক পরিবেশটা একদমই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সমস্যা থাকবেই, কিন্তু তার প্রভাব যেন ভোক্তাদের উপর না পড়ে। ভোক্তাদের অবস্থান বাহ্যিক পরিবেশের একদম উপরে। তারা যেন কোনোভাবেই অসন্তুষ্ট না হয়।
“The best customer service is if the customer doesn’t need to call you, doesn’t need to talk to you. It just works.”
আইডিয়াগুলো সুন্দরমত কাজে লাগাতে হবে, তা যারই হোক না কেন
বেজোস বলেন, অনেকসময় কোম্পানির শিক্ষানবিশও কোম্পানির সিনিয়র অফিসারের থেকে ভাল এবং উপযুক্ত তথ্যসম্বলিত আইডিয়া দিতে পারে। ভাল আইডিয়াকে ভাল আইডিয়া হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে, নিচু পদের কারো থেকে এসেছে এই ভেবে তাকে অবহেলা করা যাবে না। আর যেই আইডিয়া যত বাস্তবসম্মত তথ্যসম্বলিত হবে তার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি।
সাময়িক লাভের থেকে দীর্ঘমেয়াদী লাভ উত্তম
এটা অনেকটা ঐ প্রবাদের মত যে, আপনি কোনো ব্যক্তিকে একটা মাছ দিলে তার এক বেলার খাবার হবে, কিন্তু তাকে মাছ ধরা শিখিয়ে দিলে তার সারাজীবনের খাবারের যোগান হয়ে যাবে। অ্যাামাজনেও এমনটাই করা হয়। তারা এমন কিছু করে না যাতে তৎক্ষণাৎ লাভ হলেও তা দীর্ঘমেয়াদী হয় না।
এছাড়াও অ্যাামাজনের কিছু দিক আছে, যা তার সফলতার পেছনে কাজ করেছে। যেমন, অ্যামাজনে বেজোস খুবই অল্প মুনাফা করেন, এতে করে তার বিক্রয় বেশি হয়। শুরুর দিকে বেজোসের হাতে অ্যামাজনের বিজ্ঞাপন দেয়ার মত টাকা ছিল না। তখন তিনি ভোক্তাসেবায় মন দেন। যাতে করে ভোক্তারা তার সেবায় সন্তুষ্ট হয় তাদের আশেপাশের মানুষকে এর কথা জানায়। এভাবে করেই অ্যামাজনের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
“We’ve had three big ideas at Amazon that we’ve stuck with for 18 years, and they’re the reason we’re successful: Put the customer first. Invent. And be patient.”
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন