মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আমাদের কৌতূহলই আমাদের মাঝে নতুন কিছু শেখার ও আবিষ্কার করার আগ্রহ জাগায়। আমাদের অনেকের মনেই হয়তো এমন কিছু প্রশ্ন লুকিয়ে আছে যার উত্তর কখনো খুঁজে বের করা হয়নি।
আজ আমরা এমনই ৫ টি উদ্ভট প্রশ্ন ও তাদের উত্তর খুঁজে বের করবো।
ফেব্রুয়ারি মাস কেন ২৮ দিনের হয়?
আমরা সবাই জানি ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের, প্রতি ৪ বছর পর পর ২৯ দিনেরও হয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন, বছরের ৭ টি মাস ৩১ দিনের হওয়ার পরেও ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের কেন?
আমরা বর্তমানে ৩৬৫ দিনের যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি তার নাম গ্রেগরি ক্যালেন্ডার। এর বহু বছর আগে গ্রীক যুগে ব্যবহার করা হতো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে মোট দিন ছিল ৩০৪ দিন, যাকে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব করা হতো। কিন্তু ৩০৪ দিনের ক্যালেন্ডারে ঋতুর হিসাব রাখা ছিল মুশকিল। তাই গ্রীক রাজা পম্পিলিয়াস ঋতুর হিসাব ঠিক রাখার জন্য আরও ৬১ দিন বাড়িয়ে ৩৬৫ দিনের বছর করেন, বছরের শুরুতে যোগ করা হয় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি নামক ২টি নতুন মাস। জানুয়ারি মাসে ছিল ৩১ দিন, আর ফেব্রুয়ারিতে ৩০ দিন।
কিন্তু এরপরই শুরু হয় বিড়ম্বনা। রোমের রাজা “জুলিয়াস” ক্যালেন্ডারে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য “কুইন্টিলিস” নামক মাসের নাম পরিবর্তন করে রাখেন “জুলিয়াস”; যা পরবর্তীতে হয় “জুলাই”। এমনকি ফেব্রুয়ারি থেকে ১ দিন নিয়ে জুলাই মাসকে ৩১ দিনের করে দেন জুলিয়াস। একইভাবে জুলিয়ানের ভাইয়ের ছেলে “আগাস্টাস” সম্রাট হওয়ার পর নিজের নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য “আগস্ট” মাসের নামকরণ করেন এবং ফেব্রুয়ারি থেকে ১ দিন দিয়ে আগস্টকেও ৩১ দিনের করে দেন। এভাবেই জুলাই ও আগস্ট হয়ে যায় ৩১ দিনের আর ফেব্রুয়ারি হয়ে যায় ২৮ দিনের।
একজন মানুষ বাঁহাতি কিংবা ডানহাতি কীভাবে হয়?
মস্তিষ্কের ডান অংশ আমাদের দেহের বাম অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মস্তিষ্কের বাম অংশ দেহের বাম অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, কারো মস্তিষ্কের ডান অংশ যদি বেশি কার্যকর হয়, তবে সেই ব্যক্তি বাঁহাতি হবে। আমাদের পৃথিবীর প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ বাঁহাতি। কিন্তু, বাঁহাতি কিংবা ডানহাতি হওয়ার প্রকৃত কারণ বিজ্ঞানীরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। অনেকের ধারণা, বাঁহাতি হওয়ার মূল কারণ আসলে জেনেটিকাল। বাবা-মা দুজনই ডানহাতি হলে সন্তানের বাঁহাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ৯%। বাবা-মায়ের যেকোন একজন বাঁহাতি হলে সন্তানের বাঁহাতি হওয়ার সম্ভাবনা ১৯% এবং বাবা ও মা দুজনই যদি বাঁহাতি হয় তাহলে সন্তানের বাঁহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬% এ।
তবে বাঁহাতি হওয়া কিন্তু মোটেও খারাপ লক্ষণ না, এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে ক্রিকেট ও বেসবলের মত খেলায় বাঁহাতিদের সফলতার হার ডানহাতিদের চেয়ে বেশি। মজার ব্যাপার হলো মানুষ ছাড়া অন্য সকল জন্তুতে বাঁহাতি ও ডানহাতি হওয়ার হার
সমান, অর্থাৎ ৫০%।
আমরা আসলে আমাদের মস্তিষ্কের কত শতাংশ ব্যবহার করতে পারি?
তোমরা অনেকেই হয়তো এই কথাটি শুনেছো যে আমরা পুরো জীবনে আমাদের মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ১০% ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারি, বাকি ৯০% শতাংশ অলসভাবে থাকে। কিন্তু কথাটি একদম ঠিক নয়। আমাদের মস্তিষ্ক মূলত ৪টি লোবে বিভক্ত, যথা: ফ্রন্টাল, প্যারাইটাল, টেম্পোরাল ও অক্সিপিটাল।
এক একটি লোব এক এক কাজ সম্পাদন করে। যেমন আমাদের চিন্তাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রন্টাল লোব, আবার শ্রবণশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে টেম্পোরাল লোব। আমাদের মোট এনার্জির ২০% শোষণ করে আমাদের মস্তিষ্ক, যেখানে মস্তিষ্কের ওজন আমাদের দেহের মোট ওজনের মাত্র ২%। তাহলে এতো এনার্জি দিয়ে তাহলে মস্তিষ্ক কী করে?
আমাদের মস্তিষ্কে মোট নিউরনের সংখ্যা প্রায় ১০০ বিলিয়নেরও বেশি। এতো বেশি সংখ্যক নিউরনকে একসাথে কাজ করানোর মত এনার্জি আমাদের শরীরে নেই। তাই দেহের প্রয়োজন ও কাজের ধরণ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ে মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ কাজ করতে পারে। প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে আমরা যে এনার্জি অর্জন করি তা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে সর্বোচ্চ ১৬% নিউরনকে কাজ করানো সম্ভব। সুতরাং, আমাদের মস্তিষ্কের পুরো ক্ষমতাকেই আমরা কাজে লাগাতে পারি, তবে তা একসাথে নয়।
মৌমাছিরা কীভাবে মধু তৈরি করে?
মৌচাকে সকল মৌমাছিরা একটি কলোনি হিসেবে বাস করে। কিন্তু কলোনির সব মৌমাছির কাজ কিন্তু মধু তৈরি নয়। মূলত কর্মী মৌমাছিদের কাজ হলো ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা। কিন্তু ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুতে প্রায় ৪০%-৮০% পানি থাকে, ফলে সেই ফুলের মধুকে সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
মৌমাছিদের দেহে ফুলের মধু সংগ্রহ করার জন্যই আলাদা একটি অঙ্গ থাকে যাকে বলা হয় “হানি স্টোমাক”। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার পর তা সেই হানি স্টোমাকে জমা করে। মৌচাকে ফিরে আসার সময় হানি স্টোমাকের বিভিন্ন এনজাইমের প্রভাবে ফুলের মধুর ধীরে ধীরে ঘন হতে থাকে, অর্থাৎ পানির পরিমাণ কমতে থাকে। মৌচাকে ফিরে আসার পর উদ্গিরন-এর মাধ্যমে মধু এক মৌমাছি থেকে আরেক মৌমাছিতে স্থানান্তরিত হয় এবং প্রতিটি মৌমাছির হানি স্টোমাকের এনজাইমের প্রভাবে মধুর ঘনত্ব বাড়তেই থাকে। শেষপর্যায়ে মৌমাছিরা তাদের ডানা দিয়ে বাতাস করে মধুর ঘনত্ব একদম কমিয়ে আনে যেন তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
মধু তৈরি হয়ে গেলে মৌমাছিরা তা অতি যত্ন সহকারে মৌচাকের বিশেষ কুঠুরিতে সংগ্রহ করে। একটি কর্মী মৌমাছি তার পুরো জীবনে এক চা চামচের ১২ ভাগের ১ ভাগ মধু উৎপাদন করতে পারে। ১ পাউন্ড মধু উৎপাদন করতে ১০০০০ মৌমাছিকে প্রায় ৭৫০০০ মাইল উড়তে হয় এবং প্রায় ৮০ লক্ষ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে হয়।
ইগলু/বরফের ঘর আমাদের কীভাবে উষ্ণ রাখে?
আমরা ছোটবেলায় কার্টুনে ও সিনেমায় মানুষকে বরফের ঘর বা ইগলুতে থাকতে দেখেছি। কিন্তু বরফ তো এমনিতেই ঠাণ্ডা, তাহলে তা আমাদের উষ্ণ কীভাবে রাখে!
তুষারপাতের সময় মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা এতোই কমে যায় যে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় খুজে পাওয়া জরুরি। কিন্তু আশ্রয় তৈরির জন্য কাঠ বা অন্য কোন সরঞ্জাম না থাকায় মানুষ তুষার দিয়েই এক ধরনের ঘর তৈরি করে যাকে বলা হয় ইগলু। মূলত আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা আমাদের দেহের তুলনায় অনেক কম থাকলে আমাদের দেহ থেকে উষ্ণতা পরিবেশে বেরিয়ে যায়। এর ফলে আমাদের দেহের তাপমাত্রা কমে যায় এবং আমরা ঠাণ্ডা অনুভব করি। তুষারের ভেতর বিভিন্ন ফাঁকে ফাঁকে অনেক বায়ুকণা আটকে থাকে।
বাতাস তাপ কুপরিবাহী, তাই তুষারের তৈরি ইগলু থেকে ভেতরের তাপ সহজে বাইরে বেরোতে পারে না। একটি ইগলু তার ভেতরে বসে থাকা মানুষের দেহ থেকে বিকিরণ হওয়া মোট তাপের প্রায় ৯৫% ধরে রাখতে পারে। ফলে ইগলুর ভেতরের পরিবেশ সহজে ঠাণ্ডা হতে পারে না। এভাবেই বরফের তৈরি একটি ঘর প্রতিকুল পরিবেশে তোমাকে প্রচন্ড ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
মেডিকেল এডমিশন কোর্স ২০২২
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে তাহমিনা ইসলাম তামিমা
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
আপনার কমেন্ট লিখুন