পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
কখনো কি এমন হয়েছে যে, ক্লাসরুমে শিক্ষক কোনো একটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছে যা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা সত্ত্বেও আপনি উত্তর দেননি এই ভেবে যে হয়ত আপনার উত্তরটা ঠিক হবে না, হয়ত এই নিয়ে ক্লাসে সবাই হাসাহাসি করবে? কখনো কি কোনো মানুষের সাথে মিশতে গিয়েও মিশেননি কিংবা কোনো কাজ করতে গিয়েও করেননি এই মনে করে যে আপনি সেই মানুষটার সাথে মেশার কিংবা কাজটা করার যোগ্য না? এই ব্যপারগুলো কি আপনার সাথে প্রায়ই হয়ে থাকে?
যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আপনি ভুগছেন ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’ নামক এক মানসিক সমস্যায় যা আপনার ভেতর হীনমন্যতা সৃষ্টি করে আপনার আত্মবিশ্বাসকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিয়ে আপনার সামনে চলার পথটাকে অনেক বন্ধুর করে তুলতে পারে। চলুন দেখে আসি তিনটি ধাপ যা অনুসরণ করলে এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স থেকে উঠে আসা সম্ভব।
প্রথম ধাপ: নিজের অনুভূতিগুলোকে নিজের সামনে তুলে ধরুন
১। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন এমনটা হচ্ছে?
অনেক সময় এমন হয় যে আমাদের জীবনে অনেক আগে ঘটে যাওয়া একটা কাহিনীকেই আমরা অবচেতন মনে বারবার মনে করে কষ্ট পাই। তাই শুরুতেই নিজে চিন্তা করে দেখতে হবে যে ছোটবেলায় কখনো এমন কিছু কি ঘটেছে যা আপনার এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের কারণ হতে পারে।
২। মনে মনে ঠিক করুন যে ঠিক কোন কারণটায় আপনি এই সমস্যায় ভুগছেন।
Be specific! কোন জিনিষটা আপনার ভেতর ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের সৃষ্টি করে তা নির্দিষ্ট করুন। আপনি কি সুদর্শন মানুষ দেখলে নিজেকে ছোট মনে করেন? মেধাবী শিক্ষার্থী দেখলে? কারো আর্থিক সচ্ছলতা দেখলে? কারো সফলতা দেখলে? ঠিক কোন জিনিষটা আপনাকে কষ্ট দেয়?
একবার এই উত্তরটা খুঁজে পেলে চিন্তা করে দেখুন যে আপনার ভেতর এমন কোন জিনিষটা আছে যা সেই মানুষটার মাঝে নেই যাকে আপনি আপনার থেকে অনেক বড় মনে করছেন।
৩। যেই কারণে আপনি নিজেকে ছোট মনে করছেন তা ভেঙে ফেলুন!
নিজের দিকে তাকান। ঠিক কোন জিনিষটার কারণে আপনি নিজেকে ছোট মনে করছেন? সেই জিনিষটাই কি আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে? অবশ্যই না! সেটা শুধু আপনার একটা অংশ। সেই জিনিষটা কি আসলেই একটা দোষ? এমনও তো হতে পারে যেই ব্যপারটা রাতদিন আপনাকে হীনম্মন্যতায় ভোগাচ্ছে তা আসলে তেমন কিছু না! হয়ত আপনার পরিচিত এমন কেউ আছে যার কাছে আপনার সেই জিনিষটাই সবচাইতে ভাল লাগে!
এরপরও যদি মনে হয় যে নাহ, জিনিষটা আসলেই একটা সমস্যা তবে মনে রাখবেন যে আপনার কোনো দোষ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং আপনিই পারেন চেষ্টার মাধ্যমে আপনার যেকোনো দোষ কাটিয়ে উঠতে।
৪। সবসময় মাথায় রাখুন যে আমরা কেউই সর্বগুণে গুণান্বিত নই।
বারাক ওবামার দুই মেয়ে তাঁকে নিয়ে বন্ধুদের সামনে অনেক লজ্জা পায়। কেন জানেন? কারণ ওবামা সামান্য একটা স্মার্টফোন অপারেট করতে পারে না! এমন আমরাও কিন্তু সবাই যে সবদিক দিয়ে অলরাউন্ডার তেমনটা না। দোষ-গুণেই মানুষ। আপনার সামান্য একটা দোষ কখনোই আপনাকে হীনম্মন্যতায় ভোগাতে পারে না। যদি ভোগায়, তবে অবশ্যই তা আপনার সেই দোষ নিয়ে গভীর চিন্তার ফল।
দ্বিতীয় ধাপ: দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন
১। অন্যের মত হতে চাওয়ার স্বভাবটা বদলান।
এই জিনিষটাই সবচেয়ে বেশি ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের সৃষ্টি করে। আপনি অন্যের কোনো বৈশিষ্ট্য দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারেন কিন্তু তাকে নকল করার চেষ্টা করাটা বোকামি। এতে করে আপনার স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যায়।
২। “মানুষ কী ভাবল” এই ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের জীবনচক্রটা হচ্ছে, “জন্ম→লোকে কি বলবে→মৃত্যু” মনে রাখবেন মানুষের কাজই অন্যকে নিয়ে চিন্তা করা। তাকে তা করতে দিন, তাকে নিয়ে মাথা ঘামানো আপনার কাজ না। Haters gonna hate, potatoes gonna potate!
৩। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন।
নিজস্ব গুণগুলো নিয়ে ভাবুন, একটা লিস্ট করুন, সেগুলোকে কাজে লাগান!
৪। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন।
ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের ভিক্টিমরা জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে করতেই। আপনি যদি একটা লিস্ট করতে বসেন যে কোন কোন দিক দিয়ে অন্য কেউ আপনার চেয়ে উত্তম তবে সেই লিস্ট কখনোই শেষ হবে না।
আমরা সকলেই একে অপরের থেকে ব্যতিক্রম যার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আজকে যাকে দেখে আপনি ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন, তার পরিবেশে আপনি বড় হলে হয়ত আপনিও তাঁর মত হতে পারতেন তাই এই নিয়ে নিজেকে ছোট ভাবার কোনো কারণ নেই।
৫। “যদি এমন হত, তবে কেমন হত?” এ ধরণের চিন্তা করা বাদ দিন।
‘যদি’ এমন হত, যে জিনিষ হয়নি তা নিয়ে পড়ে না থেকে যা হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।
৬। নেতিবাচক কথা বলা বন্ধ করুন।
যেই গুণগুলো আপনার আছে সেগুলোকে সমৃদ্ধ করুন
“নাহ! আমার এত ধৈর্য নেই, এই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না” কাজ শুরুর আগে এমন নেতিবাচক কথা বলার থেকে বরং বলুন যে, “আমার ধৈর্য নেই তাতে কী? আমি এই কাজটা করে ছাড়ব।”
৭। আত্মবিশ্বাসী হোন।
নিজেকে আজ পর্যন্ত যে যে বাজে উপাধি দিয়েছেন, তা মুছে ফেলুন। নিজেকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা চিন্তা করুন।
তৃতীয় ধাপ: বেঁচে থাকুন সব ইতিবাচকতার মধ্যে
১। অসামাজিকতা বর্জন করুন।
অনেক সময় অসামাজিকতা থেকে শুরু হয় ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স এর তাই অসামাজিকতা, লাজুক ভাব সব ঝেড়ে ফেলুন কারণ আপনি যত বেশি মানুষের সাথে মিশবেন, তত বেশি বুঝবেন যে, মানুষ আসলে আপনাকে নিয়ে তেমন কিছুই ভাবে না যেমনটা আপনি মনে করেন।
২। ইতিবাচক মানুষদের সাথে মিশুন।
এমন মানুষদের সাথে মিশুন, যারা আপনাকে আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই পছন্দ করে। আপনার ভুলগুলো নিয়ে সমালোচনা করে না বরং তা ধরিয়ে দেয়। যারা আপনাকে সমাদর করে।
৩। নিজেকে উন্নত করুন
নিজের উপর বিনিয়োগ করুন। যেই গুণগুলো আপনার আছে সেগুলোকে সমৃদ্ধ করুন। যা আপনার নেই, তা অর্জনের চেষ্টা করুন।
৪। অন্যকে সাহায্য করুন।
কখনো কাউকে সাহায্য করে দেখুন, সেই ব্যক্তি আপনার দিকে তাকিয়ে যে হাসিটা দিবে, তা আপনার সবরকমের কমপ্লেক্স দূর করে দিবে! এতে করে আপনার নিজেকে সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ন মনে হবে।
৫। নিজের ভয়গুলোর সম্মুখীন হোন।
যেই ব্যাপারটা আপনাকে ভীত করে সেগুলোকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। মানুষের সমালোচনা আপনাকে ভীত করে? তবে তাকে পাত্তা দেবার দরকার নেই!
“I always had an inferiority complex, like I wasn’t good enough. I was shy. But dancing gave me so much joy, and I was good at it. I felt like a whole person because I could dance.”
– Patricia McBride
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন