একটা সময় ছিল যখন মানুষের মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের জন্যে কোন ভাষা ছিল না। তারা নানা রকম ইশারায় একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৬০০০ এর মত ভাষা রয়েছে। কিছু কিছু ভাষা বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। এসব ভাষার উৎপত্তিকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া ও ভাষার বয়স নির্ধারণ করা একটি বিতর্কের বিষয় ও কঠিন কাজ। শাস্ত্রমতে, বর্তমানে আমরা যে ভাষা ব্যবহার করি সেসবের উৎপত্তি প্রায় ১০ হাজার বছর আগে।
প্রথম ভাষা কী ছিল তা নিয়ে তর্কের কোন শেষ নেই। তবুও ভাষাবিদরা বহু ভাষার উপরে গবেষণা করার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একটি ভাষা কত পুরনো তা নির্ধারণ করার উপায় রয়েছে। সেই ভাষাটি প্রথম কোন পাঠ্যে পাওয়া গেছে এবং তার সমসাময়িক ব্যবহার দেখলেই তার উৎপত্তির সময় বোঝা সম্ভব হয়। চলুন জেনে আসা যাক, প্রাচীন পৃথিবীর সে ভাষাগুলো কী ছিল।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
পৃথিবীর প্রাচীনতম ৫টি ভাষাঃ
আরবি
বর্তমানে সারা বিশ্বে ২৯ কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলেন। ইসলামের আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে আরব উপদ্বীপে আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাঁদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা হত। ইসলামের প্রচারকেরা ৭ম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল আরব সাম্রাজ্য গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে দামেস্ক ও পরে বাগদাদে তাঁদের রাজধানী স্থাপন করেন।
এই ভাষার প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় ৫১২ সিই-তে। আরবি ভাষা সেমিটীয় গোত্রের ভাষাসমূহের অন্তর্গত একটি ভাষা। মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ যেমন ইউএই, সৌদি আরব, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ইজরায়েল, ইজিপ্ট, জর্ডান, কুয়েত এবং ওমানের সরকারি ভাষা আরবি।
আরো পড়ুন: লিখতে-পড়তে শিখুন নতুন যেকোনো ভাষা
সংস্কৃত: ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
ভারতের এই প্রাচীনতম ভাষার উৎপত্তি প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। সংখ্যায় যদিও কম, তবু এখনও বেশ কিছু মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। সংস্কৃতের প্রভাব বহু ভাষার উপরে রয়েছে। কম্পিউটারের প্রাথমিক ভাষা সংস্কৃতের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা বংশের ভাষা সংস্কৃত সৃষ্টি হয়েছিল তামিল ভাষা থেকে। এটি ভারতের সর্বোচ্চ শ্রেণীর ভাষা। বেশিরভাগ হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ এই ভাষায় রচিত হয়েছিল। এটি এখনও ভারতের প্রশাসনিক ভাষার একটি। যদিও মাতৃভাষা হিসেবে সংস্কৃতের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
গ্রীক : ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
একটা সময় ছিল যখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং শিক্ষাবীদরা গ্রীক ভাষাতেই ভাবতেন, কথা বলতেন এবং লিখতেন। গ্রীক বিশ্বের অন্যতম প্রধান সভ্যতা ও সাহিত্যের ধারক ভাষা। বর্তমানে গ্রীস এবং সাইপ্রাস নিবাসী প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলেন, লেখেন। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যতম সরকারি ভাষাও বটে। সমস্ত জীবিত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মধ্যে কেবল আরমেনীয় ভাষার সাথে গ্রীক ভাষার মিল আছে। এ ভাষার ৩,৫০০ বছর আগের লিখিত নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলির মধ্যে প্রাচীনতম। এই ভাষার রয়েছে প্রাচুর্যময় ইতিহাস। প্রাচীনতম ইউরোপিয়ান ভাষা হিসেবে টিকে আছে গ্রীক ভাষা।
চীনা ভাষা: ১২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের শেখা প্রথম ভাষা হল চীনা। প্রাচীনতম ভাষার মধ্যে চীনা ভাষার অবস্থান পঞ্চম। পৃথিবীর প্রায় ১২০ কোটি মানুষ চীনা ভাষাকেই তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন। শাং সাম্রাজ্যের শেষের দিকে প্রায় ১২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই ভাষার উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এই ভাষার যেসব প্রাচীন লিখিত রূপ পাওয়া গেছে, ধারণা করা হয় সেগুলো ৩০০০ হাজার বছর আগে চীনে ব্যবহার করা হত। যদিও ম্যান্ডারিন চীনা ভাষাটি গণচীন ও চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান) একমাত্র সরকারি ভাষা, কথ্য চীনা ভাষার বিভিন্ন রূপ আছে।
হিব্রু: ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
হিব্রু ভাষা ইসরায়েলের দেশীয় ভাষা। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৯০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। সারা বিশ্বে ৯০ লাখ ভাষাভাষীদের মধ্যে ৫০ লাখ ভাষাভাষীরা ইসরায়েলে। হিব্রু আফ্রো-এশীয় ভাষা-পরিবারের সেমিটীয় শাখার একটি সদস্য ভাষা। তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেই এর উপস্থিতির নিদর্শন পাওয়া যায়। হিব্রু ভাষার ইতিহাস বৈচিত্র্যময়। ২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মুখের ভাষা হিসেবে এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯শ শতকের শেষে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কথ্য ভাষা হিসেবে এটির পুনর্জন্ম হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে (প্রধানত রাশিয়া থেকে) বর্তমান ইসরায়েলে (তৎকালীন ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনে) ইহুদিরা তাদের নিজস্ব বিভিন্ন মাতৃভাষা যেমন আরবি, ইডিশ, রুশ, ইত্যাদির পরিবর্তে আধুনিক হিব্রু ভাষায় কথা বলা শুরু করেন। ১৯২২ সালে হিব্রু ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনের সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।
আরো পড়ুন: ভাষার ভালোবাসায় – ভাষা নিয়ে যা যা জানতে হবে
তামিল: ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এর ইতিহাসের হদিস পাওয়া গেলেও বিশ্বাস করা হয় এর উৎপত্তি ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তামিল ভাষায় কথা বলেন। তামিল ভাষা মূলত দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় প্রচলিত দ্রাবিড় ভাষা। তামিল ভাষার সাহিত্য ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এবং এর লিখিত ভাষাটির খুব সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। তামিল ভাষার আয়ুষ্কাল ৫০০০ বছর। এর সাহিত্যভাণ্ডার সুবিশাল, বৈচিত্র্যময় এবং সংগৃহীত।
তামিলকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবি ভাষার মধ্যে একটির খেতাব দেয়া হয়েছে। ১৪ বছর আগের এক গবেষণায় দেখা যায় তামিল ভাষায় এ যাবত ১,৮৬৩ টি সংবাদ পত্র প্রকাশিত হয়েছে। ভাষাভিত্তিক গবেষণায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব দেখা যায় কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তামিল। যুগ যুগ ধরে এই ভাষার তথ্য সম্ভার সংরক্ষিত হয়েছে। এই সমসাময়িক ব্যবহারের জন্যেই তামিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন