কিছুদিন আগেই এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। তোমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছো যারা তাদের আশানুরূপ ফল পেয়ে খুশিতে প্রায় আটখানা। অন্যদিকে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে যাদের রেজাল্ট একেবারেই মনের মত হয়নি। তারা হয়তোবা মন খারাপ করে বসে আছো, আব্বু-আম্মু আর পাশের বাসার আন্টিদের নানান ধরণের কথা তো আছেই।
অনেকের বাসা থেকে তো “রিকশা কিনে দিবো” অথবা “বাসার বাসায় কাজ করবি”-এই ধরণের বিখ্যাত ডায়ালগও শুনতে হচ্ছে! আমার মনে আছে আমি নিজেও “একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান দিয়ে দেই”-ধরণের বক্তব্য শুনেছিলাম। যারা এমন মন খারাপ করে বসে আছো তাদের জন্য বলি, আব্বু-আম্মু হয়তোবা রাগ করে অনেক কিছুই বলে। কিন্তু, দিন শেষে ঠিকই তোমাদের ভর্তি হতে হবে কলেজে। তাই রেজাল্ট যা হওয়ার হয়েছে, কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকো।
বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরেও অনলাইনে Priority list তৈরির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পূর্বে যে ধরনের বিষয়গুলো খেয়াল না রাখলেই নয় চলো দেখে আসি সেই বিষয়গুলো।
১) Priority List তৈরির ক্ষেত্রে সাবধানতা:
অনলাইনে কলেজ নির্বাচন এর জন্য তোমাকে একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে। যেখানে তোমার সব থেকে বেশি পছন্দের কলেজের স্থান হবে সবার উপরে এবং পর্যায়ক্রমে কম পছন্দের কলেজ গুলোর স্থান নিচে নিচে সাজাতে হবে। কাজটা অনেক সহজ হলেও বেশ কিছু ভুলের কারণে তোমাকে অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতে পারে। তাই প্রথমেই চলো ভুলগুলোর কথা জেনে নেই।
ক) মার্কস বিবেচনা করে অগ্রাধিকার প্রদান: বর্তমানে এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই মার্কশিট প্রকাশ করা হয়। প্রথমেই তোমাকে জানতে হবে, কলেজ কখনোই জিপিএ দেখে তোমাকে নির্বাচন করবে না!
খুব করুণ সত্যি এই যে, সবসময়ই তোমার মার্কস দেখে তোমাকে নির্বাচন করা হবে। তাই তোমার মোট নম্বর যোগ করে ফেলো এবং দেখো মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে তুমি কত পেয়েছো। এখন তোমাকে বেশ কিছু বিষয় চিন্তা করতে হবে; তার মধ্যে অন্যতম হলো, তুমি কত পেয়েছো আর তোমার আশেপাশে সবাই কত পেয়েছে। একটু তুলনা করলেই তুমি পার্থক্য দেখতে পাবে আর আন্দাজ করতে পারবে তুমি আসলে কোন পর্যায়ে আছো।
যেহেতু পরীক্ষা শেষ এবং রেজাল্টও তোমার হাতে, তাই এই মুহূর্তে আসলে রেজাল্ট খারাপ হলেও তোমার মন খারাপ করার কিছুই নেই। মন খারাপ করলে কি রেজাল্ট পরিবর্তন হয়ে যাবে? তাই যে নম্বর হাতে আছে তাতেই সন্তুষ্ট থেকে সামনে এগিয়ে যাও।
আরো পড়ুন: স্কুল পেরিয়ে কলেজে : ফার্স্ট ইয়ারে যে কাজ গুলো না করলেই নয়
এখন তুমি নিজেও অনুমান করো আর বড় ভাইয়া-আপুদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো, আসলে কোন কলেজের জন্য কত নম্বর পাওয়ার প্রয়োজন হয়। সব যাচাই-বাছাই করে তারপর দেখো আসলে কোন কলেজে তোমার ভর্তি হবার চান্স আছে। হয়তোবা তোমার অনেক নামকরা একটা কলেজে ভর্তির ইচ্ছা ছিলো কিন্তু তোমার মার্কস খারাপ থাকার কারণে মনে হচ্ছে তুমি চান্স পাবে না। তাহলে তোমাদের কাছে একটা পরামর্শ থাকবে, সেই কলেজকে Priority list-এ জায়গা দিওনা।
যদি মনে হয় কোন একটা কলেজ যা তোমার প্রিয়, আর সেখানে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে, কেবল সে ক্ষেত্রেই তুমি সে কলেজকে অগ্রাধিকার দিবে। কারণ রেজাল্ট ৩ বার প্রকাশিত হয়। ৩ ধাপেই তুমি যদি লেগে থাকো তোমার স্বপ্নের কলেজ পেয়েও যেতে পারো!
খ) “ব্রাঞ্চ”এর বিষয়ে সতর্কতা: আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষিয় হলো ব্রাঞ্চ। ধরি তোমার প্রিয় কলেজ “ক”। যার ২টি ব্রাঞ্চ আছে “ক” মিরপুর এবং “খ” মতিঝিল। তুমি হয়তোবা “ক” মিরপুরে ভর্তি হতে চাও, কিন্তু তোমার লিস্টের শুরুর দিকে “ক” মতিঝিল দিয়ে রেখেছো! আমার খুব কাছে থেকে এমন ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই ভুলের জন্য তোমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই আগে থেকেই সব কিছু জেনে নিয়ে বুঝে শুনে লিস্ট তৈরি করো।
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৫
২) কলেজ থেকে বাসার দূরত্ব:
ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের সিলেবাস নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাসের থেকে অনেক বড় এবং এখানে সময় অনেক কম পাওয়া যায়। এই অল্প সময়ের মধ্যে তোমার উচিত বেশিরভাগ সময় পড়ার কাজে ব্যয় করা। তোমার কলেজ যদি বাসা থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে প্রতিদিনের যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যাবে। আর দিন শেষে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে।
তাই পড়ালেখায় মনোযোগ বসানো এবং সামনে ভালো করা তোমার জন্য হয়ে যাবে অনেক কষ্টের বিষয়। তাই চেষ্টা করো কলেজটি যেন বাসা থেকে অনেক দূরে না হয়ে যায়।
তাই তুমি যে লিস্ট তৈরি করবে সেখানে শুরুর দিকে এমন কলেজগুলো দিও যেগুলো তোমার বাসার নিকটবর্তী। বাসা নিকটবর্তী যদি নাও হয়, তাহলে এমন রেখো যেন কলেজ থেকে বাসায় আসা-যাওয়া করতে দিনে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় না হয়।
৩) কলেজে পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্ট:
আমাদের দেশে এখনও কোন একটা কলেজ ভালো অথবা খারাপ এটি নির্বাচন করা হয় বেশিরভাগ সময়েই কলেজটির পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্ট দেখে। তোমারও উচিত হবে কলেজের পূর্ববর্তী বছরের রেজাল্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই কলেজে ভর্তি হওয়া। কলেজের পাশের হার কেমন, পরীক্ষার্থী কত জন এবং জিপিএ-5 কতজন পেয়েছে, সেগুলো দেখে তারপর কলেজ নির্বাচন করো।
৪) Extracurricular Activities:
আয়মান ভাইয়ার কথাটা মনে আছে, গোল্ডেন এ-প্লাসের সাথে একটা গোল্ডেন কালারের ট্রফি? আসলে দিন শেষে তোমার রেজাল্ট যেমন জরুরি, তেমন তোমার অর্জন আর অভিজ্ঞতার বিষয়টিও জরুরি। তাই চেষ্টা করো কলেজ লাইফ থেকেই নানা ধরনের Extracurricular activities-এর মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে।
সে জন্য তোমাকে যেমন আগে থেকে কলেজের রেজাল্ট কেমন তার খবর নেয়া লাগবে, ঠিক একইভাবে কলেজে কতগুলো ক্লাব আছে, তাদের রেগুলারিটি কেমন, কতগুলো ফেস্ট আয়োজন করা হয় ইত্যাদি বিষয়ের একটা ধারণা তোমার থাকা উচিত।
৫) Teacher-Student Ratio:
সাধারণত ঢাকার কিছু এবং ঢাকার বাইরের অনেক কলেজেই ছাত্র অনেক হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম থাকে। যার ফলে দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টের ঠিকমতো ক্লাস হয়না শিক্ষক স্বল্পতার কারণে।
যেমন ধরো, বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে দেখা যায় সায়েন্স,কমার্স এবং আর্টস-সবার জন্যই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। আর এই বিষয়ের শিক্ষকের অভাব ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব অঞ্চলেই।
শুধু মাত্র একটা বিষয় না বরং সায়েন্সের অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকেরও সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে অনেক কলেজে। তাই আগে থেকেই শিক্ষক ও ছাত্রের অনুপাত সম্পর্কিত ধারণা রেখেই কলেজ নির্বাচনের লিস্ট তৈরি করা উচিত।
৬) Class-Exam Ratio:
Class-Exam Ratio বলতে সোজা বাংলায় বোঝায় পরীক্ষা এবং ক্লাসের অনুপাত। অনেক কলেজে দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে পরীক্ষা হয়। সে অনুপাতে ক্লাসে সিলেবাস শেষ হয় কম। আবার অনেক কলেজে পরীক্ষা থেকে ক্লাস অনেক বেশি হয়। ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তুমি কতটা চাপ নিয়ে পড়ালেখা করতে পারো তার উপর।
কলেজের অবস্থা দেখে এবং নিজের কথা ভেবে দেখো, কোনটা তোমার জন্য ভালো হয়। আমার মতে পরীক্ষা বেশি দিলে অর্থাৎ চাপের মধ্যে থাকলে তুমি ভালো করবে। কারণ কলেজে সিলেবাস আসলেই অনেক বেশি আর সময় অনেক কম। তাই তুমি যত পরীক্ষা দিতে থাকবে ততই সামনে এগিয়ে যাবে। যদিও এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। তাই তোমাদেরকে একটাই পরামর্শ, নিজের ক্যাপাসিটি বিবেচনা করে তারপর কলেজ বাছাই করো।
৭) কলেজের সময়সূচী:
কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত কলেজ হবে অথবা ছেলেদের কোন শিফট, মেয়েদের কোন শিফট ইত্যাদি বিষয়গুলো আগে থেকে জেনে রেখো।
তুমি স্কুলে থাকতে কোন শিফটে স্কুলে যেতে সেটা দেখে এবং তার অভিজ্ঞতা থেকে ঠিক করো কোন শিফটে পড়লে তুমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে এবং যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। ব্যাপারটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের উপর নির্ভর করবে। চাইলে সাথে সাপ্তাহিক ছুটির ব্যাপারটাও দেখে রাখতে পারো!
“যেই কলেজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছো, সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া অথবা সেখানে পড়ুয়া কোন সিনিয়র ভাইয়া বা আপুর পরামর্শ নাও।”
৮) ল্যাবরেটরির অবস্থা সম্পর্কে জানা:
সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খুব কম কলেজেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ল্যাবরেটরি দেখা যায়। অনেক ল্যাবরেটরি থাকলেও ভালো ইন্সট্রাকটর না থাকার জন্যে খুব বেশি শেখার সুযোগ থাকে না!
তাই যে কলেজগুলোকে তোমার লিস্টের উপরের দিকে প্রাধান্য দিচ্ছো, তাদের ল্যাবরেটরির অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রেখো।
৯) Affordable কিনা:
তুমি যেই কলেজটিকে তোমার লিস্টের উপরে অবস্থান দিচ্ছো মাথায় রেখো সেই কলেজটির বেতন-ফি কত এবং সেটা তোমার সাধ্যের মধ্যে আছে কিনা। অনেক সময় ঝোঁকের বশেই অনেকে এমন কলেজ লিস্টের উপরের দিকে দিয়ে বসে যার খরচ বহন করা তাদের পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।
তাই অবশ্যই তুমি যে কলেজটাকে তোমার লিস্টের উপরের দিকে স্থান দিচ্ছো তার খরচ সম্পর্কে আগে থেকেই খোঁজ নিয়ে রাখবে।
১০) সিনিয়রদের পরামর্শ নাও:
তুমি যদি উপরের নয়টা কাজ করতে ব্যর্থ হও তবুও অন্তত এই কাজটি করো। যেই কলেজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছো, সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া অথবা সেখানে পড়ুয়া কোন সিনিয়র ভাইয়া বা আপুর পরামর্শ নাও। তাদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো জেনে নাও।
সব ধরনের ভালো এবং খারাপ অভিজ্ঞতা জেনে নেয়ার ফলে তুমি কলেজ সম্পর্কে একটা সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবে। তারপর নিজেই বিচার করে দেখো এই কলেজটি তোমার জন্য কতটা উপযোগী।
কলেজ নির্বাচনের পূর্বে এই দশটি বিষয় বিবেচনা করে যদি একটি কলেজকে তুমি দশের মধ্যে নম্বর দাও, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের কোন কলেজই দশে দশ পাবে না! কারণ, দিন শেষে সবারই কোন না কোন ত্রুটি থাকেই। কিন্তু চেষ্টা করো ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে নিজের জন্য ভালো হবে এমন কলেজই বেছে নিতে।
তোমাদের সবার জন্য অনেক শুভকামনা!
বছরজুড়ে অভিজ্ঞ টিচারদের সাথে ক্লাস 6-10 এর পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে আজই ভিজিট করো আমাদের অনলাইন ব্যাচ ২০২৫ -এ:
এইচএসসি ও এডমিশন পরীক্ষার্থীদের জন্য আমাদের কোর্সসমূহঃ
- HSC 25 অনলাইন ব্যাচ ২.০ (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
- HSC 26 অনলাইন ব্যাচ (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
- HSC 25 অনলাইন ব্যাচ (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি)
- HSC 26 অনলাইন ব্যাচ (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি)
- মেডিকেল এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- ঢাকা ভার্সিটি A Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- ঢাকা ভার্সিটি B Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- বুয়েট কোশ্চেন সলভ কোর্স
- গুচ্ছ A Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- গুচ্ছ B Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সসমূহঃ
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা: Study Abroad Complete Guideline
- Student Hacks
- IELTS Course by Munzereen Shahid
- Complete English Grammar Course
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- ঘরে বসে Freelancing
- Facebook Marketing
- Adobe 4 in 1 Bundle
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন