সময়কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন
আপনি যদি সবচেয়ে বেশি ফলাফল অর্জন করতে চান তবে আপনাকে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে হবে। ১৫ মিনিট, ৩০ মিনিট, ১ ঘণ্টা বা ৩ ঘণ্টা, যতক্ষণই আপনি কাজ করুন, ততক্ষণ অন্য কোন কাজে যাওয়া যাবে না বা অন্য কোনদিকে মনোযোগ দেওয়া যাবে না।
একমাত্র এভাবেই আপনি একটি কাজে সবচেয়ে বেশি ফলাফল অর্জন করতে পারেন। আপনার কাজ যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে আপনার সময়কে এভাবে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়াটা তত বেশি জরুরি হয়ে পড়বে। যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করবেন তখনই এভাবে আপনার মূল্যবান সময়কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন।
একটি কাজ সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ষাট থেকে নব্বই মিনিট প্রয়োজন। প্রথম ত্রিশ মিনিট তো লাগে নিজেকে স্থির করতে। যেমন, খসড়া প্রস্তুত, প্রস্তাবনা তৈরি, প্রতিবেদন দেখা, প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গঠন করা প্রভৃতি।
যখন আপনি কাজের মধ্যে ঢুকে যান তখন আপনি একটি বিশেষ দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন। আপনার মধ্যকার সৃজনশীলতা তখন বের হয়ে আপনার কাজটিকে আরো সুন্দর করে তোলে।
কখনো সৃজনশীল কাজের সাথে প্রশাসনিক কাজকে মেশাবেন না
আপনার প্রশাসনিক কাজ বা অফিসিয়াল কাজের সাথে কখনোই সৃজনশীল কাজকে মেশাবেন না। প্রশাসনিক কাজ আর সৃজনশীল কাজ একত্রে করা যায় না। কারণ প্রশাসনিক কাজের জন্য দরকার দ্রুত চিন্তা। আপনাকে দ্রুত কাজ করতে হবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দ্রুত স্বল্পমেয়াদি চিন্তার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, সৃজনশীল চিন্তার জন্য দরকার শান্তি ও স্থিরতা; পরিকল্পনা ও কাজ।
‘আপনার প্রশাসনিক কাজ বা অফিশিয়াল কাজের সাথে কখনোই সৃজনশীল কাজকে মেশাবেন না। প্রশাসনিক কাজ আর সৃজনশীল কাজ একত্রে করা যায় না। কারণ প্রশাসনিক কাজের জন্য দরকার দ্রুত চিন্তা। আপনাকে দ্রুত কাজ করতে হবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দ্রুত স্বল্পমেয়াদি চিন্তার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, সৃজনশীল চিন্তার জন্য দরকার শান্তি ও স্থিরতা; পরিকল্পনা ও কাজ।’
(এই অনুচ্ছেদটি আবার পাঠ করুন। তারপর একটু থামুন। একটু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন। হয়ত আজকের, এই মুহূর্তের শান্ত ও স্থিরভাবে করা ধীর চিন্তা আপনাকে নিয়ে যাবে সমৃদ্ধ কোন ভবিষ্যতের দিকে।)
সৃজনশীল সময়কে আপনার ‘আভ্যন্তরীণ মুখ্য সময়’ হিসেবে দেখুন। আভ্যন্তরীণ মুখ্য সময় মানে আপনার চিন্তা, পরিকল্পনা ও জীবনে এগিয়ে যেতে যে সময় ব্যয় করবেন তাই। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বাকি প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করুন ‘বহিরাগত মুখ্য সময়।’ এগুলোকে একত্রে মেশাবেন না। দরকার হলে যখন সৃজনশীল কাজ করবেন তখন আপনার দরজার বাইরে ‘বিরক্ত করবেন না’ নোটিশ টাঙিয়ে দিন।
কীভাবে সময়কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করবেন?
এখানে কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হলো। আপনার যা সুবিধা হয় তা ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনটি আপনার কার্যকারিতা ও দক্ষতাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।
প্রথমত, ভোরবেলা উঠে কাজ করুন। তখন আপনার মনোভাব থাকবে সতেজ ও ঝরঝরে। প্রায়ই দেখা যায় যারা সফল ব্যবসায়ী তারা সকলেই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং ভোর ৫টা-৬টার মধ্যে উঠে পড়েন।
এতে করে তারা বিনা বাধায় ৬০ থেকে ৯০ মিনিট কাজ করার সুযোগ পান। আপনি যদি কার্যালয়ে যেতে দেরিও করে ফেলেন তারপরও আপনি অন্য যে কারও থেকে ৯০ মিনিট এগিয়ে থাকবেন। আপনার অফিসে ঠিক এই কাজটিই করতে আপনার হয়ত ৩ ঘণ্টা লাগত।
আর একটি ভালো সময় হচ্ছে আপনার দুপুরের খাবারের সময়। এই সময়কেও আপনি আপনার সুবিধামতো কাজে লাগাতে পারবেন। এটা আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ।
আপনার ফোন বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ এবং অন্য সব ঝামেলা থেকে আপনি দূরে আছেন। যখন অন্য সবাই কার্যালয়ের বাইরে দুপুরের খাবার খাচ্ছে তখন আপনি একান্তে কিছু সময় পাবেন। আপনার কাছে নিরিবিলি থাকার মতো ৬০ মিনিট আছে। এই শান্ত ও নিরিবিলি সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগান। এই সময় আপনি আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে একাগ্র মনোযোগ দিতে পারেন।
‘বিরক্ত করবেন না’ নোটিশের ব্যবহার
আরো একটি কৌশল আছে যেটা আপনি ব্যবহার করলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন। আপনার কার্যালয়ের দরজা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করুন এবং সবচেয়ে বড় প্রকল্পের দিকে একাগ্র মনোযোগ দিন। অনেক নির্বাহী পরিচালকরা আবার অফিসে সময় পান না বলে বিভিন্ন হোটেলে যান, রুম বুক করেন এবং দরজায় লিখে দেন ‘বিরক্ত করবেন না’।
এতে করে তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি ধীর চিন্তা করে পরিকল্পনা করার সময় পায়। আর এই নোটিশ দেখা মানে সবাই জানে যে খুবই মারাত্মক কিছু না হলে প্রবেশ নিষেধ।
আমার এক সহযোগীর কথা বলি। তিনি একজন অসাধারণ প্রতিভাবান ও দক্ষ নারী। তিনি আমাকে একদিন আক্ষেপের সুরে বললেন, তিনি সারাক্ষণ নিজের কাজে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বাধা পান। এর ফলে তিনি তার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে পারছেন না এবং সময়মতো হিসাব বিবরণীও পাঠাতে পারছেন না।
একজন সাধারণ কর্মজীবীর চেয়ে এভাবে কাজ করে দুইগুণ, তিনগুণ বা পাঁচগুণ বেশি কর্মদক্ষতা অর্জন করতে পারেন
তারপর আমি তাকে ‘বিরক্ত করবেন না’ নোটিশটি কাজে লাগানোর জন্য সুপারিশ করলাম। আরও বললাম, এই নোটিশটি আপনার দরজায় লাগিয়ে সকালে টানা ১ ঘণ্টা ও বিকালে টানা ১ ঘণ্টা কাজ করুন। দেখুন কী হয়! কিছুদিন পর তিনি আমার সাথে দেখা করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এটা তার কর্মজীবনে বিরাট এক পরিবর্তন আনলো।
তিনি বুঝতে পারলেন, এইসব ছোট ছোট বাধাবিপত্তিই তাকে দক্ষভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। সাথে সাথে এগুলোর সমাধান না করলেও চলে। তাই তিনি তার সৃজনশীল কাজটি শেষ করে তারপর এগুলোতে হাত দেন।
কিছু অতিরিক্ত সময় লাভ করুন!
আরো একটি বড় কৌশল আছে যেটা অনেক নির্বাহী পরিচালকরা দ্রুত কাজ করার জন্য ব্যবহার করেন। এটা এতটাই সহজ যে এটা আমরা সবাই ইচ্ছা করলে কাজে লাগাতে পারি।
ঘুম থেকে একটু সকালে উঠুন
ঘুম থেকে একটু সকালে উঠলেন এবং ১ ঘণ্টা আগে অফিসে আসুন। ঐ ১ ঘণ্টাতে আপনি আপনার পুরো দিনের কাজ সংগঠিত করতে পারেন এবং সম্ভাব্য কোন বাধা ছাড়াই কাজ আরম্ভ করতে পারেন। তখন থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা কাজ করুন। দেখবেন অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন। আবার সবাই চলে যাওয়ার পর আরো ১ ঘণ্টা থাকুন এবং আপনার সারাদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে পরিপূর্ণ রূপ দিন।
এটা একটি চমৎকার কৌশল! এভাবে আপনি যদি আপনার দিন কাটান তবে আপনি আপনার কার্যালয়ে কম সময়ে আসতে পারবেন এবং বাসায় ফিরতেও কম সময় লাগবে। এভাবে আপনি আপনার প্রতিদিনের কাজে ৩ ঘণ্টা সময় যোগ করতে পারছেন। আপনি একজন সাধারণ কর্মজীবীর চেয়ে এভাবে কাজ করে দুইগুণ, তিনগুণ বা পাঁচগুণ বেশি কর্মদক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
আর এই অর্জন আপনার কর্মজীবনকেই পাল্টে দিবে।
মনে রাখবেন, আপনার মধ্যে সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। আপনার সৃজনশীল কাজের জন্য আলাদা সময় এবং আপনার প্রশাসনিক কাজের জন্য আলাদা সময় বের করতে হবে। তবেই আপনি আপনার কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করতে পারবেন এবং আপনার পেশাগত জীবনে আরও দ্রুত এগিয়ে যাবেন।
এই লেখাটি লেখকের টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি থেকে নেয়া হয়েছে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে আসুন এই লিংক থেকে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন