শিক্ষাব্যবস্থার আমূল রুপান্তর: নতুন ও পুরাতন কারিকুলামের পার্থক্য

January 21, 2024 ...

একটি দেশের উন্নয়নের মূল চাবি কাঠি হলো সেই দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা। ডিজিটাল এই যুগে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত বছর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যা হলো নতুন কারিকুলাম। 

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সব পরিবর্তনের প্রথম শোনার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা সাধারণ মানুষ প্রায় সবার মনেই কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়। সেই প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো– পুরাতন কারিকুলাম কেন পরিবর্তন করা হলো? নতুন আর পুরাতন কারিকুলামের কি পার্থক্য আছে? তাই এই ব্লগের পুরোটা জুড়ে থাকছে বাংলাদেশের নতুন ও পুরাতন কারিকুলামের পার্থক্য সম্পর্কে আদ্যপান্ত। 

 

কেমন ছিলো পুরাতন কারিকুলাম?

‘শিক্ষাক্রম’ বা কারিকুলাম হলো একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংবিধান। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অথবা সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর ১৯৭৬, ১৯৯৫ ও ২০১২ তিনবার বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন হয়েছে। এবার চতুর্থবারের মতো ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের শিক্ষাক্রমে আমূল পরিবর্তনের কারণে যে প্রশ্নটি সবার মাথায়ই এসেছে, তা হলো– “কেন পুরাতন কারিকুলাম বাদ দিয়ে এই নতুন কারিকুলাম আনা হলো?”

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিলো পুরাতন কারিকুলাম। তবে এই কারিকুলামটি একমুখী ও পাঠ্যবই-কেন্দ্রিক হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের সুযোগ ছিলো কম। পরীক্ষায় সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি থাকলেও, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বহিঃপ্রকাশ করার ছিলো না কোনো উপায়। এছাড়াও, পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু মুখস্থ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। পুরাতন কারিকুলামের এই সব ত্রুটি ও দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই প্রবর্তন করা হয়েছে নতুন কারিকুলাম

 

নতুন কারিকুলামে যত পরিবর্তন 

এই নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পুরো কাঠামোকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নতুন কারিকুলামের কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন –

  • বাতিল হচ্ছে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি।
  • ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না।
  • প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা থাকছে না।
  • প্রাথমিক শ্রেণিতে সবার জন্য ৮ টি বই এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০টি বই পড়তে হবে।
  • শুধু এসএসসি তে গিয়ে ১ম পাবলিক পরীক্ষা হবে।
  • একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুইটি পাবলিক পরীক্ষার সমন্বয়ে এবং শ্রেণি অভিক্ষার সমন্বয়ে ফলাফল হবার কথা রয়েছে।

 

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- নতুন কারিকুলামে পরিবর্তন

এক নজরে নতুন কারিকুলাম [ছবি: কালের কণ্ঠ]

 

নতুন পাঠ্যবই

নতুন কারিকুলামের আলোকে ২০২২ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করা হয়। এই পাঠ্যবইগুলো পুরাতন পাঠ্যবই থেকে বেশ কিছু দিক দিয়ে আলাদা। নতুন পাঠ্যবইগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক দক্ষতা  বিকাশের দিকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন পাঠ্যবইয়ের কিছু বিষয়বস্তু পরিবর্তন করা হয়েছে।
  • এই পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই নতুন পাঠ্যবইয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দলগত ব্যবহারিক কাজ ও অনুশীলন, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতাভিত্তিক বিকাশে সাহায্য করবে।

 

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- নতুন কারিকুলামের নতুন পাঠ্যবই

নতুন কারিকুলামের নতুন পাঠ্যবই 

 

  • নতুন পাঠ্যবইয়ের লিখনিতে পাঠদানের ভাষা সহজ করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই পড়ার বিষয়বস্তু বুঝতে পারে।
  • পড়াশোনাকে আরো আকর্ষনীয় করতে নতুন পাঠ্যবইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর ছবি। এছাড়াও বইয়ের বিন্যাসে ও অলংকরণেও এসেছে পরিবর্তন।
  • সবশেষে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বর্তমান সময়োপযোগী সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক বিষয়ের পাশাপাশি, জীবনমুখী দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবইগুলো।

 

পোস্টার প্রেজেন্টেশন সুপার কোর্স

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • যেকোনো বিষয় এর উপর কিভাবে পোস্টার তৈরি করতে হয়
  • আত্মবিশ্বাসের সাথে কিভাবে পোস্টার প্রেজেন্ট করতে হয়
  • QnA Session-এ Smartly উত্তর দেওয়ার টিপস
  • গ্রুপ ওয়ার্ক হিসেবে পোস্টার প্রেজেন্ট করার হ্যাকস
  •  

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- পুরাতন এবং নতুন বইয়ের পার্থক্য 

    ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে নতুন কারিকুলাম। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে। 

    ইতিমধ্যে বছরের প্রথম দিনে ‘বই বিতরণ উৎসবে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামের নতুন পাঠ্যবই হাতে পেয়েছে। তাই এবার ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বই আর সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের আলোকে দেখে নেই পুরাতন এবং নতুন কারিকুলামের বইয়ের পার্থক্য –  

     

    ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বই 

     

    পার্থক্যের বিষয় পুরাতন বই

    অধ্যায়ের নাম: স্বাভাবিক সংখ্যা ও ভগ্নাংশ

    নতুন বই

    অভিজ্ঞতার নাম: সংখ্যার গল্প

    বেসিক কনসেপ্ট ব্যখ্যা আছে আছে
    গল্পে গল্পে ব্যখ্যা নেই আছে
    কাগজ ভাঁজের খেলা নেই আছে
    পাজল, ম্যাজিক দিয়ে কনসেপ্ট বোঝানো নেই আছে
    একক কাজ নেই আছে
    জোড়ায় কাজ নেই আছে
    অনুশীলনী আছে আছে

    ৬ষ্ঠ শ্রেণির পুরাতন গণিত বই

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- ৬ষ্ঠ শ্রেণির পুরাতন গণিত বই

     

    ৬ষ্ঠ শ্রেণির নতুন গণিত বই

     

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- ৬ষ্ঠ শ্রেণির নতুন গণিত বই

     

    সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই 

     

    পার্থক্যের বিষয় পুরাতন বই

    অধ্যায়ের নাম: নিম্নশ্রেণীর জীব

    নতুন বই

    অভিজ্ঞতার নাম: জীববৈচিত্র্য 

    বেসিক কনসেপ্ট ব্যখ্যা আছে আছে
    অনুশীলনী আছে আছে
    সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর  আছে নেই
    নৈর্ব্যক্তিক  আছে নেই
    দলীয় কাজ  আছে আছে
    দলীয় কাজের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তর, যাচাই এবং পরীক্ষণ  নেই আছে

    সপ্তম শ্রেণির পুরাতন বিজ্ঞান বই

     

    শ্রেণির পুরাতন বিজ্ঞান বই

    সপ্তম শ্রেণির নতুন বিজ্ঞান বই

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- ৭ম শ্রেণির নতুন বিজ্ঞান বই

     

     

    হাতে-কলমে শেখা

    পুরাতন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ছিল পাঠ্যবই কেন্দ্রিক। এসসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবহারিকের জন্য কিছু নাম্বার বরাদ্দ থাকলেও, অন্য শ্রেণিগুলোতে হাতে-কলমে পড়ালেখার বাস্তব প্রয়োগের জন্য সুযোগ ছিলো না। 

    তবে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনের পাশাপাশি, পরিবর্তন এসেছে শিখন পদ্ধতিতেও। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দলগত ব্যবহারিক কাজ ও পোস্টার প্রেজেন্টেশন মাধ্যমে পড়ালেখা শিখতে পারবে। একদিকে দলগত ব্যবহারিক কাজ শিক্ষার্থীদের পড়া মুখস্ত করার বদলে হাতে-কলমে শিখতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে পোস্টার প্রেজেন্টেশন শিক্ষার্থীরা পড়ার বিষয়বস্তু উপাস্থাপন করতে পারবে।

    ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোনো পরীক্ষা

    নতুন কারিকুলাম প্রকাশ পাওয়ার পর যে কথাটি সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তা হলো – “নতুন কারিকুলামে থাকছে না কোন পরীক্ষা!” আসলেই কি তাই? এ কথাটি আংশিক সত্য হলেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, নতুন কারিকুলামে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। তাই বলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মূল্যায়ন হবে না তা কিন্তু নয়। শ্রেণিকক্ষেই ধারাবাহিক পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে তাদের অগ্রগতি।

    পুরাতন কারিকুলাম অনুসারে শিক্ষার্থীদের বছরে তিনবার প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক বা অর্ধবার্ষিক এবং বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হতো। নতুন কারিকুলামের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি ছাড়া সব শ্রেণিতে বছর শেষে শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা হবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষা থাকবে না।

    এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইংয়ের সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়ালেখার ধারা ও মূল্যায়ণে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাভীতি থেকেও মুক্ত হবে। নতুন এই পদ্ধতির জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭টি বিষয়ে তিনটি বই পড়ানো হবে এবং তৃতীয় শ্রেণিতে ৮টি বিষয়ে ৬টি বই পড়ানো হবে।”

    পিইসি, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা

    পুরাতন কারিকুলামে কেন্দ্রীয়ভাবে পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত ছিলো পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। ২০০৯ সালে জাতীয়ভাবে শুরু করা হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইবতেদায়ি পরীক্ষাও শুরু করা হয়। তার এক বছর পর ২০১০ সালে শুরু হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য জেএসসি পরীক্ষা এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয় জেডিসি পরীক্ষা।

    তবে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির এই পরীক্ষগুলো পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ নেই। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও দেওয়া হবে। কিন্তু এই পরীক্ষাগুলোকে ‘শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা’ বলা হবে, পাবলিক পরীক্ষা না। 

     

    নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি

    পুরাতন কারিকুলামের সাধারণ মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিলো পরীক্ষা। তবে নতুন কারিকুলামের সাথে পুরাতন কারিকুলামের পার্থক্য হলো মূল্যায়ন পদ্ধতি। নতুন কারিকুলামে পরীক্ষার পাশাপাশি, থাকছে বেশ কিছু নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি।

    নতুন কারিকুলামে পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হচ্ছে শিখনকালীন ও ধারাবাহিক পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বিষয়-শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন।

     

    শিক্ষাব্যবস্থা- নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি

    নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি [ছবি: নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩]

     

    নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত যেহেতু কোন পরীক্ষা থাকবে নাই, তাই পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, মানে ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ভিত্তিতে। নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পড়ুন– এক নজরে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৪: জানার আছে যা কিছু ব্লগটি থেকে।

     

    নবম দশমে বিভাগ বিভাজন

    পুরাতন কারিকুলামে নবম দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজনের প্রচলন ছিল ১৯৯২ সাল থেকে। এই বিভাজনের ফলে শিক্ষার্থীদেরকে নবম শ্রেণিতেই বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি বিভাগ নির্বাচন করতে হতো। এই বিভাগ বিভাজনের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, বিভাগ বিভাজনের ফলে শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যায়।

     

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা- নবম দশমে বিভাগ বিভাজন

    নবম দশমে বিভাগ বিভাজন

     

    নতুন কারিকুলাম অনুসারে মাধ্যমিক স্তরে বিভাগ বিভাজন থাকছে না। ২০২৪ সালে থেকে নবম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এর ফলে নবম–দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি বিভাগের আওতায় পড়াশোনা করবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন না থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমবে, ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমবে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ বাড়বে। শিক্ষার্থীদের বহুমুখী দক্ষতা বিকাশের সুযোগ বাড়বে।

    নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে নবম দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়ানো হবে, বিষয়গুলো হলো:

    • বাংলা, 
    • ইংরেজি, 
    • গণিত, 
    • সামাজিক বিজ্ঞান, 
    • বিজ্ঞান, 
    • ধর্মশিক্ষা, 
    • শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার 
    • জীবন ও জীবিকা, 
    • ডিজিটাল প্রযুক্তি, 
    • শিল্প ও সংস্কৃতি।

     

    নতুনরূপে অনলাইন ব্যাচ ২০২৪ (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি)

    কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • ৬টি বিষয়ের উপর ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাস
  • ডাউট সলভ ও প্রতিটি ক্লাসের লেকচার শীট
  • ডেইলি প্র্যাক্টিস ও উইকলি প্র্যাক্টিস
  • ডেমো অ্যাসাইনমেন্ট ক্লাস ও প্র্যাক্টিস
  • "

     

    পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন

    পুরাতন কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত; পঞ্চম, অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ৪টি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। তবে নতুন কারিকুলামের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন। এবার জানাবো নতুন কারিকুলামের অধীনে, পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে:

    • প্রাথমিক স্তর: নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক স্তরে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র শিক্ষকদের মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হবে।
    • মাধ্যমিক স্তর: মাধ্যমিক স্তরে একটি মাত্র পাবলিক পরীক্ষা থাকবে, তা হলো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা, যা নবম এবং দশম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে।
    • উচ্চ মাধ্যমিক স্তর: এরপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বোর্ডের অধীনে নেওয়া হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই পরীক্ষা, এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

    নতুন কারিকুলামে পরিবর্তিত পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ এখন অনেকটাই কমে গেছে। নতুন কারিকুলামের অধীনে, শিক্ষার্থীদের ১২ বছরে শুধুমাত্র দুইটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক কমে যাবে।

    অন্য একটি সুবিধা হলো শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন বৃদ্ধি। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নয়, বরং বিভিন্ন দক্ষতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

     

    বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাএকনজরে নতুন ও পুরাতন কারিকুলামের পার্থক্য

     

    বিষয়বস্তু নতুন কারিকুলাম পুরাতন কারিকুলাম
    পাঠদান পদ্ধতি অনুসন্ধানমূলক, সমস্যা-ভিত্তিক সরাসরি শিক্ষাদান, পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক
    শিক্ষার বিষয়বস্তু বাস্তব-জীবনমুখী পাঠ্যবই কেন্দ্রিক
    মূল্যায়ন পদ্ধতি শিখনকালীন ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা-নির্ভর 
    ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোনো পরীক্ষা প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা হতো
    পিইসি, জেএসসি-জেডিসি  পিইসি, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হবে না পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি, অষ্ঠম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা
    নবম দশম শ্রেণিতে বিভাজন বিভাগ বিভাজন থাকছে না, অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়ানো হবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা
    এসএসসি পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়া বিষয়ের ভিত্তিতে 
    এইচএসসি পরীক্ষা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ দ্বাদশ শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হতো

     

    শেষকথা

    নতুন কারিকুলাম প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনগুলোর ফলে শিক্ষার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে  সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের। এছাড়াও, নতুন কারিকুলাম বাস্তবমুখী ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত হওয়ায় ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে বলে আশা করা যায়। তবে এটাও সত্যি যে, এই ধরনের কারিকুলাম বাংলাদেশে এবারই প্রথম বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই হয়তো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার এমন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে। 

    কিন্তু নতুন কারিকুলামের পড়াশোনায় ১০০ তে ১০০ প্রস্তুতিতে তোমার পাশে আছে  10 Minute School!


    তথ্যসূত্র 


    নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিস্তারিত জানতে দেখে নিন আমাদের এই ব্লগ গুলো:

    নতুন কারিকুলামে ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণির পড়ালেখা নতুন উদ্যমে শুরু করতে টেন মিনিট স্কুল নতুনরূপে নিয়ে এসেছে ‘অনলাইন ব্যাচ ২০২৪’:

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্মার্টলি পোস্টার বানানো ও প্রেজেন্ট করা শিখো এই ফ্রি কোর্সের সাহায্যে

    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিংকে: www.10minuteschool.com

     

    আপনার কমেন্ট লিখুন