ক্যারিয়ার হিসেবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং

August 21, 2024 ...

আমরা প্রায়ই নেটফ্লিক্সে নানান সিরিজ-মুভি দেখে থাকি। কখনো কি চিন্তা করেছি যে এগুলো কিভাবে বানানো হয়? পুরো জিনিসটার শ্যুটিং কি একবারেই হয়? নাকি আলাদা আলাদা হয়? আকাশের রঙই বা একেক সময়ে একেক রঙের হয় কিভাবে? ভিডিও শ্যুট করার সময় এতে থাকা কলাকুশলীরা কি এতই জোরে কথা বলে যে স্ক্রিনের ভেতর দিয়ে এত পরিষ্কারভাবে সব শোনা যায়?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মুভি-সিরিজগুলো আলাদা করে শ্যুট করা হয়৷ আর সব সিনের ভিডিও ধারণের পরে একজন মানুষ বা একটা টিম সেই ভিডিওগুলো কাহিনী অনুসারে একটার পর একটা সাজিয়ে পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, ভিডিওতে অডিও যুক্ত করা, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দেওয়া, কোন জায়গায় ভলিউম কম হবে, কোন জায়গায় বেশি হবে তা ঠিক করা, ভিডিওতে স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করা কিংবা লাইটিং ও কালার গ্রেডিং ঠিক করা– সবকিছুই একটি নির্দিষ্ট মানুষ ও তার টিম করে থাকে৷ 

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, আমরা বলছিলাম ভিডিও এডিটর এবং ভিডিও এডিটিং এর কথা!

 

ভিডিও এডিটিং কী? এর মাধ্যমে কী কী করা হয়?

ভিডিও এডিটিং কী? এর মাধ্যমে কী কী করা হয়?

উপরের কথাগুলো শুনে হয়তো বুঝতে পেরেছেন, একসাথে অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপকে গল্প অনুযায়ী  জোড়া লাগিয়ে একটি অর্থবহ ভিডিও তৈরির প্রক্রিয়াই হল ভিডিও এডিটিং৷ আর যিনি এই কাজটি করেন, তিনিই হলেন ভিডিও এডিটর। 

ভিডিও এডিটিং এর পুরোটাই একটি সৃজনশীল দক্ষতা। কারণ আপনার মধ্যে যদি ক্রিয়েটিভিটি না থাকে, তাহলে আপনি বুঝবেন না যে কোন ভিডিও ক্লিপের পর কোন ক্লিপটি যোগ করলে ভালো দেখাবে, কোন জায়গায় কেমন সাউন্ড হওয়া উচিত কিংবা কালার প্যালেট ইমোশন অনুযায়ী কিভাবে অ্যাডজাস্ট করা দরকার৷ 

একটা ভালো ভিডিও এডিটিং প্রজেক্ট দর্শকদের মনে দারুণ প্রভাব ফেলে। হ্যারি পটার সিরিজ বা স্টার ওয়ার্স সিরিজ দেখেছেন? এসব সিনেমাগুলোতে অনেক বড় অবদান রেখেছেন এগুলোর ভিডিও এডিটিং টিম। কারণ বাস্তবে তো আর এই সিনেমাগুলোর দৃশ্য ধারণ করা সম্ভব নয়৷ আর এই জায়গাতেই কারিশমা দেখান ভিডিও এডিটররা!

 

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে যা যা করা যায়:

ভিডিও এডিটিং আপনাকে একটি সাধারণ ভিডিও ফুটেজকে অসাধারণ করে তোলার সুযোগ দেয়। যেমন:

ট্রিম অ্যান্ড কাট:

অনেক সময় কোনো ভিডিও ক্লিপের অনেককিছুই আমাদের পরবর্তীতে আর দরকার পরে না কিংবা ভালো লাগে না। তখন ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে আমরা চাইলেই সেই অংশগুলো বাদ দিয়ে দিতে পারি।  

ক্লিপ যুক্ত করা:

গল্প অনুসারে একসাথে একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে একটি অর্থবহ ভিডিও বানাতে পারি। 

ট্রানজিশন যুক্ত করা:

এক সিন থেকে আরেক সিনে যাওয়ার সময় মাঝে ট্রানজিশন যুক্ত করা যায়। এতে করে পুরো ভিডিওটা দেখতে আর্টিফিশিয়াল কম মনে হবে। 

ইফেক্ট যোগ করা:

কালার কারেকশন, ফিল্টার, ওভারলের মত ইফেক্ট যোগ করা যাবে৷

গান বা সাউন্ড যোগ করা:

ভিডিওর সাউন্ড কোয়ালিটি নিশ্চিত করার কাজটাও ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে করা যায়। যেমন কোনো ইমোশনাল সিনে একটু কষ্টের গান যোগ করা কিংবা ভয়ের সিনে হরর ইফেক্ট দেওয়া।

টাইটেল ও টেক্সট যুক্ত করা:

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই টাইটেল, সাবটাইটেল, ক্যাপশন কিংবা তথ্য বা কনটেক্সট লিখে বোঝানোর কাজটাও করতে পারবেন৷ 

স্পিড ঠিক করা:

কোন কোন সিন স্লো-মোশনে যাবে বা কোন সিন দ্রুত প্লে হবে, এসবও ভিডিও এডিটররা ঠিক করেন। 

ঝাপসা ফুটেজ ঠিক করা:

ঝাপসা বা কাঁপা কাঁপা ফুটেজগুলো ভিডিও এডিটররা ঠিক করে একটা প্রফেশনাল লুক দেন। 

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে যা যা করা যায়

কালার গ্রেডিং:

ফুটেজের মুড বা ভাবের উপর নির্ভর করে কালার ও লাইটিং ঠিক করা যায়। যেমন ভয়ের দৃশ্যগুলোতে একটু লাল বা কালো রঙ ব্যবহার করা। যাতে দেখলেই ভয় লাগে!

গ্রাফিকস যুক্ত করা:

লোগো, ছবি বা অন্যান্য গ্রাফিকস এলিমেন্ট এডিটিং এর মাধ্যমে যোগ করা। 

স্পেশাল ইফেক্টস তৈরি করা:

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে আপনি আরো অ্যাডভান্সড ইফেক্ট যেমন গ্রিন স্ক্রিন, সিজিআই ও অ্যানিমেশন যুক্ত করতে পারবেন। 

অডিও কোয়ালিটি ভালো করা:

ভিডিও এর সাথে মানুষজনের কথা ঠিকমতো মিলছে কিনা, ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অপ্রয়োজনীয় শব্দ হচ্ছে কিনা– এসবকিছু ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে এডিট করা যায়। 

স্প্লিট স্ক্রিন:

একই ফ্রেমে একাধিক ভিডিও ক্লিপ দেখানো যায়৷ যেমন: একই দৃশ্যে দুইজন মানুষ একে-অপরের সাথে ফোনে কথা বলছেন, তাও আবার দুই জায়গা থেকে। এইটা চাইলেই একসাথে একই স্ক্রিনে দেখানো যায়। 

এক্সপোর্ট:

সম্পূর্ণ ভিডিও এডিট করে ফাইনাল ক্লিপটা ফরম্যাট ও রেজ্যুলেশন ঠিক করে অন্যের সাথে শেয়ার করা কিংবা ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপলোড দেওয়া যায়। 

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে আপনি চাইলে অন্যের জন্যেও কাজ করতে পারবেন কিংবা নিজের কন্টেন্টও তৈরি করতে পারবেন। বর্তমানে শুধু আমাদের দেশই নয়, সারা বিশ্বে ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে রিলস বা ইউটিউব শর্টস আসার পরে এর চাহিদা আরো বেড়েছে। কারণ ভালো ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে একটা ভিডিও এর পুরো কাহিনীই বদলে দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে মানুষের আবেগও প্রভাবিত হয়৷ তাছাড়া ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলোও দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। 

তাই সব জায়গাতে ভিডিও কন্টেন্টের পাশাপাশি সমানতালে বাড়ছে ভিডিও এডিটরদের চাহিদা। কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ ভিডিও এডিটর না থাকায় ভিডিও এডিটিং সেক্টরটা বেশ ডিমান্ডিং হয়ে গেছে৷ 

তাই আপনার যদি ইচ্ছে থাকে, তাহলে ভিডিও এডিটিং শিখে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ভিডিও এডিটরদের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে বিশাল কর্মক্ষেত্রে কাজের সুযোগ।

 

ভিডিও এডিটিং শিখে কী কী করা যেতে পারে?

ভিডিও এডিটিং শিখে কী কী করা যেতে পারে?

ভিডিও এডিটিং শেখার মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ারের অনেক দরজাই খুলে যাবে৷ কারণ এই একটা স্কিল শেখার মাধ্যমেই আপনি যা যা করতে পারবেন:

ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর:

স্বাধীনভাবে পছন্দমতো ক্লায়েন্ট নির্বাচন করে তাদের প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন। এভাবে আপনি অনেক ধরনের ভিডিও প্রজেক্ট যেমন: কমার্শিয়াল, মিউজিক ভিডিও, শর্টফিল্ম ও কর্পোরেট ভিডিওগুলোতে কাজের সুযোগ পাবেন। এটা আপনার পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার– মার্কেট সাইটগুলোতে নিজের কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট পেয়ে যাবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে প্রজেক্ট প্রতি বা ঘণ্টা প্রতি অর্থ উপার্জন করা যাবে।

ইন-হাউজ ভিডিও এডিটর:

অনেক প্রতিষ্ঠান, প্রোডাকশন হাউজ, মিডিয়া আউটলেট, অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি ফুল-টাইম ভিডিও এডিটরদের কাজে নেয়। এখানে আপনি লং-টার্ম প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন এবং আয়ের পথটাও বেশ স্থিতিশীল হবে। 

ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর:

ধরা যাক আপনি বই নিয়ে কথা বলতে অনেক পছন্দ করেন। তো ভিডিও এডিটিং শেখার মাধ্যমে নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলতে পারেন৷ সেটা হতে পারে মুভি বা বুক রিভিউ, টিউটোরিয়াল, Vlog ইত্যাদি নিয়ে৷ তাছাড়া অন্য ইউটিউবারদের ভিডিও এডিটর হওয়ারও সুযোগ রয়েছে৷ 

সোশ্যাল মিডিয়া Influencer:

আপনি চাইলে নিজেও Influencer হতে পারবেন বা অন্যদেরও সাহায্য করতে পারবেন নিজের ভিডিও এডিটিং স্কিল দিয়ে৷ Influencer-রা অনেকসময়ই নানান ব্র‍্যান্ড প্রমোট করেন। একটু খেয়াল করে দেখবেন, যেসব Influencer-দের ভিডিও কোয়ালিটি যত ভালো, তাদের সাথে তত বড় ব্র‍্যান্ডগুলোই কাজ করে। 

ফিল্ম এডিটর:

ফিল্ম এডিটররা সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছাকাছি থেকে কাজ করেন। কারণ তারাই এডিটরদের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। যেমন কোন সিনটা কেমন হবে, কোথায় সাউন্ড কোয়ালিটি বাড়াতে হবে, কোন সিন বাদ দিতে হবে ইত্যাদি। এই কাজটা করার জন্য সিনেমার কাহিনী সম্পর্কে আপনার খুবই ভালো ধারণা থাকতে হবে। 

টিভি অনুষ্ঠান এডিটর:

এটার কাজও ফিল্ম এডিটরের মতোই। তবে ফিল্ড এডিটর যেখানে একবারে পুরো সিনেমার সব দৃশ্য ধারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাজ করেন, সেখানে টিভি এডিটররা প্রতি পর্বের দৃশ্য ধারণ শেষ হওয়ার পর কাজ করেন। যেমন: রিয়েলিটি শো, নাটক, খেলাধুলার অনুষ্ঠান, খবরের সংবাদ ইত্যাদি। ভিডিও এডিটিং চাহিদার সবচাইতে বড় ক্ষেত্র হলো টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। বর্তমানে দেশে অনেক সরকারি এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এসব টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন সংবাদ প্রতিবেদনের পাশাপাশি অসংখ্য অনুষ্ঠান, নাটক, টক শো ও ম্যাগাজিন প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানগুলো টিভি চ্যানেল ছাড়াও অসংখ্য প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করে থাকে। এছাড়াও টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি করে থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই সবগুলোর পোস্ট প্রোডাকশন কাজ করে থাকে এর ভিডিও এডিটররা। তাদের কাজই হল পূর্বে ধারণ করা এসব কনটেন্টকে দর্শকদের গ্রহণ উপযোগী করে তোলা।

ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর:

মার্কেটিং ও অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রিতে ভিডিও এডিটরদের বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিও, কমার্শিয়াল ও ব্র‍্যান্ডেড কন্টেন্ট তৈরি করতে হয়৷ এই কাজগুলোর মাধ্যমে ব্র‍্যান্ডের বার্তাগুলো দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়৷ 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার:

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের ভিডিও তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী সেগুলো আপলোড দিতে হয়৷ এই পদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ট্রেন্ড সম্পর্কে আলাদা ধারণা থাকতে হবে। 

কর্পোরেট ভিডিও প্রোডিউসার:

অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল ভিডিও যেমন ট্রেনিং ম্যাটেরিয়াল, প্রোডাক্টের কাজ বা উপকারিতা, প্রোডাক্ট দেখতে কেমন, কর্পোরেট নির্দেশনা কিংবা ইভেন্ট কভার করার জন্য ভিডিও এডিটর নিয়ে থাকেন। 

এডুকেশনাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর:

অনলাইন লার্নিং এর এই সময়ে এডুকেশনাল ভিডিও এবং ভিডিও এডিটর– দুটোর চাহিদাই অনেক বেড়েছে। ভিডিও এডিটিং শেখার মাধ্যমে নানান টিউটোরিয়াল বানানো যায় এবং কোর্স ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা যায়৷ 

ইভেন্ট ভিডিওগ্রাফি:

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে বিয়ের ভিডিওগ্রাফি থেকে শুরু করে কনসার্ট, কনফারেন্স, কর্পোরেট ইভেন্টের ভিডিও ক্লিপগুলো আরো আকর্ষণীয় ও স্মরণীয় করে রাখা যায়৷ 

 

Video Editing with Premiere Pro

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • টেক্সট এনিমেশন, স্লো মোশন, ভিডিও রিভার্সিং, অডিও এডিটিং, কালার গ্রেডিং, গ্রিন স্ক্রিন এডিটিং সহ বিভিন্ন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং টুলস -এর ব্যবহার
  • ভিডিও এডিটিং আয়ত্ত করে ক্যারিয়ার গড়ার দিকনির্দেশনা এবং নিজের পোর্টফোলিও কাজে লাগিয়ে কাজ পাওয়ার কৌশল
  •  

    এটা তো গেল ভিডিও এডিটিং শিখে কী কী কাজ করতে পারবেন। যদি কী কী দক্ষতা অর্জন করবেন, সে কথায় আসি:

    ১. ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড সফটওয়্যার যেমন Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro, DaVinci Resolve, Avid Media Composer, Adobe After Effects এর মত টুল বা সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার শিখতে পারবেন। 

    ২.  After Effects ব্যবহার করার মাধ্যমে মোশন গ্রাফিকস ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ভিডিওতে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, টাইটেল ও ট্রানজিশন যোগ করতে পারবেন।

    ৩. স্ক্রিপ্টরাইটিং ও স্টোরিটেলিং এর বেসিক শিখতে পারবেন। কারণ আপনাকে জানতে হবে যে কোন ভিডিও ক্লিপের পর কোনটা বসালে পুরো জিনিসটা দেখতে ভালো হবে।

    ৪. ক্রিয়েটিভ ডিরেকশন দেওয়ার দক্ষতা বাড়বে। কারণ ভিডিও এডিট করতে যেয়ে আপনার ভিজ্যুয়াল ও থিমেটিক এলিমেন্ট নিয়ে জ্ঞান বাড়বে। 

    ৫. কালার গ্রেডিং ও সাউন্ড এডিটিং ও মিক্সিং নিয়ে ধারণা হবে৷

     

    প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এবং সাধারণ ভিডিও এডিটিং এর মধ্যে পার্থক্য

    তবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং ও সাধারণ ভিডিও এডিটিং– দুটো বিষয় এক নয়৷ প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এর জন্য বেশি বাজেট থাকে, অ্যাডভান্সড এডিটিং সফটওয়্যার প্রয়োজন এবং প্রফেশনাল ডিভাইসের দরকার হয়৷ শুধু তাই নয়, কালার গ্রেডিং, সাউন্ড ডিজাইন, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও কমপ্লেক্স ট্রানজিশন ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পরিচালক, সিনেম্যাটোগ্রাফার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস আর্টিস্টদের সাথে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটররা সরাসরি কাজ করেন। যেমন: ফিচার ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, কমার্শিয়াল ও বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। 

    অন্যদিকে সাধারণ ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে ফ্রি টুল বা ইউজার ফ্রেন্ডলি টুল ব্যবহার করে ভিডিও এডিট করা যায়। এক্ষেত্রে বেসিক এডিটিং যেমন কাটিং, ট্রিমিং, মিউজিক যুক্ত করা বা সাধারণ ট্রানজিশন যুক্ত করার জ্ঞান থাকলেই হলো৷ এই কাজের জন্য বড় দলের দরকার হয় না, একাই করা যায়। যেমন ইউটিউব কন্টেন্ট, ইনস্টাগ্রামের স্টোরি, Vlog– এসব ক্ষেত্রে সাধারণ ভিডিও এডিটিং পারলেই হয়।

    যদি আরেকটু বিস্তারিতভাবে আমরা প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং ও সাধারণ ভিডিও এডিটিং এর পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাই: 

    প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং
    সাধারণ ভিডিও এডিটিং
    ১। ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড সফটওয়্যার যেমন Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro, Avid Media Composer এবং DaVinci Desolve এর মত সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।  ১। ইন্টারনেট, প্লে-স্টোর বা অ্যাপল স্টোরে আছে এমন ফ্রি বা পেইড ইউজার ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই হয়। 
    ২। সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করার জন্য শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এবং হাই পারফর্মেন্স স্পেসিফিকেশনের গ্রাফিক্স কার্ড, র‍্যাম ও স্টোরেজের প্রয়োজন হয়।  ২। সাধারণ ডিভাইস এমনকি স্মার্টফোন হলেই চলে। 
    ৩। ভিডিও প্রোডাকশন এবং পোস্ট প্রোডাকশন নিয়ে ধারণা থাকার পাশাপাশি কয়েক বছরের ট্রেইনিং ও এডিটিং এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।  ৩। বেসিক এডিটিং নলেজ থাকলেই হয়। শখের বশে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী যে কেউই এডিটিং করতে পারেন। 
    ৪। কালার কারেকশন, এডভান্সড টেকনিক, অডিও সিঙ্ক্রোনাইজেশন, মাল্টি ক্যামেরা এডিটিং, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের মত ব্যাপারগুলো নিয়ে ধারণা থাকতে হবে।  ৪। কাটিং, ট্রিমিং, বেসিক ট্রানজিশন যুক্ত করার মত জ্ঞান থাকলেই হবে। 
    ৫। হাই কোয়ালিটি ভিডিও যেমন নাটক, সিনেমা, কমার্শিয়াল ও কর্পোরেট ভিডিও তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। ৫। ব্যক্তিগত ব্যবহার যেমন সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি কাজের জন্য বানানো হয়। 
    ৬। অনেকদিন ধরে কাজ চলে। কারণ স্টোরিবোর্ড তৈরি, প্রি-প্রোডাকশন প্ল্যানিং, রাফ কাটস ও ফাইনাল মাস্টারিং এর মতন ব্যাপার আছে। ৬। প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এর মত জটিল না। 
    ৭। ফাইলগুলো যেহেতু বড় হয়, তাই মাস্টার এডিটিং ব্যবহার করে ফাইল শেয়ারিং এর কাজটা সহজ করা হয়।  ৭। এসব ঝামেলা নেই। ড্রাইভে বা মেইলে শেয়ার দিলেই হয়। 
    ৮। যেহেতু অনেক এডভান্সড টুল, হাই-এন্ড সফটওয়্যার, স্টক ফুটেজ, লাইসেন্সড মিউজিক ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রফেশনাল মানুষদের সাহায্য লাগে, তাই খরচটা বেশি।  ৮। বাজেট খুবই কম থাকে, ফ্রি রিসোর্স দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।

     

    প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং শিখে কত টাকা ইনকাম করা যায়?

    ভিডিও এডিটরদের চাহিদা যেহেতু বেশি, তাই এর মাধ্যমে আয়টাও বেশিই হয়। তাছাড়া এটি যেহুতু একধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ, তাই বেতনটাও বেশি। তবে ভিডিও এডিটরদের ইনকাম সোর্স বেশ কয়েকটি বিষয় যেমন অভিজ্ঞতা, অবস্থান, ফ্রিল্যান্স নাকি ইন-হাউজ চাকরি, প্রজেক্টের জটিলতা এসব কিছুর উপরেই নির্ভর করে। পুরো জিনিসটাকে যদি আমরা এন্ট্রি লেভেল, মিড লেভেল ও সিনিয়র ভিডিও এডিটরে ভাগ করে দেখি: 

    এন্ট্রি লেভেল ভিডিও এডিটর

    এন্ট্রি লেভেল ভিডিও এডিটর হিসেবে যাদের অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম, ছোট কোম্পানি বা লোকাল বিজনেসে কাজ করেন, তাদের বোঝানো হচ্ছে। তাদের কাজ বেসিক ভিডিও এডিট করা, ক্লিপ কাট ও ট্রিম করা, সাধারণ ইফেক্ট যুক্ত করা এবং অভিজ্ঞ এডিটরদের সহকারী হিসেবে সাহায্য করা হয়। 

    বার্ষিক বেতন: বাংলাদেশে সাধারণত ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা হয়ে থাকে। তবে বাইরের দেশে সেটা ৩০ হাজার ডলার থেকে ৪৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। 

    ঘণ্টা প্রতি আয়: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এন্ট্রি লেভেল এডিটর হিসেবে ১৫ থেকে ২৫ ডলার আয় করা যায়। 

    মিড লেভেল ভিডিও এডিটর

    ভিডিও এডিটরদের মধ্যে যাদের ২ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে, তারা এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। তারা সাধারণত বড় বড় কোম্পানি, মিডিয়া আউটলেট ও বিজ্ঞাপনী সংস্থার ইন-হাউজ এডিটর হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাদের পোর্টফলিও বেশ ভালো থাকে এবং জটিল ধরনের ভিডিও এডিট করতে জানেন। 

    বার্ষিক বেতন: বাংলাদেশে সাধারণত ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বাইরের দেশে সেটা ৫০ হাজার ডলার থেকে ৭৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। 

    ঘণ্টা প্রতি আয়: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে মিড লেভেল এডিটর হিসেবে ২৫ থেকে ৫০ ডলার আয় করা যায়। 

    সিনিয়র ভিডিও এডিটর

    ভিডিও এডিটরদের মধ্যে যাদের ৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে এবং একাধিক ভিডিও প্রজেক্ট লিড দিয়েছেন, তারা এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। তারা সাধারণত বড় বড় প্রোডাকশন স্টুডিও, নিউজ মিডিয়া, সিনেমা ও টেলিভিশনের মত জায়গাগুলোতে এডিটর হিসেবে কাজ করে থাকেন। 

    বার্ষিক বেতন: সাধারণত বাংলাদেশে একজন ভিডিও এডিটরের বার্ষিক আয় আনুমানিক ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বাইরের দেশে সেটা বছরে আনুমানিক ৩২ হাজার ৩৪৫ ডলার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে বেশিও হতে পারে। 

    ঘণ্টা প্রতি আয়: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সিনিয়র ভিডিও এডিটর হিসেবে ঘণ্টা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ ডলারেরও বেশি আয় করা যায়। 

    এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ারিং এর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হল ইউটিউব। অনেক ইউটিউব চ্যানেল ও ক্রিয়েটরই হাই কোয়ালিটির ভিডিও এডিট করার জন্য প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর খুঁজে থাকেন। আপনার ভিডিও এডিটিং কোয়ালিটি ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে আপনি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ঘণ্টায় ১০ থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। 

    অনেক সেলিব্রেটি কিংবা Influencer-রা বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে প্রমোট করার জন্য ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ভিডিও আপলোড করে থাকে। এই কাজের জন্যও ভিডিও এডিটরের দরকার পড়ে। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এই কাজের জন্য প্রজেক্ট অনুযায়ী ৫ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। শুধু তাই নয়, যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভিডিও এডিটরদের ইনকাম এমনই হয়ে থাকে। 

    সিনেমা এডিটিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত প্রজেক্ট ভিত্তিতে অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আয় নির্ভর করে প্রোডাকশন হাউজের উপরে। বাংলাদেশি ক্লায়েন্টরা সাধারণত ভিডিও এডিটরদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বেতন দিয়ে থাকে। সেটা সাধারণত মাসে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত হয়। অনেকসময় সপ্তাহে কয়টা ভিডিও এডিট করতে হচ্ছে, সেটার উপরে ভিত্তি করেও বেতন নির্ধারণ করা হয়।

    তবে বেশিরভাগ প্রফেশনাল ভিডিও এডিটররা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমেই বাইরের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে থাকেন। কারণ এখানে কাজের স্বাধীনতাটা বেশি থাকে, মনমতো প্রজেক্টে কাজ করা যায়, যেকোনো জায়গায় বসে কাজের সুযোগ থেকে এবং আয়টা ডলারে হয় দেখে বেশিও হয়। 

     

    ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য যেসব স্কিল লাগবে

    ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য যেসব স্কিল লাগবে

    যেহেতু ভিডিও এডিটিং সম্পূর্ণ সৃজনশীল একটা কাজ, তাই কেবল শেখার ও কাজ করার আগ্রহ থাকলেই এটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া উচিত। প্রথমেই সফটওয়্যারের কাজ না শিখে আগে ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে ভালোমত রিসার্চ করে নেওয়া উচিত। কারণ মাঝপথে শেখা ছেড়ে দিলে আপনার অনেক সময় নষ্ট হবে। আর যে সফটওয়্যার দিয়েই কাজ শুরু হোক না কেন, তা আপনাকে পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও এডিটিং নিয়ে  বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে জয়েন থেকেও ভিডিও এডিটিং স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন। 

    স্টোরি টেলিং

    ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য প্রথমেই যেই স্কিলটি থাকতে হবে, সেটি হল স্টোরি টেলিং এর ক্ষমতা। পৃথিবীতে সবচাইতে শক্তিশালী কমিউনিকেশন টুলের একটি হল স্টোরি টেলিং বা গল্প বলার ক্ষমতা। ভিডিও এডিটর কিন্তু স্টোরি টেলিং এর মাধ্যমেই দর্শকদের ইমোশনালি এটাচড করে ফেলতে পারেন। এই স্কিলটি না থাকলে ভিডিও এর দিকে দর্শক হয়তো বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারবে না। এরপরের সিনে কী হবে সেটা নিয়ে তাদের কোন আগ্রহও থাকবে না। 

    ছোট ছোট বিষয় না এড়িয়ে যাওয়া

    ‘Attention to Detail” কথাটা আমরা অনেক শুনেছি। একজন ভিডিও এডিটরের মধ্যে এই গুণাবলিটা থাকতে হবে। যাতে কোনো সিনের কোনো অংশই যেন তার অদেখা না রয়ে যায়৷ খুব মনোযোগের সাথে যেন সে পুরো ভিডিওটা এডিট করে। 

    মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা

    যেকোনো সৃজনশীল কাজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকাটা অনেক জরুরি৷ কারণ অনেকসময়ই ঊর্ধ্বতন কেউ কোনো অংশ এডিট করতে বলতে পারে, আবার নতুন করে শুরু করার অনুরোধ করতে পারে, হয়তো কাজ থামিয়েও দিতে বলতে পারে৷ এসব জিনিসের জন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ প্রোডাকশনেও দেরি হতে পারে, নতুন করে ভিডিও ধারণ করা লাগতে পারে৷ তাই শান্ত থাকতে হবে৷ 

    সেল্ফ-মোটিভেশন

    সৃজনশীল কাজে সবসময় কাজ করার স্পৃহা নাই থাকতে পারে। কিন্তু আপনি যদি একটা প্রজেক্টের মাঝামাঝি চলে আসেন, তাহলে সেটা শেষ করাটাই শ্রেয়। ভিডিও এডিটিং এর সময় আপনাকে একা কাজ করতে হতে পারে। অর্থাৎ কোথাও কোন ভুল হলে মানুষ আপনাকেই দোষ দিবে৷ তাই নিজেকে সবসময় নিজেরই উৎসাহ দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নিতে হবে। 

    কমিউনিকেশন স্কিল

    একজন ভিডিও এডিটর হিসেবে আপনাকে একাধিক মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। যেমন:

    • মিউজিক প্রোডিউসার
    • স্পেশাল ইফেক্ট এডিটর
    • সাউন্ড এডিটর
    • সিনেম্যাটোগ্রাফার
    • ডিরেক্টর
    • প্রোডিউসার

    এগুলো ছাড়াও আরো অনেকের সাথেই যোগাযোগ করতে হবে৷ তাই কমিউনিকেশন স্কিল থাকাটা জরুরি। 

     

    প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এর জন্য কেমন কম্পিউটার প্রয়োজন?

    আগেই বলেছি, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এর জন্য একটু ভালো মানের কম্পিউটার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো কনফিগারেশনের পিসি বিল্ড আপ করতে হবে। নাহলে এডিটিং এর কাজটা কঠিন হয়ে যাবে, বারবার পিসি ল্যাগ করতে থাকবে, ফলে এডিট করতেও বেশি সময় লাগবে। 

    প্রসেসর:

    প্রসেসর একটি কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট৷ এটা ছাড়া কোন কাজই করা যাবে না। তাই AMD অথবা Intel Ryzen 7 3800X এর মত ভালো প্রসেসর ব্যবহার করতে হবে। 

    দাম: ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।

    সিপিইউ কুলার:

    সিপিইউ কুলার সিপিউকে ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে। এর জন্য Thermaltake UX200 ARGB #CL -P065 -AL12SW – A ব্যবহার করতে পারেন। 

    দাম: ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা

    মাদারবোর্ড:

    এমন একটি মাদারবোর্ড ব্যবহার করবেন যেটার মধ্যে ভালো প্রসেসর সাপোর্ট পাওয়া যাবে, আপনি বেশি র‍্যাম ব্যবহার করতে পারবেন, একসাথে অনেকগুলো গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো যাবে। সাথে DV Firewire Port থাকলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে  Asus ROG STRIX B550 -F GAMING DDR4 ব্যবহার করতে পারেন।

    দাম: ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।

    গ্রাফিক্স কার্ড:

    কম্পিটারের ভালো কনফিগারেশনের একটি অন্যতম ফিচার হল এর গ্রাফিক্স ধারণ ক্ষমতা কেমন বা কতটুকু৷ যে কম্পিউটারের গ্রাফিক্সের পরিমাণ বেশি, সেই কম্পিউটারে ভিডিও এডিটিং এর মত ভারী কাজগুলো খুব সহজেই করে ফেলা যায়। কারণ এটা গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট প্রসেসিং এর কাজ দ্রুত করতে সাহায্য করে। Adobe Premiere Pro বা After Effects ব্যবহার করার জন্য আলাদা গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হয়৷ সেক্ষেত্রে ZOTAC GAMING GeForce GTX 1660 super AMP 6GB GDDR6 Graphics card # ZT -T16620D -10M ব্যবহার করতে পারেন। 

    দাম: ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা।

    র‍্যাম:

    র‍্যাম কম্পিউটার এর পারফরম্যান্স এর অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর। কম্পিউটারের প্রসেসর র‍্যাম থেকেই যাবতীয় ডাটা নিয়ে কাজ করে। র‍্যাম যদি প্রসেসরকে চাহিদা অনুযায়ী ডাটা দিতে পারে এবং রিটার্ন ডাটা সেভ রাখতে পারে তাহলে একটা কম্পিউটার অপটিমাম লেভেলে পারফর্ম করবে, অর্থাৎ এর যতটুকু ক্ষমতা আছে সবটুকু ব্যবহার করে চলতে পারবে। এক্ষেত্রে  G.Skill ripjaws V 16GB DDR4 3200mhz #F4 – C16D 3200GVK অথবা সর্বনিম্ন 16 GB থাকতে হবে এবং এর সাথে Heatsink থাকলে ভালো হয়। 

    দাম: ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা।

    এসএসডি:

    Transcend 220s 256gb M.2 2280 PCle Gen 3 * 4 SSD Drive ব্যবহার করলে ভালো হয়৷ এসএসডি একধরনের স্টোরেজ ডিভাইস যেটা লাগিয়ে নিলে বিল্ট-ইন হার্ড ডিস্কের তুলনায় পিসি অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করবে৷ এছাড়া মেকানিক্যাল ফেইলিউর হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এটা ব্যাটারি লাইফ বাঁচায় কারণ কম তাপ উৎপাদন করে৷ 

    দাম: ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা।

    এইচডিডি:

    এক্ষেত্রে Toshiba 1 TB # DTO1ACA100/HDWD110UZSVA ব্যবহার করতে পারেন। 

    দাম: ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা।

    অপটিক্যাল ড্রাইভ:

    অপটিক্যাল ড্রাইভের জন্য Transcend TS8XDVDS – K ব্যবহার করতে পারেন।

    দাম: ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।

    পাওয়ার সাপ্লাই:

    পিসি এর জন্য Cooler master MWE 550W V2 #MPE – 5501 – ACABW – BIN লাগিয়ে নিতে পারেন। 

    দাম: ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকা

    কেসিং:

    পিসির জন্য একটা ভালো কেসিং খুবই জরুরি। সাধারণত কম্পিউটারের বাইরের পার্টসে যেন ধুলা না জমে, সেজন্য কেসিং ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কম্পিউটার চলা অবস্থায় যাতে সার্কিটের স্পর্শে শক না লাগে এবং গরম বাতাস দ্রুত পাস করার জন্যও কেসিং এর প্রয়োজন আছে। খেয়াল রাখবেন যে কোনো কেসিং এর ভেতরে বেশি বাতাস যাওয়া আসা করছে৷ আর চারপাশে কয়টা কুলিং ফ্যান আছে সেটিও লক্ষ রাখবেন। Cooler Master Master Box MB311L ARGB black #MCB – B31 – KGNN – S02 

    দাম: ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা।

    কিবোর্ড এবং মাউস:

    যেকোনো মাউস বা কিবোর্ড ব্যবহার করলেই হয়৷ তবে A4Tech FG 1010 Black – Blue wireless keybord and mouse combo নিতে পারেন।

    দাম: ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা

    হার্ডডিস্ক:

    হার্ডডিস্ক যেকোনো ভালো একটা ব্র‍্যান্ডের লাগিয়ে নিবেন। ১ টেরাবাইটের দুইটা লাগিয়ে ফেলতে পারেন। তাহলে দুইটাতেই কাজের ব্যাক আপ থাকবে। 

    দাম: ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা।

    মনিটর:

    মনিটর খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। তবে চাইলে ফোরকে মনিটর লাগিয়ে নিতে পারেন।

    দাম: ৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। 

    এখানে ভালোভাবে ভিডিও এডিটিং এর জন্য যেসব সরঞ্জাম বা কনফিগারেশন ব্যবহার করা প্রয়োজন, সেগুলোর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি চাইলে এরচেয়ে কম কনফিগারেশনের পিসি বিল্ড-আপ করে এডিটিং এর কাজ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। আবার আরও ভালো পারফরম্যান্সের জন্য ব্যয়বহুল সরঞ্জাম কিনে কনফিগারেশন বাড়াতেও পারেন। উল্লেখিত কোম্পানির পার্টসই যে কিনতে হবে, তেমনটা না। একইরকম কনফিগারেশনের পার্টস কিনলেও হবে। দামও উল্লেখিত রেঞ্জের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। তবে কেনার আগে দেখে নিবেন পার্টগুলো আসল কিনা৷

     

    প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং শেখার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন

    এবার চলে আসি ভিডিও এডিটিং শেখার ধাপগুলোতে।

    ১. আপনার পিসির কনফিগারেশন ঠিক আছে কি নেই:

    এডিটিং শুরুর আগে দেখে নিন আপনার কম্পিউটারের স্পেসিফিকেশনে ভিডিও এডিট করা যাবে নাকি। যদি না যায় তাহলে সেভাবে পিসি বিল্ড আপ করুন। 

    ২. ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন:

    আপনার ভিডিও এর ধরন অনুযায়ী কোন কোন সফটওয়্যার লাগবে সেটা খুঁজে বের করে ডাউনলোড করে ফেলুন। এরপর সেই সফটওয়্যারের কোন ফিচার দিয়ে কী করা যায় সেগুলো দেখুন আর টিউটোরিয়াল দেখে প্র‍্যাকটিস করতে থাকুন। 

    ৩. ফুটেজ একসাথে গুছিয়ে আনুন:

    যেহেতু একাধিক ভিডিও ক্লিপ নিয়ে কাজ করতে হবে, তাই সবকিছু একটা ফাইলে গুছিয়ে আনতে হবে। ভালো হয় সিকোয়েন্স অনুসারে যদি ক্লিপগুলো সাজানো যায়৷ তাহলে এডিটের সময় বারবার কোন ক্লিপ কোন জায়গায় সেটা খুঁজতে হিমশিম খেতে হবে না। 

    ৪. প্ল্যান বানিয়ে নিন:

    এবার একটু চিন্তা করে দেখুন যে আপনি ভিডিও ক্লিপগুলো কিভাবে সাজাতে চান। এক্ষেত্রে নিজের সব সৃজনশীলতা ব্যবহার করে ফেলুন। সবচেয়ে ভালো হয় ভিজ্যুয়াল ও অডিও কিভাবে একটার পর একটা যাবে সেটা স্টোরিবোর্ডের মত লিখে ফেলা। আপনি যদি ভিডিও এর সাথে ভয়েজ ওভার চান, তাহলে কোন ক্লিপের কত সেকেন্ডে সেটা যাবে, তাও লিখে ফেলুন। 

    ৫. দরকারি ক্লিপ রাখুন:

    ভিডিও ধারণের সময় অনেককিছুই শ্যুট করা হয়৷ কিন্তু সব ক্লিপের প্রয়োজন আমাদের হয় না৷ তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনার গল্পের সাথে মানানসই ফুটেজ কোনগুলো৷ যেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে কেবল সেগুলোই রাখুন। 

    ৬. ম্যাচ কাটস রাখুন:

    ম্যাচ কাটস বলতে বোঝানো হচ্ছে যে এক ফুটেজের সাথে আরেক ফুটেজের সামঞ্জস্যতা। হুট করে যদি রাতের ফুটেজ দিন হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু দর্শক ঠিকমতো স্ক্রিনে কী হচ্ছে সেটা বুঝতে পারবে না। 

    ৭. সঠিক ট্রানজিশন ব্যবহার করুন:

    হয় সঠিক ট্রানজিশন ব্যবহার করুন, নাহলে কোন ট্রানজিশনই ব্যবহার করার দরকার নেই। শুধু ক্লিপগুলো জোড়া লাগিয়ে দিন। 

    ৮. পেসিং এর দিকে নজর দিন:

    গল্পের প্রয়োজনে কিছু কিছু সিন খুব ফাস্ট ফরওয়ার্ড করতে হয়, কিছু কিছু জায়গায় আবার স্লো-মোশন ইফেক্ট দিতে হয়। যেমন অনেক অ্যাকশন সিনে কিছু জিনিস খুব দ্রুত দেখাতে হয়, কিছু আবার ডিটেইলসে দেখানোর জন্য বেশ আস্তে আস্তে দেখানো হয়৷ তাই কোন সিন কোন পেসে এডিট করবেন সেটা মাথায় রাখবেন। 

    ৯. সঠিক কালার স্কিম নির্বাচন করুন:

    এমন কালার কারেকশন ব্যবহার করতে হবে যাতে ভিডিও ফুটেজগুলোকে বেশ ন্যাচারাল মনে হয়। সেক্ষেত্রে কালার ম্যানিপুলেশন বা কারেকশনের মাধ্যমে এডিট করতে পারেন। 

    ১০. সাউন্ড কোয়ালিটি ঠিক রাখুন:

    শুধু ভিডিওর কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিলেই হবে না, অডিও কোয়ালিটিও ভালো হতে হবে৷ আবার ধুমধাড়াক্কা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও ব্যবহার করা যাবে না। এমন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিতে হবে যা ফুটেজ ও সিন– দুইটার সাথেই মানানসই। আবার এত জোরেও দেওয়া যাবে না যে ডায়ালগই শোনা যাবে না। ইন্টারনেট থেকে নামানো সাউন্ড বা মিউজিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে রয়্যালটি ফ্রি বা কপিরাইট ফ্রি সাউন্ড ব্যবহার করতে হবে।  

    ১১. মার্চ’স রুল অব সিক্স:

    বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর ওয়াল্টার মার্চ ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে ৬টি নিয়মের কথা বলেছিলেন। সেগুলো হল:

    • ইমোশন: দর্শকদের মধ্যে কোন ইমোশন আনতে চান তা মাথায় রাখুন।
    • গল্প: গল্পটা আপনি কোন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখছেন এবং গল্পের অর্থটা কী সেটা ভালোভাবে জানুন। 
    • ছন্দ: ভিডিওটা যাতে খাপছাড়া না মনে হয় সেজন্য কালার গ্রেডিং, ট্রানজিশন ও সাউন্ড কোয়ালিটির উপর লক্ষ রাখুন। 
    • ট্রেসিং: যখন দর্শকেরা ভিডিওটি দেখবে, তখন তাদের চোখ কোন দৃশ্যের কোন জায়গায় থাকবে সেটা চিন্তা করুন। 
    • টুডি প্লেন অব স্ক্রিন: স্ক্রিনে থাকা বিশেষ কোনো দৃশ্য বা লুকোনো কোনোকিছুর অর্থ দর্শকেরা খেয়াল করতে পারবেন নাকি পারবেন না। 
    • থ্রিডি স্পেস: স্ক্রিনে কোনো থ্রিডি স্পেস আছে নাকি নেই। 

    এডিট করার সময় এগুলো মাথায় রাখলে আপনার এডিটিং এর প্রক্রিয়াটা বেশ প্রফেশনাল মনে হবে৷ 

    ১২. সঠিক ফরম্যাটে এক্সপোর্ট করুন:

    সব এডিট করা শেষে আরেকবার চেক করে দেখুন যে ভিডিওটি সঠিক রেশিওতে এডিট করা হয়েছে নাকি। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে webm, mp4, flv, wmv বা mov ফরম্যাটে ফাইল এক্সপোর্ট করে ফেলুন। 

    ১৩. ৩-২-১ রুল:

    ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে সবসময় ৩-২-১ রুল মাথায় রাখবেন। এর অর্থ হল আপনার ভিডিও সবসময় ৩ কপি ৩ জায়গায় সেভ করে রাখবেন, ২টি ভিন্ন ধরনের ফরম্যাটে সেভ করবেন এবং ১ কপি কম্পিউটারের বাইরে কোথাও সেভ করে রাখবেন৷ এতে করে ফাইলটা ভালোমত সংরক্ষিত থাকবে৷

     

    ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ার শুরু করার টিপস 

    বেসিক কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখুন:

    যেকোনো স্কিল শিখতে গেলে এর বেসিক ক্লিয়ার রাখা খুবই জরুরি। ফ্রেম রেট, রেজ্যুলিউশন, অ্যাস্পেক্ট রেশিও, কালার গ্রেডিং ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন ও শিখুন। অনলাইনেই এসব নিয়ে অসংখ্য ফ্রি টিউটোরিয়াল ও কোর্স পেয়ে যাবেন। 

    পোর্টফোলিও তৈরি:

    ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ পেতে চাইলে আপনার অবশ্যই একটি ভালো ও সমৃদ্ধ পোর্টফোলিও থাকতে হবে। যেখানে আপনি আজ পর্যন্ত কোন কোন ভিডিও এডিট করেছেন, কয় বছর ধরে করছেন, কোথায় কোথায় কাজ করেছেন সব উল্লেখ করা থাকবে৷ 

    নেটওয়ার্কিং:

    ভিডিও এডিটিং সেক্টরে আগে থেকেই কাজ করছেন এমন মানুষদের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলুন। তাহলে তাদের সাথে কাজের সুযোগ বাড়বে এবং তাদের থেকে অনেক কিছু শিখতেও পারবেন।

    ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারগুলোর সাথে পরিচিত হোন:

    অনলাইনে অসংখ্য ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার আছে। কোনটা আপনার লাগবে, কোনটা লাগবে না সেগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকুন। 

    নিয়মিত অনুশীলন:

    ভিডিও এডিটিং ভালোমতো শিখতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটা ভিডিও এডিট করার সময় ভিন্ন ভিন্ন সফটওয়্যারের আলাদা আলাদা টুল ব্যবহার করা উচিত। এতে করে অনুশীলনও হবে সাথে কোন টুল দিয়ে কেমন কাজ হয় সেটারও ধারণা হয়ে যাবে।

     

    দরকারি কিছু  ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার 

    Adobe Premiere Pro

    Adobe Premiere Pro-কে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। এটা দিয়ে আপনি বেসিক থেকে শুরু করে এডভান্স ভিডিও এডিটিং যেমন কালার গ্রেডিং, ক্রোমা কিইং, অবজেক্ট ট্র‍্যাকিং ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন৷ তাছাড়া এটা ব্যবহারের টিউটোরিয়াল আপনি সফটওয়্যারের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। তবে এটা শিখতে চাইলে এইটার পেছনে অনেক সময় দিতে হবে। 

    সুবিধা: 

    • সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারগুলোর একটি।
    • এআই-পাওয়ার্ড টুল যেমন কালার ম্যাচ, অডিও ইনহ্যান্সমেন্ট, টেক্সট বেজড এডিটিং করা যায়।
    • অন্য Adobe সফটওয়্যারগুলোতে সরাসরি ফাইল এক্সপোর্ট করে কাজ করা যায়।

    অসুবিধা:

    • সাবস্ক্রিপশন ফি তুলনামূলকভাবে বেশি।
    • ব্যবহার করা একটু জটিল। 

    দাম: মাসে ৩১.৪৯ ডলার। পুরো বছরের বিল একবারে দিতে চাইলে মাসে ২০.৯৯ ডলার দিতে হবে। 

    ডিভাইস: উইন্ডোজ, ম্যাক

    DaVinci Resolve 

    এই সফটওয়্যারের বেজ ভার্সন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। ফ্রি ভার্সনে কিছু প্রফেশনাল ফিচারও রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন টুল কিটের জন্য আলাদা ওয়ার্কস্পেসও এখানে পেয়ে যাবেন। এখানে আপনি একাধিক ট্যাব ওপেন করে কাজ করতে পারবেন। 

    ফ্রি ভার্সনে আপনি ৮-বিটের ভিডিও আল্ট্রা এইচডি (৩৮৪০x২১৬০) রেজ্যুলিউশনে ৬০ ফ্রেম পার সেকেন্ডে এডিট করতে পারবেন। এরচেয়ে বেশি রেজ্যুলিউশন চাইলে আপগ্রেড করতে হবে। 

    সুবিধা: 

    • প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও এডিটিং অ্যাপ।
    • কালার গ্রেডিং, অডিও মাস্টারিং, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের কমপ্লিট টুল সেট পেয়ে যাবেন। 

    অসুবিধা:

    • ব্যবহার করার আগে আলাদা করে বেশকিছু জিনিস এডজাস্ট করে নিতে হবে।
    • ব্যবহার করা তুলনামূলক জটিল।

    দাম: এককালীন ২৯৫ ডলার। 

    ডিভাইস: উইন্ডোজ, ম্যাক

    Final Cut Pro

    Final Cut Pro কেবল ম্যাক ইউজারদের জন্যই বানানো হয়েছে৷ তবে অন্যান্য সফটওয়্যার যেখানে ৭ দিনের ফ্রি ট্রায়াল দেয়, সেখানে Final Cut Pro আপনাকে ৯০ দিনের ফ্রি ট্রায়াল দিবে। এখানে আপনি দারুণ সব সিনেম্যাটিক ভিডিও এডিট করতে পারবেন। 

    সুবিধা: 

    • অ্যাপল হার্ডওয়্যারের জন্য অপ্টিমাইজ করা।
    • মিনিমালিস্ট ইন্টারফেস। 

    অসুবিধা:

    • খরচ বেশি

    দাম: এককালীন ২৯৯ ডলার। 

    ডিভাইস: ম্যাক, আইপ্যাড

    Adobe Express

    সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও কন্টেন্ট যদি কখনো খুব দ্রুত বানানোর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে Adobe Express ব্যবহার করতে পারেন। খুব একটা ফিচার না থাকলেও, ফোনে মোটামুটি মানের ভিডিও এডিট করার জন্য এই অ্যাপটি যথেষ্ট। 

    সুবিধা: 

    • একাধিক টেমপ্লেট ও স্টক ফুটেজের ব্যবস্থা।
    • ব্যবহার করা সহজ।
    • ফ্রি ভার্সন আছে।  

    অসুবিধা:

    • খুবই বেসিক।

    দাম: টিমের জন্য মাসে ৬.৫৬ ডলার, প্রিমিয়াম ভার্সনের জন্য মাসে ৯.৯৮ ডলার।

    ডিভাইস: ব্রাউজার, আইওএস, এন্ড্রয়েড

     

    Video Making Course

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • মোবাইল ও DSLR ক্যামেরা ব্যবহার করে ভিডিও শুটিং ও এডিটিং এর খুঁটিনাটি কাজ থেকে শুরু করে অ্যাডভান্সড কৌশল
  • ভিডিও মেকিং -এর মাধ্যমে ক্যরিয়ার গড়ে তোলার সকল নির্দেশনা পাবেন এক্সপার্ট ইন্সট্রাক্টরদের কাছে
  •  

    সার-সংক্ষেপ

    সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা কেমন এবং ভিডিও এডিটর বর্তমানে বেশ চাহিদা সম্পন্ন একটি পেশা। ভিডিও এডিটিং স্কিল ভালোমতো রপ্ত করার মাধ্যমে আপনি সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন। এই পেশায় যেমন খ্যাতি, সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে, তার পাশাপাশি আছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, বাংলাদেশেও রয়েছে ভিডিও এডিটিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার বিশাল সুযোগ। কারণ কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। ইউটিউব কন্টেন্ট থেকে শুরু করে পডকাস্ট, মিউজিক ভিডিও, শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টারি, নিউজ মিডিয়া, স্পন্সরড ভিডিও– সবকিছুর জন্যই দক্ষ ভিডিও এডিটরের দরকার পড়ছে। যার ফলে প্রফেশনাল লেভেলে ভিডিও এডিটিং এর কাজ জানা থাকলে আপনার সামনে রয়েছে অনেক বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ।

    আমরা সবসময় ভিএফএক্স ব্যবহার করা সিনেমাগুলো দেখে মুগ্ধ হই। আপনি যদি ভিডিও এডিটিং শিখতে পারেন তবে আপনিও পারবেন এরকম অসাধারণ ভিডিও এডিট করতে। তখন আপনার কাজ দেখে মুগ্ধ হবে আরো অনেক মানুষ। 

    যেই কাজে উপার্জন বেশি, সেই কাজে কষ্টটাও একটু বেশি। তাই ভিডিও এডিটিং শেখার সময় মাঝপথে এসে হাল ছাড়লে চলবে না। যেহেতু এইটা ক্রিয়েটিভ ফিল্ড, তাই আপনাকে সবসময় অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হবে। যিনি যত বেশি প্রাকটিস করবে, তিনি তত দ্রুত এবং সুন্দর করে ভিডিও এডিট করতে পারবে। 

    শুধু নিজে এডিট করলেই হবে না, দেশ-বিদেশের ভিডিও এডিটরদের এডিটিং প্রসেস ও টিউটোরিয়ালগুলোও দেখতে হবে, সেখান থেকে টিপস নিতে হবে। তাহলেই নিজের কাজগুলো নিখুঁত ও সৃজনশীল হবে। 

    আর এই সেক্টরের অনেককিছুই দ্রুত পরিবর্তিত হয়। প্রায়ই নতুন ধরনের এডিটিং ট্রেন্ড আসে, সফটওয়্যার আপডেটেড হয়। তাই এগুলো সম্পর্কেও সবসময় আপ টু ডেট থাকতে হবে। এভাবেই ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ারে প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়তেই থাকবে। 

    ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য আপনি অনলাইনে কোর্স করতে পারেন। Udemy, Coursera, Skillshare-এ ভিডিও এডিটিং এর উপরে অসংখ্য কোর্স রয়েছে। তবে বাংলা ভাষায় Adobe Premiere Pro এর সহজ টিউটোরিয়ালসহ ভিডিও এডিটিং এর এ টু জেড শিখতে চাইলে, আপনার জন্য রয়েছে টেন মিনিট স্কুলের “Video Editing with Premiere Pro” কোর্সটি। এখানে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে একজন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট ইন্সট্রাক্টরের নির্দেশনায় প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং স্কিল অর্জন করতে পারবেন।  

    তাহলে আর দেরি না করে আজই ভিডিও এডিটিং এর হাতেখড়িটা হয়ে যাক?


    ক্যারিয়ারে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে, আজই ভিজিট করো আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সগুলোতে:

    রেফারেন্স:


    টেন মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com

    এছাড়াও যেকোনো জিজ্ঞাসায় কল করুন 16910 নম্বরে।

    আপনার কমেন্ট লিখুন