বিশ্বজুড়ে বিচিত্র আটটি ভোট

February 11, 2019 ...

কিছুদিন আগেই দেশে হয়ে গেল একাদশ সংসদ নির্বাচন। তোমরা অনেকেই হয়ত ভোট দিয়েছো এই নির্বাচনে, অনেকে হয়ত এইবার দিতে পারো নাই কিন্তু ভবিষ্যতে দিবা। তবে ভোট দাও বা না দাও ভোটের হাওয়া যাকে বলে সেইটা চোখে পড়ে নাই এমন মানুষ মনে হয় না এই দেশে পাওয়া যাবে। রাস্তায় বের হলেও চোখে পড়ে নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার, সারাদিন রাস্তায় চলছে প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং। সাথে বাজছে বিভিন্ন প্রার্থী বা দলের নামে গান। কিছু কিছু গানের কথা তো এতদিন পরে এসে আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে। তো ভোটের কয়েকদিন পরে আমার এক কাজিনের সাথে ভোট নিয়ে গল্প করছিলাম। ও খুব আক্ষেপ করে বলল ওর জন্ম যদি আর পাঁচটা দিন আগে হতো তাহলেই ও এই বছর ভোট দিতে পারতো। মানে একটুর জন্য বয়স আঠারো হয় নাই জন্য প্রথম ভোট দিতে ওর এখন পাঁচ বছর অপেক্ষা করা লাগবে। তবে এই যে ভোট দিতে হলে বয়স আঠারো হতেই হয় এই নিয়ম কিন্তু সব দেশের না। ব্রাজিল বা অস্ট্রিয়ার মতো কোনো কোনো দেশে ভোট দেওয়া যায় বয়স ষোল হলেই। অর্থাৎ, আজকের যুগে হাতে গোণা দুই- একটা দেশ ছাড়া ভোট সব দেশে হয়ে থাকলেও নিয়ম- নীতিতে আছে অনেক রকম পার্থক্য। আজকের লেখাটা বিশ্বজুড়ে ভোট সংক্রান্ত সেরকম বিচিত্র কিছু নিয়ম আর ফলাফল নিয়ে।

১। ব্যালট যখন মার্বেল

ভোটের কথা চিন্তা করলে কোন ছবিটা মাথায় আসে বলো তো? একটা কাগজ, সেখানে সব প্রার্থীর প্রতীকের ছবি দেওয়া থাকে, সেই মার্কা অনুযায়ী সিল দেওয়া লাগে, এই তো? আর এর সাথে হালে যোগ হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম, যেটায় প্রার্থীর প্রতীক অনুযায়ী সুইচ টিপতে হয় ভোট দিতে। কিন্তু আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় প্রচলিত ভোট দেওয়ার পদ্ধতিকে অদ্ভুতই বলতে হয়। সেখানে ব্যালট হিসেবে কাগজের বদলে ব্যবহৃত হয় মার্বেল। সিল মারারও কোনো বিষয় নাই। বরং প্রতিটা ভোটকেন্দ্রে থাকে কয়েকটা করে ড্রাম। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক প্রার্থী জন্য বরাদ্দ করা হয় নির্দিষ্ট রঙের ড্রাম। তারপরে সেই ড্রামে লাগিয়ে দেওয়া হয় প্রার্থীর ছবি, যেন ভোটাররা বুঝতে পারে ভোটটা সে কাকে দিচ্ছে। ভোটারের কাজ কেন্দ্রে যেয়ে একটা মার্বেল তুলে তার পছন্দের প্রার্থীর ছবিআলা ড্রামে ফেলে দেওয়া। কেও যেন একটার বেশি ভোট দিতে না পারে আছে সেই ব্যবস্থাও। ড্রামের ভিতর লাগানো থাকে একটা সাইকেলের ঘণ্টা। সেইটা এমনভাবে থাকে যেন প্রত্যেকটা মার্বেল ভিতরে পড়ার সময় একবার করে শব্দ হয়। বাইরে থাকা পোলিং এজেন্টরা বসে থাকার শোনার জন্য বেল বাজার শব্দ একটার বেশি হলো কিনা।

5yTTLGronK Zl XIhFom7 fB2XsP3EGvTJezHM3lGBHsn0gINQ 0LWtyA7qupu9L3dEKMVRFB97bhfRYnVhAeyrx rwBtAFqxT8RR pia waHDXnqbcnBho9348 M4Xvw6 NFDmT

ভোট গণনার জন্য একিক ড্রাম থেকে মার্বেলগুলো ঢালা হয় ২০০ বা ৫০০ ঘরের একিকটা কাঠের ফ্রেমে। সেইগুলো যোগ করে হিসাব করা হয় কোনো কেন্দ্রে কতগুলো ভোট পেলো একিকজন প্রার্থী। ভোটের জন্য এরকম বিচিত্র পদ্ধতি ব্যবহারের কারণ মূলত গাম্বিয়ার মানুষের নিরক্ষরতার হার। প্রথম যখন গাম্বিয়ায় ভোটের ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো তখন মনে করা হয়েছিলো প্রচলিত ব্যালট পেপার- প্রতীক – সিলের ভোটব্যবস্থা চালু করতে গেলে অধিকাংশ মানুষ বুঝবেই না সে কাকে কীভাবে ভোট দিচ্ছে। সেইজন্যই এই অনন্য ব্যবস্থা।

তবে দেশে শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে এইভাবে ভোট নেওয়ার প্রয়োজনও ধীরে ধীরে কমে আসছে। গাম্বিয়া সরকারও চাচ্ছে আস্তে আস্তে অন্যান্য দেশের মতোই ভোট চালু করতে। নাহলে প্রতি নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য আলাদা আলাদা ড্রাম জোগাড় করা, সেইগুলো রঙ করা কাজটা বেশ ব্যায়বহুলই বটে। একসময় হয়ত মার্বেল দিয়ে ভোট দেওয়ার এই পদ্ধতি আর থাকবে না, কিন্তু ছোটবেলার খেলার উপকরণ দিয়ে যে একটা দেশের সরকার নির্ধারিত হতো একটা সময়ে সেই ঘটনা নিশ্চয়ই থেকে যাবে ইতিহাসে।

২। মহাকাশ থেকে ভোট

হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছো, পৃথিবীর বাইরে থেকেও ভোট দেওয়া যায়। তবে এই ভোট অবশ্যই এলিয়েনরা দেয় না। এর জন্য ভোটারের হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অধিবাসী। ভোট দেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। পৃথিবীর বাইরে থাকলে সেই অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না এ কেমন কথা! এই ভেবেই টেক্সাসের আইনপ্রণেতারা ১৯৯৭ সালে মহাকাশ থেকে ভোট দেওয়ার পক্ষে একটা আইন প্রণয়ন করেন। এই নিয়ম ব্যবহার করে প্রথম ভোটটা দেন ডেভিড উলফ, যে কিনা সেইসময় অবস্থান করছিলো রাশিয়ান স্পেস স্টেশন মিরে।

বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স

কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • পিএসসি প্রণীত সিলেবাসের আলোকে সাজানো ৮০টি লাইভ ক্লাস
  • বিসিএস স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন মোকাবেলা করার কৌশল
  • ১৪৭টি রেকর্ডেড ভিডিও এবং ১৪৭টি ক্লাস ম্যাটেরিয়াল
  • ১২৫টি লেকচার শিট, ২৯৪০টি কুইজ ও ২৪টি মডেল টেস্ট
  •  

    ৩। নাগরিকত্বের জন্য গণভোট

    মধ্য ইউরোপের ছোট্ট একটা দেশ লিশটেনস্টাইন। সুইটজারল্যান্ড আর অস্ট্রিয়ার মাঝখানে থাকা ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের ল্যান্ডলকড একটা দেশ। এর জনসংখ্যাও মাত্র ৩৭,০০০। বাইরের দেশ থেকে কেও যদি এসে এই দেশের নাগরিকত্ব পেতে চায় তাহলে তাকে সেই দেশে কাটাতে হয় অন্ততপক্ষে তিরিশ বছর। তবে সুযোগ আছে এই তিরিশ বছর  সময় যাওয়ার আগেই নাগরিকত্ব পাওয়ার। এরজন্য মুখোমুখি হতে হয় গণভোটের। যদি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দেয় সেই মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে তাহলে সে পারে নাগরিকত্ব, যদিও গণভোটের ফল পক্ষে গেলেও পার্লামেন্ট আর রাজার অনুমোদন পেলেই পাওয়া যায় নাগরিকত্ব।


    blog 17

    আরো পড়ুন: ১০টি বিচিত্র ফোবিয়া: তোমার মাঝে কোনটি নেই তো?


    ৪। সিটি কাউন্সিলে গণ্ডার

    শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এইটাই সত্যি। ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরের সিটি কাউন্সিলে একবার নির্বাচিত হয়েছিলো একটা গণ্ডার। এই ঘটনাটা ১৯৫৮ সালের। সেইসময় শহরের মানুষ রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিতে এতটাই বিরক্ত হয়ে গেছিলো যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় কাকারেকো নামের একটা গণ্ডারকে। নির্বাচন কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই এই ‘প্রার্থীর’ মনোনয়ন মেনে নিতে চায় নাই। কিন্তু যখন ভোটের ফলাফল বের হলো তখন দেখা গেলো কাকারেকো পেয়েছে এক লক্ষেরও বেশি ভোট, এর অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভোটের সংখ্যায় ধারে- কাছেও যেতে পারে নাই। যদিও শেষ পর্যন্ত এই ভোটগুলো বৃথাই গেছে, কারণ ব্রাজিলের আইন অনুসারে কাউন্সিলের সদস্য হতে হলে অবশ্যই কোনো একটা দল থেকে মনোনয়ন পেতে হয়।

    eE4Li73r IbUIgV4035gyoENxXYbPV75pds8Hm0znoZkm45c0KZwukJj72BK3 nHixdsWVAiDQRGNQtsGYHJdPwJX9lZiEGbfSFeoc4c qfm fS6DBW0Pd2RulaCGAzPU2rgFjq

    ৫। মেয়দ পদে ফুট পাউডার

    গণ্ডারের নির্বাচনে বিজয়ের ঘটনা পড়ে অবাক হয়েছো? এইবারের ঘটনাটা তারচেয়ে অদ্ভুত। এই ঘটনাটা ইকুয়েডোরের পিকোয়াজা নামের একটা শহরের। সেই শহরের ১৯৬৭ সালের মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলো পালপাভাপাইস নামের একটা ফুট পাউডার। নির্বাচনের মৌসুমে পাউডারের বিজ্ঞাপন করতে কোম্পানি বেশ কিছু চটকদার লাইন বের করেছিলো, যার মধ্যে একটা ছিল “Vote for any candidate, but if you want well-being and hygiene, vote for Pulvapies”। কিন্তু ভোটের ফলাফল যখন আসলো তখন দেখা গেল এই বিজ্ঞাপনের লাইনটাই শহরের মানুষ বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে, রাইট-ইন ভোটে জিতে শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়ে গেছে পালভাপাইস! যদিও সেই দায়িত্ব সে আসলেই নিয়েছিলো কিনা কিংবা ভালো থাকার আর পরিচ্ছন্নতার যে প্রতিশ্রুতি সে দিয়েছিলো তা আদৌ রক্ষা করেছিলো কিনা সেই তথ্য আজ আর জানা যায় না।  

    ব্যাংক জবস কোর্স

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • ব্যাংক জব পরীক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার উপায়
  • পূর্ণ ব্যাখ্যাসহ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও আইসিটির প্রতিটি টপিক
  • লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে পরীক্ষা প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা
  •  

    ৬। চিৎকারেই নির্বাচন

    আধুনিক যুগের কথা তো অনেক হলো। এইবার যাওয়া যায় হাজার দুয়েক বছর আগে। গণতন্ত্রের জন্মস্থান বলা হয়ে থাকে যে জায়গাকে সেই গ্রিস দেশের স্পার্টা শহরে। এই নগররাষ্ট্রটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল একটা পরিষদ, যাকে বলা হতো এপ্পেল্লা। ৩০ এর বেশি বয়সী স্পার্টার যে কোনো নাগরিকের সুযোগ ছিল এপ্পেল্লার সদস্য হওয়ার। তবে এর জন্য নির্বাচিত হতে হলে যেতে হতো ‘চিৎকার প্রক্রিয়ার’ মধ্য দিয়ে। যে যে এপ্পেল্লায় সদস্য হতে চায় তারা একজন একজন করে জনতার সামনে আসতো। জনতা একিকজন সদস্যকে সমর্থন দিতো চিৎকার- তালি দিয়ে। এই চিৎকার শুনতো পাশের একটা বন্ধ ঘরে থাকা নির্বাচকরা। শেষ পর্যন্ত যে প্রার্থীর কপালে জুটতো সবচেয়ে বেশি চিৎকার আর তালি, সেই নির্বাচিত হতো এপ্পেল্লার সদস্য হিসেবে।

    ৭। ভোট যখন বাধ্যতামূলক

    বেশিরভাগ দেশে ভোট দেওয়াটা ভোটারদের ঐচ্ছিক বিষয়। আমাদের দেশসহ বহু দেশে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যায় যারা ভোটের দিনটাকে দেখে একটা বাড়তি ছুটির দিন হিসেবে, যেদিন আরাম করে বাসায় ঘুমানো যায়, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কষ্টটাও করার দরকার নাই।। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় এই কাজের সুযোগ নাই। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচনে ভোট না দিলে গুণতে হবে জরিমানা। ১৯২২ এর ভোটে ভোটারের উপস্থিতি এতই কম ছিল যে সেইসময়ের সরকার আইন পাস করায় বাধ্যতামূলকভাবে ভোট দেওয়ার। সেই আইন আজও চালু আছে। এছাড়াও আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডোর, লুক্সেমবার্গসহ আরো কিছু দেশে বাধ্যতামূলক ভোটের বিধান চালু আছে।

    ৮। কারচুপির বিশ্বরেকর্ড

    ১৯২৭ সালের লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে জয় লাভ করলেন আগের মেয়াদেও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা চার্লস ডি বি কিং। এই নির্বাচনে সে ভোট পায় ২,৩৪,০০০। এখানে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা হচ্ছে, সেইসময় লাইবেরিয়ায় নিবন্ধিত ভোটারই ছিল মাত্র পনের হাজার! অর্থাৎ দেশের মোট ভোটারের পনের গুণ ভোট পেয়েছেন একজন পার্থী! এই ঘটনাকে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসও স্বীকৃতি দিয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে। যদিও এইভাবে জেতার পরেও কিং ঠিকই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর ১৯৩০ এ লিগ অফ নেশনস এর চাপে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্বও পালন করেছেন এই পদে।

    sz4p ngsiVT4leFJ0GwUqs7wcYQtNpCXHqkv7xjcVKJCfiof3 llgFGj V IwCX4MmbzbVE1T GHpH455atIBafU rGKazqgU160lyXSHjdzrFXWEfFceRss IeFJBjYG5mMuK

    তথ্যসূত্র:


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন: 



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল করো এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

     

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন