আমাদের জন্মের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা কিন্তু নিজেদেরকে নিয়েই আছি। অথচ, যদি কখনও কেউ আমাদেরকে নিজেকে বর্ণনা করে এমন তিনটা শব্দ জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমাদের ঘাম বেরিয়ে যায়। একটা ঘটনা কল্পনা করা যাক। ভাবো তো, একবার লিফটে তোমার সাথে বিল গেটস উঠলেন!
বিল গেটসের গন্তব্য ভবনের দশম তলায়; আর তোমার কাজ তৃতীয় তলায়, বিল গেটসকে লিফটে রেখে সম্মান ও ভদ্রতার খাতিরে হলেও তোমার থেকে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তুমি আর বিল গেটস; মাঝখানে হাতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়। পুরো ব্যাপারটা তোমার হাতে!
তুমি এ সংক্ষিপ্ত সময়টাকে কেবলমাত্র বিল গেটসের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কিংবা একটা সেলফি তুলেই শেষ করে ফেলতে পারো। এতে তোমার বা বিল গেটসের কারও কি কোনও লাভ হলো? বড়জোর, তুমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু লাইক/কমেন্ট পাবে।
অথচ, এই ৩০ সেকেন্ডে একটু কৌশল অবলম্বন করলেই হয়তো তুমি বিল গেটসের সাথে কাজ করার মতো বিশাল একটা সুযোগও পেয়ে যেতে পারতে। এই কৌশলের নামই ‘Elevator Pitch.
নামটা ‘Elevator Pitch’ বলে ব্যাপারটা যে কেবল লিফটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। এটা অন্য যে কোনও জায়গায় স্বল্প সময়ে যেকোনও ব্যক্তির সামনে নিজেকে সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রক্রিয়া। লিফটে সাধারণত আমরা খুব কম সময়ের জন্য অবস্থান করি। সে ধারণা থেকেই মূলত এ ধরণের নামকরণ।
অর্থাৎ, কখনও যদি লিফটে বা অন্য কোথাও এমন গুরুত্বপূর্ণ কারও সাথে দেখা হয়ে যায় যিনি কিনা তোমার কোনও উপকারে আসতে পারেন কিংবা তুমি তার সাথে কাজ করতে বেশ আগ্রহী সেক্ষেত্রে তার সামনে নিজেকে স্বল্প সময়ে যে অল্প কথায় উপস্থাপন করবে সেই ছোট্ট বক্তব্যের নামই ‘Elevator Pitch.’
এখন, প্রশ্ন হলো এটা যে এই ‘Elevator Pitch’ তৈরির উপায়গুলো কী কী?
১) খুঁজে বের করো তিনটি শব্দ
নিজেকে জানো। তোমাকে বর্ণনা করে, এমন শব্দগুলোকে খোঁজার চেষ্টা করো। সেখান থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং যেগুলো তোমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা হিসেবে উপস্থাপন করে সেরকম তিনটা শব্দ বেছে নাও। যেমন: শিক্ষক, বক্তা, উদ্যোক্তা তিনটি শব্দ আমাকে বর্ণনা করে।
২) কিছুটা বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করো।
ছোট করে লিখে ফেলো, ঐ শব্দগুলো কীভাবে তোমাকে বর্ণনা করে তা নিয়ে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য এক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট।
আমার ক্ষেত্রে- আমি একজন শিক্ষক। আমি অনলাইনে পড়াই। আমি একজন বক্তা হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা বলি, বক্তব্য দেই। টেন মিনিট স্কুল আমার নিজের একটি উদ্যোগ।
৩) নিয়মিত অনুশীলন করো।
প্রতিদিন আয়নার সামনে বারবার অনুশীলন করো। বন্ধুদের সাথেও অনুশীলন করা যেতে পারে। তাহলে, জড়তা কেটে যাবে। অডিও বা ভিডিও রেকর্ডও করা যেতে পারে যাতে করে কণ্ঠের অবস্থা আর বলার ভঙ্গিমা সম্পর্কিত ধারণা পাওয়া যায়।
আমাদের সবার ক্ষেত্রেই এই ‘Elevator Pitch’ যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করে ফেলাটা খুব জরুরি। তা না হলে, যদি কখনও এমন কোনও বিখ্যাত কেউ বা তোমার খুব প্রিয় কোনও মানুষ কিংবা এমন কারও সামনে তোমাকে পড়তে হয়, যার সাথে দেখা করতে অনেকদিন ধরেই তুমি খুব আগ্রহী ছিলে, যাকে বলার জন্য হয়তো অনেক কথাও তোমার তৈরি ছিলো কিংবা যে হয়তো তোমার খুব বড় কোনও কাজে আসতে পারেন। কিন্তু, শুধুমাত্র ওই বিশ-ত্রিশ সেকেন্ড সময়টুকুর যথাযথ প্রয়োগ না করতে পারার কারণে তোমার কথাগুলো তাকে বলা হয়ে উঠবে না।
এমনটা আমাদের সবার সাথে ইতিপূর্বে ঘটেছে, এখনও ঘটছে। আর, ‘Elevator Pitch’ তৈরি না থাকলে ভবিষ্যতেও ঘটবে। যেটা, আশা করি আমাদের কারও কাম্য নয়! আর তাই এক্ষেত্রে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের সবাইকে নিজেদের গন্ডির ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে উপস্থাপন করতে শিখতে হবে।
অন্যথায়, এ নেটওয়ার্কিং এর যুগে কেবলমাত্র নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে না পারার কারণে অনেক সময় ক্ষেত্রবিশেষে নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যেতে পারো।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন