এক নজরে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৪: জানার আছে যা কিছু

December 18, 2023 ...

সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রমের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নতুন এই শিক্ষাক্রমে জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও ব্যবহারিকের জ্ঞান অর্জনের উপর। এছাড়াও কমানো হয়েছে পাঠ্যপুস্তকের পরিমাণ, বাতিল হচ্ছে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি। এই সব পরিবর্তনের কথা শুনেই প্রায় সবার মনেই মিশ্র চিন্তার উদ্ভব হয়। তাই এই ব্লগের পুরোটা জুড়ে থাকছে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে আদ্যপান্ত।

 

শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম কী?

‘শিক্ষাক্রম’ (Curriculum) হলো একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংবিধান। শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম বলতে মূলত বোঝানো হয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিন্যস্ত পরিকল্পনাকে। কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কিভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে এসবের যাবতীয় পরিকল্পনার রূপরেখাকেই শিক্ষাক্রম বলা হয়।

 

নতুন শিক্ষাক্রমের নতুন শিক্ষা উপকরণ

নতুন শিক্ষাক্রমের  শিক্ষা উপকরণ বলতে মূলত নতুন শিখন কৌশলকে বোঝানো হয়েছে। পুরাতন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা উপকরণ ছিলো শুধুমাত্র পাঠ্যবই। নিঃসন্দেহে বই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ। তবে নতুন কারিকুলামে নতুন শিক্ষা উপকরণ হিসেবে পাঠ্যবইয়ের সাথে আরও যুক্ত হবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ছবির পাঠ, বর্ণধাঁধা, ভূমিকা অভিনয়, বিতর্ক, গল্প বলা ও শোনার খেলা, প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্ট, শিক্ষা ভ্রমণ কিংবা বক্তৃতা ইত্যাদি। 

আরো নির্দিষ্টভাবে বললে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষা উপকরণগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

নতুন পাঠ্যবই

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইগুলি আগের শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইগুলির থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এই পাঠ্যবইগুলি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিকভিত্তিক শিক্ষা প্রদানকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ ও অনুশীলন রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতাভিত্তিক বিকাশে সাহায্য করবে।

নতুন কারিকুলামের নতুন পাঠ্যবই

নতুন কারিকুলামের নতুন পাঠ্যবই [ছবি: প্রথম আলো]

পোস্টার প্রেজেন্টেশন 

নতুন কারিকুলামের আরেকটি নতুন উপকরণ হচ্ছে পোস্টার প্রেজেন্টেশন। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রেজেন্টেশনের সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গিয়ে। তাই শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে প্রেজেন্টেশন দিয়ে অভ্যাস না থাকায়, অনেকেরই প্রেজেন্টেশনে ভীতি কাজ করে। নতুন শিক্ষাক্রমে পোস্টার প্রেজেন্টেশন যুক্ত করার আরেকটি উদেশ্য হচ্ছে শিক্ষর্থীদের পাবলিক স্পিকিং বা সবার সামনে কথা বলার জড়তা দূর করা। ফলে এই পোস্টার প্রেজেন্টেশনে শিক্ষর্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

 

দলগত ব্যবহারিক কাজ 

নতুন কারিকুলামের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো দলগত ব্যবহারিক কাজ। এই দলগত ব্যবহারিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আরও কার্যকরভাবে শিখতে সাহায্য করে। কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে একজন মানুষ কোনো কিছু পড়া কিংবা শোনার চেয়ে কাজের মাধ্যমে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে পারে। 

এক নজরে নতুন কারিকুলামের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সমূহ 

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে দুইদিন (শুক্রবার ও শনিবার)।
  • বাতিল হচ্ছে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি।
  • ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না।
  • প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা থাকছে না।
  • প্রাথমিক শ্রেণিতে সবার জন্য ৮ টি বই এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০টি বই পড়তে হবে।
  • শুধু এসএসসি তে গিয়ে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হবে।
  • এসএসসি পর্যায়ে কোনো বিভাগ থাকবে না।
  • একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুইটি পাবলিক পরীক্ষার সমন্বয়ে ফলাফল হবার কথা রয়েছে।

নতুন কারিকুলামের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সমূহ

এক নজরে নতুন কারিকুলাম [ছবি: কালের কণ্ঠ]

থাকছেনা পরীক্ষা তাহলে কিভাবে হবে মূল্যায়ন!

গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার সাধারণ মূল্যায়ন পদ্ধতি হচ্ছে পরীক্ষা, যেখানে পরীক্ষার নাম্বার দিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতার মূল্যায়ন করা হতো। এ কারণে পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীরা শিখার চেয়ে পরীক্ষার নাম্বারের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতো। তবে নতুন কারিকুলামে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি এসেছে এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। শিখনকালীন ও সামষ্টিক এই দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে নতুন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ মূল্যায়ন পদ্ধতির ছক

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ মূল্যায়ন পদ্ধতি [ছবি: আজকের পত্রিকা]

নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না, তবে এর উপরের শ্রেণিতে পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হচ্ছে শিখনকালীন ধারাবাহিক পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বিষয়-শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন। 

প্রাক্‌-প্রাথমিক-তৃতীয় শ্রেণি

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুসারে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। বিদ্যালয়েই শ্রেণিশিক্ষকেরা ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন।

চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণি

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান—এই পাঁচ বিষয়ের ওপর ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। সিলেবাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে যে মূল্যায়ন, সেটাকেই বলা হচ্ছে সামষ্টিক মূল্যায়ন। এ বিষয়গুলো ছাড়া বাকি তিনটি বিষয়—শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা এগুলোর শতভাগ মূল্যায়ন শিখনকালীনই করা হবে।

ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান—এই পাঁচ বিষয়ের ওপর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া বাকি চারটি বিষয় জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে।

 

নতুনরূপে অনলাইন ব্যাচ ২০২৪ (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি)

কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • ৬টি বিষয়ের উপর ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাস
  • ডাউট সলভ ও প্রতিটি ক্লাসের লেকচার শীট
  • ডেইলি প্র্যাক্টিস ও উইকলি প্র্যাক্টিস
  • ডেমো অ্যাসাইনমেন্ট ক্লাস ও প্র্যাক্টিস
  • "

     

    নবম-দশম শ্রেণি

    নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান—এই পাঁচ বিষয়ের ওপর ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বাকি ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া বাকি তিনটি বিষয় জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে। দশম শ্রেণি শেষে দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের অধীন বর্তমান এসএসসি পরীক্ষার আদলে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ পরীক্ষার নাম পরিবর্তন হতে পারে।

    একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি

    একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই তিনটি আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। নৈর্বাচনিক বা বিশেষায়িত বিষয়ে কাঠামো এবং ধারণায়ন অনুযায়ী হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। প্রায়োগিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

     

    বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নে নৈপুণ্য অ্যাপ্লিকেশন

    নৈপুণ্য অ্যাপ হলো বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম পরিচালনার একটি স্মার্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ ও রিপোর্ট বানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনটি। 

    নৈপুণ্য অ্যাপ্লিকেশন

    নৈপুণ্য অ্যাপ্লিকেশন

    শিক্ষার্থীর শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন সহজ ও ত্রুটিমুক্ত করতে উন্মুক্ত করা হয়েছে ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপ। যার মাধ্যমে চলতি বছর শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে এবং আগামী ২০২৪ সাল থেকে ৭টি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও এই অ্যাপের মাধ্যমে করা হবে। 

    নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ

    নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে শিক্ষকদের ধারণা দিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক একটি বিশেষ স্কিম প্রণয়ন করা হয়েছে। এই স্কিমের আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

    নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণকে বেশ কয়েকটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম স্তরে, শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের মূল বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে। দ্বিতীয় স্তরে, শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তৃতীয় স্তরে, শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম  বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পরামর্শ দেওয়া হবে।

    সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার ৪৭৬ উপজেলায় নতুন কারিকুলাম বিস্তরণবিষয়ক ৭ দিনব্যাপী অষ্টম ও নবম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ২০২৩ সালের ১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

    কেমন হবে শিক্ষার নতুন পরিবেশ? 

    নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে নিসঃন্দেহে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে বদলে যাবে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, পাঠ্যবই, পরীক্ষা ও মূল্যায়নপদ্ধতিসহ আরও অনেক কিছু। 

    শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে নতুন কারিকুলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খেলাধুলা ও নানান সৃজনশীল কাজের প্রতি। তারা যেন ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করতে পারে, বাড়ির কাজেরও যেন অতিরিক্ত চাপ না থাকে, সারা দিন কোচিংয়ের পেছনে দৌড়ে সময় নষ্ট না করতে হয় এবং সেই সাথে শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে পারে, সে বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে এই নতুন শিক্ষাক্রমে। 

    নতুন শিক্ষাক্রমে প্রত্যাশা

    বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার প্রত্যাশা নিয়ে ২০২৩ সালে আংশিকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম  নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, “পড়াশোনা আর চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নতুন কারিকুলাম তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু জানাতে ও শেখাতে, যা তাদের নতুন চিন্তাধারার পথ দেখাবে।” 

    নতুন শিক্ষাক্রমে প্রত্যাশা

    নতুন শিক্ষাক্রমে প্রত্যাশা [ছবি: শিক্ষক বাতায়ন]

    নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্য করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে একটি সুস্থ, মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যে সকল প্রত্যাশাকে সামনে রেখে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তা হলো:

    • শিক্ষার্থীদেরকে আনন্দময় পরিবেশে শিখতে উৎসাহিত করা।
    • পাঠ্যবইয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি, প্রতিটি বিষয় হাতে-কলমে শেখানো।
    • জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দক্ষতা ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো।
    • জ্ঞানভিত্তিক সমস্যা সমাধান ও উদ্ভাবনী চিন্তার দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।
    • শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

    কিছু সাধারণ প্রশ্ন

    নতুন এই শিক্ষাক্রম নিয়ে সবার জিজ্ঞাসার শেষ নেই। তাই এই অংশ জানাবো নতুন কারিকুলাম নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর। 

    নতুন শিক্ষাক্রম কবে থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে?
    • ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে,
    • ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে, 
    • ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, 
    • ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে, এবং 
    • ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
    নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন কিভাবে হবে?

    নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। থাকছে না বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগ বিভাজন।

    তাহলে কি থাকছে না সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি?

    না, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কোনো সৃজনশীল প্রশ্ন থাকছে না। 

    নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি কেমন হবে?

    নতুন শিক্ষাক্রমে গততানুগতিক পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক ও শিখনকালীন  মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

    কিভাবে করা হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন?

    নতুন শিক্ষাক্রমের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে আছে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি শিখনকালীন মূল্যায়ন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। শিখনকালীন মূল্যায়নে বিষয়-শিক্ষকেরা সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, খেলাধুলা, দলগত কাজ, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন।

    সামষ্টিক মূল্যায়ন বলতে কী বোঝায়?

    নির্দিষ্ট সময় বা পর্যায় সমাপ্তিতে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করাকে চূড়ান্ত মূল্যায়ন বা সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্র যাচাই করতে  প্রথম ৬ মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট তৈরি করা হবে, রপর বছর শেষে শিক্ষার্থীর বার্ষিক রিপোর্ট প্রদান করে হবেএদের ভিত্তিতে করা হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন।

    নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কিভাবে হবে?
    • নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে।
    • এরপর বোর্ডের অধীনে নেওয়া হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই পরীক্ষা। এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির ফল চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।

     

    শেষকথা

    ব্লগের পুরোটা জুড়ে আমরা আলোচনা করেছি নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন নিয়ে। এই শিক্ষাক্রমের ইতিবাচক পরিবর্তন থেকে আশা করা যায় এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে আরও বাস্তবমুখী ও প্রাসঙ্গিক করতে সাহায্য করবে। তবে এই নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে হয়তো শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবারই কিছুটা সময় প্রয়োজন। বিগত ৫ বছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং, ২০২১ সালের সকল ব্যাচের জন্য কোভিড ছিল যেমন একটি চ্যালেঞ্জ এবং একটা বিশাল পরিবর্তন। পরিবর্তন তেমনি দেখা গিয়েছে ২০২২, ২০২৩ ব্যাচের এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় যখন সিলেবাস করে নেওয়া হয়েছে শর্ট।

    এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পড়াশোনায় ১০০ তে ১০০ প্রস্তুতিতে তোমার পাশে আছে  10 Minute School


    নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিস্তারিত জানতে দেখে নিন আমাদের এই ব্লগ গুলো:

    বছরজুড়ে অভিজ্ঞ টিচারদের সাথে ক্লাস 6-10 এর পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে আজই ভিজিট করো আমাদের অনলাইন ব্যাচ ২০২৫ -এ:


    তথ্যসূত্র:

    • ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
    আপনার কমেন্ট লিখুন