বর্তমান সময়ে এমন কী কখনো ভেবে দেখেছেন যে, একটা দিন স্মার্টফোন ছাড়া কাটাতে পারবেন? মোবাইল ফোন এখন বিশ্বজুড়ে অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মিনিটের জন্য ফোন চোখের আড়াল হলেই উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকি আমরা। মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ব্যাপকতা এতই বেশি হয়ে গিয়েছে যে, দু-আড়াই বছরের শিশুর হাতেও মোবাইল ফোন। দিব্যি এর সুইচ টেপে এবং ভিডিও গেইমে ডুবে থাকছে সারাদিন। আর শিশুর মা সংসারের কাজ দেখেন বা অফিসে চলে যান। মোবাইলের যে আগ্রাসন আমাদের সবাইকে প্রতিদিন গ্রাস করছে সেদিকে নজর দেবার অবকাশ আমাদের আসলে কারোর-ই নেই।
একটা সময় যখন প্রযুক্তির এত উন্নয়ন হয়নি, মানুষ তার অবসর সময় পার করত জ্ঞান অর্জনে কিংবা বিভিন্ন সৃজনশীলকাজে। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইল হয়ে উঠেছে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। বলতে পারেন প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগের অন্যতম একটি অঙ্গ মোবাইল। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে এটি। তবে এরই মধ্যে মোবাইলের কিছু নেতিবাচক দিকের কথাও সামনে এসেছে। স্মার্টফোনের ওপর এই নির্ভরতা আমাদের স্বাস্থ্যের, সম্পর্কের, জীবন যাপনের ওপর যে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে জানা আছে? জেনে নিন মাত্রাতিরিক্ত এই প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলছে।
ইনসমনিয়া
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে একজন মানুষের প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মানুষের এই ঘুমের সময়টা যদি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার দখল করে নেয় তাহলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। ইনসমনিয়া এমনই একটি সমস্যা। ইনসমনিয়া বা স্লিপিং ডিসঅর্ডার বলতে অনিদ্রা বা স্বল্প নিদ্রাকে বোঝায়। এর ফলে মানুষের শরীরে ঘুমের চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। সারা রাত ঘুম আসে না।
ইনসমনিয়ার দুই ধরন
প্রাথমিক বা স্বল্পমেয়াদী:
এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তির ঘুমাতে সমস্যা হয় কিন্তু তা শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। স্বল্পমেয়াদী ইনসমনিয়া কিছুদিন অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি:
অনিদ্রা যখন একমাস বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন তাকে দীর্ঘমেয়াদি ইনসমনিয়া বলে। এ ধরনের ইনসমোনিয়ার কারণ শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, অ্যালকোহল সেবন, ওষুধের কুফল ইত্যাদি।
ইনসমনিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট কারণ সনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হল মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার। আর বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বললেই সবার আগে যে প্রযুক্তির কথা আমাদের মাথায় আসে তা হল স্মার্টফোন। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার জার্নালে একটি কেস স্টাডি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৮-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশই মোবাইল সঙ্গে করে ঘুমাতে যায়। এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে কীভাবে মোবাইল ফোন ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হয়ে উঠছে। ইনসমনিয়ার প্রকোপ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে তরুণ প্রজন্ম ডুবে যাচ্ছে ভয়াবহ এক অন্ধকার অমানিশায়।
Personal Fitness
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
নমোফোবিয়া
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের মধ্যে মোবাইল সংক্রান্ত কারণেই রোগ হচ্ছে। এমনই একটি রোগ নমোফোবিয়া। মোবাইল ফোনের উপর মানুষের নির্ভরতা এতটাই বেড়ে গেছে যে, সিগারেট বা চায়ের উপর আসক্তির মত-ই মোবাইলের উপরও আসক্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। মোবাইল ফোন যেকোনো সময় হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সারাদিন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকার লক্ষণ রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোনটি কিছুক্ষণ ব্যবহার করতে না পারলেই মনে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। একই সাথে বাড়ছে নমোফোবিয়া।
গবেষণায় দেখা যায়, এ ধরনের সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যাচ্ছে যারা ১৯৮০ সালের পর জন্মেছেন। এ ধরনের রোগীদের পরীক্ষার জন্য বিশেষ প্রশ্ন তৈরি করতে হয়েছে গবেষকদের। স্মার্টফোন বেশ কিছুক্ষণ ব্যবহার না করার কারণে যে অস্বস্তি বা ভীতি ভর করে তাকে বলা হচ্ছে ‘নমোফোবিয়া’। এখন আপনি এ রোগে আক্রান্ত কিনা তা শনাক্ত করতে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব পেতে হবে। লোয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ প্রশ্নের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়। এদের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে ১-৭ পয়েন্টের স্কেলে। এখানে যারা ১ পয়েন্টের অন্তর্গত তারা কঠোরভাবে নমোফোবিয়ার সঙ্গে একমত নন। আর যারা ৭ পয়েন্ট পেয়েছেন তারা কঠোরভাবে নমোফোবিয়ায় আক্রান্ত।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
পারকিনসন
পারকিনসন রোগ হল এক প্রকারের নিউরো-ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ। মস্তিষ্কের এই রোগটি সম্পর্কে সর্ব প্রথম ধারনা দেন জেমস পারকিনসন, আর তার নাম অনুসারেই এই রোগের নাম দেওয়া হয়। মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পারকিনসন রোগ মস্তিষ্কের এমন এক অবস্থা যাতে হাতে ও পায়ে কাঁপুনি হয় এবং আক্রান্ত রোগী চলাফেরায় অপারগ হয় । রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দুর্বলতা, বিষাদগ্রস্ততা, ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি, বিভ্রান্তি এবং স্মৃতিশক্তির বিলোপ ইত্যাদি।
পারকিনসন রোগ (পিডি) মূলত আমাদের মস্তিষ্কের মোটর সিস্টেম প্রভাবিত করে যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি দীর্ঘমেয়াদী অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলা-জনিত ব্যাধি। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ক্রমাগত এর থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মির মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদী বিস্তারের ফলাফলস্বরূপ রোগ পারকিনসন। এই রোগ সাধারণ পঞ্চাশোর্ধ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ইদানীং এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। লক্ষণগুলি সাধারণত সময়ের সাথে ধীরে ধীরে আসে। এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে স্পষ্টতর হয় কম্পন, পেশীর অনমনীয়তা, চলাচলের মন্থরতা এবং হাঁটা চলার অসুবিধা। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকে অতিমাত্রায় ক্লান্ত করে তুলবেন না। বিশ্রামের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করুন, কেননা চাপ এবং অবসাদ দুটোই এ রোগের উপসর্গগুলোকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। মোবাইল ফোন প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করলে আমাদের মধ্যে চাপ ও অবসাদ উভয়ই তৈরি হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং নিজের প্রতি আরও যত্নশীল হউন।
ব্রেইন টিউমার বা ক্যান্সার
মস্তিষ্কের টিউমার বা ব্রেইন টিউমার হচ্ছে এমন এক অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হতে থাকে। এ টিউমার দু’ ধরণের হয়। একটি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার তৈরিকারী টিউমার। অন্যটি ব্রেইন টিউমার। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্রাইমারি ক্যান্সার তৈরি হয় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে। আর মাধ্যমিক টিউমার দেহের অন্য কোনও অংশে তৈরি হয়ে বিস্তার লাভ করে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের বেশিরভাগ টিউমারের কারণ এখনও অজ্ঞাত। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভিনাইল ক্লোরাইড, এপস্টাইনবার ভাইরাস এবং আয়োনিত তেজস্ক্রিয়া ব্রেইন টিউমারের কারণ হতে পারে। তবে এবার ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টকারী টিউমারের পেছনে হাত থাকতে পারে মোবাইল ফোনের। মোবাইল থেকে বেরনো রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সির ফলে ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। গত ১৯৯৫ থেকে ২০১৫, এই ২১ বছর ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্তদের পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ফোনের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মোবাইল ব্যবহারের সঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৫ সালে প্রতি এক লাখে যেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত ছিল ২.৪ জন, সেখানে ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ৫ জনে। মানে দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে জার্নাল অব এনভায়রনমেন্ট এন্ড পাবলিক হেলথ।
স্টাডি এন্ড ট্রাস্টি অব চিলড্রেন উইথ ক্যান্সার ইউকে’র প্রধান গবেষক আলাসডির ফিলিপস বলেন, “ব্রেইন ক্যান্সারের কারণ খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোনের ভূমিকার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।” উল্লেখ্য, ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টকারী ব্রেইন টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে কান ও কপালের মধ্যবর্তী স্থানে সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ক্রমান্বয়ে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। অর্থাৎ ব্রেইন ক্যান্সারের মাত্রা তরান্বিত করতে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৪
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বাধুনিক সহজ প্রযুক্তি হচ্ছে মোবাইল ফোন। এর বিকল্প এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার এড়িয়ে চলবার উপায় নেই। তাই এর ব্যবহার অনিবার্য। তবে অপব্যবহার যেন না হয় সেদিকে নজর দেয়া খুব জরুরি। বিনা প্রয়োজনের এর অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
Reference:
- CNN
- Psychology today
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Personal Finance Course by Nafeez Al Tarik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন