ক্লাসে নোটিশ এলো, ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় প্রতি শ্রেণী থেকে পাঁচজনকে পাঠাতে বলা হয়েছে। নোটিশ পড়ে শোনানোর পর আসাদ স্যার মাথা তুলে তাকালেন ক্লাসের দিকে। ক্লাসের অর্ধেক ছেলেমেয়ে হাত তুলে বসে আছে। সবাই যেতে চায়।
আসাদ স্যার পড়লেন মুশকিলে। কাকে রেখে কাকে নেবেন।
তিনি এক হাতে নোটিশের কাগজ নিয়ে অন্য হাতে মাথা চুলকাতে লাগলেন।
নোটিশ নিয়ে আসা পিয়ন মফিজ চাচা বললেন, “স্যার বেয়াদবি না নিলে আমি কই। একটা পরীক্ষা নেন, যারা ভালো কইরবো তাগোরে পাঠাই দিলেন।”
আসাদ স্যার খুশি হয়ে গেলেন। খাসা আইডিয়া তো! তিনি ঠিক করলেন বিজয় দিবসের উপর একটা কুইজ নেবেন। যে পাঁচজন সবচেয়ে ভালো নম্বর পাবে তাদের পাঠিয়ে দেবেন প্রতিযোগিতায়। যারা আসলেই যোগ্য তারা সুযোগ পাবে।
“কালকে তোমাদের একটা কুইজ নেয়া হবে। ১০টা প্রশ্ন থাকবে। প্রত্যেকটায় এক নম্বর করে মোট ১০ নম্বর। ৮ এর কাছাকাছি পৌঁছাতে যারা সফল হবে তেমন পাঁচজনের জন্য কালকে বিজয় দিবস। বোঝা গেছে?”
ক্লাস সমস্বরে বললো, “জ্বী স্যার!”
রাতে বাড়ি ফিরেই আসাদ স্যার প্রশ্ন তৈরি করতে বসলেন। আসাদ স্যারের প্রশ্নটা এখানে দিয়ে দিচ্ছি, দেখি আমরা কে কতটা জানি!
২০১৩ সালের বিজয় দিবসে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে?
৪৩তম বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭ হাজার ১১৭ জনের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম মানব জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে স্মরণ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব জাতীয় পতাকা নির্মাণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই আয়োজন করেছিল রবি আজিয়াটা। মানব জাতীয় পতাকা তৈরির এই নতুন বিশ্ব রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল।
আত্মসমর্পণের সময় বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান সাক্ষী কে ছিলেন?
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার যিনি এ.কে. খন্দকার নামে পরিচিত (জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯৩০) বাংলাদেশের একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বিমানবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ও উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
Advertisement
১৯৭৩ সালের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কোনটি ঘোষণা করা হয়?
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য মুক্তিযোদ্ধাগণকে বিভিন্ন ধরণের পদক প্রদান করা হয়। এই পদকগুলি কয়েক স্তরে বিভক্ত। যেমন- বীরত্বসূচক পদক, প্রধান সেনাপতির প্রশংসাপত্র, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক পদক এবং আহতসূচক ফিতা। মোট ৬৭৭ জন বীরত্বসূচক পদক পান, যেগুলির নামও আমাদের সবার জানা- বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম এবং বীরপ্রতীক।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণয়ন করেন কে?
স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের স্থপতি। বাকিদের মধ্যে ফজলুর রহমান খান বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত স্থপতি ও পুরকৌশলী ছিলেন । তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইওলস টাওয়ার)-এর নকশা প্রণয়ন করেন। মাঝারুল ইসলাম বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন। বশিরুল হক ছায়ানট ভবন ও আসা প্রধান অফিস ভবনের স্থপতি, তিনি তাঁর পরিবেশবাদী স্থাপনার ধরনের জন্য প্রসিদ্ধ।
Advertisement
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পূর্বেই কোন দুইটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বে ভুটান সর্বপ্রথম সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। একই দিনে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভারতও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নেপাল ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২, মায়ানমার ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ ও যুক্তরাজ্য ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকাস্থ শাখার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ কত সালে পাশ হয়?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৭২ পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষনা করা হয়। এর কার্য নির্বাহী প্রধান “গভর্নর” হিসাবে পরিচিত।
পাকবাহিনী ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর কোথায় আত্মসমর্পণ করে?
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিল ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেস্কোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন। পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার এবং দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের নিকট সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য দলিলটি বাংলাদেশে নেই।
কে ফোর্সের অধিনায়ক কে ছিলেন?
মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার। তাকে ২৪শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদেশে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। ২৬শে মার্চ তিনি ও তার ইউনিট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
আত্মসমর্পনের পরে পাকিস্তানী দের যুদ্ধবন্দি হিসেবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়?
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে।
- আত্মসমর্পণ দলিলের একটি অংশ
“Bangladesh: Out Of War, A Nation Is Born” শিরোনামে ১৯৭১ এর ২০ই ডিসেম্বর একটি বিখ্যাত পত্রিকায় একটি আর্টিকেল বের হয়। পত্রিকাটির নামটি কি তোমার মনে আছে?
টাইম ম্যাগাজিনের ১৯৭১ সালের ২০ই ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশ হওয়া আর্টিকেলটির প্রথম লাইন ছিলো এরকম, “JAI Bangla! Jai Bangla!" From the banks of the great Ganges and the broad Brahmaputra, from the emerald rice fields and mustard-colored hills of the countryside, from the countless squares of countless villages came the cry.”