অমীমাংসিত রহস্যের প্রথম পর্বে আমরা জেনেছি অনেকগুলো রহস্যের ব্যাপারে। যেসকল রহস্যের আজ পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি সে রহস্যগুলো নিয়েই এবারের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে। রহস্যের সবচেয়ে আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে, তুমি এমন সব বিষয় সম্পর্কে অবগত হবে যা তোমাকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এতসব চমকপ্রদ তথ্য দেবে যা কিনা তোমার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ হতে অনেক বেশি সহায়তা করবে।
রহস্য সম্পর্কে জানতে গিয়ে মনের কোণে তা সমাধানের ব্যাপারটি আপনা থেকেই চলে আসে। কিন্তু কিছু রহস্য এমনও হয় যাদের নেই কোন সমাধান। বড় বড় বিজ্ঞানী, ক্রীপ্টোগ্রাফাররা দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করেও বের করতে পারেননি যার সমাধান। রহস্য থেকে আরোহিত জ্ঞানকে যখন তোমাকে সমাধান পিপাসু করে তুলবে, সেই মনোভাবটি কিন্তু শুধু তোমাকে রহস্যের
সমাধানে সাহায্য করবে তা নয়, বরং যেকোন সমস্যাকে সমাধান করার ইচ্ছা এবং মনোভাবকেও কিন্তু জাগ্রত করবে।
অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে যুগের পর যুগ মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। মানুষ শুধু রহস্য নিয়ে গল্প করেনি, জানার চেষ্টা করেছে পেছনের ঘটনাও। পৃথিবীর অমীমাংসিত রহস্যের দ্বিতীয় অংশে জানবে অসংখ্য অমীমাংসিত রহস্যগুলোর আরো কিছু উল্লেখযোগ্য রহস্য, যাদের সমাধান হয় নি। জেনে নিতে পারো পৃথিবীর অমীমাংসিত রহস্যের আরো কিছু চমকপ্রদ রহস্য সম্পর্কে।
১. ফ্রেডরিক ভ্যালেন্টিস
সেসনা ১৮২ মডেলের একটি বিমান নিয়ে ১৯৭৮ সালে ২০ বছর বয়সী এই পাইলট নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি সে সময় তার সামনে চারটি উজ্জ্বল সবুজ আলো দেখতে পাচ্ছিলেন। এটি ছিলো রেডিওতে দেওয়া তার সর্বশেষ বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন আলোটি তার চেয়ে এক হাজার ফুট উপরে ছিলো। তিনি বলেছিলেন আলোটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। তবে সেটা কোন বিমান ছিলো না, এই বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। এটিই ছিলো তার শেষ কথা। বিমান নিয়ে তার হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইতিহাসে এক অন্যতম রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
২. ওয়াও
১৯৭৭ সালে ৭২ সেকেন্ডের একটি শব্দ দূর মহাকাশ থেকে ভেসে আসে। জেরি. আর. এহম্যান এন্টেনা ব্যবহার করে এই সিগনালটি রেকর্ড করেন। এরপর তিনি তা কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করেন। তারপর তিনি সেই প্রিন্টটির পাশে লিখেন ওয়াও! এরপর থেকে সিগন্যালটির নামকরণ করা হয় ওয়াও সিগন্যাল। তবে এই আজো এই সিগন্যালটির কোন রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি। কীভাবে এই শব্দের উৎপত্তি তা জানা যায় নি আজও।
৩. সুভাষচন্দ্র বসু
সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা। তাঁর মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা। তিনি নেতাজি নামে সুপরিচিত ছিলেন। অনেকের মতে তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯৪৫ সালে। তবে অন্য আরো সূত্র জানায় তিনি বেঁচে ছিলেন। ওই সময় তিনি জীবিত ছিলেন আরো অনেকদিন। এই বিষয়ে বেশ কিছু প্রমাণ ১৯৯১ সালে পাওয়া যায়, তবে সঠিক কোন সমাধান হয়নি। আর তাই ইতিহাসে তাঁর মৃত্যুটি রহস্যে আবৃত।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর যত অমীমাংসিত রহস্য (পর্ব ১)
৪. ফ্যায়িস্টস চক্র
রহস্যের আরেক নিদর্শন রয়েছে ইটালিতে, ১৯০৮ সালে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার নিদর্শনসমৃদ্ধ ফ্যায়িস্টস এলাকায় ফ্যায়িস্টস চক্রটি আবিষ্কার করেন ইতালিয়ান প্রত্নতত্ত্ববিদ লুইগি পার্নিয়ার। বেশকিছু রহস্যময় চিহ্ন রয়েছে এই চক্রটিতে। তবে রহস্যের বিষয় হচ্ছে এই চক্রের চিহ্নের অর্থগুলোর ব্যাপারে আজও অবগত হওয়া সম্ভব হয়নি। আর এই চিহ্নটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
৫. মমি
চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে ২৯ টি তারিম মমি পাওয়া গেছে। অমীমাংসিত রহস্যের তালিকায় এই মমিগুলোর তালিকা অন্যতম। কারণ এই মমিগুলোর আজও কোন পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আর তাই ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে এদের এমন এক রহস্য বলে, যাদের কোন সমাধান হয়নি।
৬. এরডস্টাল
এরডস্টাল হলো ইউরোপের সরু আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, যার সন্ধান পেয়ে সকলেই বিস্মিত। সাতশো’রও বেশি টানেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, শুধুমাত্র জার্মানির বাভারিয়াতেই। টানেলগুলো এত সংকীর্ণ, যাদের উচ্চতা শুনলে মনে জাগবে বিস্ময়। টানেলগুলো উচ্চতায় এক থেকে দেড় মিটার উঁচু এবং চওড়া এক মিটারের মতো। এই টানেলগুলো কে বা কারা কী উদ্যেশ্যে তৈরি করেছিলো তা জানা যায় নি।
কোন পন্ডিতেরা বলে থাকেন, এই টানেলগুলো কোন ধর্মীয় কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো, আবার কারো কারো মতে টানেলগুলো পালানোর পর আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই টানেলগুলো তৈরির পেছনের আসল রহস্য উদ্ধার হয় নি। এছাড়া টানেলগুলো অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে রহস্যজনকভাবে তৈরি করা হয়েছিলো। টানেলগুলোর ভিতরে ঢোকার মুখগুলোও ছিলো, কোনটা শহর থেকে দূরে, কোনটা বা গোরস্থানের ভেতরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই টানেলগুলোর ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক কিছু পাওয়া যায় নি। এই টানেলগুলো পৃথিবীতে অন্যতম অমীমাংসিত রহস্য।
৭. ফুট বিচ ইন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া
সমুদ্রের পানিতে পুরো শরীর ভিজবে ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক। এমনকি আমরা যারা সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েছি কিংবা সমুদ্রের ব্যাপারে জেনেছি আমরা জানি সমুদ্রের পানিতে শরীর ভিজবেই। কিন্তু কলাম্বিয়ার একটি সমুদ্র রয়েছে যেখানে সমুদ্রের পানিতে পা সবসময় ভাসমান থাকে। ব্যাপারটি অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওই সমুদ্রে পা পানিতে ডুবে যায় না। সবসময় ভাসমান অবস্থায় থাকে। কেন এরকম হয় সে রহস্য আজ অব্দি রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
৮. ডিবি কুপার
ডিবি কুপার একটি বোয়িং হাইজ্যাক করেন এবং তিনি প্লেন থেকে লাফ দেবার জন্য মনস্থির করেন. তিনি প্লেন থেকে লাফ দেন, সাথে প্যারাসুট নিয়ে। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং ইউএস এভিয়েশনের ইতিহাসে এটি একমাত্র সমাধানহীন ঘটনা, যা কিনা ইতিহাসের পাতায় একটি রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
৯. লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
লাল বাহাদুরের মৃত্যু হয়েছিলো খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে। তিনি অত্যন্ত সুস্থভাবেই দেশ ছেড়েছিলেন। অনেকে মনে করেন তিনি হয়তো হার্ট এট্যাকে মারা গিয়েছেন কিন্তু ডক্টর এবং স্পেশালিষ্ট এবং তার স্ত্রীর মতে তার হার্ট এট্যাক হয়ে মারা যাবার মতো কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তার মৃত্যু আসলে কীভাবে, কেন হয়েছিলো তার কোন সমাধান হয়নি। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিনা, কিংবা হার্ট এটাক অথবা বিষের কারণে এসব কোনকিছুরই উত্তর পাওয়া যায়নি, কারণ সে সময় পোস্টমর্টেম ছিলো না। তার মৃত্যুও একটি অজানা রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে।
১০. আয়ুদের এলুমিনিয়ামের কীলক বা কাঠের গোজ
১৯৭৪ সালে রোমানিয়ার কিছু কর্মী তিনটি বস্তু খুঁজে পায় কাজ করার সময়, ১০ মিটার গভীর বালির নর্দমায়। তিনটি বস্তুর মধ্যে দু’টি ছিলো আড়াই লক্ষ বছরের পুরনো হাতীর হাড়, কিন্তু তৃতীয় বস্তটি ছিলো এলুমিনিয়ামের তৈরি কীলক বা অনেকটা কাঠের তৈরি বস্তুর মতো, প্রাচীন কোন প্রাণীর হাড় বা হাড়ের মতো কিছু। যদিও বিশেষজ্ঞরা ভেবে কোন হিসাব মেলাতে পারেননি, কারণ উনিশ শতকের আগে পৃথিবীতে এলুমিনিয়াম তৈরির বিষয়টি অসম্ভব ছিলো, আবার অনেকেই ভাবেন এটা কিছুই নয়, কোন প্রাণীর হাড়ও নাও হতে পারে, আসলে এই তৃতীয় বস্তটি কী ছিলো সে রহস্যের উদঘাটন আজও হয়নি।
১১. দ্যা বগ বডিস
দ্যা বগ বডিস অথবা বগ পিপলরা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত মৃতদেহের মানুষ যা পাওয়া যেত উত্তর ইউরোপে। শরীরকে না পচিয়ে শরীরকে সংরক্ষিত রাখা হতো, চামড়া সরিয়ে,অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ঠিক রাখা হতো। এরকম হাজারো মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে এবং অধিকাংশ মৃতদেহেই খুনের নির্দশন পাওয়া গিয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হতো অধিকাংশরাই পৌত্তিলিক তন্ত্রের বলি ছিলো অথবা কোন বেআইনী কাজের শাস্তিস্বরুপ তাদের মৃতদেহ এরুপ অবস্থায় পাওয়া যেতো। যা হোক তবুও এইরুপ হাজার হাজার মৃতদেহের পেছনে কোন চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কেন এবং কীভাবে এই মৃতদেহগুলো এই অবস্থায় ছিলো, এই মৃতদেহগুলো বিক্ষিপ্তভাবে পাওয়া গিয়েছিলো জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড এবং ব্রিটেনে।
১২. কিং আর্থার
কিং আর্থারের তলোয়ার ছিলো পাথরের এবং তার দুইজন বিশ্বস্ত জাদুকর ছিলেন। কিং আর্থারের পুরো গল্পটিই সাজানো হয়েছিলো ইংরেজ সৈন্যদের উপর। এই পৌরাণিক গল্পে জানা গিয়েছে কিং আর্থার ইংরেজদের হারিয়ে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এ তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলো ষষ্ঠ শতাব্দীতে। যা হোক এরকম কোন সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে এরকম একজন রাজা বাস্তবে আসলেও ছিলেন, কিন্তু যুগের পর যুগ ইতিহাসবিদদের মাঝে এই বিষয়টি নিয়ে তর্কের শেষ নেই। কারো মতে আর্থার বইয়ের একটি চরিত্র মাত্র, আবার কারো মতে এরকম একজন রাজা আসলেই ছিলেন। সবকিছু শেষে আর্থার ইতিহাসে একজন রহস্যময় রাজা যার অস্তিত্ব নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
১৩. স্বর্গ থেকে আসা বীজ
১৯৭৯ সালে মি. মুডি নামে একজন লোক প্রায় আট বালতি এবং ১০ পাউন্ডের মতো বীজ খুঁজে পান, যেগুলো আকাশ থেকে পড়ছিলো, প্রায় তিন দিন ভরে সেগুলো তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। কিভাবে এত বীজ আকাশ থেকে পড়েছিলো তার কোন কারণ এবং সমাধান আজও খুঁজে পাওয়া যায় নি। আর তাই এই বীজগুলোকে সে সময় তার প্রতিবেশিরা স্বর্গ থেকে আসা বীজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো এবং ইতিহাস ও এর কোন সমাধান পায়নি, আর তাই ইতিহাসে এক অবিশ্বাস্যকর রহস্য হিসেবে এটা রয়ে গেছে।
১৪. মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি হত্যা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি হত্যাকান্ডের বিষয়টি এখনো রহস্যে ঘেরা। কেনেডিকে প্রায় ৫০ বছর আগে টেক্সাসে হত্যা করা হয়। সন্দেহজনকভাবে এক ব্যক্তিকে এই হত্যাকান্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়। কিন্তু তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বিচার সম্পন্নের আগেই। অনেকের মতে ব্যক্তিটি একাই এই হত্যাকান্ড ঘটায় নি। এর সাথে জড়িত ছিলো আরো অনেকজন।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
English for Govt. Jobs
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মনিরা আক্তার লাবনী।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন