আমি বরাবরই নন-ফিকশন ঘরানার বই পড়তে পছন্দ করি। ফিকশন খুব একটা ভালো লাগে না, এড়িয়েই চলি সত্যি বলতে। তো এই নন-ফিকশন বই পড়তে পড়তে একটা জিনিস খেয়াল করলাম, যে এর লেখকরা বেশিরভাগ সময়েই খুব বেশি নিরহঙ্কারী প্রকৃতির। আমার খটকা লাগতো, কারণ আমি তো দেখেছি আশেপাশের জ্ঞানী মানুষগুলোর অনেকের ঠাটে বাঁটে দাঁড়ানোই যায় না, তাদের সাথে কথা বলতেও সাহস হয় না!
এই খটকা দূর করতে আমি আরো বেশি করে বই পড়া শুরু করে দিলাম। এই বই পড়তে পড়তেই একদিন একটা খুব ইন্টারেস্টিং গল্প পড়ে ফেললাম। গল্পটা মূলত একটা উক্তির উপর ভিত্তি করে। উক্তিটা তখনকার সময়ের আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল, আর তারপর থেকেই আমি চেষ্টা করেছি আরো ভালো একজন মানুষ হবার। গল্পটা হলো জ্ঞানের তিনটি স্তর নিয়ে।
প্রথম স্তর:
একজন মানুষের কথা ভাবা যাক। ধরলাম, নাম তার রফিক মিয়া। রফিক মিয়া গ্রামে কৃষিকাজ করে। তার গ্রামে সেরা কৃষক হিসেবে তার বেশ নামডাক। অসাধারণ কৃতিত্বে ফসল ফলায় রফিক মিয়া, তার কাজের গুণগান করে সবাই। রফিক মিয়ার বিষয়টা নিয়ে একটা সূক্ষ্ম অহংবোধ আছে, এবং সে সেটা দেখাতে মোটেও কার্পণ্য বোধ করে না। গ্রামের অনেকেই এই বিষয়টা পছন্দ করে না, কিন্তু যেহেতু রফিক মিয়া গ্রামের সেরা কৃষক তাই তাঁকে কেউ কিছু বলতেও পারে না।
একদিন হলো কী, গ্রামে আরেক কৃষকের আবির্ভাব হলো। এই কৃষক হচ্ছে পড়ালেখা করে আসা প্রযুক্তিতে পারদর্শী এক মানুষ। সে এসে গ্রামে একগাদা যন্ত্র এনে মোটামুটি একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললো। দ্বিতীয় স্তরের শুরুটাও সেখান থেকেই।
দ্বিতীয় স্তর:
এই কৃষক, ধরা যাক তার নাম হচ্ছে মনসুর আলী। মনসুর আলীর একটা দিক সবাইকে, এমনকি রফিক মিয়াকেও আকৃষ্ট করে। সেটা হলো, এই মানুষটার কোন অহংকার নেই। সে মোটেও তার কাজ নিয়ে গর্ববোধ করে না, বরং মাঝে মাঝে তাঁকে দেখলে মনে হয় তিনি বুঝি কোন এক ব্যর্থ কৃষক!
রফিক মিয়ার একদিন খুব ইচ্ছে জাগলো মনসুর আলীকে জিজ্ঞেস করার, সে কেন এরকম, তার কোন অহংবোধ নেই কেন! যা ভাবা সেই কাজ, রফিক মিয়া পাততাড়ি গুটিয়ে রওনা দিলেন মনসুর আলীর বাড়ির দিকে। পৌছেই তার বাক্যবাণ, মনসুর আলীর সাফল্যের রহস্য কী? কেনই বা তিনি এত নির্লোভ আর নিরহঙ্কার ।
মনসুর আলীর সোজাসাপ্টা জবাব। তিনি আসলে বেশি কিছু জানেন না। বিশাল এই জ্ঞানসমুদ্রে তার জ্ঞান নিতান্ত শূণ্যের কোঠায়। আর ঠিক এই কারণেই তিনি কোন গর্ববোধও করেন না। কী নিয়েই বা গর্ব করবেন, তার চোখে তো নিজের জ্ঞানেরই বড় অভাব! এটা ছিলো জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তরের শেষ, আর তৃতীয় স্তরের শুরু।
তৃতীয় স্তর:
এই স্তরে রফিক মিয়া বা মনসুর আলীর কেউই পৌঁছাননি। মনসুর আলীর যে শিক্ষক তাঁকে হাতে-কলমে সব শিখিয়েছেন, তিনি সেখানে যেতে পেরেছেন। শিক্ষকের নাম আবদুল আলীম। রফিক মিয়ার ক্রমাগত পীড়াপীড়িতে একসময় মনসুর আলী বাধ্য হলেন তার গুরু আবদুল আলীমের কাছে রফিক মিয়াকে নিয়ে যেতে। এই ভদ্রলোক আরেক অদ্ভুত মানুষ, তার অস্বাভাবিক জ্ঞান নিয়ে তার মোটেও গর্ব নেই, বরং কেমন একটা দিশেহারা ভাব তার চোখেমুখে।
তার কাছে যাওয়া মাত্র রফিক মিয়ার প্রশ্ন- এত জ্ঞান থাকলে তো মানুষের গর্ব হবার কথা, আপনাদের নেই কেন? আবদুল আলীমের উত্তরটা চমৎকার ছিল। তিনি সহজ স্বীকারোক্তি করলেন, “আমি অনেক কিছু পড়ার পর বুঝতে পেরেছি আমি আসলে কিছুই জানি না!”
সেদিন এ উত্তর পেয়ে রফিক মিয়া কতোটুকু অবাক হয়েছিলেন সেটা জানি না, তবে বিষয়টা আসলেই অনেক ভাবায়!
সেই উক্তি:
জ্ঞানের তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তরে মানুষ কম জানে ও বেশি গর্ববোধ করে, দ্বিতীয় স্তরে মানুষ বুঝতে পারে যে সে আসলে বেশি কিছু জানে না, তাই আর গর্বও করতে পারে না! তৃতীয় স্তরে মানুষ অনেক জানে এবং আবিষ্কার করে যে সে আসলে তেমন কিছুই জানে না।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Spoken English
উক্তির শিক্ষা:
তোমাদের অনেককেই আমি দেখেছি জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে হতাশ হতে। প্লিজ না, বরং হতাশাকে একপাশে ফেলে রেখে বিজয়ী হও তুমিও!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন