“আরেহ! সময়ই পাই না!”

October 19, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।

“সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।”

আমাদের সবার বেশ পরিচিত একটি উক্তি কিংবা বাণী। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের পেছনেই হোক কিংবা গুরুজনের উপদেশে এই উক্তিটা আমরা সবাই জীবনে অন্তত একবারের জন্য হলেও শুনেছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই এই উপদেশটাকে বিবেচনায় রেখে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করে উঠতে সবাই পারে না। তবে হ্যাঁ, একটু দক্ষতার সাথে কৌশল খাটিয়ে পরিকল্পনা করে সে মোতাবেক কাজ করা গেলে এই সময়কে নিজের সময়মতো কাজে লাগাতে আর তেমন বেগ পেতে হবে না। তো চলো আজ জেনে নেই, কিছু সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে।

কৌশলগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানানোর আগে আরো একটা ব্যাপার বিবেচনায় রাখা বেশ জরুরি। সেটা হলো, সত্যি বলতে সময়কে আসলে ম্যানেজ করা অসম্ভব! ম্যানেজ করতে হবে আমাদের নিজেদেরকে যাতে করে আমরা নিজেরা নিজেদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারি।

তাহলে, সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে করণীয় পদক্ষেপগুলো কী কী? চলো জেনে নেওয়া যাক!

১) পরবর্তী দিনের করণীয় কাজগুলোর তালিকা তৈরী করা:

আগের দিনই পরবর্তী দিনের করণীয় কাজগুলোকে নির্দিষ্ট করে একটি তালিকা করে ফেলতে হবে। এই কাজটি করতে হবে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে। তাহলেই আর কোনো কাজ বাদ পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে না। আর পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই দেখে নেওয়া যাবে সারাদিন ঠিক কী কী কাজ করার আছে সেগুলো। আরো একটা কাজ করে দেখতে পারো। প্রতিটা কাজ শেষ হওয়ামাত্র লিস্ট থেকে সেটাকে কেটে বাদ দিয়ে দাও। এ কাজটা করার মাধ্যমে এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ মেলে যেটা কি না ক্ষেত্রবিশেষে দিনের অন্যান্য কাজ করার জন্যে অনুপ্রেরণা, উৎসাহে রূপান্তরিত হতে পারে। শুধু এই অনুপ্রেরণাটুকু নেবার জন্যে আমি কখনো কখনো ভুলবশত কোনো কাজ তালিকাভুক্ত করা না হলে, সে কাজটা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেটাকে পুনরায় ওই লিস্টে লিখে তারপর কেটে দেই।


ইংরেজিতে সময় কীভাবে বলবেন How to tell time in English

আরো পড়ুন: ইংরেজিতে সময় কীভাবে বলবেন


২) ছোট্ট ছোট্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করো নিজেকে:

যেকোনো কাজ করার আগে সে কাজটা এবং প্রয়োজনীয় সময়টাকে ছোট্ট ছোট্ট অংশে ভাগ করে নাও। নির্ধারণ করো ছোট ছোট লক্ষ্য আর সেগুলো অর্জনে বেঁধে দাও সময়সীমা। কীভাবে? ধরা যাক, তুমি একটি বই পড়তে চাচ্ছো। তুমি ঠিক করলে পরবর্তী ২০ মিনিটে বইটার দুই পৃষ্ঠা পড়ে শেষ করবে। সেক্ষেত্রে, তক্ষুনি ঘড়িতে বিশ মিনিট পর অ্যালার্ম সেট করে রাখো। আর, ঠিক করে ফেলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়া শেষ হলে নিজেকে কী পুরস্কার দেবে। সেটা হতে পারে একটা চকোলেট। আর তারপর অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথেই  দেখো যে ঠিক বিশ মিনিটের মধ্যেই ওই দুই পৃষ্ঠা পড়া শেষ হলো কি না। এক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার ঘটে।

ক) অ্যালার্ম দেওয়ার কারণে পুরো সময়টাকে একটা সীমায় আটকে দেওয়া যায়।

খ) পুরস্কারটি উৎসাহ যোগায় অনেকখানি।

Study Smart

সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করে তৈরি করুন আপনার কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট অর্জন করার পথ। আজই এনরোল করে শিখুন পড়াশোনা করার নিয়ম, পড়ালেখা রুটিন তৈরি এবং পড়াশোনা মনে রাখার উপায়।

 

৩) Learn to Delegate:

একে এখনকার সময়ের বিবেচনায় ‘Learn to Automate’ ও বলা যেতে পারে। তোমার কাজের বোঝাটা অনেকাংশে হালকা হয়ে যায় যখন তোমার কাজটাই তুমি অন্য কাওকে শিখিয়ে দাও। প্রযুক্তির কল্যাণকে কাজে লাগিয়ে এখনকার প্রয়োজনীয় অনেক কাজই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব। সেইদিকে নজর দাও। সফটওয়্যার ও অ্যাপগুলোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করো। পূর্বে উল্লেখ করা করণীয় কাজের তালিকাটাও তুমি করতে পারবে Wunderlist, To Do List নামের চমৎকার এই অ্যাপগুলোর সাহায্যে। এতে করে সময় বাঁচবে অনেকটা আর পরিশ্রমও কমে যাবে বহুলাংশে। আমাদের সবাইকেই প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হয়। তালিকা তৈরির কথাতো শুরুতেই উল্লেখ করা হলো। এবার বলা হচ্ছে তালিকা করার ক্ষেত্রেও যেন কাজগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে সাজানো হয়। যে কাজগুলো করা সবচেয়ে বেশি জরুরি সেগুলো যেন সবার আগে করে ফেলা হয়। আর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো সেই কাজগুলোকে যেন সম্পন্ন হওয়া মাত্রই তালিকা থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয় এটা সুনিশ্চিত করা।

৪) নতুন অভ্যাস গড়তে আনতে হবে ছোট্ট ছোট্ট পরিবর্তন:

আমরা অনেকেই হয়তো একসাথে অনেকগুলো বদঅভ্যাস ত্যাগ করে ভালো অভ্যাস নতুন করে গঠন করতে চাই। কিন্তু কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখা যায় পরিবর্তন কিছুই হয়নি। যেকোনো পুরোনো অভ্যাসের পরিবর্তন কিংবা নতুন অভ্যাস গঠন করা, দুটোই সময়সাপেক্ষ। হুট করে যেমন নতুন কোনো অভ্যাসের সূচনা করাটা অসম্ভব তেমনি সম্ভব নয় একদিনেই পুরোনো কোনো বদঅভ্যাস পরিবর্তন। এক্ষেত্রে আনতে হবে ছোট্ট ছোট্ট পরিবর্তন; শুরুটা হতে হবে স্বল্প পরিসরে। একটু একটু করে করতে করতে অবশেষে একটা সময় দেখা যাবে যে সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এসেই গেছে।

৫) মাল্টিটাস্কিং কে না বলো:

আমরা অনেকেই গান শুনতে শুনতে বই পড়ি, অংক কষি কিংবা ছবি আঁকি। টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া এখনকার প্রজন্মের জন্যে খুবই সাধারণ একটা বিষয়। অথচ, এই কাজগুলোও আমাদের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছে অনেক গুণে। অনেকের মতে এতে দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন হয়। অথচ, গবেষণালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী মাল্টিটাস্কিং মস্তিস্কের দক্ষতা কমিয়ে দেয় অনেকখানি। মাল্টিটাস্কিং আসলে আমাদের মস্তিষ্ককে বোকা বানিয়ে রাখে প্রতিনিয়ত। প্রকৃত অর্থে সময় নষ্টের পেছনে এদের ভূমিকা অনেক।

৬) Notification এর Distraction থেকে নিজেকে দূরে রাখো:

এ প্রজন্মের মনোযোগের বারোটা বাজানোয় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে নোটিফিকেশন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবার আরো নানা হাবিজাবি অ্যাপের নোটিফিকেশন কোনো কাজে মনোযোগের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। প্রায় সময়ই দেখা যায় কাজ করতে করতে হঠাৎ একবারের জন্য নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে এক ফেসবুকেই পেরিয়ে গেছে ঘন্টাখানেক। এ ধরণের সময়ের অপচয়গুলো থেকে পরিত্রান পেতে বন্ধ করে রাখো অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত অ্যাপ মোবাইলে রাখা অনুচিত।

৭) না বলতে শেখা:

জাতি হিসেবে বাঙালী জাতির একটা দূর্বলতা হলো আমরা না বলতে প্রায় অক্ষমই বলা চলে। আমাদেরকে কেউ কোনো কাজ করে দিতে বললে সেখানে না বলতে পারি না। অথচ পরে দেখা যায় আমরা যেমন না বলতে না পারার পাশাপাশি কাজটাও আর করা করা হয়ে ওঠে না। বরং ওই কাজের দুশ্চিন্তায় অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও করা হয় না। আর তাই, অযথা কাজের বোঝা নিজের ঘাড়ে নেওয়ার আগে কাজটার গুরুত্ব কতখানি সেটা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনে না বলার অভ্যাস করাই শ্রেয়।

৮) গোছানো ও পরিপাটি চারপাশ:

তোমার কাজের জায়গাটা হওয়া চাই পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলো, পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখো নিজের দরকারী জিনিসপত্র। একই ব্যাপার প্রযোজ্য তোমার মোবাইল, ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ, ফাইল, সফটওয়্যার রিমুভ করে ফেলো তোমার ফোন আর কম্পিউটার থেকে! কারণ, অগোছালো চতুর্পাশ কাজ থেকে মনোযোগ নষ্ট করে, প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দেয়! গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে প্রয়োজনভেদে পৃথক পৃথক ফোল্ডারে সংরক্ষণ করো যাতে গাদাগাদা ফাইলের ভীড়ে প্রয়োজনীয় ফাইলটাকে খুঁজে পেতে অসুবিধা না হয়। তাহলেই দেখবে কাজের গতি অনেকখানি বেড়ে গেছে।

Personal Fitness

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • বাসায় ব্যায়ামের নিয়ম এবং ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার
  • ফুল বডি ট্রেইনিংয়ের পাশাপাশি শরীরের আলাদা আলাদা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা
  •  

    সময় ব্যাপারটা অনেকটা প্রবহমান নদীর মতো। প্রতিনিয়ত বয়ে চলে। যে সময় একবার নষ্ট হয়ে যায় সেটাকে আর কোনোক্রমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই, সময়গুলোকে কাজে লাগাও যথাযথভাবে! আলোচ্য পদ্ধতিগুলোকে অনুসরণ করো, সময়ের কাজ করো সময়েই! 


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:



    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com


    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন