পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
অনুপ্রেরনামুলক গল্প
হাজার টাকার নোট
সভায় সমবেত হাজারো অতিথির কথোপকথনে নীরবতা নেমে এল প্রধান বক্তার আগমনে। লম্বা, ঋজু পদক্ষেপে মঞ্চে উঠে এলেন তিনি, তীক্ষ্ণ চোখজোড়ায় ব্যক্তিত্বের ছটা। পিনপতন নীরবতার মাঝে পকেট থেকে এক হাজার টাকার একটি নোট বের করলেন তিনি। তুলে ধরলেন হাত মেলে উপরে, দৃপ্তকণ্ঠে বললেন “আপনাদের মাঝে কে কে চায় এই নোটটি?”
কোন কথা নেই, সারি সারি হাত উঠে গেল উপরে। সবাই চায় নোটটি!
মৃদু হাসি খেলে গেল বক্তার ঠোঁটের কোণে, নোটটি হাতের মুঠোয় মুচড়ে দুমড়ে আবার তুলে ধরলেন, “এবার কে কে চান?”
সবগুলো হাত উঠে গেল আবারও, ঠিক আগেরবারের মতোই।
“আচ্ছা! আমি আপনাদের কাউকে অবশ্যই দেব টাকাটি, কিন্তু তার আগে একটি কাজ করবো!”
এই বলে নোটটি মাটিতে ফেলে জুতো দিয়ে মাড়ালেন তিনি। ধুলো-ময়লা মাখা কুঁচকানো নোটটি দেখিয়ে কৌতুকমাখা স্বরে বললেন, “এই ময়লা নোটটি নিতেও আপত্তি নেই আপনাদের?”
উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলেন কারো আপত্তি নেই তাতে!
“সুপ্রিয় অতিথিবৃন্দ! আপনারা এইমাত্র জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রত্যক্ষ করলেন। এক হাজার টাকার এই নোটটিকে আমি দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে ফেলে জুতো দিয়ে মাড়িয়েছি, কিন্তু তারপরও আপনারা টাকাটি পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- কারণ যত যা-ই করি না কেন আমি টাকাটির মূল্য তাতে এতটুকু কমেনি! ঝকঝকে নোটটি আর এই কুঁচকানো ময়লা নোটটিতে কোন পার্থক্য নেই, এটি এখনো এক হাজার টাকা মূল্যমানের!
জীবনে আমাদের অনেক দুঃখ, বেদনা, হতাশা, ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়, আমাদের আত্মবিশ্বাস একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকে, নিজেকে আয়নায় দেখে ভাবি, “আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না!”
এই বিপর্যয়ের মুহূর্তগুলোয় মনে রাখতে হবে এই এক হাজার টাকার নোটটির গল্প। দুমড়ে-মুচড়ে ধুলি ধূসরিত হয়ে নোটটির মর্যাদা কি একটুও কমেছে? কমেনি!
আপনাকে যতবার ব্যর্থতা গ্রাস করবে, হতাশায় মুষড়ে পড়বেন, ততোবার নিজেকে টেনে তুলবেন নতুন আত্মবিশ্বাসে। এই পৃথিবীতে যে আপনার মতো আর দ্বিতীয়টি নেই কেউ! আপনি অনন্য, অতুলনীয়, পৃথিবীকে আপনার দেওয়ার আছে অজস্র ঐশ্বর্য। কোন ব্যর্থতা-গ্লানির সাধ্য আছে কি সেই গৌরবোজ্জ্বল দ্যুতিকে ম্লান করতে পারে?
হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!
বর্ষার বিকেলে আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে, মেঘের গর্জন আর বৃষ্টির ঝংকারে মাতোয়ারা ব্যাঙের দল ঘ্যাঙরঘ্যাঙ রব তুলে নাইতে বেরিয়েছে সদলবলে। মাঠের পারে পুরোনো একটা কুয়ো, তার দেয়ালে সবাই বসে তাইরে নাইরে না গাইছে গলা ছেড়ে, এমন সময় পা পিছলে কিভাবে যেন দুটো ব্যাঙ ঝপাস করে পড়ে গেল কুয়োয়! গান থামিয়ে সবগুলো ব্যাঙ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখে কুয়োর তলে ভাসছে বেচারা ব্যাঙ দুটো।
“কত্তো গভীরে কুয়োর পানি! কোন বাহাদুরেরও সাধ্য নেই এখান থেকে উঠে আসার।” বিরসবদনে বলে উঠলো পালের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাঙটি। সবাই মাথা নাড়লো কথাটি শুনে, ঠিক বলেছে বুড়ো, কুয়োর পানি এত্তো গভীরে, সেখান থেকে লাফ মেরে উঠে আসা চাট্টিখানি কথা নয়! কালচে পানিতে অন্ধকারে প্রায় দেখা যায়না হাপুসহুপুস শব্দে লাফ দিয়ে বেড়াচ্ছে দিশেহারা ব্যাঙ দু’টি, প্রাণপণে চেষ্টা করছে দেয়াল বেয়ে উঠে আসার।
“হাল ছেড়ে দাও বন্ধু! এখান থেকে উঠে আসা সম্ভব নয়, মরতে যদি হবেই খামাখা লাফঝাঁপ করে কী লাভ?” বুড়ো ব্যাঙটি শ্লেষের সুরে বললো গলা ফুলিয়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকালো কথাটি শুনে, তারপর কী মনে করে একসাথে মাথা দুলিয়ে বলা শুরু করলো সবাই, “হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!” প্রথমে বিড়বিড় করে, তারপর জোরে জোরে, তারপর একদম গলা ফাটিয়ে নেচে নেচে বলতে লাগলো সবাই!
পানিতে এতক্ষণ হুটোপুটি করে শরীর প্রায় অবশ হয়ে এসেছে ব্যাঙ দুটোর, তবুও এই নির্মম কথাটি শুনে কেমন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো একটি ব্যাঙ উপরে নিরাপদে বসে থাকা তার বন্ধুদের দিকে, টের পেল তার শরীর ভার হয়ে আসছে, একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। শেষবারের মতো ঘ্যাং করে অস্ফুট একটা ডাক ছেড়ে তলিয়ে গেল বেচারা, বিস্ফোরিত চোখজোড়ায় একরাশ হতাশা আর অনেকখানি বেদনা নিয়ে, অন্ধকারের অতলে মিলিয়ে গেল চিরদিনের জন্য। অপর ব্যাঙটির অবশ্য কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, সে উন্মাদের মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে কুয়োজুড়ে।
লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে সবগুলো ব্যাঙের
ব্যাঙগুলো এতক্ষণে যেন একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছে, তারা আরো জোরে জোরে বলতে লাগলো সমস্বরে, “হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!” উত্তরে ব্যাঙটা আরো দ্বিগুণ উৎসাহে দাপাদাপি জুড়ে দিল, এবং সবার চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে একলাফে উঠে আসলো কুয়োর দেয়ালে! চোখ ঝলমল করছে তার বিশ্বজয়ের আনন্দে, হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে জড়িয়ে ধরলো সে পালের গোদা বুড়ো ব্যাঙটিকে। “কী বলে ধন্যবাদ জানাবো আমি তোমাদের! মৃত্যু আমাকে গ্রাস করতে এসেছিল, তোমরা পুরোটা সময় আমাকে উৎসাহ যুগিয়ে না গেলে অনেক আগেই হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম!”
ব্যাঙেরা কথা শুনে হতবাক হয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে, বুড়ো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলতে যায়, “কিন্তু আমরা তো আসলে..” তার কথা কেড়ে নিয়ে ব্যাঙটি বলে উঠে, “খুব দুঃখের বিষয় আমি কানে শুনতে পাইনা! আজ তোমরা যেভাবে নেচে-গেয়ে উৎসাহ যুগিয়ে গেলে, না জানি কতো অনুপ্রেরণামাখা কথা বলেছ! তোমাদের উৎসাহ দেখে আমার জেদ চেপে গিয়েছিল, কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না!” লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে সবগুলো ব্যাঙের, বৃষ্টির কূল ছাপানো কল্লোলে বধির ব্যাঙটি একাই ডেকে ওঠে মনের আনন্দে ঘ্যাঙরঘ্যাঙ শব্দে!
আরো পড়ুন: মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
সত্যিই তো, কখনো কখনো তোমার একটি কথা কারো বুকে শূল হয়ে বিঁধতে পারে, যেমনটি ঘটেছে প্রথম ব্যাঙটির ক্ষেত্রে। তাই সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবে সবাইকে, প্রত্যেকটি মানুষের কিছু না কিছু গুণ থাকে সেটিকে উৎসাহ দিবে। তোমার ছোট্ট একটু অনুপ্রেরণা একজন মানুষের জীবন একদম বদলে দিতে পারে, সেটি কখনো ভুলে যেয়ো না। আর যারা তোমাকে হতাশার কথা শোনাবে, তাদের জন্য হয়ে ওঠো দ্বিতীয় ব্যাঙটির মতো! হতাশা একটি বিলাসিতা, সুতরাং কেউ তোমাকে এসব শোনাতে আসলে সেগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিবে।
Turn all the negativities into positive energy, & always remember – YOU CAN, YOU WILL!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
সুখী মানুষের গল্প
প্রতিদিন সকালে পার্কে হাঁটতে আসেন বয়স্ক একজন মানুষ, সবসময় হাসিমুখ, বেশ বিনীত ব্যবহার। সবার সাথে মিষ্টি করে হেসে কথা বলেন। খাবারের দোকানে বিল দেওয়ার সময় প্রতিদিন দোকানদারকে সৌজন্যবশত ধন্যবাদ জানান মানুষটি, কখনো দেখিনি দোকানীকে প্রতিদানে ধন্যবাদ জানাতে। খিটখিটে মেজাজের দোকানীটির কাছে ভাল ব্যবহার কেউ প্রত্যাশা করে না, তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু আমার অবাক লাগলো বুড়ো মানুষটি দিনের পর দিন এই সৌজন্যবোধটুকু বজায় রেখে চলেছেন কেন সেটি ভেবে। আমার সাথে কেউ এমন রূঢ় ব্যবহার করলে আমি দ্বিতীয়বার সৌজন্যের ধার ধারতাম না! তাই কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসলাম মানুষটিকে, “আচ্ছা এই দোকানী এত অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আপনি তবু মিষ্টি ব্যবহার কীভাবে করেন তার সাথে?”
মানুষটি একগাল হেসে বললেন, “আমাদের সৌজন্য, ভালবাসা, সুখ এই বিষয়গুলো কি অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত? তুমি যদি মন থেকে অনুভব করো নিজেকে সুখী হিসেবে, পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই সেটিকে বদলাতে পারে! আমি তাই সবার সাথে সমানভাবে হাসিমুখে কথা বলে যাব, সমান মর্যাদা দেবো, মানুষটি প্রতিদানে কী করলো সেটি আমার কাছে মুখ্য নয়।”
তুমি কী করবে সেটি যদি আরেকজন ঠিক করে দেয়, আরেকজনের প্রতিক্রিয়ার উপর তোমার সুখ-দুঃখ ভাল-মন্দ নির্ভর করে তবে এর চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? জীবন প্রতিযোগিতার, প্রতি মুহূর্তে, প্রতি নিশ্বাসে। তবে প্রতিযোগিতাটি অন্যদের সাথে নয়, এটি একান্তই নিজের সাথে, প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রেরণায়।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন