পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
বাইরের দেশের কেউ বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ করে গেলে নাকি বাংলাদেশিদের অতিথিপরায়ণতার কথা ভুলতে পারে না। অনেকে আবার নিজ দেশে গিয়ে বাংলাদেশের বৈষম্যহীনতার প্রশংসা না করে পারেন না। বাংলাদেশ যেমন অন্যান্য দেশের মানুষদের অতিথিপরায়ণতা এবং বৈষম্যহীনতার শিক্ষা দেয়, তেমনি আমাদের বাংলাদেশিদেরও কিন্তু অন্যান্য দেশ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক, ভিনদেশিদের কোন স্বভাবগুলো রপ্ত করে আমরা আমাদের আচরণকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারি।
১। কানাডিয়ানরা জানে রাস্তায় চলার আদবকেতা:
বাংলাদেশের একটা রাস্তা কল্পনা করুন তো, কী ভাসে চোখে? মানুষ ময়লা ফেলছে, ফুটপাথে কেউ মোটরবাইক উঠিয়ে দিল, কোথাও যানজটের মাঝে মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করছে, আবার হয়ত দুজন কথা কাটাকাটি করতে করতে এক পর্যায় মারামারি শুরু করে দিল!
কানাডায় এর সম্পূর্ণ উলটো দৃশ্যটা চোখে পড়ে। কানাডিয়ানরা রাস্তায় চলাচলের আদবকেতা সম্পর্কে খুবই সচেতন। তারা কখনো এমন কিছু করবে না যাতে আশেপাশের মানুষের সমস্যা হয় কিংবা আশেপাশের মানুষ যার ফলে বিরক্তবোধ করে।
ঘুরে আসুন: যে দশটি কাজ করলে সকালের ঘুম চলে যেতে বাধ্য হবে!
এমনকি তারা কখনো রাস্তায় হঠাৎ দেখা হলে, কাউকে আটকে রেখে গল্প করা শুরু করে দেয় না। কেউ যদি এমনটা করেও ফেলে তাহলেও অপরজন কখনো বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং “বাসায় গিয়ে ফোন দিচ্ছি” কিংবা “চল, আরেকদিন কোথাও বসে কফি খাই” এ ধরণের সৌজন্যমূলক কথা বলে বিদায় দিয়ে আসে। কানাডিয়ানদের আন্দোলনও হয় খুবই শান্তিপূর্ণ।
২। জাপানে “Store of Honesty”:
জাপানের স্কুল গুলোতে, ফোর্থ গ্রেডের আগ পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। তখন তারা বিভিন্নরকমের আদব-কায়দা শেখে। এই আদব-কায়দা শেখার একটা অংশ হিসেবে, জাপানের স্কুলগুলোতে থাকে “Store of Honesty” যেখানে থাকে না কোনো বিক্রেতা, কিংবা কোনো সিসি ক্যামেরা। শিক্ষার্থীরা একমাত্র বিবেকের তাড়নায়, সেখান থেকে কিছু কেনার পর তার মূল্য পরিশোধ করে আর আজ অব্দি ঐসকল দোকানে হিসেবে গরমিল দেখা যায়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্কুল এবং দুদকের উদ্যোগে এমন দোকান খোলা হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে, “সততা স্টোর”। আনন্দের কথা এই যে, জাপানের মত বাংলাদেশের এসব দোকানেও এখন পর্যন্ত হিসেবে গরমিল দেখা যায়নি।
৩। স্প্যানিশদের ইতিবাচকতা:
স্পেনে প্রত্যেকে বছর ২৩ জুন সারাদেশে “Night of St. John” পালিত হয়। যেখানে তারা, পূর্বের সব নেতিবাচকতা শেষ করে ফেলার উদ্দেশ্যে বোনফায়ার করে সেখানে পুরনো জিনিসপত্র, পুরনো কথা লেখা কাগজ পুড়িয়ে ফেলে। এভাবে তারা নতুন একটা দিনের সূচনা করে। আগুনে পোড়ানোটা বাধ্যতামূলক না কিন্তু পুরনো কষ্টগুলো ভুলে গিয়ে স্প্যানিশদের মত নতুন একটা শুরু তো আমরা করতেই পারি!
তারা তাদের আশেপাশের জিনিস, মানুষজন দেখে অনেক কিছু শেখে
৪। অ্যারাবিয়ানদের আন্তরিকতা এবং প্রাঞ্জলতা:
যেমনটা আমরা উচ্চমাধ্যমিকের ইংলিশ ফর টুডেতে পড়েছি, জাতি হিসেবে এ্যারাবিয়ানরা খুবই বন্ধুসুলভ। তারা নতুন বন্ধু বানাতে যেমন ভালবাসে, তেমনি অপরিচিতদের সাথেও পুরনো বন্ধুর মতই আচরণ করে। তারা নতুন জিনিস জানতেও পছন্দ করে। এমনটা না যে তারা খুব বেশি একটা লেখাপড়া করে, কিন্তু তারা তাদের আশেপাশের জিনিস, মানুষজন দেখে অনেক কিছু শেখে।
নতুন জিনিস জানার আশায় তারা ভ্রমণও করে অনেক বেশি। সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যপারটা হচ্ছে, তারা নিজেদের এবং নিজেদের সম্পর্কিত সবকিছুকে অনেক ভালোবাসে এবং তারা তাদের জীবনে যা আছে, তাই নিয়েই অনেক সন্তুষ্ট ও আনন্দিত।
৫। মার্কিনরা অনেক বাস্তববাদী এবং আত্মনির্ভরশীল:
মার্কিনরা বইয়ের গৎবাঁধা লেখা পড়েই সন্তুষ্ট থাকে না বরং তারা যা পড়ে, তা বাস্তব জীবনেও প্রয়োগ করে যে কারণে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারে তারা অন্যান্য দেশ থেকে অনেক এগিয়ে। এমনকি, কোনো কাজ কীভাবে করতে হয় এ ধরনের যে কোনো বই আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি সুলভ।
যে কোনো বয়সী মার্কিনই আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকে। তারা নিজেদের কাজ নিজেরাই করতে ভালবাসে এবং বেশিরভাগ মার্কিন অনেক ছোট বয়সেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়ে যায়। তারা আশাবাদী এবং নিজ দেশি মানুষের সফলতায় ঈর্ষাকাতর হয় না।
ভিনদেশ থেকে তো অবশ্যই, আমাদের নিজের দেশের, আমাদের আশেপাশের মানুষের থেকেও কিন্তু অনেক কিছু শেখার আছে। এজন্যেই তো কবি বলেছেন, “বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র”।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন