পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই আলাদা। সবাই নিজেদের মত আলাদা আলাদা চিন্তা-চেতনা, জীবনধারায় বিশ্বাসী। কিন্তু সবারই একটা কমন অস্ত্র আছে। যেটার সঠিক ব্যবহার প্রাণঘাতী অস্ত্রের থেকেও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে!
আমাদের সবার এই সাধারণ অস্ত্রটার নাম হলো হাসি। এক হাসি দিয়ে যেমন আশেপাশের সব মানুষকে খুশি করে ফেলা যায়, আবার ওই হাসি দিয়েই মানুষকে চিন্তায় ফেলে দেয়া যায়, কেড়ে নেয়া যায় রাতের ঘুম!
কী, অবাক লাগছে? হাসতে হাসতেই হয়তো ভাবছো হাসি দিয়ে আর কীই বা হবে?
হাসি দিয়েই আসলে সব হবে।
আমি আমার গল্প বলি। হাসি দিয়ে মানুষের মন জয় করার গল্প।
কাজের বুয়ার বিস্ময়
কর্মসূত্রে আমার আব্বু ও আমরা আর্মি কোয়ার্টারে থাকি। এখানে ছোটবেলা থেকেই যেসব পিওন বা মহিলা পিওন বাসায় আসতো, তাদের সবাইকে আমি আন্টি বা আংকেল ডাকতাম। তো এরপর থেকে যদি কোন কাজের বুয়া বাসায় আসে, আমি তাদেরকেও আন্টি বলে ডাকি। দরজা খুলে দিয়ে একটা সালাম দিয়ে হেসে বলি “আন্টি, ভালো আছেন তো?”
কাজের বুয়া হতভম্ব হয়ে যান। তিনি এটা কখনো আশাই করেননি, কিন্তু এটাই হলো। বাসার বড় ছেলে এসে তাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। এতে কিন্তু ওই কাজের বুয়ার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। তার মনে হয়েছে তিনিও এই পরিবারেরই একজন!
এই প্রসেসে আমি নিজেও সুখী হচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে, আমার ছোট্ট একটা কুশল জিজ্ঞেস করা একজন মানুষের দিনটাই সুন্দর করে দেয়, ভাবতেই ভালো লাগে না?
হাসি দিয়ে করো বিশ্ব জয়!
সাধারণ ভদ্রতায় অসাধারণ পরিচয়
আমি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটি, তখন পরিচিত বা অপরিচিত কোন বয়স্ক মানুষ দেখলে, সাথে সাথে হাসিমুখে এগিয়ে যাই, একটা সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করি। তাতে একটুখানি চমকে গেলেও, বয়োবৃদ্ধ মানুষটি বড্ড খুশি হয়, খুশি হয়ে মনে মনে ভাবে, “বাহ! আয়মান ছেলেটা তো অনেক ভদ্র! যারা একেবারেই অপরিচিত, তারা আরো বেশি খুশি হয়। নিজেকে স্পেশাল ভাবতে শুরু করেন, মন্দ কী?
হাসিকে তোমার হাতিয়ার হিসেবে দারুণ কাজে লাগাতে পারবে তুমি
একই ঘটনা ঘটে আন্টিদের সাথে লিফটে চড়লে। আন্টিদের সামান্য কোন কাজে সাহায্য করে দিলে তিনি একেবারে বলে বসেন, আরে! আয়মান ছেলেটা তো অনেক কিউট, কী সুন্দর আন্টিদের কথা শুনে কাজ করে! ছোট্ট একটু কুশলাদি তাই রাতারাতি মানুষের মনে সাংঘাতিক Impact ফেলে দেয়।
এই যে ব্যাপারটা ঘটলো, পুরোটাই আসলে একটা হাতিয়ারের সুন্দর একরকম খেলা, হাতিয়ারের ভাল দিকগুলোর একটা উদাহরণ। আর সেই দারুণ হাতিয়ারটি হলো হাসি।
উল্টোটাও হয়। হাসি দিয়ে প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাসের বারোটা বাজিয়ে দেয়া যায় কিন্তু!
The Bomb Theory
ধরো তোমার বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পরীক্ষার আগের রাতে তোমাকে কল দিয়েছে। দিয়ে বলছে, “দোস্ত, আমি তো কিছু পারি না, আমার কী যে হবে!” সেও কিন্তু তোমার কাছ থেকে এরকম কোন উত্তরই আশা করবে। অথচ তুমি যদি তার আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে বসো, “আরে দোস্ত দারুণ প্রিপারেশন, ফাটাফাটি হবে এবারের পরীক্ষা”।
তখন কিন্তু মানসিকভাবে তোমার বন্ধু তোমার থেকে পিছিয়ে পড়লো! আর এই আত্মবিশ্বাস আর হাসির বোমা ফুটিয়ে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বীর আত্মবিশ্বাসের নাজেহাল অবস্থা করে দিলে তুমি!
The Sniper Method
আবার ধরো এডমিশন টেস্টের সময়। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা। একটি সিটেরও ছাড় নেই। তুমি পরীক্ষার হলে গেলে, সেখানে বসলে। বসে দেখলে যে দূরে চশমা পরা নার্ডের মত একটা ছেলে বসে আছে। তার চেহারা দেখলে বেশ প্রস্তুত মনে হচ্ছে!
এই সময়ে তুমি যদি তার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে একটা হাসি দাও, তাতে সে মহা কনফিউজড হয়ে যাবে। তার মনে হবে, তুমি বুঝি সব পারো, তাই এমন আনন্দ।
টেনশনে হয়তো তার পরীক্ষাই ভালো হবে না, একটা সিট বেঁচে যাবে। আর সেখানে সুযোগ পেয়ে যেতে পারো তুমি! এখানে স্নাইপারের মত হাসি দিয়েই ভড়কে দিলে এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে, এটাই বা কম কীসে?
দেখতেই পাচ্ছো, হাসিকে তোমার হাতিয়ার হিসেবে দারুণ কাজে লাগাতে পারবে তুমি। কিন্তু তাই বলে এ অস্ত্র কিন্তু সবখানে ব্যবহার করার জন্যে নয়!
নিজে হাসো, সুখী থাকো এবং অন্যদের হাসি খুশি ও সুখী রাখার চেষ্টা করো, তাহলেই জীবন সুন্দর হয়ে যাবে তোমার এবং সবার। আমরা পাবো একটি সুখী সুন্দর বিশ্ব!
লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন